বিয়েবাড়ির উৎসবের মধ্যেও জোজোর একেবারে মন টিকছে না।
একটা মস্ত বড় বাড়িতে একসঙ্গে দুটো বিয়ে হচ্ছে। একতলায় অন্য দল, জোজোর মাসির বিয়ে দোতলায়। জোজোর ওপরে দায়িত্ব পড়েছে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে শুধু তাদের অতিথিদের দোতলার সিঁড়ি দেখিয়ে দেওয়া।
দুদিকে দুটো গেট, সিঁড়িও আলাদা। ফুল দিয়ে দুজোড়া বর-কনের নাম লেখা আছে দুদিকের গেটে। বারবার সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতে করতে জোজোর পা ব্যথা হয়ে গেছে।
তার বারবার মনে পড়ছে, সন্তু কাকাবাবুরা এই সময় জঙ্গলে গিয়ে কতরকম মজা করছে, আর সে একা-একা পড়ে আছে কলকাতায়। এই পুরু নামের ছেলেটার সঙ্গে সন্তুর বেশি বন্ধুত্ব হয়ে যাবে?
কাকাবাবু হঠাৎ উত্তরবাংলার জঙ্গলে গেলেন কেন? শুধু বেড়াতে? না কি ওখানে কোনও গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছেন? কিংবা ওখানে পড়ে আছে কোনও উল্কার টুকরো? কিংবা ইয়েতির মতন অদ্ভুত কোনও প্রাণীর দেখা পাওয়া গেছে ওখানে?
জোজোর মাসির তিনজন বান্ধবী ভুল করে ঢুকে যাচ্ছে একতলার বিয়েবাড়ির দিকে। জোজো ওদের চেনে, তবু এগিয়ে গিয়ে কিছু বলল না। যাক না ওদিকে! সব বিয়েবাড়িতে কত লোকজন আসে। সবাই তো সবাইকে চেনে না। কেউ কিছু বলবে না। ওরা ভেতরে গিয়ে বিয়ের কনেকে দেখে লজ্জা পেয়ে যাবে।
একতলার বিয়েবাড়িতে কী কী খাওয়াচ্ছে? ওদের কি আইসক্রিম আছে? জোজো একবার ভাবল, ওদিকটায় গিয়ে একবার দেখে আসবে।
সেই তিনটি মেয়ে ফিরে আসছে।
তারা জোজোকে দেখতে পেয়ে কিছু বলার আগেই জোজো বলল ওমা প্রিয়াঙ্কামাসি, তোমরা ওদিকে খেয়ে এলে বুঝি? এবার এদিকে খাবে?
প্রিয়াঙ্কা নামে মেয়েটি বলল, এই পাজি ছেলে, তুই আমাদের দেখতে পাসনি? আমরা ওদিকের মেয়েটাকে উপহারটা প্রায় দিয়ে ফেলছিলুম আর একটু হলে। এমন লজ্জায় পড়তে হল!
জোজো নিরীহ মুখ করে বলল, আমি তোমাদের ডাকবার আগেই তো তোমরা ওদিকে হড়বড় করে ঢুকে পড়লে। আমি ভাবলুম, তোমরা বুঝি ওদেরও চেনো!
আবার একদল এসে পড়ায় জোজো তাদের দিকে চলে গেল।
বিয়ের উৎসব আর খাওয়াদাওয়া চুকতে ঢুকতে বেজে গেল রাত একটা। দোতলায় অনেক ঘর, অনেকে আজ রাতটা সেখানেই কাটাবে। জোজোর ঘুম এল কিছুতেই। চোখ বুজলেই সে দেখতে পাচ্ছে একটা ঘন জঙ্গল। কিং কঙের মতন একটা গোরিলা ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই জঙ্গলে। এদেশে তো গোরিলা নেই। তবে ওটা এল কোথা থেকে? অন্য গ্রহ থেকে আসেনি তো?
ভোর হতে না হতেই সে মাকে বলল, মা, আমি সন্তু কাকাবাবুদের কাছে যাচ্ছি। কয়েকদিন পরে ফিরব।
মা বললেন, সে কী! তুই বউভাতের দিন থাকবি না?
জোজো বলল, আমার তো বিয়ের দিন শুধু ডিউটি ছিল। বউভাতে তো কিছু করবার নেই।
মা তবু আপত্তি করলেও, জোজো অনেক বুঝিয়েসুঝিয়ে রাজি করল। তারপর বাড়ি গিয়ে একটা ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে সোজা চলে এল হাওড়া স্টেশন।
এক ঘণ্টা পরেই একটা ট্রেন আছে উত্তরবাংলার। টিকিট কেটে উঠে পড়ল সেই ট্রেনে।
জোজো মুখে যতই বড় বড় কথা বলুক, একা একা কোথাও যাওয়ার অভ্যেস নেই তার। দিনের বেলার ট্রেনে খুব ভিড়। তবু জোজো একটা কামরায় কোনওরকমে চেপেচুপে জায়গা পেয়ে গেল।
ট্রেনে উঠলেই জোজোর খিদে পায়। যদিও রাত্তিরবেলা বিয়ে বাড়ির খাওয়া খেয়েছে, কিন্তু একটু পরেই তার মন আনচান করতে লাগল। প্রথমে সে ঝালমুড়ি কিনল এক ঠোঙা। কয়েক স্টেশন পরে আলু-পরোটা আর কফি খেয়ে নিল। তারপর কিনে ফেলল অনেকখানি বাদাম। এইগুলো শেষ করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যাবে। এইজন্যই চিনেবাদামের নতুন নাম হয়েছে টাইম-পাস!
জোজোর পাশে বসেছে একজন মাঝবয়েসি লোক, তার মুখ ভর্তি দাড়ি কিন্তু মাথাজোড়া টাক।
জোজো ভাবল, অনেক লোকের মাথার চুল উঠে গিয়ে টাক পড়ে, কিন্তু দাড়ি কেন উঠে যায় না? আজ পর্যন্ত দাড়িতে টাক পড়া কোনও লোক তো সে দেখেনি।
অন্য যাত্রীরা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে নানান গল্প করছে। প্রথমে সিনেমার গল্প দিয়ে আরম্ভ হয়েছিল, এখন চলছে ডাকাতের গল্প।
পাশের দাড়িওয়ালা লোকটি একটা কৌটো থেকে কয়েকটা শোনপাপড়িবার করে বলল, একটা খাবে নাকি ভাই? এটা বাড়িতে তৈরি ভাল জিনিস! ভেজাল নেই।
কয়েকদিন ধরে কাগজে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, ট্রেনের কোনও সহযাত্রী আপনাকে কিছু খাবার জিনিস দিলে খাবেন না। সেইসব খাবারে অনেক সময় ঘুমের ওষুধ মেশানো থাকে। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখবেন, আপনার জিনিসপত্র সব উধাও হয়ে গেছে!
জোজো এই বিজ্ঞাপন পড়েছে। কিন্তু এমন টাটকা শোনপাপড়ি, সুন্দর গন্ধ বেরিয়েছে, এ কি প্রত্যাখ্যান করা যায়? দাড়িওয়ালা লোকটিকে ঠিক চোর-ডাকাত মনে হয় না।
একটা শোনপাপড়ি তুলে নিয়ে জোজো বলল, আপনিও আমার বাদাম খান।
কথায় কথায় এই লোকটির সঙ্গে বেশ আলাপ হয়ে গেল। তার নাম বাবুল আহমেদ। তার তালপাতার পাখা তৈরির ব্যবসা। বাড়ি কুচবিহার। প্রায়ই কলকাতায় যাওয়া-আসা করতে হয়।
একটা শোনপাপড়ি শেষ হওয়ার পর সে জিজ্ঞেস করল, ভাল লেগেছে? তা হলে আর একটা খাও না। অনেক রয়েছে। দুটোও নিতে পারো।
এরকম অনুরোধ উপেক্ষা করা যায় না। জোজো দুটো শোনপাপড়ি নিয়ে নিল। সত্যি ভারী অপূর্ব স্বাদ।
এদিকে ডাকাতির গল্প চলছেই। প্রত্যেকেই যেন একটা-না-একটা ডাকাতির গল্প জানে।
বাবুল আহমেদ জোজোকে নিচু গলায় বলল, তোমাকে একটা জিনিস শিখিয়ে দিই। উত্তরবাংলায় যাচ্ছ তো। যদি কখনও চোর-ডাকাতদের পাল্লায় পড়ো, বাঁচবার একটা সহজ উপায় আছে। চোর-ডাকাতদের সামনে বুক ফুলিয়ে বলবে, আমি কে জানো? আমি শঙ্কর রায়বর্মনের দলের লোক। দেখবে, অমনই ম্যাজিকের মতন কাজ হবে। চোর-ডাকাতরা দৌড়ে পালাবে।
জোজো জিজ্ঞেস করল, শঙ্কর রায়বর্মন কে?
বাবুল আহমেদ বলল, তা তোমার জানার দরকার নেই। শুধু নামটা বলতে পারলেই হল। চোর-ডাকাতরা ওই নামটাকে যমের মতন ভয় পায়। আমি দুবার এইভাবে রক্ষা পেয়েছি। নামটা মুখস্থ করে নাও!
জোজো দুবার বলল, শঙ্কর রায়বর্মন, শঙ্কর রায়বর্মন!
বাদামগুলো শেষ করতে পারল না জোজো। তার আগেই তার ঘুম এসে গেল। একেবারে গভীর ঘুম।
এক সময় একজন কেউ তাকে ঠেলাঠেলি করে বলতে লাগল, ও ভাই ওঠো! ওঠো! নিউ জলপাইগুঁড়ি এসে গেছে!
জোজো ধড়মড় করে উঠে পড়ে বলল, অ্যাঁ? কী হয়েছে? আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম? আমার ব্যাগ কোথায়? ব্যাগ? শোনপাপড়ি, শানপাপড়িতে ঘুমের ওষুধ ছিল! আমার ব্যাগ! যাঃ, চুরি হয়ে গেছে। সেই লোকটা, সেই লোকটা…।
লোকটি বলল, কী আবোল তাবোল বলছ! ওই তো সিটের নীচে তোমার ব্যাগ রয়েছে। তোমার পাশের লোকটি এক স্টেশন আগে নেমে গেল।
সত্যিই তাই, ব্যাগটা চুরি যায়নি। কিছুই হয়নি। এবার জোজো ধাতস্থ হল। আগের রাত্তিরে সে একটুও ঘুমোয়নি, তাই এত ঘুম পেয়েছিল। ঘুমের ওষুধটষুধ কিছু না, বাবুল আহমেদ ভালবেসেই তাকে শোনপাপড়ি খেতে দিয়েছিল।
এই তো হয়, একজন-দুজন চোর-ডাকাতের জন্য সব অচেনা লোককেই সন্দেহ করতে হয়।
ব্যাগটা নিয়ে নেমে পড়ল জোজো। জলপাইগুঁড়ির ডি এম সাহেবের কাছে। খোঁজ করতে হবে, সন্তু বলে দিয়েছিল, সেটা মনে আছে। কিন্তু সেখানে কী করে যাওয়া যাবে।
স্টেশনের বাইরে এসে দেখল, ট্যাক্সি আছে বটে, কিন্তু অনেক ভাড়া লাগবে। অত টাকা জোজো দিতে পারবে না। তবে, জলপাইগুঁড়ি পর্যন্ত শেয়ারের ট্যাক্সি যায়, তাতে অনেক কম খরচ।
সে একটা শেয়ারের ট্যাক্সিতেই উঠে বসল। জলপাইগুঁড়িতে এসে নামার পর লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানল যে, ডি এম সাহেবের বাংলো পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া যাবে না। সাইকেল রিকশা নিতে হবে!
এর মধ্যে রাত হয়ে গেছে। এরকম অচেনা জায়গায় একা একা সাইকেল রিকশায় চেপে জোজো আগে কখনও যায়নি। হঠাৎ তার মাথায় একটা দুশ্চিন্তা এসে গেল। যদি ডি এম সাহেব এখন বাড়িতে না থাকেন? যদি তিনি অফিসের কাজে অন্য কোথাও যান? তা হলে জোজোকে তো এখানে কেউ চিনবে না। তা হলে সে রাত্তিরে থাকবে কোথায়? হোটেলে থাকার মতন অত টাকাও তার সঙ্গে নেই। তার বয়েসি ছেলেকে কি একা কোনও হোটেলে থাকতে দেয়?
এর মধ্যেই রাস্তা একেবারে নির্জন। গাড়িও বিশেষ নেই। ট্রেনে অনেক ডাকাতির গল্প শুনে জোজোর খালি মনে হচ্ছে, এই সময় হঠাৎ যদি কোনও ডাকাত এসে ধরে? তা হলে কী যেন একটা নাম বলতে হবে? শঙ্কর রায়বর্মন, শঙ্কর রায়বর্মন! জোজো মনে মনে বারবার সেই নামটা বলতে লাগল।
সাইকেল রিকশাওলা তাকে নামিয়ে দিল ডি এম সাহেবের বাংলোর সামনে।
গেটের কাছে একজন বন্দুকধারী পাহারাদার। সে জোজোকে দেখেও কিছু বলল না। জোজো এগিয়ে গিয়ে সদর দরজার বেল টিপল।
দরজা খুলে দিল একজন আর্দালি। কে জিজ্ঞেস করল, কী চাই?
জোজো বলল, ডি এম সাহেব আছেন?
আর্দালিটি বলল, আছেন। কিন্তু এখন দেখা হবে না।
জোজো বলল, আমার বিশেষ দরকার!
আর্দালিটি বলল, আটটা বেজে গেছে। এর পর আর তিনি কারুর সঙ্গে দেখা করেন না। হুকুম নেই।
আর্দালিটি দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছিল, জোজো বলল, ওঁকে গিয়ে বলল, আমি শঙ্কর রায়বর্মনের লোক। তা হলে উনি ঠিক দেখা করবেন।
সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে আর্দালিটির মুখ শুকিয়ে গেল। কাঁপতে কাঁপতে সে বলে উঠল, অ্যাঁ? অ্যাঁ? ওরে বাবা রে, গার্ড, গার্ড শিগগির ইধার আও! স্যার, সাহেব, এসে গেছে! ওদের লোক।
গেটের পাহারাদারটি ছুটে এসে রাইফেল বাগিয়ে ধরল জোজোর দিকে। ভেতরের সিঁড়িতে দুমদাম পায়ের আওয়াজ হল। রণবীর গুপ্ত এগিয়ে এলেন, হাতে রিভলভার।
তিনি কড়া গলায় বললেন, তুমি কে? চিঠি এনেছ?
জোজো বলল, চিঠি তো আনিনি। আমি, মানে…
রণবীর গুপ্ত বললেন, তা হলে কেন এসেছ?
জোজো বলল, কাকাবাবুরা কোথায় আছেন, সেখানে আমাকে যদি পৌঁছে দেন।
রণবীর গুপ্ত বললেন, সেখানে আমি তোমাকে পৌঁছে দেব?
জোজো বলল, আমি সন্তুর বন্ধু। কাকাবাবু আমাকে চেনেন। সন্তুই আমাকে আসতে বলেছে।
রণবীর গুপ্ত বললেন, সন্তু তোমাকে আসতে বলেছে? তা হলে তুমি প্রথমে এসে কার নাম বললে?
জোজো এবার জিভ কেটে ফেলে বলল, এই যাঃ! ভুল করে বলে ফেলেছি! রণবীর গুপ্ত বললেন, এখন উলটোপালটা কথা বলা হচ্ছে। যেখানে দাঁড়িয়ে আছো, এক পাও এগোবে না।
তিনি আদালিকে বললেন, ওর বডি সার্চ করে দেখো তো, বোমা টোমা লুকিয়ে রেখেছে কি না!
আর্দালি কাঁচুমাচু ভাবে বলল, স্যার, গায়ে হাত দিলে যদি বোমা ফেটে যায়?
রণবীর গুপ্ত বললেন, ঠিক বলেছ। ওহে ছোকরা, তোমার ব্যাগে যা জিনিসপত্র আছে, সব বার করে দেখাও। তারপর তুমি মাটিতে শুয়ে দুবার গড়াগড়ি দাও, দেখতে চাই তোমার গায়ে বোমা বাঁধা আছে কি না!
জোজো বলল, বিশ্বাস করুন, আমি সন্তুর খুব বন্ধু। সন্তু আমাকে দেখলেই…
রণবীর গুপ্ত বললেন, তা হলে তুমি আগে অন্য নাম বললে কেন? কোনও কথা শুনতে চাই না, মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি দাও, নইলে আমি গুলি করব।
অগত্যা জোজোকে নিজের ব্যাগটা খুলে উলটে দিতে হল। নিজে শুয়ে পড়ল মাটিতে।
গার্ড, আর্দালি, রণবীর গুপ্ত নিজেও খানিকটা দূরে সরে গেলেন।
দুবার গড়াগড়ি দেওয়ার পর উঠে দাঁড়িয়ে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে জোজো বলল, দেখলেন, দেখলেন! কিছু নেই!
রণবীর তবুও সন্তুষ্ট না হয়ে বললেন, তোমার ব্যাগের জিনিসপত্রের মধ্যে ওই চৌকোমতন জিনিসটা কী?
জোজো বলল, বোমা! আরে না, না, কী যে ভুল হয়ে যাচ্ছে। বলতে চাইছি, বোমা নয়, রসগোল্লা। বিয়েবাড়ির। অনেক রসগোল্লা বেশি হয়ে গিয়েছিল তো, তাই একটা টিনের কৌটোয় করে কাপড় দিয়ে বেঁধে এনেছি আপনাদের জন্য!
রণবীর গুপ্ত বললেন, ওটা খুলে দেখাও!
জোজো খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারছে না, সে নিজেই এত শক্ত করে গিট বেঁধেছে যে, দারুণ আঁট হয়ে গেছে।
আর্দালিটি বলল, স্যার, আমার মনে হচ্ছে, ওটার মধ্যেই…
রণবীর গুপ্ত রিভলভার তাক করে আছেন। কড়া গলায় বললেন, কোনওরকম চালাকির চেষ্টা কোরো না।
ঠিক এই সময় একটা গাড়ি এসে থামল। তার থেকে নেমে এল সন্তু আর পুরু।
তাদের দেখে একগাল হেসে জোজো বলল, কী রে, সন্তু, দ্যাখ, আমি ঠিক এসে গেছি।
জোজোকে দেখে সন্তুর মুখে কোনও খুশির ভাব ফুটল না। সে ফ্যাকাশে গলায়। শুধু বলল, তুই এসেছিস?
জোজো বলল, হ্যাঁ, আসব না মানে? তোর মুখোনা এমন আমসির মতন হয়ে আছে কেন? সারাদিন কিছু খাসনি বুঝি? নে, রসগোল্লা খা। ছোটমাসির বিয়ের রসগোল্লা!
এর মধ্যে গিট খুলে ফেলেছে জোজো। প্রথমে রণবীর গুপ্তর কাছে কৌটোটা নিয়ে গিয়ে বলল, নিন, আপনি আগে খেয়ে দেখুন! কলকাতার বেস্ট রসগোল্লা!
রণবীর গুপ্ত সন্তুকে জিজ্ঞেস করলেন, এ তোমার বন্ধু?
সন্তু বলল, হ্যাঁ, এর নাম জোজো। এর নানারকম কাণ্ডকারখানার কথা শোনোননি আপনি?
রণবীর গুপ্ত এবার হো-হো করে হেসে উঠলেন।
গার্ড, আর্দালিরাও হাসতে লাগল। তারপর সবাই মিলে খেতে লাগল। রসগোল্লা।
সন্তু জোজোকে বলল, চল, আমার ঘরে চল। অনেক কথা আছে। এর মধ্যে সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড ঘটে গেছে।
পুরুকে নিয়ে ওরা চলে গেল ওপরে। সার্কিট হাউজের বদলে ওরা এখন ডি এম সাহেবের বাংলোতে রয়েছে। মিলিকাকিমা অনবরত কাঁদছেন, নিজের বিছানা ছেড়ে উঠছেনই না। তিনি কিছুতেই কলকাতায় ফিরে যেতেও রাজি নন।
ঘরের মধ্যে এসে জোজো বলল, আগে এক গেলাস জল খাওয়া তো সন্তু!
সন্তু জিজ্ঞেস করল, এ কী, তোর জামায় এত ধুলো কাদা লাগল কী করে? আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়েছিলি?
জোজো বলল, না, না, তোরা বাড়ি ছিলি না, ততক্ষণ আমি ডি এম সাহেবকে ম্যাজিক দেখাচ্ছিলাম।
ম্যাজিক?
হ্যাঁ, এটা আমি যেবার হনুলুলু যাই, সেখানে শিখেছি। সেখানে একজন ম্যাজিশিয়ান ছিল, তার নাম আলাপাগোস, দুর্দান্ত সব খেলা জানে। সে আমাকে এটা শিখিয়ে দিয়েছিল।
কীরকম ম্যাজিক?
জোজো একগাল হেসে বলল, তোরা পারবি না। প্রথমে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে। ঘরের মধ্যে হবে না, বাইরে খোলা জায়গায়। তারপর দুবার গড়াগড়ি দিলেই পেটটা ফুলতে শুরু করবে। ঠিক যেন বেলুনের মতন, ফুলতে ফুলতে এত বড় হবে যে, মনে হবে এক্ষুনি ফেটে যাবে! তারপর নিজেই দুম ফটাস আওয়াজ করলে সবাই চমকে যাবে। তখন দেখা যাবে, পেটটা একই রকম আছে!