যুধিষ্ঠির নৃপমণি, কোলে লৈয়া যাজ্ঞাসেনী,
কান্দিছেন সকরুণ ভাষে।
শোক দুঃখে অচেতন, আর ভাই চারিজন,
অশ্রুমুখে বৈসে চারিপাশে।।
দ্রৌপদীর মুখ চেয়ে, কান্দিছেন বিলাপিয়ে,
কোথা গেলে দ্রুপদনন্দিনী।
অজ্ঞাতে তোমার তরে, বধিনু কীচক বীরে,
তুমি পাণ্ডবের ধন মানি।।
যেকালে দ্রুপদরাজে, পণ কৈল সভামাঝে,
রাধাচক্র বিন্ধিতে যে পারে।
অযোনিসম্ভবা কন্যা, ত্রিভুবনে সেই ধন্যা,
সম্প্রদান করিবে তাহারে।।
প্রতিজ্ঞা বচন শনি, এক লক্ষ নৃপমণি,
হুড়াহুড়ি বিন্ধিবার তরে।
দুর্জ্জয় ধনুক ধরে, গুণ দিতে নাহি পারে,
তবু বাঞ্ছা পাইতে তোমারে।।
রক্ত উঠে কার মুখে, কার হস্ত ঘাড় বাঁকে,
না পারিয়া ক্ষমা দিল সবে।
চারিবর্ণে যে বিন্ধিবে, তারে রাজকন্যা দিবে,
দ্রুপদ কহিল ডাকি তবে।।
তোমা জিনি পঞ্চ ভাই, গেলাম জননী ঠাঁই,
ভিক্ষা বলি মায়ে বলা গেল।
না দেখিয়া না শুনিয়া, জননী হরিষ হৈয়া,
বাটি খাও পঞ্চজনে কৈল।।
আজ্ঞা দিল মুনিগণে, বিভা কৈনু পঞ্চজনে,
লক্ষীরূপা সুন্দরী পাঞ্চালী।
দ্বাদশ বৎসর বনে, তুষিলে ব্রাহ্মণগণে,
পর্ব্বতে পড়িলে অঙ্গ ঢালি।।
মর্ত্ত্যে করিলাম পাপ, তেঁই এত পাইতাপ,
কেন তুমি পড়িলে পর্ব্বতে।
কেমনে যাইব পথে, কান্দেন ভূপতি চিতে,
নাহি কেহ প্রবোধ করিতে।।
কান্দি ভীম ধনঞ্জয়, যমজ সোদরদ্বয়,
শোকাকুল করে হাকাকার।
বিস্তর বিলাপ করি, বলে পুনঃ হরি হরি,
অগ্রে হৈল মরণ তোমার।।
আমাদের সঙ্গ ছাড়ি; পর্ব্বতে রহিলা পড়ি,
তোমা এড়ি যাইব কিমতে।
এতেক ভাবিয়া সবে, কিছু শান্ত হৈয়া তবে,
প্রিয়বাক্য কহে ধর্ম্মসুতে।।
এই হেতু দেশে পূর্ব্বে, রহিতে বলিতে সর্ব্বে,
দৃঢ় করি না ছাড়িলে সঙ্গ।
তোমা হেন নারী বিনে, শূন্যদেখি রাত্রিদিনে,
বিধাতা করিল সুখ ভঙ্গ।।
ভারতের পুণ্যকথা, শ্রবণে বিনাশে ব্যথা,
হয় দিব্যজ্ঞানের প্রকাশ।
কমলাকান্তের সুত, সুজনের মনঃপুত,
বিরচিল কাশীরাম দাস।।