৬ষ্ঠ অধ্যায় – দেবর্ষি-নিকটে সভা সম্বন্ধে যুধিষ্ঠিরের প্রশ্ন
বৈশস্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ! ব্রহ্মর্ষি নারদের বাক্যাবসানে ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির সমুচিত সৎকারপূর্ব্বক তদীয় উত্তরস্বরূপ আনুপূর্বিক কহিতে লাগিলেন, “ভগবন! আপনি যে ধর্ম্মনিশ্চয় উপদেশ করিলেন, তাহা ন্যায়ানুগত বটে, আমি সাধ্যানুসারে এতদনুরূপ করিয়া থাকি। পূর্ব্বকালে ভূপালগণ ন্যায়তঃ সংগৃহীতাৰ্থ যে সমস্ত অর্থবৎ কাৰ্য্যানুষ্ঠান করিতেন, আমিও সেইরূপ করিতেছি। আর তাহারা যে সকল সৎকর্ম্ম অনিয়তাত্মতাপ্রযুক্ত কৃতকাৰ্য্য হইতে পারি না।”
যুধিষ্ঠির দেবর্ষি নারদকে বিশ্রান্ত দেখিয়া রাজগণমধ্যে সমুচিত সৎকারপূর্ব্বক যথাযোগ্য সময়ে কহিলেন, “ভগবন! আপনি অপ্ৰতিহতগতিপ্রভাবে ব্ৰহ্মানির্মিত অনেকানেক লোক সন্দর্শন করিয়া পর্য্যটন করিতেছেন, কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, কোন স্থানে আমাদিগের এই অপূর্ব্ব সভার তুল্য বা ইহা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট কোন সভা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন কি না, অনুগ্রহপূর্ব্বক কহিয়া চরিতার্থ করুন।” মহর্ষি নারদ যুধিষ্ঠিরের বাক্য শ্রবণ করিয়া হাস্যমুখে ও মধুর বচনে কহিলেন, “মহারাজ! আপনার এই মণিময়ী সভাসদৃশী দ্বিতীয় সভা মনুষ্যলোক দৰ্শন বা শ্রবণ করি নাই, এক্ষণে যদি আপনার শ্রবণবাসনা বলবতী হয়, তবে পিতৃরাজ যম, ধীমান বরুণ, দেবরাজ ইন্দ্র ও কৈলাসনিবাসী কুবেরের সভা কীর্তন করিব। ভগবান ব্ৰহ্মার দিব্যাভিপ্ৰায়োপেত [দৈবসৌকর্য্যযুক্ত-দিব্যভাব্যমণ্ডিত] বিশ্বরূপিণী ক্লমাপহারিণী দিব্য এক সভা আছে, আমি সেই সভা বর্ণন করিতেছি, শ্রবণ করা। এই সভা দেবগণ, পিতৃলোক, সাধ্যসমূহ এবং শান্ত যতাত্মা যাজ্ঞিকবৰ্গ, শান্তশীল বেদাধ্যয়নসম্পন্ন ও যজ্ঞানুষ্ঠানপরায়ণ মুনিগণ কর্তৃক সেবিত।” ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির নারদ কর্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে ভ্রাতৃচতুষ্টয় ও ব্রাহ্মণ সমভিব্যাহারে তাঁহাকে কহিলেন, “ভগবান! সেই সমস্ত সভা কিরূপ বিস্তীর্ণ ও আয়ত এবং তাঁহাতে কতই বা দ্রব্যজাত রহিয়াছে? পিতামহ ব্ৰহ্মা, দেবরাজ ইন্দ্র, বৈবস্বত যম, বরুণ ও কুবের স্ব স্ব সভায় আসীন হইলে কে কে তাহাদিগকে উপাসনা করিয়া থাকেন? আপনি এই সমস্ত কীর্তন করুন, শ্রবণ করিবার নিমিত্ত আমাদের একান্ত কুতূহল হইয়াছে।” মহর্ষি নারদ ধর্ম্মরাজ কর্তৃক এইরূপ কথিত হইয়া কহিলেন, “মহারাজ! আমি ক্রমশঃ সমস্ত কীর্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন।”