০৬. ক্লাউস এটা দেখো

মেয়েটা বলল, “ক্লাউস, এটা দেখো।”

ক্লাউস বলল, “এটা কী?”

“একটা ভিডিও।”

“কীসের ভিডিও।”

“একটা টিন এজ মেয়ে একটা সাঁতার প্রতিযোগিতায় সাঁতার কাটছে।”

এটা কেন দেখতে হবে, “মিশেল?”

নামের মেয়েটা বলল, “দেখলেই বুঝতে পারবে।”

মিশেল মনিটর স্পর্শ করতেই ভিডিওটা চালু হয়ে যায়, ক্লাউস দেখল হলুদ রংয়ের টি শার্ট পরা একটা মেয়ে রিলে সাঁতারে তার দলের সাঁতারুর কাছ থেকে ব্যাটনটি নিয়ে সাঁতরাতে শুরু করেছে। ক্লাউস অবাক হয়ে দেখল মেয়েটি একটা মাছের মতো পানির নিচে দিয়ে বিদ্যুতের মতো এক পাশ থেকে অন্য পাশে চলে গেল। ক্লাউস বলল, “মেয়েটা এতো দ্রুত সাঁতরায় কেমন করে?”

মিশেল বলল, “আমি মোটেও সেটা দেখতে বলি নি। মেয়েটা অলিম্পিকের স্বর্ণ বিজয়ী থেকেও দ্রুত সাঁতরায় কিন্তু আমি তোমাকে তার থেকে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস দেখতে বলেছি।”

“সেটা কী?”

“আবার দেখ, তাহলে বুঝবে।”

ক্লাউস আবার ভিডিওটা দেখে সোজা হয়ে বসল, বলল, “মেয়েটা একবারও নিশ্বাস নেবার জন্যে পানির উপরে মাথাটা বের করে নি!”

মিশেল বলল, “ঠিক ধরেছ!”

ক্লাউস অবাক হয়ে বলল, “এটা কীভাবে সম্ভব?”

“এটা সম্ভব না।”

“তাহলে?”

“আমি সেটাই তোমার কাছে জানতে চাই। তুমি আমাদের জীব বিজ্ঞানী।”

ক্লাউস বলল, “এই ভিডিওটা কোথায় পেয়েছ?”

“নেট থেকে আমাদের টিম ডাউনলোড করেছে। এটা কোথা থেকে পেয়েছে বের করে জানাবে। যে মেয়েগুলো সাঁতার দিচ্ছে তাদের চেহারায় মনে হয় ইন্ডিয়ার মেয়ে।”

ক্লাউস তৃতীয়বার ভিডিওটা দেখতে শুরু করে, নিচু গলায় বলল, “এটা সম্ভব না। এ-রকম প্রতিযোগিতায় শরীরে অক্সিজেন আরো বেশী দরকার, নিশ্বাস না নিয়ে এভাবে সাঁতরানো অসম্ভব।” ক্লাউস ‘অসম্ভব’ শব্দটা উচ্চারণ করার সময় টেবিলে একটা থাবা দিল।

ভিডিওটা দেখা শেষ করে হঠাৎ ক্লাউস আর্ত চিৎকারের মতো শব্দ করল। মিশেল অবাক হয়ে বলল, “কী হয়েছে?”

“আমরা এখনো আসল জিনিসটাই দেখি নি।”

মিশেল জানতে চাইল, “কী? আসল জিনিসটা কী?”

“এই দেখো।” ক্লাউস ভিডিওটাতে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল, “মেয়েটা সাঁতার শেষ করে তার প্রতিপক্ষের জন্যে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে একটা ঠাট্টার হাসি।”

মিশেল বলল, “হ্যাঁ। হাসি তো থাকতেই পারে। টিন এজ মেয়ে তার প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিয়েছে, তার দিকে ঠাট্টার হাসি তো হাসতেই পারে।”

“না, না সেটা আমি বলছি না। আমি বলছি এই মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকাও। দেখ কী করে।”

মিশেল, ভালো করে, তাকাল, বলল, “কী করছে?”

“এতো বড় একটা ল্যাপ শেষ করেছে, এখন তার কী করা উচিত?”

“হাঁপিয়ে যাওয়া উচিৎ। বড় বড় নিশ্বাস নেওয়া উচিৎ।”

ক্লাউস খুশী হয়ে বলল, “গুড। দেখো তাকিয়ে। মেয়েটা কী হাঁপিয়ে উঠেছে? বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে?”

“না। মেয়েটা মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে না।”

ক্লাউস বলল, “আমি আবার ভিডিওটা দেখাই, তুমি ভালো করে দেখো। এবারে স্লো মোশানে।”

ক্লাউস পুরো ভিডিওটা খুবই স্লো মোশানে দেখালো, দেখাতে দেখাতে জিজ্ঞেস করল, “মেয়েটা কী আদৌ কোনো নিশ্বাস নিচ্ছে?”

“না। নিশ্বাস নিচ্ছে না।”

“মেয়েটার বুকের দিকে তাকাও–নিশ্বাস নিলে বুকটা ওপরে উঠে নিচে নামে। এই মেয়েটার বুক কী ওপরে উঠছে, নিচে নামছে?”

মিশেল বলল, “না।”

“মেয়েটা কী নিশ্বাস নিচ্ছে?”

“না।”

“এর চাইতে অবিশ্বাস কোনো জিনিস তুমি কোনোদিন দেখেছ?”

“না।”

“আমিও দেখি নি।”

“এখন তাহলে কী করবে?”

ক্লাউস মুখ দিয়ে বিচিত্র একটা শব্দ করে বলল, “মেয়েটাকে আমার চাই।”

“মেয়েটা কোথায় থাকে কী করে কিছুই আমরা জানি না।”

“তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের এজেন্সি পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যে কোনো মানুষকে যে কোনো সময় ধরে নিয়ে আসতে পারে।”

“মেয়েটিকে এনে কী করবে?”

ক্লাউস হাসার মতো শব্দ করল, বলল, “কী আবার করব? কেটে কুটে দেখব! মেয়েটার শরীরের ভিতরে কী আছে দেখা দরকার।”

মিশেল বলল, “ঠিক আছে।”

“একটা প্রজেক্ট বানাও। ফান্ডিং নিয়ে চিন্তা করো না। আমাদের এজেন্সির ফান্ডের সমস্যা নেই।”

“আমি ফান্ডিং নিয়ে কখনো চিন্তা করি না।”