করমণ্ডল এক্সপ্রেসে মুখোমুখি দুটি জানলার ধারে সিট পেয়েছে সন্তু আর জোজো। দুজনেই পরে আছে জিনসের প্যান্ট আর টি-শার্ট। জোজোরটা হলুদ আর সন্তুরটা মেরুন।
ওদের পরীক্ষা চলছিল বলে কাকাবাবু এবারে সঙ্গে নিতে চাননি। ফাইনাল পরীক্ষা নয়, ক্লাশ টেস্ট। এর মধ্যে কলেজের জলের ট্যাঙ্কে একটা ধেড়ে ইঁদুর পড়ে গিয়ে মরে পচে উঠেছিল, তাই শেষ দুটি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেল। জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাশ চলতে পারে না। তাই গ্রীষ্মের ছুটি দিয়ে দেওয়া হল দুদিন আগে। বাকি পরীক্ষা হবে ছুটির পর।
আকস্মিকভাবে এরকম ছুটি পেয়ে সন্তু বলেছিল, ইস, যদি ট্রেনের টিকিট জোগাড় করা যেত, তাহলে কালই ভাইজাগ গিয়ে কাকাবাবুকে চমকে দিতাম। ভাইজাগ শহরটাও আমার খুব দেখার ইচ্ছে, ওখানে পাহাড় আর সমুদ্র একসঙ্গে দেখা যায়, ইন্ডিয়াতে এরকম জায়গা আর কোথাও নেই।
জোজো ঠোঁট উলটে বলেছিল, টিকিট জোগাড় করা তো ইজি। আমার বড়মামা রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান, ইন্ডিয়ার যে-কোনও জায়গার যে-কোনও ট্রেনের টিকিট উনি পাঁচ মিনিটে জোগাড় করে দিতে পারেন। চল তোকে নিয়ে যাচ্ছি।
পর মুহূর্তেই মনে-পড়া ভঙ্গিতে বলেছিল, ওঃ হো, ব্যাড লাক। বড়মামা যে এখন ছুটিতে, হিমালয়ে গেছেন, কী করে হবে?
শেষপর্যন্ত সন্তুই তাদের পাড়ার বিমানদাকে বলে দুটো টিকিট পেয়ে গেছে। বিমানদার একটা ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে চেনা আছে। ছুটি পড়ে গেছে, আর কাকাবাবুর কাছে যাচ্ছে শুনে বাবা-মাও আপত্তি করেননি।
দুজনে দু ঠোঙা চিনেবাদাম কিনে ভেঙে-ভেঙে খাচ্ছে আর খোসা ফেলছে জানলা দিয়ে।
জোজো পরপর তিনটে খোসা ভাঙল, তিনটেরই ভেতরের বাদাম পোকায় ধরা, চিমসে মতো।
জোজো বলল, জানিস সন্তু, একবার আমি ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়েতে যাচ্ছিলাম, সবসুদু নদিন লাগে, পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা ট্রেন জার্নি, সেই সময় এক প্যাকেট বাদাম কিনেছিলাম, তোকে কী বলব, প্রত্যেকটা বাদামের দানা ধপধপে সাদা আর মাখনের মতো মুখে গলে যায়। অত ভাল বাদাম জীবনে খাইনি।
সন্তু বলল, রাশিয়ার বাদাম এত বিখ্যাত, তা তো জানতাম না!
জোজো বলল, আমেরিকার একজন প্রেসিডেন্ট ছিল জিমি কারটার, জানিস তো? সে আমার বাবার শিষ্য। ওই জিমি কারটারের চিনেবাদামের ব্যবসা, সে একবার বাবাকে বিরাট এক বস্তা বাদাম পাঠিয়েছিল, সেও খুব ভাল, কত লোককে যে বিলিয়েছি সেই বাদাম!
সন্তু বলল, আমি একটাও পাইনি।
জোজো বলল, তুই তো তখন কাকাবাবুর সঙ্গে আফ্রিকা গিয়েছিলি!
সন্তু জিজ্ঞেস করল, তুই কখনও আফ্রিকা গেছিস?
জোজো ঠোঁট উলটে বলল, অনেকবার। অন্তত সাত-আটবার তো হবেই। লাস্টবার যখন উগান্ডায় গিয়েছিলাম, রাত্তিরবেলা আমাদের তাঁবুতে একটা সিংহ ঢুকে পড়েছিল। ভাগ্যিস আগেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল আমার। কী করে বেঁচে গেলাম বল তো?
সম্মু বলল, এ গল্পটা আগে একবার শুনেছি মনে হচ্ছে। সবটা মনে নেই। কী করে বাঁচলি?
জোজো বলল, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো। আমার বাবা তো দারুণ ঝাল খান, যেখানেই যান একটা কৌটো ভর্তি শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো নিয়ে যান। আমি দু মুঠো শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ছুড়ে দিলাম সিংহটার চোখে। তখন সে বেচারা ফ্যাচফ্যাচ করে হাঁচতে লাগল আর ভেউ-ভেউ করে কাঁদতে লাগল।
সন্তু বলল, হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তারপর তোর বাবা সেই সিংহটার গলায় দড়ি বেঁধে, কুকুরের মতন তাকে নিয়ে রোজ বেড়াতে যেতেন, না?
জোজো বলল, রোজ মানে মাত্র তিনদিন যাওয়া হয়েছিল। তারপর সিংহটাকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়। আর একটু হলেই পোষ মেনে যেত।
সন্তু বলল, তার চেয়ে বরং একটা গোরিলাকে পোষ মানিয়ে নিয়ে আসতে পারতিস। এখানে কাজে লেগে যেত।
জোজো প্রসঙ্গ বদল করে, গলা নিচু করে বলল, সন্তু, ডান দিকের কোণে জানলার কাছের লোকটাকে দেখ। বেশিক্ষণ তাকাসনি, একবার শুধু দেখে নে। খুবই সন্দেহজনক ব্যাপার।
সন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে একঝলক দেখে নিল লোকটিকে। পাজামা-পাঞ্জাবি পরা একজন মাঝারি চেহারার লোক, এক হাতে সিগারেট, অন্য হাতে একটা ইংরেজি সিনেমার পত্রিকা খোলা।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, কেন, সন্দেহজনক কেন?
জোজো বলল, হাতে ম্যাগাজিন, কিন্তু পড়ছে না, বারবার তাকাচ্ছে। আমাদের দিকে। নিঘাত স্পাই। আমাদের ফলো করছে।
সন্তু বলল, আমাদের কেউ ফলো করতে যাবে কেন?
জোজো বলল, কাকাবাবুর অনেক শত্রু আছে। আমাদের ফলো করে ওঁর কাছে পৌঁছতে চায়।
সন্তু বলল, ধ্যাত! আমরা যে এই ট্রেনে চাপব, তা কালকেও ঠিক ছিল। ওই লোকটাও বোধ হয় বাঘ-সিংহ পোষে, তোর গল্প শুনে কান খাড়া করেছে।
জোজো বলল, সরোজ চৌধুরী নামে ওড়িশার এক ফরেস্ট অফিসার একটা বাঘ পুষেছিলেন। আমাদের সঙ্গে খুব চেনা ছিল।
সন্তু নিরীহভাবে জিজ্ঞেস করল, কার সঙ্গে চেনা ছিল, বাঘটার সঙ্গে, না সরোজ চৌধুরীর সঙ্গে?
জোজো বলল, সরোজবাবু আমাদের বাড়িতে অনেকবার এসেছেন। বাঘটাকে আমি তিন-চারবার দেখেছি। হঠাৎ বাঘটা কিছুদিনের জন্য বোবা হয়ে গিয়েছিল। একদম ডাকত না। বাঘ যদি মাঝে-মাঝে হালুম না করে, তবে তো সেটাকে বাঘ বলে মনেই হয় না। তেমন বাঘ পুষে লাভ কী? আমার বাবা তখন সরোজবাবুকে বুদ্ধি দিলেন, বাঘটাকে যে মাংস খাওয়ানো হয়, তার সঙ্গে বেশ কয়েক গণ্ডা বারুইপুরের কাঁচালঙ্কা বেটে মিশিয়ে দেবেন তো! সেই লঙ্কা-মেশানো মাংস খেয়ে বুঝলি, বাঘটার যা তেজী গর্জন শুরু হয়ে গেল!
সন্তু বলল, বারুইপুরের কাঁচালঙ্কা কেন? অন্য জায়গার কাঁচালঙ্কা হবে?
জোজো বলল, নাঃ, তা হবে না। বারুইপুরের কাঁচালঙ্কা যে ঝালের জন্য ওয়ার্ল্ড ফেমাস!
সন্তু বলল, আমি কোনওদিন বারুইপুরের কাঁচালঙ্কা খাব না। খেলে যদি বাঘের মতন গর্জন শুরু করি!
জোজো বলল, ওই লঙ্কার অনেক গুণও আছে। একবার সুন্দরবনে… পাজামা-পাঞ্জাবি পরা লোকটি উঠে এসে ওদের পাশ দিয়ে বাথরুমে গেল।
জোজো চোখ বড় বড় করে বলল, শুনতে পেলি, শুনতে পেলি, ক্লিক-ক্লিক শব্দ হল?
সন্তু বলল, না, আমি শুনিনি তো?
জোজো বলল, ওর হাতটা পাঞ্জাবির ডান পকেটে ছিল। গোপন ক্যামেরায় আমাদের ছবি তুলে নিল।
সন্তু বলল, ওকে আমাদের নাম-ঠিকানা দিয়ে বলব ছবির কপি পাঠিয়ে দিতে?
জোজো বলল, তুই গুরুত্ব দিচ্ছিস না সন্তু। কিন্তু আমি লোক চিনতে পারি। আমার চোখে ধূলো দেওয়া শক্ত।
খানিক পরে খড়গপুর স্টেশন এল। সেই লোকটি নেমে গেল পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে।
সন্তু জোজোর দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল।
জোজো বলল, চেন সিস্টেম। আমরা ওকে চিনে ফেলেছি তো, তাই লোকটা নেমে গিয়ে অন্য একজনকে পাঠাবে। সে ফলো করবে আমাদের।
তিনজন পুরুষ ও দুজন মহিলা উঠল, তাদের প্রত্যেকের আপাদমস্তক দেখে নিল জোজো।
তারপর ফিসফিস করে বলল, এই কামরায় ওঠেনি, ইচ্ছে করেই পাশের কামরায় উঠেছে। দেখবি, একটু পরেই একবার এসে ঘুরে যাবে।
ট্রেনে যাওয়ার সময় অনবরত খিদে পায়। ফেরিওয়ালাও ওঠে নানারকম। ওরা মশলা মুড়ি, আঙুর ও শোনপাপড়ি খেতে-খেতে গল্প করতে লাগল।
মাঝে-মাঝে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে মাঝখানের প্যাসেজ দিয়ে। একজন দাড়িওয়ালা প্যান্ট-শার্ট পরা লম্বা লোককে দেখে জোজো সন্তুর পায়ে একটা খোঁচা দিল। চোখের ইঙ্গিতে জানাল, এই সেই স্পাই!
সন্তু জিজ্ঞেস করল, তুই কী করে বুঝলি?
জোজো বলল, ওর দাড়িটা ফলস। আমি দেখেই বুঝেছি।
সন্তু ফিসফিস করে বলল, টেনে দেখব নাকি?
জোজো বলল, এমন ভাব কর, যেন আমরা কিছুই বুঝিনি। একবার কী হয়েছিল জানিস, বাবার সঙ্গে ট্রেনে যাচ্ছি রাজস্থান দিয়ে, সেই সময় আমাদের পেছনে স্পাই লেগেছিল।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, কেন, স্পাই লেগেছিল কেন?
আমাদের কাছে যে একটা দারুণ দামি জিনিস ছিল।
দামি জিনিস থাকলে চোর-ডাকাত পিছু নিতে পারে। তারা স্পাই হবে কেন?
কারণ আছে। জয়সলমিরের রাজা মারা গেছেন কিছুদিন আগে। তাঁর বিষয়সম্পত্তি কে পাবে, তাই নিয়ে তাঁর তিন ছেলে আর এক ভাইপোর মধ্যে লড়ালড়ি লেগে গেছে। এদের মধ্যে যে মেজোকুমার, সেই সূরজপ্রসাদ আমার বাবার শিষ্য, খুব ভাল লোক, সবকিছু তারই প্রাপ্য, কারণ তার দাদাটা পাগল। সুরজপ্রসাদ বাবাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। বাবা তার জন্য এমন একটা মন্ত্রপূত মাদুলি তৈরি করেছিলেন, যেটা হাতে দিলে তার ভাগ্য খুলে যাবেই। অন্য ভাইগুলো জেনে ফেলেছিল সেই মাদুলির কথা। তারা চাইছিল কিছুতেই যেন আমরা জয়সলমিরে ঠিক সময়ে পৌঁছতে না পারি। সেইজন্যই তিনটে স্পাই–
একজন নয়, তিনজন?
অন্য তিন ভাইয়ের তিনজন। আমি ঠিক চিনে ফেলেছি। বাবাকে চুপিচুপি জানিয়ে দিলুম। বাবা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, তা হলে কী হবে? আমি বললুম, তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো, আমি সব ম্যানেজ করে দিচ্ছি।
তুই কী ম্যানেজ করলি?
আমি করলুম কী, তিনজনের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিয়ে নিজে ইচ্ছে করে তার সঙ্গে ভাব করলুম। সেবার আমাদের সঙ্গে প্রচুর পেস্তাবাদাম আর কিশমিশ ছিল। পাকিস্তান থেকে ইমরান খান পাঠিয়েছিল বাবাকে। সেই একমুঠো পেস্তা বাদাম আর কিশমিশ নিয়ে লোকটাকে বললুম, খান না, খান না–
ইমরান খান পাঠিয়েছিল। তুই আমাকে একটুও দিলি না?
তুই তখন কাকাবাবুর সঙ্গে কোথায় যেন গিয়েছিলি …আগে শোন না ঘটনাটা। লোকটা তো দিব্যি খেতে লাগল। অন্য দুজন লক্ষ করছে। তারা ভাবল, আমরা নিশ্চয়ই ওর দলে ভিড়ে গেছি। খানিকটা বাদে দেখি যে, সেই লোকটা নেই।
কোন লোকটা?
সেই প্রথম স্পাইটা। যাকে আমি পেস্তা বাদাম কিশমিশ দিয়েছি। অন্য দুজন তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে।
কী সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার! লোকটা মরে গেল?
তা কে জানে! স্পাইরা চলন্ত ট্রেন থেকে অনেকবার পড়ে যায়, সাধারণত ওদের কিছু হয় না।
আর বাকি দুজন?
একে বলে বিভেদনীতি, বুঝলি। বাকি দুজনের মধ্য থেকে আমি আবার একজনকে বেছে নিয়ে ভাব জমালুম। তাকে দিলুম দু মুঠো পেস্তা, বাদাম আর কিশমিশ। সেও হাসতে-হাসতে খেয়ে নিয়ে বলল, আর আছে? ব্যস! খানিক বাদে দেখি যে অন্য স্পাইটা একে আক্রমণ করেছে, দুজনে দারুণ মারামারি শুরু হয়ে গেছে। একবার দু নম্বর জেতে, তিন নম্বর হারে, আর একবার তিন নম্বর জিতে যায়, দু নম্বর গড়াগড়ি দেয়। কামরার সব লোক দেখে-দেখে হাততালি দিতে লাগল। দুজনেই প্রায় সমান-সমান। লড়াই শেষ হল না, তার মধ্যেই ট্রেন ঢুকে গেল জয়সলমির স্টেশনে। সেখানে মেজোকুমারের লোজন অপেক্ষা করছিল, আমরা টপ করে তাদের গাড়িতে উঠে পড়লাম।
সন্তু মুচকি হেসে বলল, দারুণ গল্প, ভাল সিনেমা হয়। তুই গল্প লিখিস না কেন রে জোজো!
জোজো বলল, লিখব, লিখব, যখন লেখা শুরু করব, তখন দেখবি সব লেখকের ওপর টেক্কা দেব!
জোজো আর সন্তুর ওপরে আর নীচে বাঙ্ক। জোজো আগেই বলে রেখেছে, সে ওপরে শোবে। রাত্তিরে খাওয়াদাওয়া শেষ করার পর কামরার সবাই যখন শুয়ে পড়ার ব্যবস্থা করছে, জোজো বলল, দুজনে একসঙ্গে ঘুমোব না, বুঝলি সন্তু। দাড়িওয়ালা স্পাইটা আরও দু-তিনবার ঘুরে গেছে। ওর কী মতলব কে জানে!
সন্তু বলল, তুই এবারেও যদি অনেকটা পেস্তা, বাদাম আর কিশমিশ আনতিস সঙ্গে, তা হলে ওর সঙ্গে ভাব জমানো যেত!
জোজো এ কথাটা না-শোনবার ভান করে বলল, তুই প্রথম রাতটা ঘুমিয়ে নে, আমি জেগে পাহারা দেব। রাত দুটোর পর তুই জাগবি, আমি ঘুমোব।
সন্তু চাদর পেতে আর একটা বালিশ ফুলিয়ে শুয়ে পড়ল। স্পাই নিয়ে সে মাথাই ঘামাচ্ছে না। কাকাবাবু এবার কোনও অভিযানে যাননি, কীসব মূর্তিটুর্তি দেখতে গেছেন। আর ওরা দুজনও যাচ্ছে বেড়াতে। অন্য কেউ ওদের নিয়ে মাথা ঘামাবে কেন?
একটু পরে সে ওপরের বাঙ্কে উঁকি দিয়ে দেখল, জোজো অঘোরে ঘুমোচ্ছে। কোনওদিনই জোজো বেশি রাত জাগতে পারে না।
সন্তুও চোখ বুজে এক ঘুমে রাত কাবার করে দিল।
ঘুম ভাঙল লোকজনের চলাফেরায় আর কুলিদের চিৎকারে। একটা বড় স্টেশনে ট্রেন থেমেছে। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখল, সেই স্টেশনের নাম ওয়ালটেয়ার। সন্তু চমকে গিয়ে মহাব্যস্ত হয়ে পড়ল।
ওয়ালটেয়ার আর ভাইজাগ পাশাপাশি। এখানে নেমে ভাইজাগ যেতে হয়। জোজোকে ঠেলা মেরে সন্তু বলল, ওঠ, শিগগির ওঠ, এখানে নামতে হবে।
চোখ মুছতে মুছতে নেমে জোজো বলল, তোকে আর ডাকিনি, আমিই সারারাত জেগে পাহারা দিয়েছি। ঘুমিয়েছি তো এই মাত্র। সেই দাড়িওয়ালাটা দু-তিনবার আমাদের কাছ থেকে ঘুরে গেছে, আমি জেগে আছি দেখে-
সন্তু বলল, ভোরবেলা থেকেই গল্প শুরু করিস না জোজো। ব্রেকফাস্ট খাওয়ার আগে গল্প শোনা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়।
সন্তু জানে, কাকাবাবু এখানকার পার্ক হোটেলে সাতদিনের জন্য ঘর বুক করেছেন। সেই হোটেল থেকে কলকাতায় ফোনও করেছিলেন। স্টেশনের বাইরে এসে একজন অটো রিকশা চালককে সেই হোটেলের নাম বলতে সে কুড়ি মিনিটের মধ্যে পৌঁছে দিল।
রিসেপশন কাউন্টারে রয়েছে একটি মেয়ে। সন্তু তাকে জিজ্ঞেস করল, রাজা রায়চৌধুরীর রুম নাম্বার কত?
মেয়েটি বলল, উনি তো নেই। মিস্টার রায়চৌধুরী এই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন!
সন্তুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সাতদিনের জন্য ঘর বুক করা, আজ নিয়ে মোটে চারদিন। কাকাবাবু কোথায় চলে গেলেন?
মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, তোমাদের কি আসবার কথা ছিল? উনি কিছুই বলে যাননি তো। ওঁর কিছু জিনিসপত্র রেখে গেছেন, আবার নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন, কিন্তু ঘর ছেড়ে দিয়েছেন।
সন্তু আড়ষ্টভাবে বলল, না, আমরা হঠাৎ এসে পড়েছি। উনি অন্তত সাতদিন থাকবেন জানতাম।
মেয়েটি দুদিকে মাথা নাড়ল।
সন্তু তাকাল জোজোর দিকে। এখন উপায়!
কাকাবাবু কবে ফিরবেন, না ফিরবেন, কিছু ঠিক নেই। অনিশ্চিতভাবে এই হোটেলে দিনের পর দিন ঘরভাড়া নিয়ে থাকা যায় না। হোটেলটা বেশ বড়। সন্তু আর জোজো দুজনের কাছে মিলিয়ে সবসুন্ধু সাড়ে ছশো টাকা আছে, তাতে এখানকার একদিনের খরচও কুলোবে না। কোনও শস্তার হোটেল বা ধর্মশালা খুঁজতে হবে।
কাউন্টারের মেয়েটি বাঙালি। সে বুঝতে পেরেছে যে, এই কিশোর দুটি কোনও খবর না দিয়ে এসে বিপদে পড়েছে। সে বলল, মিস্টার রাজা রায়চৌধুরী ফিরবেন ঠিকই, তবে কবে ফিরবেন বলেননি। খুব সম্ভবত উনি আরাকু ভ্যালিতে গেছেন। তুমি কি ওঁর আত্মীয়?
সন্তু বলল, উনি আমার কাকা হন।
মেয়েটি ঝলমলে হাসিমুখে বলল, ও, তুমিই সন্তু? তোমার কথা জানি। তোমার কাকাবাবুর আমি ভক্ত। তোমরা ইচ্ছে করলে আমার বাড়িতে থাকতে পারো। ওখানে তোমাদের কোনও অসুবিধে হবে না। শুধু-শুধু কেন হোটেলে পয়সা খরচ করবে?
এখন মাত্র সাতটা বাজে। এর মধ্যেই হোটেলের লবিতে অনেক লোক ঘোরাফেরা করছে। একটু দূরে একজন লোক কাগজ পড়ছিল, সে এবার হঠাৎ উঠে এল কাউন্টারের কাছে। বেশ লম্বা। বলশালী চেহারা, মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা, দেখলে মনে হয় পুলিশ।
সেই লোকটি সন্তুকে বলল, তুমি রাজা রায়চৌধুরীর ভাইপো? উনি তো আরাকু ভ্যালি গেছেন। তোমরা সেখানে চলে যেতে পারো।
কাউন্টারের মেয়েটিও বলল, হ্যাঁ, উনি একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন আরাকু ভ্যালি এখান থেকে কত দূর।
সন্তু বলল, কত দূর?
কাউন্টারের মেয়েটি কিছু বলার আগেই লোকটি বলল, বেশি দুর নয়, ট্রেনে ঘণ্টাচারেক লাগবে। সাড়ে আটটায় ট্রেন ছাড়বে। তোমরা এখনও গেলে ধরতে পারবে। রাজা রায়চৌধুরী ওখানেই আছেন আমি জানি।
কাউন্টারের মেয়েটি বলল, ট্রেনের নাম কিরনডোল এক্সপ্রেস। আরাকু ভ্যালি এখান থেকে ১১৯ কিলোমিটার।
এখানে আর দেরি করার কোনও মানে হয় না। ওরা দুজনে হোটেল থেকে বেরিয়ে আবার একটা অটো রিকশা নিল।
জোজো জিজ্ঞেস করল, আরাকু ভ্যালিতে কী আছে রে সন্তু?
সন্তু বলল, ঠিক জানি না। ভ্যালি যখন, নিশ্চয়ই পাহাড় আছে। এখানকার সমুদ্রই দেখা হল না।
জোজো বলল, আমার পাহাড় বেশি ভাল লাগে। একবার আল্পস পাহাড়ে…
সন্তু তাকে বাধা দিয়ে বলল, দাঁড়া, স্টেশনে পৌঁছে আগে কিছু খেতে হবে।
জোজো বলল, আর একটা অটো রিকশায় আমাদের একজন ফলো করছে।
সন্তু একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিয়ে বলল, আর জ্বালাসনি তো জোজো। অনেক রিকশা আসছে! কাকাবাবু আরাকু ভ্যালিতে আছেন, এ তো কত লোকই জানে। হঠাৎ আমাদের কেউ ফলো করতে যাবে কেন?
জোজো বলল, কিছু একটা কারণ নিশ্চয়ই আছে। পেছনের রিকশার একটা লোককে আমি হোটেলে দেখেছিলুম।
সন্তু বলল, হোটেলের আর কেউ স্টেশনে যেতে পারে না?
জোজো তবু বারবার তাকাতে লাগল পেছনে।
স্টেশনে পৌঁছে ওরা আগে দুটো টিকিট কেটে নিল। এক জায়গায় গরম-গরম পুরি ভাজছে, সেখানে পাঁচখানা করে পুরি আর আলুর তরকারি খাওয়ার পর সন্তু বলল, জোজো, আরও খাবি নাকি? পেট ভরে খেয়ে নে। দুপুরে খাবার পাওয়া যাবে কি না, তা তো জানি না!
জোজো বলল, কেন, ফক্কা ভ্যালিতে খাবার পাওয়া যায় না?
সন্তু বলল, ফক্কা ভ্যালি না, আরাকু ভ্যালি। সে জায়গাটা কী রকম আমি জানি না। শহর না গ্রাম, তা জানি না। কাকাবাবু কোথায় উঠেছেন, তা জানি না। কাকাবাবু এর মধ্যে সে জায়গাটা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন, তাঁর দেখা পাব কি না জানি না।
জোজো বলল, এত জানি না বলছিস, তা হলে আমরা সেখানে যাচ্ছি। কেন?
সন্তু বলল, বাঃ, কাকাবাবুর খোঁজ করতে হবে না? এখানে শুধু-শুধু পড়ে থেকে লাভ কী?
জোজো বলল, সেখানেও যদি আমরা থাকার জায়গা না পাই?
সন্তু বলল, গাছতলায় শুয়ে রাত কাটাব। পারবি না?
জোজো ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, কেন পারব না? কত রাজা-মহারাজার বাড়িতে থেকেছি। ফাইভ স্টার হোটেলে থেকেছি। আবার গাছতলাতেও অনায়াসে থাকতে পারি।
ট্রেন এবার ছাড়বে। সিট রিজার্ভ করা নেই, যে-কোনও কামরায় ওঠা যায়। ওদের সঙ্গে একটা করে বড় ব্যাগ, কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়েছে। হাঁটতে-হাঁটতে একটা কামরা একটু ফাঁকা দেখে সন্তু উঠতে যাচ্ছে, জোজো তাকে বাধা দিয়ে বলল, এটাও নয়।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, কেন, এটা কী দোষ করল?
জোজো চোখ ঘুরিয়ে বলল, দুজন সন্দেহজনক চেহারার লোক বসে আছে।
সন্তু হেসে ফেলে বলল, আঃ জোজো, তোকে নিয়ে আর পারি না! সব জায়গায় তুই ভূত দেখছিস!
জোজো সন্তুকে টেনে নিয়ে আবার তিনটে কামরা ছাড়িয়ে, চতুর্থটায় উঠল। সেটায় বেশ ভিড়। প্রথমটায় বসবার জায়গাই পাওয়া গেল না, ট্রেন চলতে শুরু করার পর দুজনে আলাদা-আলাদা চেপেচুপে কোনওরকমে বসল। জোজোর থেকে সন্তু অনেকটা দূরে, এইরকম অবস্থায় চেঁচিয়ে গল্প করা যায় না।
বেশ কিছুক্ষণ সমতলে চলার পর ট্রেনটা উঠতে লাগল পাহাড়ে। কামরায় ভিড়ও কমে এল। দুপাশেই পাহাড়, প্রচুর গাছপালায় ভরা, অজস্র বুনো ফুল ফুটে আছে। মাঝে-মাঝে ছোট-ছোট ঝরনা কিংবা নদী। খুব ছোট্ট-ছোট্ট স্টেশনে ট্রেন থামছে, দু-একজন করে লোক নেমে যাচ্ছে, দু-একজন লোক উঠছে। অন্য কামরা থেকেও লোক যাতায়াত করছে মাঝে-মাঝে।
পাশের লোকদের সঙ্গে জোজো ভাব জমাবার চেষ্টা করেও পারল না। শহরের লোকেরা তবু কিছু কিছু ইংরেজি জানে, গ্রামের লোকেরা তো তেলুগু ভাষা ছাড়া কিছুই বোঝে না।
সন্তু বলল, তুই পাহাড় ভালবাসিস, দেখ না দুপাশটা কী সুন্দর। দার্জিলিং-এ ছোট ট্রেন, আস্তে-আস্তে যায়, এখানে বড় ট্রেন পাহাড়ের ওপর দিয়ে কত জোরে যাচ্ছে দেখেছিস? আশ্চর্য না?
জোজো বলল, আমি আপস আর রকি অ্যান্ডিজ পাহাড়ে এ রকম ট্রেনে কতবার চেপেছি!
সন্তু বলল, ধ্যানগম্ভীর ঐ যে ভূধর। নদী জপমালা ধৃত প্রান্তর। হেথায় নিত্য হের পবিত্র ধরিত্রীরে… এটা কার লেখা বল তো?
জোজো অবহেলার সঙ্গে বলে বসল, পরের লাইনটা বলে দিচ্ছি এই ভাতের মহামানবের সাগরতীরে।
সও বলল, তুই আল্পস বা রকি অ্যান্ডিজ ঘুরে আসতে পারিস। আমি তো অত জায়গায় যাইনি। আমাদের দেশেই কত অপূর্ব সুন্দর জায়গা আছে। দেখে-দেখে শেষ করা যায় না।
জোজো বলল, একটা ভুল হয়ে গেছে। বেশ কয়েক প্যাকেট বিস্কিট আর কাজুবাদাম কিনে আনা উচিত ছিল ভাইজাগ থেকে। দুপুরে আর কিছু পাওয়া
গেলে ওইগুলোই খেতাম।
সন্তু বলল, এর মধ্যেই তোর খাবার চিন্তা! এই তো কিছুক্ষণ আগে অত পুরি খেলি!
জোজো বলল, ভাল-ভাল দৃশ্য দেখলেই আমার খিদে পেয়ে যায়। এটা বিচ্ছিরি ট্রেন, কোনও ফেরিওয়ালা ওঠে না।
হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল। ট্রেন একটা টানেলে ঢুকেছে। একটু পরেই
আর-একটা।
সন্তু বলল, একবার দিল্লি থেকে সিমলা যাওয়ার সময় এ রকম টানেল দেখেছি।
জোজো বলল, ব্রাজিলে একবার ট্রেনে চেপেছিলাম, সেখানে কত যে টানেল, একত্রিশ-বত্রিশটা তো হবেই।
সন্তু বলল, এখানে কটা টানেল পড়ে, গোনা যাক তো!
জোজো বলল, কোনও স্টেশনে বাদামও পাওয়া যায় না?
সন্তু বলল, তিন নম্বর টানেল গেল!
এর পর ঘন-ঘন টানেল আসতে লাগল। কোনওটা ছোট, কোনওটা বেশ লম্বা। ট্রেন বেশ উঁচু দিয়ে চলেছে, এক-এক জায়গায় দেখা যায় গভীর খাদ, অনেক নীচে গ্রাম।
জোজো বলল, পাহাড় ভাল, কিন্তু বেশিক্ষণ ভাল নয়। এখন পৌঁছে। গেলেই ভাল লাগবে।
সন্তু বলল, তুই একত্রিশ-বত্রিশটা টানেল দেখার কথা বলেছিলি। এখানে এর মধ্যেই চৌত্রিশটা আমি গুনেছি। মনে হচ্ছে আরও আছে।
কামরায় এখন সবসুন্ধু দশ-বারোজন যাত্রী। কেউ কথা বলছে না। কয়েকজন বসে বসে ঢুলছে, দুজন মুখোমুখি বসে তাস পেটাচ্ছে। টানেলের মধ্যে ট্রেনটা ঢুকলে যখন ঘুটঘুট্টি অন্ধকার হয়ে যায়, তখন নিজের হাতটাও দেখা যায় না।
সন্তু বলল, এখানে ট্রেন লাইন বানাতে অনেক খরচ হয়েছে। এত টানেল, আবার অনেক ব্রিজও দেখলাম।
জোজো বিরক্তভাবে বলল, কয়েকটা ভাল ভাল স্টেশন আর ভাল-ভাল দোকান বানাতে পারেনি? স্টেশনগুলোর যা বিচ্ছিরি চেহারা, আমার মনে হচ্ছে সন্তু তামান্না ভ্যালিতেও কিছু পাওয়া যাবে না।
সন্তু বলল, তামান্না ভ্যালি আবার কোথায়? আমরা যাচ্ছি আরাকু ভ্যালিতে।
জোজো বলল, এক-একটা জায়গার নাম কিছুতেই মনে থাকে না। আরাকু, আরাকু, আর ভুলব না।
সন্তু বলল, তোর এরকম নিরিবিলি খুদে স্টেশন ভাল লাগে না? আমার দেখলে এমন মায়া লাগে, ইচ্ছে হয় সেখানেই নেমে পড়ি, সেখানেই থেকে যাই।
আবার একটা লম্বা টানেল, মিশমিশে অন্ধকার। ট্রেনটা আস্তে চলছে। সন্তু চুপ করে গেছে। জোজো বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারে না। সে বলল, এই টানেলটাই বোধ হয় সবচেয়ে বড়, তাই না?
সন্তু কোনও উত্তর দিল না।
জোজো বলল, দিনের বেলা অন্ধকার আমি একেবারে পছন্দ করি না।
সন্তু তাও কিছু বলল না।
ট্রেনটা আবার টানেলের বাইরে এল। দিনের আলোয় ভরে গেল কামরাটা। যেন হঠাৎ রাত্তির, হঠাৎ দিন।
জোজো দেখল উলটো দিকের সিটে সন্তু নেই।
সমস্ত কামরাটা সে চোখ বুলিয়ে দেখল, সন্তুকে খুঁজে পেল না। তা হলে নিশ্চয়ই বাথরুমে গেছে।
পাঁচ-সাত মিনিট কেটে গেল, তবু সন্তু ফিরল না। বড় বাথরুম? সন্তু কিছু বলে গেল না কেন?
অস্থিরভাবে সে উঠে গিয়ে দেখল, দুটি বাথরুমের দরজা খোলা।
জোজো চেঁচিয়ে ডাকল, সন্তু, সন্তু!
কেউ সাড়া দিল না। সন্তু কি তার সঙ্গে মজা করার জন্য লুকিয়ে পড়েছে? কোথায় লুকোবে? এর মধ্যে ট্রেন কোথাও থামেনি। জোজো বেঞ্চগুলোর তলায় উঁকি মেরে দেখল।
জোজো এবার কামরার লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, আমার বন্ধু কোথায় গেল? আপনারা কেউ দেখেছেন?
লোকগুলো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল শুধু।
হঠাৎ জোজোর সমস্ত শরীর দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল।
ট্রেন থামেনি, সন্তু ছাড়াও কামরায় তোক যেন কমে গেছে এর মধ্যে। যে-লোকদুটি তাস খেলছিল, সেই দুজনও নেই।
জোজো খোলা দরজার কাছে গিয়ে চিৎকার করে ডাকল, সন্তু, সন্তু—