আর্থনীতিক জীবন (উপনিষদ)
বিদ্যালাভের বিপুল আগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ব্যাপারেও আর্যরা সমান আগ্রহী ছিলেন; খাদ্য বা অন্নের প্রতি তারা শুধু প্রবলভাবে মনোযোগী-ই ছিলেন না, প্রকৃতপক্ষে অন্ন যেন এখানে (যেমন তৈত্তিরীয় উপনিষদ ৩ : ৭-১০) পূজাই পেয়েছে। ঐতরেয় উপনিষদে (১ : ৩ ১-১০) বলা হয়েছে যে, মানুষ ও পশুর সৃষ্টির পরে বিশ্বস্রষ্টা খাদ্যসৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু সৃষ্টির পরে অন্ন মানুষের আয়ত্তাধীন রইল না। বাক ও বিভিন্ন ইন্দ্ৰিয়ের দ্বারা মানুষ তাকে পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বায়ুর সাহায্যে মানুষ অন্নকে অধিকার করতে পারল। এই সহজ প্ৰত্নকথার মধ্যে অন্ন উৎপাদনে আদিম মানুষের সমস্যা আভাসিত হয়েছে। খাদ্যসংগ্রহ ও শিকারের স্তরে যে তীব্ৰ অনিশ্চয়তাবোধ আদিম মানুষকে পীড়িত করত, কিংবা কৃষিজীবী মানুষ যে খরা ও শস্যহানির ফলে খাদ্যবিরলতা ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় ত্ৰস্ত হ’ত, সে-সব যৌথ অবচেতনায় নিয়ত জাগরকে ছিল বলে প্ৰত্নকথার মধ্যে তা এভাবে অভিব্যক্তি লাভ করেছে। দ্রুত অন্নবৃদ্ধিই তাই কাম্য এবং অন্ন তাই সর্বজনপূজ্য।
ছান্দোগ্য উপনিষদে (১ : ১৯) পঙ্গপাল-জনিত দুর্ভিক্ষের চিত্র খুজে পাওয়া যায়, যখন এক ব্ৰাহ্মণ নিম্নবর্ণীয় ব্যক্তির নিকট সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ খাদ্য ভিক্ষা করছে। সেই ব্যক্তিই পরে রাজকীয় যজ্ঞানুষ্ঠানে দরকষাকষির মাধ্যমে কোনো দায়িত্বভার গ্রহণ করে উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে অন্নের গূঢ় তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছিল। সহৃদয় রাজা জনশ্রুতি পৌত্ৰায়ণ সর্বসাধারণের জন্য বহু অন্নসত্র নির্মাণ করে নিঃস্ব ব্যক্তিদের মধ্যে অন্ন বিতরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। অন্নবিতরণ তখন পুণ্যপ্ৰসু ও খ্যাতিলাভের উপায়রূপে বিবেচিত হ’ত। ক্ষুধা ও তৃষ্ণার (অশনায়া-পিপাসার) বিপুল ভয়কে বার বার প্রধান শত্রুরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। ঐতরেয় উপনিষদ (১ : ২) অনুযায়ী মানবদেহে অবস্থানকারী ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে দেবতার মতো প্ৰসন্ন করতে হয়।