আমি টিশাকে খুঁজে বের করতে চাই। এই বিশাল মরুভূমিতে টিশা কোথায় আছে আমি জানি না। শুধু শুনেছি সে একবার বলেছিল উত্তরে একটা বনভূমি আছে, সেখানে একটা হ্রদ আছে, টিশা সেখানে যেতে চায়। তার কাছে নাকি একটা প্রাচীন ম্যাপও আছে–আমার কাছে কিছু নেই। সত্যি কথা বলতে কি আমি উত্তর-দক্ষিণও চিনি না। শুনেছিলাম আকাশে ধ্রুবতারা বলে একটা তারা আছে সেটা উত্তর দিকে থাকে, কিন্তু আমি সেটা চিনি না। টিশা হয়তো বই পড়ে সেটা শিখেছে, আমাকে কেউ শেখায়নি। কাজেই টিশাকে খুঁজতে কোন দিকে যাব আমি জানি না।
যখন মনে হলো আমি শহর থেকে মোটামুটি নিরাপদ দূরত্বে চলে এসেছি তখন আমি আমার মোটর বাইকটা থামালাম। তারপর সেটাতে হেলান দিয়ে বসে ঠাণ্ডা মাথায় একটু চিন্তা করতে চেষ্টা করি। টিশা কোন দিকে গিয়েছে সেটা যেহেতু আমি জানি না, তাই খেয়ালখুশিমতো যে কোনো একদিকে রওনা দিয়ে লাভ নেই। আমি প্রাচীরের যে ফুটো দিয়ে বের হয়েছি, টিশাও সেই ফুটো দিয়ে বের হয়েছে, আমি যে রকম যত তাড়াতাড়ি শহর থেকে যতদূর সরে যাওয়া সম্ভব তার চেষ্টা করেছি, টিশাও নিশ্চয়ই তাই চেষ্টা করেছে। কাজেই মোটামুটি অনুমান করা যায় প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা আগে টিশা এই পথেই এসেছে। এরপর সে কোনদিকে গিয়েছে সেটা অনুমান করার কোনো উপায় নেই। টিশাকে খুঁজে বের করার আমি একটামাত্র উপায় চিন্তা করে বের করতে পারলাম, নরম বালুর উপর তার মোটর বাইকের টায়ারের চিহ্ন নিশ্চয়ই এখনো মুছে যায়নি। আমি যদি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি তাহলে নিশ্চয়ই সেটা খুঁজে বের করতে পারব। সেটা যদি খুঁজে বের করতে পারি তাহলে সেটা ধরে এগিয়ে গেলে আগে হোক পরে হোক নিশ্চয়ই টিশাকে বের করে ফেলতে পারব।
রাতের অন্ধকারে টিশার মোটর বাইকের টায়ারের চিহ্ন খুঁজে বের করা খুব কঠিন, দিনের আলোতে সেটা অনেক সহজ। কিন্তু যতই দেরি হবে টিশা নিশ্চয়ই আরো বেশি দূরে চলে যাবে–কাজেই আমার হাতে নষ্ট করার মতো সময় একেবারেই নেই। আমি তাই দেরি না করে তখন তখনই কাজে লেগে গেলাম।
মোটর বাইকের হেডলাইট জ্বালাতেই সামনে অনেকখানি জায়গা আলোকিত হয়ে গেল। আমি তখন হাঁটুতে ভর দিয়ে বালুর উপর টায়ারের চিহ্ন খুঁজতে থাকি। কাজটি কঠিন কিন্তু আমি হাল ছেড়ে দিলাম না, নিজের ভেতর কেমন যেন বিশ্বাস ছিল যে আগে হোক পরে হোক আমি টিশার মোটর বাইকের টায়ারের চিহ্ন খুঁজে পাবই।
কোথা থেকে শুরু করেছি সেটা মনে রাখার জন্য সেখানে অনেকগুলো ছোট-বড় পাথরের টুকরো জমা করে একটা বৃত্ত তৈরি করে রাখলাম। যেদিক থেকে এসেছি সেদিকে একটা তিরচিহ্ন দিয়ে আমি তার সাথে লম্বভাবে টিশার মোটর বাইকের টায়ারের চিহ্ন খুঁজতে থাকি। খানিকটা দূরত্ব খোজা হলে আমি মোটর বাইকটা ঠেলে আরেকটু সামনে নিয়ে গিয়ে তার হেডলাইটের আলোতে আবার খুঁজতে থাকি।
এভাবে কত ঘণ্টা খুঁজেছি জানি না। একসময় আমার পিঠ এবং ঘাড় ব্যথা করতে থাকে। ঠিক কী কারণ জানা নেই আমার সে রকম খিদে পায়নি কিন্তু তারপরেও আমি একটু শুকনো খাবার এবং অল্প এক ঢোক পানি খেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বালুর উপর শুয়ে থাকলাম। ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র, আমি অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমাদের ঘিঞ্জি শহরের কেউ কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে কখনো কোনো নক্ষত্র দেখেছে বলে মনে হয় না।
এই প্রত্যেকটা নক্ষত্রের নাকি একটি করে নাম রয়েছে–আমি একটিরও নাম জানি না। কে জানে টিশা হয়তো এই নক্ষত্রগুলোর কোনো কোনোটির নাম জানে। আমি ঠিক মাথার উপরে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা একটা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিশ্চয়ই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ কেন জানি আমার ঘুম ভেঙে গেল, আমি উঠে বসলাম এবং দেখলাম আমার কাছাকাছি অন্ধকারে একা প্রাণী দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে প্রাণীটাকে চেনা যায় না কিন্তু তার। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। আমি ভয়ে আতঙ্কে উঠে বসতেই প্রাণীটা দুই পা পিছিয়ে গেল কিন্তু একেবারে সরে গেল না। স্থির দৃষ্টিতে সেটি আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি কাঁধ থেকে অস্ত্রটা নিয়ে জন্তুটার দিকে তাক করতেই সেটা হঠাৎ করে দৌড়ে পালিয়ে গেল।
আমি আবার বালুতে শুয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। ঠিক মাথার উপর মিটমিট করে জ্বলতে থাকা উজ্জ্বল নীলাভ নক্ষত্রটি সেখানে নেই। কী আশ্চর্য, সেটি কোথায় চলে গেল? একটু মাথা ঘোরাতেই সেটাকে পেয়ে গেলাম। নক্ষত্রটি একটু বাম দিকে হেলে গেছে। কী আশ্চর্য, কেউ আমাকে কখনো বলেনি চাঁদ এবং সূর্যের মতো নক্ষত্রও আকাশে এক দিক থেকে অন্যদিকে হেলে পড়ে। আমি এই সহজ বিষয়টাও জানতাম না–টিশা নিশ্চয়ই জানে!
আমি আবার উঠে মরুভূমির বালুতে টিশার মোটর বাইকের। টায়ারের চিহ্ন খুঁজতে শুরু করি। যত কষ্টই হোক, যত কঠিনই হোক আমি সেটা খুঁজে বের করবই করব।
আমি কতক্ষণ এভাবে খুঁজেছি জানি না। যখন পূর্ব আকাশ একটু একটু আলো হতে শুরু করেছে তখন আমার প্রথম মনে হলো আমি। বালুতে খুব হালকা একটা টায়ারের দাগ দেখতে পেয়েছি। আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাগটা পরীক্ষা করলাম, যদি সত্যি এটা টিশার মোটর বাইকের টায়ারের চিহ্ন হয়ে থাকে তাহলে সামনে এবং পেছনেও এটা খুঁজে পাওয়া যাবে।
আমি আমার মোটর বাইকটা টেনে কাছে নিয়ে এসে আলোটা সামনের দিকে ছড়িয়ে দিলাম, তারপর সেই আলোতে সামনে গিয়ে টায়ারের দাগটা খুঁজতে থাকি। আমার বুক তখন উত্তেজনায় ধক ধক করছে, মনে হচ্ছে যদি সামনে এর চিহ্ন খুঁজে না পাই? যদি দেখি এটা আসলে মোটর বাইকের টায়ারের চিহ্ন না, এটা আসলে অন্য কিছু?
আমি বিড় বিড় করে নিজেকে বললাম, “এটা যদি নাও হয় ক্ষতি নেই। আমি তবু খোঁজা বন্ধ করব না। আমি খুঁজতে থাকব, খুঁজতে থাকব আর খুঁজতে থাকব। যতক্ষণ টিশাকে খুঁজে না পাব আমি খোজা থামাব না।”
মোটর বাইকের হেডলাইটের আলোতে আমি সামনে এগিয়ে গেলাম, সত্যি সত্যি নরম বালুতে আমি আবার মোটর বাইকের টায়ারের দাগ পেয়ে গেলাম। আমার বুকে রক্ত ছলাত করে উঠল, উত্তেজনায় আমার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। আমি মোটর বাইক টেনে আরো সামনে নিয়ে গেলাম, আরো সামনে খুঁজে আবার মোটর বাইকের টায়ারের চিহ্ন পেলাম। টিশা যে হালকা ছোট একটা মোটর বাইক নিয়েছে এটা ঠিক সে রকম মোটর বাইকের টায়ারের চিহ্ন।
আমি তখন বালুতে বসে পড়লাম। হাঁটুতে ভর দিয়ে বালুর উপর সাবধানে এই চিহ্ন খুঁজে বের করা গেছে কিন্তু এই চিহ্ন ধরে মোটর বাইক চালিয়ে যেতে হলে আরো আলো দরকার। আমাকে সূর্য ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি মোটর বাইকের হেডলাইট নিভিয়ে তার পাশে বালুতে শুয়ে পড়লাম। সারারাত ঘুমাইনি, কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলে খারাপ হয় না। উত্তেজনায় আমার বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ড ধক ধক করছে, আমি ভেবেছিলাম আমার চোখে ঘুম আসবে না। কিন্তু নরম বালুর উপর মাথা রাখতেই রাতের মরুভূমির শীতল বাতাস আমার সারা শরীর জুড়িয়ে দিল এবং কিছু বোঝার আগেই আমার দুই চোখে ঘুম নেমে এল।
আমি কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না, হঠাৎ করে আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙার পরও পুরোপুরি জেগে উঠতে আমার খানিকক্ষণ সময় লাগে, আজকে কিন্তু আমি মুহূর্তে পুরোপুরি জেগে উঠলাম। পূর্ব আকাশে সূর্য উঠে দিগন্তের উপরে চলে এসেছে। চারিদিকে একটা নরম আলো, আমি জানি দেখতে দেখতে এটা ভয়ংকর উত্তপ্ত একটা দিনে পাল্টে যাবে। আমি আমার খাবারের প্যাকেট থেকে এক টুকরো শুকনো রুটি আর প্রোটিনের টুকরো বের করে চিবিয়ে খেয়ে নিলাম। তারপর পানির বোতল থেকে খুব সাবধানে দুই ঢোক পানি খেলাম। তারপর মোটর বাইকে উঠে সেটা নিয়ে ছুটে চলোম।
টিশার টায়ারের চিহ্ন ধরে আমি ছুটে যেতে থাকি। বালুর উপর টায়ারের চিহ্ন কোথাও স্পষ্ট, কোথাও অস্পষ্ট। যখন পাথুরে এলাকা আসে তখন হঠাৎ করে টায়ারের চিহ্ন থাকে না। তখন মোটর বাইক থেকে নেমে আবার ভালো করে খুঁজতে হয়। আমি মোটর বাইকের চিহ্ন ধরে যেতে যেতে ধীরে ধীরে টিশার মোটর বাইক চালানোর কায়দাটুকু মোটামুটি বুঝে ফেলেছি। ঘণ্টা দুয়েক চালানোর পর সে মোটর বাইক থামিয়ে বিশ্রাম নেয়। রোদ যখন কড়া হয়ে উঠেছে তখন সে বড় বড় পাথরের ছায়ার আড়ালে বিশ্রাম নিয়েছে। এক জায়গায় তাকে বালুতে শুয়ে পড়তেও দেখেছি। হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলে এসেছে, রক্তপাত বন্ধ করার জন্য সে ঘেঁড়া কাপড় দিয়ে হাত বেঁধে রেখেছে। রক্তে মাখামাখি সে রকম ছেঁড়া কাপড়ের টুকরোও পেয়েছি।
মোটর বাইক চালিয়ে যেতে যেতে টিশা যে ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে গেছে সেটাও আমি বুঝতে পেরেছি। তার মোটর বাইকের গতি কমে এসেছে, সোজা না গিয়ে সে এলোমেলোভাবে গিয়েছে। একটু পরপর বিশ্রাম নিয়েছে। আমি বুকের ভেতর টিশার জন্য অদ্ভুত এক ধরনের মায়া অনুভব করতে থাকি। আগে কখনোই আমি কারো জন্য এরকম অনুভব করিনি।
ধীরে ধীরে রোদটা মাথার উপর উঠে এল। প্রচণ্ড গরমে আমার জিব শুকিয়ে আসে, মনে হয় যতটুকু পানি আছে সেটা ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলি। কিন্তু আমি খেলাম না, উঁচু হয়ে থাকা একটা বড় পাথরের ছায়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে দুই ঢোক পানি খেয়ে আবার ছুটে যেতে থাকি।
আমি এক ধরনের শঙ্কা নিয়ে লক্ষ করলাম ধীরে ধীরে টিশার মোটর বাইক চালানোটুকু এলোমেলো হতে শুরু করেছে, সে কোন দিকে যাচ্ছে মনে হয় যেন নিজেও ভালো করে জানে না–শুধু তাই নয় একসময় মনে হলো সে বৃত্তাকারে ঘুরছে। এক জায়গায় মনে হলো সে একটা পাথরে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেছে। মনে হলো সে কিছুক্ষণ নিচে পড়ে ছিল, তারপর কষ্ট করে উঠেছে, আবার খানিকদূর গিয়েছে, আবার থেমেছে। আবার গিয়েছে।
আমি নিজেও আর যেতে পারছিলাম না। মরুভূমির ভয়ংকর রোদ থেকে রক্ষা করার জন্য কিছু আনিনি। গরম বাতাস আগুনের হলকার মতো আমার চোখে-মুখে লাগছে। প্রচণ্ড তৃষ্ণায় আমার বুক ফেটে যেতে চাইছে। খুব সাবধানে মুখে কয়েক ফোঁটা পানি দিয়েছি–জিব শুকিসে। কিন্তু আমিধশ্রাম নিয়ে।
আমি পানি খেয়ে শেষ করতে চাই না। আমি যদি টিশাকে খুঁজে পাই তাহলে এই পানি আমার থেকে বেশি দরকার হবে টিশার।
আমি রোদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য একটা বড় পাথরের ছায়ায় দাঁড়ালাম। প্রচণ্ড রোদে চারদিক ঝলসে যাচ্ছে। দিগন্ত বিস্তৃত বালু ধিকি ধিকি করে কাঁপছে। আমি দূরে তাকালাম, হঠাৎ মনে হলো বহুদূরে বালুতে কিছু একটা চকচক করছে। আমি চমকে উঠলাম–ওটা কি টিশার মোটর বাইক, নাকি আমার চোখের ভুল? এতদূর থেকে সেটা স্পষ্ট দেখা যায় না, শুধু রোদে মাঝে মাঝে একটুখানি চকচক করছে। আমি আর দেরি না করে মোটর বাইকে উঠে প্রায় গুলির মতো ছুটে যেতে থাকি, যতই কাছে যেতে থাকি ততই জিনিসটা স্পষ্ট হতে থাকে এবং কিছুক্ষণের মাঝেই বুঝে গেলাম এটা আসলেই টিশার মোটর বাইক, কাত হয়ে পড়ে আছে। আমি কাছে গিয়ে থামলাম, টিশার পায়ের ছাপ। মোটর বাইক থেকে নেমে সে এলোমেলোভাবে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কাছাকাছি অনেকগুলো বড় বড় পাথরের স্তৃপ। টিশা নিশ্চয়ই এই পাথরের আড়ালে একটু ছায়ার মাঝে আশ্রয় নিয়েছে। আমি আমার মোটর বাইক থামিয়ে চিৎকার করে ডাকলাম, “টিশা! টি–শা…”
কোনো প্রত্যুত্তর শোনা যায় কি না তার জন্য আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু কিছু শুনতে পেলাম না। আবার আমি গলা ফাটিয়ে ডাকলাম, কেউ উত্তর দিল না। তখন আমি পাথরের স্কুপের কাছে ছুটে যেতে থাকি। কাছাকাছি গিয়ে একটু ঘুরতেই আমি টিশাকে দেখতে পেলাম, শক্ত পাথরের উপর দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। জীবন আছে কি নেই বোঝা যাচ্ছে না। আমি চিৎকার করতে করতে ছুটে গেলাম, তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে হাতটা ধরলাম, গলার কাছে হাত দিয়ে দেখলাম খুব ক্ষীণভাবে তার পালসটি বোঝা যায়। এখনো বেঁচে আছে। টিশার চোখ দুটো বন্ধ, মুখটা অল্প একটু খোলা, শুকনো নীল ঠোঁট। নিঃশ্বাস নিচ্ছে কি নিচ্ছে না বোঝার উপায় নেই।
আমি টিশাকে সেখানে রেখে আবার পাগলের মতো আমার বাইকের কাছে ছুটে গেলাম, সেটাতে বসে আমি চালিয়ে টিশার কাছে নিয়ে আসি। পেছন থেকে খাবার আর পানির বোতলগুলো নিয়ে আমি টিশার কাছে এলাম। একটা বোতল খুলে সেখান থেকে একটু পানি টিশার মুখের মাঝে ঢেলে দিলাম। হাতে একটু পানি নিয়ে আমি তার মুখটা মুছে দিয়ে চিৎকার করে ডাকলাম, “টিশা! টিশা! একবার তাকাও!”
টিশা তাকাল না। আমি আরো একটু পানি তার মুখে ঢেলে দিলাম, তখন সে প্রথমবার একটু নড়ে উঠল, তার ঠোঁট দুটো একটু কেঁপে উঠল। সে সাবধানে চোখ খুলে তাকাল, আমি তার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বললাম, “টিশা! দেখো আমি রিহি!”
টিশা ফিসফিস করে বলল, “রিহি?”
“হ্যা”
টিশা বিড়বিড় করে বলল, “স্বপ্ন এটা স্বপ্ন। এটা সত্যি না।” তারপর আবার তার চোখ বন্ধ করল।
আমি আবার চিৎকার করে বললাম, “এটা স্বপ্ন না টিশা। এটা সত্যি, এই দেখো আমি এসেছি।”
টিশা আবার চোখ খুলে তাকাল, তারপর ফিসফিস করে বলল, “এটা সত্যি?”
“হ্যাঁ, এটা সত্যি।”
“তুমি সত্যি?”
“হ্যাঁ, আমি সত্যি। আমাকে ছুঁয়ে দেখো।”
টিশা তার ডান হাতটা একটুখানি তুলে আমাকে ধরার চেষ্টা করল, পারল না। তখন আমি তার হাতটা শক্ত করে ধরলাম। টিশা বলল, “আমি বেঁচে আছি? আমি মরে যাইনি?”
“না, তুমি মরে যাওনি টিশা। তুমি বেঁচে আছ।”
এই প্রথম টিশা সত্যিকারভাবে আমার চোখের দিকে তাকাল, তারপর বলল “রিহি।”
“বলো টিশা।”
“তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?”
“না। আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না।”
“তুমি আর আমি যাযাবর হয়ে যাব?”
এই প্রথম আমি একটু হাসলাম, বললাম, “আমি আর তুমি যাযাবর হয়ে গেছি টিশা!”