০৬. আমাকে কেন টানাহ্যাঁচড়া করছেন

আমাকে কেন টানাহ্যাঁচড়া করছেন? যা হয়েছিল হয়েছিল। পাস্ট ইজ পাস্ট। মিতালির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

লেখাপড়া কতদূর?

মাধ্যমিক।

তা হলে তো তোমাকে শিক্ষিতই বলতে হয়। পাশ করেছিলে?

জি।

কোন ডিভিশনে?

বললে বিশ্বাস করবেন? বলে কী লাভ?

শুনিই না।

ফার্স্ট ডিভিশনে।

বলো কী।

অঙ্কে আর ইতিহাসে লেটার ছিল।

উরেব্বাস।

জানতাম বিশ্বাস করবেন না। তবে সার্টিফিকেট আর মার্কশিট দুটোই আমার মায়ের কাছে আছে। মা ঠাকুরের আসনে তোশকের তলায় রেখে দিয়েছে।

পড়াশুনো আর এগোয়নি?

না। পড়ে কী হবে?

কলেজে ভরতি হয়েছিলে?

তাও হয়েছিলাম। তবে কন্টিনিউ করিনি।

কেন?

পড়াশুনো ফালতু জিনিস। পড়ে উন্নতি করতে গেলে লোকে বুড়ো হয়ে যায়। অত সময় কি হাতে আছে?

বটে! তা তুমি কীসে উন্নতি করতে চেয়েছিলে?

মালটাল বেচতাম।

কী মাল?

সেসব স্যার, পুরনো কাসুন্দি। ও ঘেঁটে লাভ নেই। এই কেসটায় কুটমুট আমাকে ধরেছেন।

সেটা দেখা যাবে। মিতালিকে চিনতে?

চিনব না কেন? সে আমার বউ ছিল।

বিয়ে হয়েছিল?

কালীঘাটে।

রেজিস্ট্রি হয়নি?

না। ও তখন মাইনর ছিল।

তাও তো বটে। কতদিন একসঙ্গে ছিলে?

পাঁচ-ছয় মাস হবে।

তুমি ওকে মারধর করতে?

না। মারব কেন? তখন আশনাই চলছিল।

আশনাই কেটে গেল কেন?

মিতালিই বিগড়ে গেল। ওয়ান ফাইন মর্নিং ঘুম থেকে উঠে বলল, আমি ফিরে যাচ্ছি।

তুমি কী করলে?

কী করব! হাই তুলে পাশ ফিরে শুলাম।

আটকাবার চেষ্টা করলে না?

কী লাভ! ভদ্রলোকের মেয়ে, একটু টক-ঝালের খোঁজে এসেছিল। টেকার বিয়ে নয়, জানতাম।

তোমার জন্য ওর জীবনটা বরবাদ হয়ে গিয়েছিল, জানো?

কেন স্যার, আমি কী করলাম? আশনাই তো আমি একা করিনি। ওরও ভূমিকা ছিল।

কোথায় বাসা করে ছিলে?

গোবিন্দপুর বস্তিতে।

পরে মিতালিদেবীর খোঁজখবর করোনি?

খোঁজার কী আছে স্যার? পাড়ারই মেয়ে। সব খবরই পেতাম।

বটে! মিতালিদেবীর যে বিয়ে হয়েছিল, উনি যে আমেরিকায় ছিলেন সব জানতে?

ঘ্যাম মেয়ে। সব জানতাম।

তোমার হিংসে হত না?

না স্যার। হিংসেফিংসে হয়নি। ওসব মেয়ে কি আমার মতো লোকের জন্য? শখ হয়েছিল, তাই কেটে এসেছিল। তারপর শখ মিটে গেলে কেটে গেল।

মিতালি যে আমেরিকা থেকে ফিরে এসেছিল তা জানতে?

কেন জানব না? বরুণবাবু মারা গেলেন তাও জানি।

তুমি কী করো? চাকরি?

কিছুদিন করেছিলাম। ব্যাঙ্কে ধোয়ামোছার কাজ। ক্যাজুয়াল স্টাফ। পোষাল না। ধূপকাঠি, লজেন্স, গেঞ্জি-আন্ডারওয়্যার এসবও বেচেছি। কিন্তু সৎপথে কিছু হল না। এখন টুকটাক করি আর কী।

অসৎ পথে?

পুলিশ সব জানে স্যার। নতুন কিছু নয়।

মিতালিদেবীর সঙ্গে এবার তোমার দেখা হয়েছিল?

হাসালেন স্যার। মিতালি আমাকে পাত্তা দেবে কেন? পাস্ট ইজ পাস্ট।

মিঠু মিত্রকে চেনো?

মিতালির হাজব্যান্ড তো! চিনি স্যার।

কীরকম চেনো?

খুব ভাল লোক স্যার। ট্যাক্সির জন্য লোনটা তো উনিই বের করে দিয়েছিলেন?

তোমার ট্যাক্সিও আছে নাকি?

ছিল স্যার। গত মাসে বেচে দিয়েছি।

মিঠু মিত্র তোমাকে চিনত? মানে তোমার সঙ্গেই যে মিতালি পালিয়ে গিয়েছিল তা জানত?

কেন জানবেন না?

জেনেও তোমাকে হেল্প করেছেন?

হ্যাঁ, জেনেই করেছেন। মিতালি তো দু’জনের কাছ থেকেই ভেগেছে স্যার। আমরা লড়ে কী করব?

মিঠু মিত্র তা হলে তোমার মতে ভাল লোক?

জি।

তুমি জি বলছ কেন?

হিন্দি ছবিতে বলে, তাই এসে যায়।

ধরো যদি তোমাকে বলি, মিঠু মিত্র কোনও কাজ করতে বললে তুমি করবে?

করব স্যার।

যদি একটা খারাপ কাজ করতে বলে?

খারাপ নানারকমের হয়। ভদ্রলোকের চোখে খারাপ, পুলিশের চোখে খারাপ, কেরানির চোখে খারাপ। সব খারাপই তো একরকম নয় স্যার। ওজন করে দেখতে হবে।

তুমি তো ফিলজভার দেখছি।

জি।

পড়াশুনো করলে উন্নতি করতে পারতে।

পাস্ট ইজ পাস্ট। ছেড়ে দিন।

ছাড়লাম। নিশ্চয়ই জানো যে, মিতালিদেবী খুন হয়েছে।

জানি। স্যাড কেস।

কীভাবে জানলে?

সবাই জানে। আমার না জানার কী?

ঠিক কথা। কীভাবে খুন হয়?

স্ট্যাবিং।

আচ্ছা, তুমি যখন মিতালিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলে তখন বরুণ ঘোষ কি পুলিশে রিপোর্ট করেছিলেন?

হ্যাঁ স্যার।

পুলিশ তোমাকে অ্যারেস্ট করেছিল?

করেছিল। মিতালি চলে আসার পর।

তোমার কি জেল হয়েছিল?

না। জামিন পেয়েছিলাম। পুলিশ কেসটা পার করেনি।

কেন করেনি?

বরুণবাবু বোধহয় পাবলিসিটির ভয়ে পিছিয়ে যান।

পুলিশ তোমাকে মারধর করেছিল?

জি।

তোমার রাগ হয়নি?

না স্যার। কার ওপর রাগ করব? আমাদের লাইফটাই এরকম।

মিঠু মিত্রের সঙ্গে তোমার দোস্তি কীভাবে হয়েছিল?

ঠিক মনে নেই।

একটু ভেবে বলল। ব্যাপারটা জরুরি।

যতদুর মনে আছে উনি আমাকে খুঁজে বের করেছিলেন।

সেটা কি ওঁদের বিয়ের আগে, না পরে?

বিয়ের পর।

কতদিন পর?

মিতালি ওঁকে ছেড়ে চলে আসার পর।

মিঠু মিত্র তোমাকে খুঁজে বের করেছিলেন কেন?

ওঁর একটা রং আইডিয়া ছিল।

কীরকম?

উনি ভেবেছিলেন আমি মিতালিকে পিছন থেকে ফুসলাচ্ছি, তাই মিতালি ওঁর সঙ্গে থাকতে চায় না।

উনি কি তোমাকে থ্রেট করেছিলেন?

না স্যার।

তা হলে?

উনি আমাকে খুব ঠেঙিয়েছিলেন।

বলো কী? তোমার গায়ে হাত! তুমি তো মস্তান।

জি। তবে বাবারও বাবা থাকে কিনা। উনি তখন রেগে বয়লার হয়ে গিয়েছিলেন।

তুমি উলটে মারোনি?

ক্যারাটে কুংফুর সঙ্গে কি পারা যায়?

তোমার দলবল?

দু-চারজন দোস্ত একটু হাত-পা চালিয়েছিল। সুবিধে হয়নি।

তারপর?

তারপর উনি ভুল বুঝতে পারেন।

তারপরই দোস্তিটা হয়ে গেল?

অনেকটা সেরকমই। একটু সময় লেগেছিল।

দোস্তিটা কি এখনও আছে?

একটু আছে। দেখা হলে উইশ করি।

মিঠুর সঙ্গে লাস্ট কবে তোমার দেখা হয়েছে?

ঠিক মনে নেই।

ভেবে বলল।

ওইরকম সময়েই হবে।

কোনরকম সময়ে?

মিতালির মার্ডারের দিনের কাছাকাছি।

নাকি ওই দিনই?

তাও হতে পারে।

কখন দেখা হয়েছিল?

বিকেলের দিকে। কীভাবে?

আমি মন্টুর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। উনি মোটরবাইকে করে চলে যাচ্ছিলেন।

তোমার সঙ্গে কথা হয়েছিল কি সেদিন?

না। উনি দেখতে পাননি আমাকে।

তুমি তো নিশ্চয়ই জানো যে, মার্ডারটা হয়েছিল দোতলায়, মিতালিদেবীর শোয়ার ঘরে। রাত একটা থেকে দুটোর মধ্যে।

জি। সব জানি। খবরের কাগজে পড়েছি।

এ পাড়ায় নাইট গার্ডরা রাতে পাহারা দেয়?

জি। আমিও দিই। বহুত চোরছ্যাঁচড় চারদিকে।

সেই রাতে তোমারও কি ডিউটি ছিল?

না স্যার। আমাদের মাসে দু’দিন টার্ম আসে। তবে নাইট গার্ডরা সেদিন রাতে কোনও কিছু সন্দেহজনক দেখেনি।

তুমি সেদিন কোথায় ছিলে?

ঘরেই ছিলাম।

তোমার কোনও গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে?

ওরকমই ধরে নিন।

তদন্তে কিন্তু তাকেও দরকার হতে পারে। তার নাম-ঠিকানা বলো।

ঠিকানাফিকানা জানি না স্যার। নাম বলেছিল রীতা দাস।

কীরকম মেয়ে? প্রস্টিটিউট না কল গার্ল?

একটু অন্যরকম।

কীরকম?

একটু হায়ার ক্লাসের।

তোমরা কোথায় ছিলে?

পঁয়তাল্লিশ নম্বর বাড়ির পিছন দিকে আমার ঠেক। সেখানেই ছিলাম।

মেয়েটা কোথায়?

নেই। পরদিন সকালে উঠে দেখি, হাওয়া।

হাওয়া? তোমাকে বলে যায়নি?

না স্যার। রাত্তিরে আমার ঘুমটা একটু গাঢ় হয়। টের পাইনি।

তার সঙ্গে কবে তোমার প্রথম দেখা হয়?

দু’দিন আগে।

কীরকম ভাবে দেখা হয়েছিল?

আমি একটু আধটু ড্রিঙ্ক করি। একটা দিশি মদের আস্তানায়। সেখানেই।

কে আলাপ করেছিল? তুমি না ও?

মেয়েটাই।

বারটা কোথায়?

বার নয় স্যার, ঠেক। কাছেই, ভবানীপুরে।

তাকে আগে কখনও দেখেছ?

না।

একটু ছোটখাটো ছিপছিপে চেহারা কি?

হ্যাঁ। আপনি চেনেন স্যার?

চিনি বলেই মনে হচ্ছে। এবার খুব ভাল করে ভেবে জবাব দাও। সেদিন–মিতালিদেবীর খুনের দিন তুমি কখন ড্রিঙ্ক করতে শুরু করেছিলে?

রাত আটটার পরই সাধারণত আমি খাই।

ঘরে বসে খাচ্ছিলে?

হ্যাঁ।

মেয়েটাও খাচ্ছিল কি?

একটু আধটু।

কখন শুতে গিয়েছিলে?

ঘড়ি দেখিনি। তবে সেদিন মালটা বেশি টেনে ফেলেছিলাম স্যার।

সময়টা বলতে পারবে না?

বোধহয় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রীতা একটা পাঞ্চ তৈরি করেছিল। দারুণ জিনিস।

পাঞ্চ?

হ্যাঁ। দু-তিনরকম মদ মিশিয়ে।

.

যে লোকটা দরজা খুলল সে একজন চিনেম্যান চেহারার লোক। বেশ স্বাস্থ্যবান। শবর তার দিকে দু’সেকেন্ড চেয়ে রইল।

হু ডু ইয়া ওয়ান্ট?

এটা কি তোমার ঘর?

অফ কোর্স!

এখানে রীতা দাস বলে কেউ থাকে?

নো। আই লিভ অ্যালোন।

জুলেখা শর্মা বলে কেউ?

নো। হু দি হেল আর ইউ?

পুলিশ ইন্টেলিজেন্স।

মাই গড! কাম ইন।

ঘরে ঢুকে শবর চারদিকে চেয়ে দেখে নিল। বোর্ডিং হাউসের ঘর যেমন হয় তেমনই। দশ বাই বারো মাপেরই হবে। দেয়ালে খুব চড়া রঙের ওয়ালপেপার লাগানো। একটা সরু খাট, টেবিলের ওপর একটা স্টিরিয়োতে মাইকেল জ্যাকসনের ক্যাসেট বাজছে, একটা ওয়ার্ডরোব এবং নিত্য ব্যবহার্য কিছু জিনিস। একটা লোহার চেয়ার এগিয়ে দিয়ে লোকটা বলল, প্লিজ সিট ডাউন। তোমার বয়স কত?

থার্টি সিক্স।

ম্যারেড?

নট ইয়েট। নো মানি টু ম্যারি।

কী করো?

এলিট সিনেমার গলিতে আমার ব্যাগ তৈরির কারখানা আছে। এ ভেরি স্মল এন্টারপ্রাইজ।

তুমি ইন্ডিয়ান সিটিজেন?

অফ কোর্স!

এ ঘরে কত দিন আছ?

লাস্ট টেন ইয়ার্স।

রীতা দাস বা জুলেখা শর্মা নামের কোনও মেয়েকে চেনো?

না।

এ ঘরে কোনও মেয়ে আসে?

না। ওসব এখানে হয় না।

তা হলে কোথায় হয়?

ইফ আই নিড এ গার্ল আই গো টু হার।

থ্যাঙ্ক ইউ।

.

আপনার নাম?

সুনীতা রায়।

আপনি এই স্কুলের ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর?

হ্যাঁ।

কতদিন এখানে কাজ করছেন?

এগারো বছরেরও বেশি।

জুলেখা শর্মা বলে কেউ এখানে কাজ করে না বলছেন?

না। কোনওদিন নয়।

ছোটখাটো ছিপছিপে চেহারা, পুলিশ অফিসারের নাতনি।

না। এরকম কেউ এখানে কাজ করে না।

আপনাদের সব স্টাফ আজ উপস্থিত আছেন কি?

হ্যাঁ। ফুল স্টাফ।

আমি তাদের দেখতে পারি কি?

পারেন। তবে অনেকে এখন ক্লাসে আছেন।

আমি অপেক্ষা করব।

ওকে।

***

নমস্কার জয়িতাদেবী।

নমস্কার।

আমাকে দেখে আপনি বোধহয় খুশি হননি। পুলিশের দুর্ভাগ্য, তাদের দেখে কেউ খুশি হয় না।

না না, আপনি তো আপনার কাজ করছেন। বসুন।

আজ খুব বেশি জেরা করার নেই। শুধু দু’-একটা প্রশ্ন।

বলুন।

মিতালিদেবীর ঘর থেকে খুনের রাতে কিছু জিনিস খোয়া যায়।

জানি। শুনেছি।

অনেক সময়ে খুনি তার মোটিভ ঢাকতে চুরিটা সাজিয়ে নেয়। আমাদের অ্যাঙ্গেল অফ এনকোয়ারিতে তাই আমরা চুরিটাকে গুরুত্ব দিইনি। উনি কলকাতা কাস্টমসে যে ডিক্লেয়ারেশন দিয়েছিলেন তাতে দেখছি উনি সঙ্গে মাত্র দুশো ডলার এনেছিলেন। একটা হার আর বালা ছাড়া সোনাদানাও বিশেষ ছিল না। ওঁর সব গয়না আমেরিকায় এবং কলকাতায় ব্যাঙ্কের লকারে আছে। সুতরাং চুরির পরিমাণ বেশি নয়। এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলতে পারেন?

পারি। মিতালিদির হ্যান্ডব্যাগে দশ হাজার ডলার ছিল।

দশ হাজার? বলেন কী?

টাকাটা উনি আমাকে দেখিয়েছিলেন।

সেই হ্যান্ডব্যাগটায় আর কী ছিল?

কয়েকটা গয়না।

অত ডলার উনি এনেছিলেন কেন জানেন? বিশেষ করে যখন এখানেও ব্যাঙ্কে ওঁর প্রচুর টাকা রয়েছে?

জানি। মিতালিদি একটু অগোছালো টাইপের। একটু আনমনাও। ভারতবর্ষে আসার সময়ে, প্লেন ধরার আগে বাড়ি থেকে বেরোবার মুহূর্তে ও দেখতে পায়, বিছানায় বালিশের তলায় ডলারের গোছাটা পড়ে আছে। টাকাটা ফেলে এলে চুরি যাওয়ার ভয় ছিল। তাই তাড়াতাড়িতে হ্যান্ডব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। হ্যান্ডব্যাগটা কি চুরি গেছে?

না। তবে ডলার আর গয়না চুরি হয়েছে।

ইস, অনেক টাকা, না?

হ্যাঁ। চুরির অ্যাঙ্গলটাকে আমরা এখন একটু গুরুত্ব দিচ্ছি। আপনার কি মনে পড়ে, মিতালিদেবী দেশে আসার পর কোনও মেয়ে ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল কি না?

অনেক মেয়ে এসেছিল। ওর বান্ধবীরা। রোজই তো আসত।

তাদের কথা বলছি না। বান্ধবী নয় এমন কেউ?

আমি তো সবসময়ে বাড়িতে থাকতাম না।

ছোটখাটো ছিপছিপে চেহারার একটি মেয়ে? মাজা রং?

মনে পড়ছে না।

ভাল করে ভাবুন।

জয়িতা ভাবল। তারপর মাথা নেড়ে বলল, না। তবে—

তবে?

একদিন একটা ফোন এসেছিল।

হ্যাঁ বলুন।

ফোনটা করেছিল একটা মেয়ে। আমিই ফোন ধরেছিলাম। মিতালিদিকে চাইছিল বলে আমি ওকেই ফোনটা দিই। অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। মিতালিদি ফোনটার পর খুব রেগে গিয়েছিল। আমাকে বলল, কী যাচ্ছেতাই ব্যাপার বল তো! এ তো ব্ল্যাকমেল।

বটে? আপনি জানতে চাননি কে ফোনটা করেছিল?

চেয়েছিলাম। মিতালিদি বলল, একটা বাজে মেয়ে। চিনি না। খারাপ খারাপ কথা বলছিল।

ব্যস! আর কিছু নয়?

না। ব্যাপারটা মিতালিদি তেমন পাত্তা দিল না। তবে খুব রেগে গিয়েছিল, এটা মনে আছে।