৬৮তম অধ্যায়
দুষ্মন্ততনয় ভরতকথা
নারদ কহিলেন, “হে সৃঞ্জয়! দুষ্মন্ততনয় ভরতকে কাল কবলে কবলিত হইতে হইয়াছে। ঐ মহাত্মা শৈশবাবস্থায় অরণ্যে অন্যের দুষ্কর কাৰ্য্য করিয়াছিলেন। তিনি হিমসবর্ণ, নখদংষ্ট্রায়ুধ মহাবল পরাক্রান্ত সিংহ সমুদায়কে স্বীয় বাহুবলে নির্বীর্ষ্য করিয়া আকর্ষণ ও বন্ধন করিতেন; ক্রূরস্বভাব উগ্রতর বাঘ্রগণকে দমনপূর্ব্বক বশীভূত করিতেন; মনঃশিলাসংযুক্ত ধাতুরাশিবিলিপ্ত বিবিধ ব্যাল ও হস্তীসমুদায়ের দংষ্ট্রা গ্রহণ পূর্ব্বক তাহাদিগকে বিমুখ ও শুষ্কাস্য করিয়া বশীভূত করিতেন এবং মহাবল পরাক্রান্ত মহিষগণকে আকর্ষণ, শত শত গর্বিত সিংহগণকে বলপূর্ব্বক দমন ও সৃমর, গণ্ডার এবং অন্যান্য জন্তুদিগকে বন্ধন ও দমন পূর্ব্বক প্রাণমাত্র অবশিষ্ট রাখিয়া বিমুক্ত করিতেন। তপোবনস্থ ব্রাহ্মণগণ দুষ্মন্ত তনয়ের সেই ভয়ানক কার্য্য দেখিয়া তাঁহাকে সর্ব্বদমন বলিয়া আহ্বান করিতেন। ভরতের জননী শকুন্তলা তাঁহাকে সতত পশুগণকে কষ্ট প্রদান করিতে দেখিয়া পশু হিংসা করিতে নিষেধ করিয়াছিলেন।
মহাত্মা ভরত যমুনাতীরে এক শত, সরস্বতীতীরে তিন শত ও গঙ্গাতীরে চতুঃশত অশ্বমেধ অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন। তৎপরে পুনরায় সহস্র অশ্বমেধ ও শত রাজসূয় সুসম্পন্ন করিয়া ভূরিদক্ষিণ অগ্নিষ্টোম, অতিরাত্র, উক্থ্য, বিশ্বজিৎ ও সহস্র সহস্র বাজপেয় যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন, এইরূপে শকুন্তলা নন্দন ভরত নানাবিধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিয়া ব্রাহ্মণগণকে প্রচুর ধনদানে পরিতৃপ্ত করিলেন। ঐ সময় তিনি মহর্ষি কণ্বকে বিশুদ্ধ সুবর্ণ বিনির্মিত সহস্র পদ্ম মুদ্রা প্রদান করেন। ভরতের যজ্ঞানুষ্ঠানকালে ইন্দ্রাদি দেবগণ দ্বিজগণ সমভিব্যাহারে সমাগত হইয়া শতব্যামপরিমিত সুবর্ণময় যূপ সমুচ্ছ্রিত করিয়াছিলেন। অদীনচিত্ত অরাতি নিপাতন, অপরাজিত, মহারাজ চক্রবর্তী মহাত্মা ভরত, মনোহর রত্ন সমুদায়ে বিভূষিত বহু সংখ্যক অশ্ব, হস্তী, রথ উষ্ট্র, ছাগ, মেষ এবং অসংখ্য দাস, দাসী, ধন, ধান্য সবৎসা পয়স্বিনীধেনু, গ্রাম, গৃহ, ক্ষেত্র, বিবিধ পরিচ্ছদ ও প্রচুর পরিমিত সুবর্ণ ব্রাহ্মণগণকে প্রদান করিয়াছিলেন। হে সৃঞ্জয়! তোমা অপেক্ষা সমধিক তপ, সত্য, দয়া ও দানশালী এবং তোমার পুত্র অপেক্ষা অধিকতর পুণ্যবান সেই মহাত্মা ভরতকেও কালগ্রাসে নিপতিত হইতে হইয়াছে, অতএব তুমি অযাজ্ঞিক অধ্যয়নাদি শূন্য স্বীয় পুত্রের নিমিত্ত আর অনুতাপ করিও না।