মুনিবরে কহে পরীক্ষিতের কুমার।
বিস্তারিয়া কহ মোরে, ঘুচুক আঁধার।।
তদন্তর কি করিল পাণ্ডবের স্বামী।
তব মুখে শুনিয়া কৃতার্থ হই আমি।।
মুনি বলে, শুন রাজা পাণ্ডব-চরিত্র।
যাহার শ্রবণে হয় জগত পবিত্র।।
তব কত দিনে ভীষ্ম গঙ্গার নন্দন।
অস্ত্র-শিক্ষা হেতু নিয়োজিল পৌত্রগণ।।
সর্ব্বশাস্ত্রে বিশারদ কৃপাচার্য্য নাম।
শরদ্বান্ ঋষি-পুত্র হস্তিনাতে ধাম।।
পঞ্চোত্তর শত ভাই কৌরব-পাণ্ডব।
কৃপাচার্য্য ধনুর্ব্বেদদ শিখাইল সব।।
জন্মেজয় বলে, কহ শুনি মহাশয়।
ক্ষত্রধর্ম্ম কৈল কেন ব্রাহ্মণ-তনয়।।
মুনি বলে, নৃপতি করহ অবধান।
গৌতম ঋষির পুত্র নাম শরদ্বান্।।
শরদ্বান্ নাম হৈল শর সহ জন্ম।
ধনুর্ব্বেদ রত হৈল ত্যজি দ্বিজকর্ম্ম।।
বেদশাস্ত্র না পড়িল ধনুর্ব্বেদে মন।
তপোবন মধ্যে তপ করে অনুক্ষণ।।
তাঁর তপ দেখিয়া সশঙ্ক শতক্রুতু।
সৃজিলেন উপায় সে তপোভঙ্গ হেতু।।
জানপদী দেবকন্যা দিল পাঠাইয়া।
যথ তপ করে, তথা উত্তরিল গিয়া।।
কন্য দেখি শরদ্বান্, হৈল হত ধৈর্য্য।
ধনুঃশর খসিত স্খলিত হৈল বীর্য্য।।
স্খলিত হইতে মুনি হৈল সচেতন।
সে বন ত্যজিয়া মুনি গেল অন্য বন।।
যাইতে ঋষির বীর্য্য পড়িল ভূতলে।
দুই ঠাঁই হইয়া পড়িল সেই স্থলে।।
তপস্বী ঋষির বীর্য্য কভু নষ্ট নয়।
হইল একটি কন্যা, অন্যটি তনয়।।
শান্তনু-নৃপতি গেল মৃগয়া কারণে।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে গেল সেই তপোবনে।।
অনাথ যুগল-শিশু দেখি অনুচরে।
আস্তে ব্যস্তে জানাইল রাজার গোচরে।।
শুনিয়া গেলেন রাজা ভাবি চমৎকার।
দেখে রোদন করে কুমারী কুমার।।
ধনুঃশর আছে আর আছে কৃষ্ণচর্ম্ম।
অনুমানে জানিলেন ঋষির এ কর্ম্ম।।
গৃহে আনি দোঁহারে যে করেন পালন।
কতদিনে আসে শরদ্বান্ তপোধন।।
শরদ্বান্ বলে, রাজা তুমি ধর্ম্মময়।
কৃপায় পালিলে সেই তনয়া তনয়।।
সে কারণে নাম রাখিলাম দোঁহাকার।
কৃপ কৃপী বলি হেন ঘোষয়ে সংসার।।
তবে শরদ্বান্ মুনি আপন নন্দনে।
নানা অস্ত্রবিদ্যা শিখাইল দিনে দিনে।।
ধনুর্ব্বেদে কৃপ সব নাহিক মানুষে।
অল্পকালে আচার্য্য বলিয়া লোকে ঘোষে।।
কুরুবংশ-যদুবংশ-অন্ধ-বৃষ্ণি বংশে।
আর যত রাজগণ বৈসে নানা দেশে।।
সবে ধনুর্ব্বেদ শিক্ষা করে কৃপ-স্থানে।
কৃপগুরু বলি নাম ব্যাপিল ভুবনে।।
পরে ভীষ্ম মহাবীর চিন্তিলেন মনে।
বিশেষ কি মতে শিক্ষা হবে পৌত্রগণে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।