৬৭তম অধ্যায়
সঞ্জয়কর্ত্তৃক পাণ্ডববলবিনির্ণয়
সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! পরমপূজিত ধনুৰ্দ্ধর অর্জ্জুন ও বাসুদেব স্বয়ং আবির্ভূত হইয়াছেন; ইঁহাদিগের প্রসাদেই ব্ৰহ্মত্বলাভ হইয়া থাকে; মহানুভব বাসুদেবের চক্রের অভ্যন্তরভাগ এক ব্যাম [পার্শ্বদেশে প্রসারিত বাহুদ্বয় পরিমাণ] বিস্তৃত, কিন্তু মায়াপ্রভাবে উহা যথাভিলাষই [আবশ্যকমত] পরিবর্দ্ধিত হইয়া থাকে। ঐ চক্ৰ কৌরবগণের সংহারক, কিন্তু পাণ্ডবগণের প্ৰিয়তম; উহা সকলের সারাসার জ্ঞাত হইবার নিমিত্ত তেজঃপুঞ্জে উদ্ভাসিত হইয়া আছে। মহাবল বাসুদেব অবলীলাক্রমে ঘোররূপ নরক, শম্বর, কংস ও চৈদ্যাসুরকে পরাজিত করিয়াছিলেন। শ্রেষ্ঠরূপ সামর্থ্যবান পুরুষোত্তম কেশব সঙ্কল্পমাত্রেই পৃথিবী, অন্তরীক্ষ ও স্বৰ্গ আত্মবশে আনয়ন করিতে পারেন।
“মহারাজ! আপনি পাণ্ডবগণের সারাসার অবগত হইবার নিমিত্ত যাহা পুনঃ পুনঃ জিজ্ঞাসা করিতেছেন, তাহা সংক্ষেপে শ্ৰবণ করুন। জগতে যেসকল সারবান পুরুষ আছে, জনাৰ্দন তাহাদিগের সকল অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। এমন কি, একদিকে সমস্ত জগৎ আর অন্যদিকে একাকী জনাৰ্দন অবস্থান করিলে সমান বোধ হয়। বাসুদেব ইচ্ছামাত্রে এইসমস্ত জগৎ ভস্মীভূত করিতে পারেন, কিন্তু সমস্ত জগৎ একত্র মিলিত হইলেও তাঁহাকে ভস্মীভূত করিতে সমর্থ হয় না। যে স্থানে সত্য, ধর্ম্ম, হ্রী [লজ্জা] ও সরলতা থাকে, ভগবান গোবিন্দ সেই স্থানেই অবস্থান করেন এবং যেখানে কৃষ্ণ সেইখানেই জয়, তাহাতে সন্দেহ নাই। ভূতাত্মা জনাৰ্দন অবলীলাক্রমে পৃথিবী, অন্তরীক্ষ ও স্বৰ্গ সঞ্চালিত করিতে পারেন। তিনি পাণ্ডবগণকে উপলক্ষ করিয়া সমস্ত লোক সম্মোহনপূর্ব্বক আপনার অধাৰ্মিক মুখ পুত্ৰগণকে দগ্ধ করিতে অভিলাষ করিতেছেন। ভগবান কেশব আত্মযোগপ্রভাবে নিরন্তর কালচক্র, জগৎচক্র, ও যুগ[সত্যাদি]চক্র পরিবর্ত্তিত করিতেছেন। আমি সত্য কহিতেছি, ভগবান জনাৰ্দন একাকী কাল, মৃত্যু, জঙ্গম ও স্থাবরসমূহের অধীশ্বর। যেমন কৃষীবল [কৃষক] ধান্যাদি পরিবর্দ্ধিত করিয়া স্বয়ং ছেদন করে, সেইরূপ মহাযোগী হরি সমস্ত জগতের ঈশ্বর হইয়াও মনুষ্যগণকে সংহার করেন। তিনি মহামায়াপ্রভাবে লোকসকলকে বঞ্চিত করিয়া থাকেন; কিন্তু যাঁহারা তাঁহাকে লাভ করেন, তাঁহাদিগকে কদাচ মুগ্ধ হইতে হয় না।”