লক্ষ্মণ পড়িয়া আছে শক্তিশেল বাণে।
রণ ছেড়ে আইলেন বাঁচাতে লক্ষ্মণে।।
রণ জিনি রঘুনাথ পেয়ে অবসর।
লক্ষ্মণেরে কোলে করি কান্দেন বিস্তর।।
কি কুক্ষণে ছাড়িলাম অযোধ্যা-নগরী।
মৈল পিতা দশরথ রাজ্য-অধিকারী।।
জনক-নন্দিনী সীতা প্রাণের সুন্দরী।
দিন দুই প্রহরে রাবণ কৈল চুরি।।
হারালাম প্রাণের ভাই অনুজ লক্ষ্মণ।
কি করিবে রাজ্যভোগে পুনঃ যাই বন।।
লক্ষ্মণ সুমিত্রা মাতার প্রাণের নন্দন।
কি বলিয়া নিবারিব তাঁহার ক্রন্দন।।
এনেছি সুমিত্রা মাতার অঞ্চলের নিধি।
আসিয়ে সাগর পারে কাল হৈল বিধি।।
মোর দুঃখে লক্ষ্মণ যে দুঃখী নিরন্তর।
কেন রে নিষ্ঠুর হলে না দেহ উত্তর।।
সবাই সুধাবে বার্ত্তা আমি গেলে দেশে।
কহিব তোমার মৃত্যু কেমন সাহসে।।
আমার লাগিয়া ভাই কর প্রাণ রক্ষা।
তোমা বিনা বিদেশে মাগিয়া খাব ভিক্ষা।।
রাজ্যধনে কার্য্য নাই, নাহি চাই সীতে।
সাগরে ত্যজিব প্রাণ তোমার শোকেতে।।
উদয়াস্ত যত দূর পৃথিবী সঞ্চার।
তোমার মরণে খ্যাতি রহিল আমার।।
উঠরে লক্ষ্মণ ভাই রক্তে ডুবে পাশ।
কেন ভাই আমা সঙ্গে এলে বনবাস।।
সীতার লাগিয়া তুমি হারাইলে প্রাণ।
তুমি যে লক্ষ্মণ মম প্রাণের সমান।।
সুবর্ণের বাণিজ্যে মাণিক্য দিয়ে ডালি।
তোমা মৃতে রঘুকুলে রাখিলাম কালি।।
কেন বা রাবণ সঙ্গে করিলাম রণ।
আমার প্রাণের নিধি নিল কোন্ জন।।
কার্ত্তবীর্য্যার্জ্জুন রাজা সহস্র বাহুধর।
তাহা হৈতে লক্ষ্মণ যে গুণের সাগর।।
এমন লক্ষ্মণে মোর মারিল রাক্ষসে।
আর না যাইব আমি অযোধ্যার দেশে।।
পিতৃ-আজ্ঞা হৈল মোরে দিতে ছত্রদণ্ড।
কৈকেয়ী বিমাতা তাতে হইল পাষণ্ড।।
পিতৃসত্য পালিতে আইনু বনবাস।
বিধি বাদী হৈল, তাহে এই সর্ব্বনাশ।।
অন্তরীক্ষে ডাকি বলে যত দেবগণ।
না কান্দ না কান্দ রাম পাইবে লক্ষ্মণ।।
ভাই ভাই বলে রাম ছাড়েন নিঃশ্বাস।
শ্রীরামের ক্রন্দন রচিল কৃত্তিবাস।।