৬৬তম অধ্যায়
গয় নৃপতির গুণগানসহ মৃত্যুসংবাদ
নারদ কহিলেন, হে সৃঞ্জয়! অমূৰ্তরয়ার পুত্র গয়ও কালকবলে নিপতিত হইয়াছেন। ঐ মহীপাল শত বৎসর কেবল হুতাবশিষ্ট ভক্ষণপূর্ব্বক জীবন ধারণ করিয়াছিলেন। ভগবান্ হুতাশন গয়ের উৎকট নিয়ম দর্শনে পরিতুষ্ট হইয়া তাঁহাকে বর প্রদান করিতে আগমন করিলে তিনি কহিলেন, হে হুতভুক্! আমার অভিলাষ এই যে, আমি যেন তপস্যা, ব্রহ্মচর্য্য, ব্রত, নিয়ম ও গুরুর প্রসাদ প্রভাবে বেদজ্ঞ হই; যেন স্ব ধৰ্ম্মে অবস্থান পূর্ব্বক অন্যের হিংসা না করিয়া অক্ষয় ধন লাভ ও শ্রদ্ধা সহকারে অন্ন দান করিতে পারি; বিপ্ৰগণকে প্রত্যহ ধন প্রদান করিতে যেন আমার শ্রদ্ধা থাকে; কেবল সবর্ণা ভাৰ্যার গর্ভেই যেন আমার পুত্রোৎপত্তি হয়; আমার মন যেন ধর্মে নিরত হয় এবং ধর্ম্মানুষ্ঠান সময়ে যেন কোন বিঘ্ন না জন্মে। ভগবান্ অগ্নি গয়ের বাক্য শ্রবণে পরম পরিতুষ্ট হইয়া তথাস্তু বলিয়া তাঁহাকে তাঁহার অভিলষিত বর প্রদান পূর্ব্বক অন্তর্হিত হইলেন।
এইরূপে মহারাজ গয় অগ্নির বরে সমুদায় অভিলমিত বিষয় প্রাপ্ত হইয়া ধর্ম্মানুসারে অরাতিগণকে পরাজয় পূর্ব্বক এক শত বৎসর কেবল দর্শপৌর্ণমাস, নবশস্যেষ্টি, চাতুর্ম্মাস্য প্রভৃতি বিবিধ ভূরিদক্ষিণ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিতে লাগিলেন। পরম শ্রদ্ধা সহকারে ব্রাহ্মণগণকে এক লক্ষ, ছয় অযুত গো, দশ সহস্র অশ্ব ও এক লক্ষ নিষ্ক প্রদান করিলেন এবং সমুদায় নক্ষত্রে নক্ষত্র দক্ষিণ প্রদান ও সোম ও অঙ্গিরার ন্যায় বিবিধ যজ্ঞের অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইলেন। ঐ মহাত্মা অশ্বমেধের, অনুষ্ঠান পূর্ব্বক মণিরূপ কৰ্করসমবেত সুবর্ণময়ী পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়া ব্রাহ্মণগণকে প্রদান করেন। ঐ যজ্ঞে নানারত্নবিভূষিত সৰ্ব্বভূতমনোহর বহুমূল্য সুবর্ণ-যূপ সকল নির্মিত হইয়াছিল। মহাত্মা গয় তৎসমুদায় প্রহৃষ্টচিত্ত ব্রাহ্মণ ও অন্যান্য ব্যক্তিগণকে প্রদান করিলেন। সমুদ্র, বন, দ্বীপ, নদী, নদ, নগর, রাজ্য, স্বর্গ ও আকাশে যে যে প্রাণী বাস করে, তাহারা সকলেই গয়ের যজ্ঞে পরিতৃপ্ত হইয়া কহিয়াছিল যে মহারাজ গয় যেমন যজ্ঞ করিলেন, এরূপ যজ্ঞ আর কোথাও অনুষ্ঠিত হয় নাই। ঐ যজ্ঞে ত্রিশ যোজন দীর্ঘ, ষড়বিংশ যোজন আয়ত, চতুর্বিংশ যোজন উচ্চ এবং মণি মুক্তা ও হীরকে খচিত সুবর্ণময় বেদী নির্মিত হইয়াছিল। মহাত্মা গয় ব্রাহ্মণগণকে সেই বেদী, বিবিধ বসন, ভূষণ ও যথোচিত দক্ষিণা প্রদান করিলেন। ঐ যজ্ঞ অবসান হইলে পঞ্চবিংশতি অন্নপর্ব্বত, অসংখ্য রসনদী এবং রাশি রাশি বস্ত্র, আভরণ ও গন্ধদ্রব্য অবশিষ্ট ছিল। মহারাজ গয়ের কীর্ত্তি স্বরূপ অক্ষয় বট ও পবিত্র ব্রহ্মসরঃ অদ্যাপি বিদ্যমান রহিয়াছে। ঐ কীৰ্ত্তিদ্বয়ের প্রভাবেই মহাত্মা গয় ত্রিলোকে বিখ্যাত হইয়াছেন। হে সৃঞ্জয়! তোমা অপেক্ষা সমধিক তপ, সত্য, দয়া ও জ্ঞানশালী এবং তোমার পুত্র অপেক্ষা অধিক পুণ্যবান সেই মহাত্মা গয়কেও কালগ্রাসে পতিত হইতে হইয়াছে, অতএব তুমি অযাজ্ঞিক, অধ্যয়নাদি রহিত, স্বীয় পুত্রের নিমিত্ত আর বৃথা অনুতাপ করিও না।