৬৫তম অধ্যায়
বন্যগজের উপদ্রবে বণিকদলের বিপদ
বৃহদশ্ব কহিলেন, “হে রাজন! পতিদর্শনোৎসুকা দময়ন্তী সাৰ্থবাহের সেইসকল বচন শ্রবণ করিয়া তাহাদিগের সমভিব্যাহারে গমন করিলেন। এইরূপে বহুকাল অতীত হইলে বণিকগণ সেই অরণ্যমধ্যে পদ্মসৌগন্ধিকনামে এক রম্য তড়াগ দেখিতে পাইল। ঐ তড়াগ প্রভূত বালতৃণ ও ইন্ধনে [কাষ্ঠ] ব্যাপ্ত, বহুবিধ ফলপুষ্পে শোভিত, নানাবিধ পক্ষিসমূহে সঙ্কীর্ণ ও সুশীতল মনোহর সুস্বাদু নির্ম্মল জলে পরিপূর্ণ। বণিকেরা বাহনগণকে অনবরত পৰ্যটন নিবন্ধন একান্ত ক্লান্ত দেখিয়া তথায় অবস্থান করিতে অভিলাষ করিয়া সার্থবাহের অনুজ্ঞানুসারে তথায় গমনপূর্ব্বক তড়াগের পশ্চিমকুলে অবস্থিতি করিতে লাগিল ।
“অৰ্দ্ধরাত্ৰ-সময়ে সমুদয় কানন বিশুদ্ধ এবং একান্ত পরিশ্রান্ত বণিকগণ সুষুপ্ত হইলে এক মদস্রবণাবিল [বাদোন্মত—বদনামে বিভ্রান্ত] হস্তিযুথ গিরিনদীর জল-পানাৰ্থ আগমন করিল। ঐ সার্থ এবং তত্ৰস্থ বহুতর হস্তিগণ তাহাদের নয়নপথে পতিত হইলে ঐ সমস্ত অরণ্যবাসী মদোৎকট গজগণ গ্রাম্য হস্তিদর্শনে যৎপরোনাস্তি ক্ৰোধান্ধ হইয়া তাহাদিগকে সংহার করিতে বেগে ধাবমান হইল। ক্ষিতিতলপতনোন্মুখ গিরিশৃঙ্গের ন্যায় দ্রুতগামী করিগণের প্রবল বেগ নিতান্ত দুঃসহ হইয়া উঠিল। বণিকগণ তড়াগের পথ নিরোধ করিয়া নিদ্রাভিভূত হইয়াছিল; সাৰ্থস্থ সমস্ত হন্তী বন্য-করীদিগের উপদ্রবে যৎপরোনাস্তি ভীত হইয়া পলায়নের উপক্রম করাতে সমুদয় সার্থ মর্দ্দিত হইয়া গেল। তখন বণিকগণ হাহাকার করিয়া আত্মত্ৰাণাৰ্থ বন ও গুল্মমধ্যে পলায়ন করিতে লাগিল। অনেকে নিদ্রায় একান্ত অভিভূত হইয়াছিল, তন্নিমিত্ত করিগণকর্ত্তৃক কেহ বা দস্তদ্বারা, কেহ বা শুণ্ডদ্বারা, কেহ বা চরণদ্বারা নিহত হইল।
সহস্ৰ সহস্র উষ্ট্র সেই দারুণ করিসংমার্দে প্ৰাণ পরিত্যাগ করিল। অনেকানেক বণিকগণ ভয়ে পলায়ন করাতে পরস্পর অঙ্গসংমার্দে নিধনপ্রাপ্ত হইয়া ধরা পৃষ্ঠে পতিত হইল। অনেকে প্রাণরক্ষার্থ বৃক্ষে আরোহণ করিয়াছিল, কিন্তু সেই ভয়ানক জনসংক্ষয় নিরীক্ষণে পূর্ব্বাপেক্ষা সমধিকতর ভীত হইয়া তথা হইতে বিষম ভূভাগে নিপতিত ও পঞ্চোত্বপ্রাপ্ত হইল। এইরূপে বন্যগজকর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়া সেই সমস্ত সমৃদ্ধ সাৰ্থমণ্ডল নিহত হইলে অরণ্যমধ্যে ঘোরতর ভয়ানক শব্দ সমুত্থিত হইল; কি কষ্টদায়ক অগ্নি সমুত্থিত হইয়াছে; শীঘ্ৰ আসিয়া পরিত্রাণ কর; এই রত্নরাশি বিকীর্ণ রহিয়াছে, গ্ৰহণ কর; কোথায় পলাইতেছ? এসমস্ত সাধারণ-ধন; আমার বাক্য মিথ্যা নহে। হে ধ্বংসকাতর বণিকগণ! আমি পুনর্ব্বার কহিতেছি তোমরা বিবেচনা করিয়া দেখা।” বণিকগণ এই কথা কহিতে কহিতে উৰ্দ্ধশ্বাসে ধাবমান হইতে লাগিল।
“সেই ধারণ জনসংক্ষয়জনিত কোলাহলে দময়ন্তীর নিদ্রাভঙ্গ হইল। কমললোচনা ভৈমী অদৃষ্টপূর্ব্ব সর্ব্বভুতভয়াবহ জনসংক্ষয়সন্দর্শনে সাতিশয় ভীত ও শ্বাসস্ফুরিতাধর হইয়া সহসা সমুত্থিত হইলেন।
দময়ন্তীর প্রতি বণিকদলের বিরাগ
“সার্থমধ্যে যাহারা সেই দারুণ করিসংমার্দে কোনক্রমে পরিত্ৰাণ পাইয়াছিল, তাহারা একত্র হইয়া পরস্পর কহিতে লাগিল, “এই দারুণ অনিষ্টপাত কোন কাৰ্য্যের ফল? নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, আমরা যে মহাযশাঃ মণিভদ্র ও যক্ষাধিপতি শ্ৰীমান কুবেরের পূজা করি নাই, কিংবা অগ্ৰে বিঘ্নকর্ত্তাদিগের পূজা করা হয় নাই, অথবা যাত্রাকালে যে অমঙ্গল দর্শন করিয়াছিলাম, ইহা তাহারই ফল। আমাদের গ্রহ ত’ বিপরীত নহে, তবে কি নিমিত্ত এরূপ দুর্ঘটনা হইল?” ঐ বণিকগণের মধ্যে কেহ কেহ জ্ঞাতিনাশ ও ধনক্ষয়জনিত দারুণ দুঃখে একান্ত অভিভূত হইয়া ক্ৰোধাভরে কহিতে লাগিল, “অদ্য যে উন্মত্তদর্শনা বিকৃতাকারা নারী অমানুষ রূপ ধারণপূর্ব্বক আমাদের মহাসার্থে প্রবেশ করিয়াছিল, তাহারই দারুণ মায়াপ্রভাবে এই দুর্ঘটনা উপস্থিত হইয়াছে। সেই কামিনী রাক্ষসী হউক, যক্ষীই হউক অথবা ভয়ঙ্করী পিশাচীই হউক, তাহার নিমিত্তই আমাদের এই সর্ব্বনাশ ঘটিয়াছে, সন্দেহ নাই। এক্ষণে যদি আমরা সেই সার্থনাশিনী অনেকজনদুঃখদায়িনী পাপীয়সীকে পুনরায় দেখিতে পাই, তাহা হইলে অবশ্যই পাংশু, লোষ্ট্র, তৃণ, কাষ্ঠ ও মুষ্টিদ্বারা তাহার প্রাণসংহার করিব।”
‘দীনা দময়ন্তী তাহাদের এইরূপ দারুণবাক্যশ্রবণে সাতিশয় লজ্জিত, ভীত ও আপনার ভাবী নিগ্রহের আশঙ্কায় একান্ত উদ্বিগ্নচিত্ত হইয়া সেই অরণ্যের অভ্যন্তরে পলায়নপূর্ব্বক মনে মনে পরিদেবন করিতে লাগিলেন, ‘হায়! আমার উপর বিধাতার কি দারুণ কোপ জন্মিয়াছে। কোন বিষয়েই আমার মঙ্গল নাই; ইহা কোন কুকর্ম্মের ফল বলিতে পারি না। আমি কায়মনোবাক্যে কখন কাহারও অণুমাত্র অনিষ্টাচরণ করি নাই; তবে কি নিমিত্ত এমন দারুণ হর্ব্বিপাকে নিপতিত হইলাম? নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, আমি পূর্ব্বজন্মে অনেক পাপাচরণ করিয়াছি, তন্নিমিত্তই এই অপার বিপৎসাগরে মগ্ন হইলাম। ভর্ত্তার রাজ্যপহরণ, স্বজনের নিকট পরাভব, পতিবিচ্ছেদ, অপত্যদ্বয়ের অদর্শন, অনাথতা ও বহুবিধ ভীষণ হিংস্ৰজন্তুসঙ্কুল নিবিড় অরণ্যে বাস; ইহা অপেক্ষা আর দুঃখের বিষয় কি আছে? হায়! কি নিগ্ৰহ! আমি এই নির্জ্জন অরণ্যমধ্যে যাদৃচ্ছাগত যে সমস্ত মনুষ্যের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলাম, তাহারাও আমার দুর্ভাগ্যবশতঃ করিসংমর্দে নিহত হইল। প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা কহিয়াছেন, কাল পরিপূর্ণ না হইলে কেহই মৃত্যুগ্রাসে নিপতিত হয় না, ইহা যথার্থ, যেহেতু, এই ভয়ানক করিসংমার্দে প্রায় সমুদয় সার্থ বিনষ্ট হইল, কিন্তু এই দুঃখিনী জীবিত রহিল। নিশ্চয়ই আমাকে চিরকাল দারুণ দুঃখার্ণবে নিমগ্ন থাকিতে হইবে। মানবগণের সুখ-দুঃখ ও শুভাশুভ সকলই দৈবায়ত্ত, তাহাতে সন্দেহ নাই। আমি বাল্যকালেও কখন কায়মনোবাক্যে কোন দুষ্কর্ম্ম করি নাই, তবে কেন এমন দুর্দ্দশাগ্ৰস্ত হইলাম? আমার স্বয়ংবর সময়ে সমুদয় লোকপালগণ সমাগত হইয়াছিলেন; আমি নলকে বরণ করিবার মানসে তাহাদিগকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলাম; বোধকরি, তাঁহাদের প্রভাবেই আমার এই দুর্ব্বিষহ বিয়োগ-যন্ত্রণা সমুপস্থিত হইয়াছে।” বরবর্ণিনী পতিব্ৰতা নলকামিনী এইরূপে বহুবিধ বিলাপ ও অনুতাপ করিতে লাগিলেন।
বণিক্দলভ্রষ্টা দময়ন্তীর সুবাহুনৃপতিপুরে প্রবেশ
“পরদিন প্ৰভাতে হতাবিশিষ্ট সার্থগণ কাহার ভ্রাতা, কাহার পিতা, কাহার পুত্র, কাহার বা বন্ধু নিহত হইয়াছে বলিয়া যৎপরোনাস্তি শোক করিয়া তথা হইতে বির্নিগত হইল। পতিব্ৰতা দময়ন্তীও তাহাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। তিনি সমস্ত দিন গমন করিয়া সায়াহ্নে চেদিদেশাধিপতি সত্যদর্শী মহারাজ সুবাহুর নগরে সমুপস্থিত হইলেন। অৰ্দ্ধবস্তুসংবীতা দময়ন্তী পতিবিরহে নিতান্ত বিহ্বলা, মলিনবর্ণা, মুক্তকেশপাশা ও অতিকৃশা হইয়াছিলেন। তিনি উন্মত্তার ন্যায় জনগণসমক্ষে পুরপ্রবেশ করিতেছিলেন দেখিয়া গ্রামীণ [গ্রামবাসী-গ্ৰাম্য-গাৰ্হস্থজীবী] শিশুসকল তাহার চতুর্দ্দিকে বেষ্টনপূর্ব্বক কুতুহলে গমন করিতে লাগিল। দময়ন্তী সেই বালবৃন্দে পরিবৃত হইয়া গমনপূর্ব্বক রাজভবনের সমীপে সমুপস্থিত হইলেন।
“রাজমাতা ঐ সময়ে প্রাসাদের উপরিভাগে আরোহণ করিয়াছিলেন, তিনি দময়ন্তীর দুরবস্থা দর্শনে কারুণ্যরসে একান্ত আক্রান্ত হইয়া ধাত্রীকে কহিলেন, “ঐ দেখ, এক উন্মত্তবেশী নিতান্ত দুঃখিত শরণার্থিনী বালা গমন করিতেছে। ঐ আয়তলোচনা কামিনীকে সাক্ষাৎ লক্ষ্মীর ন্যায় বোধ হইতেছে, উহার রূপলাবণেও আমার ভবন বিদ্যোতিত হইয়া উঠিয়াছে। দেখ, জনগণ উহাকে বিরক্ত করিতেছে; অতএব তুমি শীঘ্র উহাকে আমার নিকট আনয়ন কর।” ধাত্রী তাঁহার আদেশানুসারে তৎক্ষণাৎ গমনপূর্ব্বক সেই জনতা নিবারণ করিয়া দময়ন্তীকে লইয়া প্রাসাদস্থ রাজমাতার সম্মুখে সমুপস্থিত হইল এবং তাঁহার অসামান্য রূপসন্দর্শনে সাতিশয় বিস্ময়াপন্ন হইয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “ভদ্রে! তুমি কে? কাহার পত্নী? ঈদৃশ দুরবস্থাতেও তোমার অঙ্গলাবণ্য জলদ-নিবাসিনী সৌদামিনীর ন্যায় শোভা পাইতেছে; তোমার অঙ্গে কিছুমাত্র আভরণ নাই, তথাপি তোমার রূপলাবণ্য আলোকসামান্য বলিয়া বোধ হইতেছে; তুমি অসহায়া; জনতা তোমাকে নিয়ত বিরক্ত করিতেছিল, তথাপি তোমার কিছুমাত্র উদ্বেগ লক্ষিত হইতেছে না।’
“দময়ন্তী ধাত্রীর বাক্য শ্রবণানন্তর তাহাকে কহিলেন, ভদ্রে! আমি মানুষী, পতিব্ৰতা সৎকুলোদ্ভবা সৈরিন্ধ্রী [পরগৃহস্থ পরিচারিকা]; কেবল ফলমূল ভক্ষণ করিয়া থাকি এবং যে স্থানে সায়ংকাল সমুপস্থিত হয়, সেই স্থানেই অবস্থান করি। আমার ভর্ত্তা অসংখ্য গুণে গুণবান, তিনি আমার প্রতি একান্ত অনুরক্ত ছিলেন; আমিও ছায়ার ন্যায় তাহার অনুবর্ত্তন করিতাম। দৈবদুর্ব্বিপাক অখণ্ডনীয়; আমার স্বামী অশেষগুণে গুণবান হইয়াও হঠাৎ দ্যূতক্রীড়ায় একান্ত আসক্ত হইয়া ক্রমে ক্রমে সমুদয় রাজ্যধন দুরোদরমুখে বিসর্জ্জন দিয়া পরিশেষে একাকী একমাত্র বসন পরিধানপূর্ব্বক উন্মত্তের ন্যায় বনে গমন করিলেন; আমিও তাঁহাকে আশ্বাস প্রদানপূর্ব্বক তাহার অনুগমন করিলাম। তিনি একদা বনমধ্যে ক্ষুধায় একান্ত কাতর ও বিচেতন্যপ্ৰায় হইয়া কোন কারণবশতঃ সেই একমাত্র বসনেও বঞ্চিত হইলেন; আমিও একমাত্র বসন পরিধান করিয়া সেই উন্মত্তদর্শন উলঙ্গ পতির অনুগমনপূর্ব্বক জাগ্ৰন্দবস্থায় কতিপয় যামিনী যাপন করিলাম। এইরূপে বহুদিন অতীত হইলে একদা আমি নিদ্রায় একান্ত অভিভূত হইয়াছিলাম, তিনি সেই অবসরে আমার বস্ত্ৰাৰ্দ্ধ ছেদনপূর্ব্বক সেই নিবিড় অরণ্যমধ্যে নিরপরাধে আমাকে পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিয়াছেন। আমি তদবধি দহ্যমানচিত্তে দিনযামিনী স্বামীর অন্বেষণ করিতেছি; সেই কমলগৰ্ভাভ, অমরতুল্য, প্রিয় প্ৰাণেশ্বর যে কোথায় আছেন, তাহার কিছুমাত্র অনুসন্ধান করিতে পারি নাই।” পতিপ্ৰাণা দময়ন্তী এই বলিয়া অশ্রুপূর্ণনয়নে বিলাপ করিতে লাগিলেন।
“রাজমাতা দময়ন্তীর পরিদেবনে পূর্ব্বাপেক্ষা অধিকতর করুণার্দ্রচিত্ত হইয়া স্বয়ং তাঁহাকে কহিলেন, ভদ্রে! তুমি আমার নিকট বাস কর, আমি তোমার প্রতি পরমপ্রীত হইয়াছি। আমার অধীনপুরুষেরা তোমার স্বামীর অন্বেষণ করিবে অথবা তিনি ইতস্ততঃ ভ্ৰমণ করিতে করিতেও স্বয়ং এস্থলে সমুপস্থিত হইতে পারেন; যে কোন প্রকারে হউক, তুমি এই স্থানে থাকিয়া স্বীয় স্বামীর সন্দর্শনলাভ করিতে পরিবে, সন্দেহ নাই।”
দময়ন্তীর সুবাহুনৃপতিপুরে বাস
“পতিব্রতা দময়ন্তী রাজমাতার বাক্যশ্রবণানন্তর তাঁহাকে কহিলেন, “হে বারপ্রসবিনি! আমি আপনার নিকট বাস করিতে সম্মত আছি, কিন্তু আমার কতিপয় নিয়ম আছে, তাহা আমাকে অবশ্যই প্রতিপালন করিতে হইবে। আমি কাহারও উচ্ছিষ্টভোজন বা পদধাবন করিতে পারিব না এবং কোন পুরুষের সহিত কথা কহিব না। যদি কোন পুরুষ আমাকে প্রার্থনা করে, আপনি তাহার বিধিমত দণ্ড করিবেন; তাহাতেও ক্ষান্ত না হইলে পরিশেষে তাহার প্রাণদণ্ড করিতে হইবে, এই আমার ব্ৰত। আর আপনি আমার পতির অন্বেষণার্থ যে ব্রাহ্মণগণকে প্রেরণ করিবেন, তাঁহারা সমাগত হইলে আমি স্বয়ং তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিব। এই নিয়মগুলি রক্ষা হইলেই আমি আপনার নিকট বাস করিতে পারি; অন্যথা হইলে কদাচি এ স্থানে থাকিতে পারিব না।”
“রাজমাতা দময়ন্তীর বাক্যশ্রবণে সাতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে কহিলেন, “ভদ্রে! তোমার এই সমস্ত নিয়ম যাহাতে রক্ষা হয়, আমি তাঁহাই করিব।” অনন্তর তিনি স্বীয় দুহিতা সুনন্দাকে আহ্বান করিয়া কহিলেন, ‘সুনন্দে! এই দেবরূপিণী কন্যা সৈরিন্ধ্রী। ইনি তোমার সমবয়স্কা; অতএব তুমি ইহাকে সখীত্বে বরণ করা। তুমি নিরুদ্বিগ্ন-মনে সর্ব্বদা ইঁহার সহিত আমোদ-প্রমোদে কালব্যাপন করিবে।” সুনন্দা স্বীয় জননীর বাক্যানুসারে দময়ন্তীকে লইয়া সখীগণ-সমভিব্যাহারে স্বগৃহে প্ৰতিগমন করিলেন। পতিপরায়ণা দময়ন্তী তথায় যথাবিধি সমাদৃত হইয়া নানাপ্রকার ভোগ্যবস্তু উপভোগপূর্ব্বক নিরুদ্বেগে কালব্যাপন করিতে লাগিলেন।”