৬৪তম অধ্যায়
ধৃতরাষ্ট্রকর্ত্তৃক সন্ধির অনুরোধ
অনন্তর ধৃতরাষ্ট্র দুর্য্যোধনকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “হে পুত্র! আমার বাক্যে অভিনিবেশ কর; অনভিজ্ঞ পথিকের ন্যায় প্রকৃত পথকে কুপথ মনে করিও না। তুমি চরাচর ধর পঞ্চমহাভূত [পঞ্চভূতমৃত্তিকা, জল, তেজ, বায়ু, আকাশ; এতৎসদৃশ ধরাধারণক্ষম পঞ্চপাণ্ডব] সদৃশ পঞ্চপাণ্ডবেরা তেজ সংহার করিতে সমর্থ হইবে না, প্রত্যুত তোমাকে মৃত্যুমুখে প্রবিষ্ট হইতে হইবে, সন্দেহ নাই। বৎস! ভীমসেনের তুল্যবল ধীর নয়নগোচর হয় না। বৃক্ষ যেমন প্রবলোত্থিত পবনের প্রতি স্পৰ্দ্ধা প্রকাশ করে, তুমিও সেইরূপ সমরে শমনস্বরূপ ভীমসেনের উপর তর্জ্জন করিতেছ। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি শিখরি [পর্ব্বত] শ্রেষ্ঠ সুমেরুসদৃশ সমস্ত শস্ত্রধরের অগ্রগণ্য গাণ্ডীবধন্বা ধনঞ্জয়ের সহিত যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত হইবে? যেমন ইন্দ্ৰ বজ্রনিক্ষেপ করেন, সেইরূপ পাঞ্চালনন্দন ধৃষ্টদ্যুম্ন শক্রমধ্যে শরজাল বিস্তার করিয়া কোন ব্যক্তিকে সংহার করিতে না পারে? পাণ্ডবহিতৈষী, অন্ধকারবৃষ্ণিগণের প্রিয়তম অতি দুৰ্দ্ধৰ্ষ সাত্যকিই তোমার সেনাগণকে সংহার করিবে। ত্ৰিভুবনে যাহার তুলনা নাই, কোন বুদ্ধিমান সেই বাসুদেবের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইবে? তিনি একদিকে স্ত্রী, জ্ঞাতি, বন্ধু, আত্মা ও পৃথিবী আর অন্যদিকে একমাত্র ধনঞ্জয় অবস্থান করিলে সমান বিবেচনা করেন। পাণ্ডবগণ যে স্থানে অবস্থান করেন, দুৰ্দ্ধৰ্ষ বাসুদেবও সেই স্থানে বর্ত্তমান থাকেন, অতএব কৃষ্ণ যাঁহাদিগের সহায়, পৃথিবীও তাঁহাদিগের বল সহ্য করিতে সমর্থ হন না।
“বৎস! সাধ অর্থবাদী সুহৃদগণের বাক্যানুসারে অবস্থান কর, বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্মের বাক্য গ্রহণ কর। আমি কুরুগণের অর্থদশী [প্রয়োজনকামী], আমার বাক্য শ্রবণ কর এবং আমার ন্যায় দ্রোণ, কৃপ, বিকর্ণ ও মহারাজ বাহ্লিকেরও সম্মান রক্ষা কর; ইহারা সকলেই ধৰ্মজ্ঞ ও সকলেই স্নেহবান। বিরাটনগরে তোমার সম্মুখে তোমার ভ্রাতা ও সেনাগণ ভীত হইয়া গোসমূহ পরিত্যাগপূর্ব্বক যে পলায়ন করিয়াছিল, আর অন্য যেসকল অদ্ভুত ব্যাপার শ্রবণ করিয়াছি, এক ব্যক্তি যে বহু ব্যক্তির সহিত সংগ্রাম করিতে সমর্থ হয়, উহাই তাহার দৃষ্টান্ত। দেখ, ধনঞ্জয় একাকী সেই কাৰ্য্য করিয়াছিল; সকল ভ্রাতা একত্র হইলে কি না করিতে পারে? অতএব পাণ্ডবগণকে রাজ্যার্দ্ধ প্ৰদান করিয়া তাহাদিগের সহিত সৌভ্রাত্র সংস্থাপন কর।”