পুত্রশোকে মন্দোদরী করিছে রোদন।
মন্দোদরী-ক্রন্দনেতে রুষিল রাবণ।।
সীতা লাগি মজিল কনক-লঙ্কাপুরী।
আজি সীতা কাটিয়া ঘুচাব সব বৈরী।।
মায়াসীতা কেটেছিল পুত্র ইন্দ্রজিৎ।
সাক্ষাতে কাটিয়া সীতা ঘুচাইব ভীত।।
হাতে করি লয় রাবণ খড়্গ একধারা।
কুড়ি চক্ষু ঘুরে যেন আকাশের তারা।।
দুই প্রহরের রবি অঙ্গের কিরণ।
কালান্তক যম যেন রুষিল রাবণ।।
সীতারে কাটিতে যায় পবনের বেগে।
রাবণের পাত্র মিত্র পাছে গিয়া লাগে।।
খড়্গ হাতে ধায় রাবণ অশোকের বনে।
কার সাধ্য প্রবোধিয়া ফিরায় রাবণে।।
প্রবেশ জরিল গিয়া অশোকের বন।
রাবণে দেখিয়া সীতা করেন ক্রন্দন।।
মনেতে বিচার করে রাণী মন্দোদরী।
সর্ব্বনাশ হয়েছে মজেছে লঙ্কাপুরী।।
তাহাতে রাবণ কেন স্ত্রীবধ করিবে।
রমণী-বধের পাপ পরকালে পাবে।।
এত ভাবি মন্দোদরী সম্বরি ক্রন্দন।
ধূলায় ধূসর অঙ্গ লোহিত লোচন।।
পাগলিনী-প্রায় রাণী ছুটে ঊর্দ্ধমুখে।
উপনীত দশানন সীতার সম্মুখে।।
একেত রাবণ তাহে ক্রোধেতে মগন।
ঘুরিতেছে রক্তবর্ণ বিংশতি নয়ন।।
আতঙ্কে অস্থিরা সীতা দেখিয়া রাবণে।
কাটিবে রাবণ আজি ভাবিলেন মনে।।
পুত্রশোকে আসিতেছে করিতে ছেদন।
কোথা প্রভু রঘুনাথ দেবর লক্ষ্মণ।।
অভাগীর দেখা দেও অশোকের বনে।
রামের মহিষী আমি কাটিল রাবণে।।
উচ্চৈঃস্বরে সীতাদেবী করেন রোদন।
সীতারে কাটিতে খড়্গ তুলিল রাবণ।।
পিছে থাকি সাপটিয়া ধরে মন্দোদরী।
ছি ছি মহারাজ, বধ করো না হে নারী।।
রাবণ বলে মায়াসীতা কাটে ইন্দ্রজিতে।
মরে পুত্র ইন্দ্রজিৎ সীতার জন্যেতে।।
সীতা আনি সর্ব্বনাশ হলো লঙ্কাপুরে।
ঘুচাব সকল শোক কাটিয়া সীতারে।।
মন্দোদরী কহিতেছে করি যোড়হাত।
পরম পণ্ডিত তুমি রাক্ষসের নাথ।।
শ্রীবিশ্রবা পিতা তব সংসারে পূজিত।
তোমার এ নারীবধ না হয় উচিত।।
একে দেখ মজেকে কনক লঙ্কাপুরী।
পাপেতে মজ না তাহে বধ করে নারী।।
করে ধরি মন্দোদরী ফিরায় রাবণে।
ভয়ে সীতা চাহিলেন রাবণের পানে।।
রাবণে দেখিয়া সীতা ফিরাইল আঁখি।
রাবণ ভাবয়ে সীতা দিলেক কটাক্ষি।।
ভরসা পাইয়া গেল লঙ্কার ভিতরে।
সিংহাসন ত্যজি বৈসে ভূমির উপরে।।
অভিমান ভরে ভাবে লঙ্কা-অধিকারী।
ঘরে ঘরে কান্দে যত বীরভাগ-নারী।।