লোমশ বলেন, শুন ধর্ম্মের নন্দন।
সমুদ্রে আশ্রয় নিল কালকেয়গণ।।
সমস্ত দিবস থাকে জলের ভিতর।
রাত্রিতে উঠিয়া খায় যত মুনিবর।।
বশিষ্ঠ আশ্রমে খাইল সপ্তশত ঋষি।
তিনশত খায় চ্যবনাশ্রমেতে বসি।।
ভরদ্বাজ আশ্রমেতে বিংশ মুনি ছিল।
রজনীর মধ্যে গিয়া সকলি খাইল।।
হেনমতে খায় তারা যত মুনিগণ।
অনাহারী বাতাহরী মহাতপোধন।।
আর যত দ্বিজগণ গেল পলাইয়া।
পর্ব্বত গহ্বরে রহে কোটরে বসিয়া।।
ভাঙ্গিল মুনির মেলা, কেহ নাহি আর।
যাগ যজ্ঞহীন হৈল সকল সংসার।।
উপায় না দেখি আর ব্যাকুল হইয়া।
নারায়ণ স্থানে সবে জানাইল গিয়া।।
সৃষ্টিকর্ত্তা হর্ত্তা তুমি, তুমি শ্রীনিবাস।
তুমি উদ্ধারিবা মোরা করিয়াছি আশ।।
বৃত্রাসুর মৈল, কিন্তু কালকেয়গণ।
লক্ষিতে না পারি, তারা আইসে কখন।।
করিল দ্বিজের নাশ, না দেখি নিস্তার।
আমরা উপায় বহু করিনু তাহার।।
না পারিয়া তব পদে করি নিবেদন।
তোমা বিনা সৃষ্টি রাখে, নাহি হেন জন।।
এত শুনি রোষভরে কহে পীতাম্বর।
ইহার উপায় আর নাহি পুরন্দর।।
বরুণ আশ্রিত হয়ে আছে দুষ্টগণ।
সিন্ধু শুখাইতে সবে করহ যতন।।
পাইয়া বিষ্ণুর আজ্ঞা তবে দেবগণ।
ব্রহ্মার সহিত গেল অগস্ত্য সদন।।
কর যুড়ি দেবগণ তাঁর স্তুতি করে।
সঙ্কটেতে তুমি রক্ষা কর বারে বরে।।
নহুষের ভয়ে পূর্ব্বে করিলা নিস্তার।
বিন্ধ্যাভয়ে বসুধার খণ্ডিলে আঁধার।।
রাক্ষস বধিয়া বিনাশিলা লোকভয়।
এবার করহ রক্ষা হইয়া সদয়।।
মুনি বলে, কোন কার্য্য করিব সবার।
যাহা বল করি তাহা, এই অঙ্গীকার।।
দেব বলে, অসুর করি সিন্ধু আশ্রয়।
মুনি ঋষি খাইয়া পুনঃ সাগরে লুকায়।।
হেরিতে না পায় কেহ, বধিবে কেমনে।
না বধিলে অসুর, কেহ না জীয়ে প্রাণে।।
ইহার উপায় তুমি চিন্তহ মহামুনি।
নিবেদি তোমায় সবে ঋষিশ্রেষ্ঠ গণি।।
শুনি কহে মুনি, চিন্তা নাহি দেবগণ।
জলধির জল আমি করিব শোষণ।।
এত বলি চলিল অগস্ত্য মুনিবর।
সঙ্গেতে চলিল সব অমর কিন্নর।।
অগস্ত্য সমুদ্র পীবে অদ্ভুত কথন।
দেখিতে চলিল যত ত্রৈলোক্যের জন।।
সমুদ্র নিকটে গিয়া বলে তপোধন।
তোমারে শুষিব আমি লোকের কারণ।।
দেবতা গন্ধর্ব্ব নাগ দেখিবে কৌতুকে।
নিমিষে সমুদ্র পান করিব চুমুকে।।
তবেত অগস্ত্য মুনি একই গণ্ডূষে।
ক্ষণমাত্রে সিন্ধুজল পান করি শোষে।।
কোথায় লহরী গেল, শব্দ হুড়াহুড়ি।
জলজন্তু ছটফটি শুষ্কস্থলে পড়ি।।
বিস্ময় মানিল তবে ত্রৈলোক্যের জন।
অগস্ত্য মুনিরে তবে করিল স্তবন।।
গন্ধর্ব্ব কিন্নর যত অপ্সরা অপ্সরী।
মুনির সম্মুখে তারা দেখায় মাধুরী।।
করিল কুসুম বৃষ্টি মুনির উপরে।
সাধু সাধু বলি শব্দ হল দিগন্তরে।।
জলহীন সিন্ধু দেখি যত দেবগণ।
যে যাহার অস্ত্র লয়ে ধাইল তখন।।
যতেক অসুরগণে বেড়িয়া মারিল।
কত দৈত্য ক্ষিতি বিদারিয়া প্রবেশিল।।
দৈত্য হত নিরখিয়া ক্ষান্ত দেবগণ।
পুনরপি অগস্ত্যেরে করিল স্তবন।।
তোমার প্রসাদে রক্ষা পাইল সংসার।
লোকের কণ্টক দৈত্য হইল সংহার।।
সমুদ্রের জল যে শুষিলা মুনিবর।
পুনরপি সেই জলে পর রত্নাকর।।
মুনি বলে, তোমরা উপায় কর সবে।
জলপান করিলাম আর কোথা পাবে।।
এত শুনি দেবগণ বিষণ্ণ বদন।
শীঘ্রগতি গেল সবে ব্রহ্মার সদন।।
দৈত্যনাশ হেতু সিন্ধু শুষিল বারুণি।
কিরূপে পূরিবে সিন্ধু, কহ পদ্মযোনি।।
ব্রহ্মা বলে, নিজালয়ে যাহ সর্ব্ব জন।
উপায় নাহিক সিন্ধু, পূরিতে এখন।।
শুষ্ক সিন্ধু রহিবেক দীর্ঘকাল ভবে।
জ্ঞাতি হেতু ভগীরথ গঙ্গাকে আনিবে।।
ভগীরথ হতে পূর্ণ হবে জলনিধি।
শুষ্ক রহিবেক সিন্ধু তাবৎ অবধি।।
ব্রহ্মার বচনে সবে গেল নিজালয়।
এই শুন পূর্ব্বকথা ধর্ম্মের তনয়।।