পুনঃ জিজ্ঞাসেন তবে রাজা যুধিষ্ঠির।
কিরূপে শুষিল মুনি সাগর গভীর।।
লোমশ বলেন, পূর্ব্বে দৈত্য বৃত্রাসুর।
পরাক্রমে জিনিয়া বেড়ায় তিন পুর।।
কালকেয় আদি যত দৈত্য ও দানব।
বৃত্রাসুর সহিত থাকয়ে দুষ্ট সব।।
দৈত্যভয়ে দেবগণ রহিতে নারিল।
ইন্দ্রে আগে করিয়া ব্রহ্মারে নিবেদিল।।
ব্রহ্মা কন, যেই হেতু এলে দেবগণ।
পূর্ব্বে চিন্তিয়াছি আমি তাহার কারণ।।
লৌহ দারু মেরু যত অস্ত্র আছে সার।
কোন মতে নহে বৃত্রাসুরের সংহার।।
দধীচি মুনির স্থানে করহ গমন।
সবে মিলি বর মাগ, শুন দেবগণ।।
প্রসন্ন হৈলে মুনি চাহিবে বরদান।
নিজ অস্থি দিয়া লোকে কর পরিত্রাণ।।
শরীর ত্যজিবে মুনি লোকের কারণ।
তাঁর অস্থি লয়ে কর বজ্রের সৃজন।।
বজ্র অস্ত্রে ইন্দ্র তারে করিবে প্রহার।
বজ্রাঘাতে বৃত্রাসুর হইবে সংহার।।
এত শুনি দেবগণ করিল গমন।
সরস্বতী নদীতীরে আইল তখন।।
মহাতেজোময় মূর্ত্তি দেখি দধীচির।
চন্দ্র সূর্য্য অগ্নি জিনি জ্বলন্ত শরীর।।
মুনিরে বেড়িয়া ইন্দ্র আদি দেবগণ।
দণ্ডবৎ প্রণাম করিল অগণন।।
দেবতাসমূহ সব দিক্পালগণে।
দেখিয়া দধীচি মুনি ভাবে মনে মনে।।
জানিয়া সকল তত্ত্ব কহে মুনিবর।
বুঝিনু যে হেতু এলে সকল অমর।।
সবাকার হেতু আমি ত্যজিব শরীর।
অস্থি মাংসময় তনু সহজে অচির।।
হয় হৌক, ইহাতে লোকের উপকার।
উপকার হীন ব্যর্থ রহে তনু ছার।।
পূর্ব্বভাগ্যে দেবকার্য্যে লাগিল শরীর।
এত বলি তনু ত্যাগ হৈল দধীচির।।
হেন উপকার কোথা নাহি করে কেহ।
পরোপকারের জন্য ত্যজে নিজ দেহ।।
দধীচি মুনির গুণ বর্ণন না যায়।
হেন উপকার বল কে করে কোথায়।।
যুধিষ্ঠির কন, প্রভু বল অতঃপর।
অস্থি নিয়া কি কর্ম্ম করিলা পুরন্দর।।