ইন্দ্রজিৎ পড়ে রণে প্রভাত সময়।
ভয়ে রাবণের আগে কেহ নাহি কয়।।
গগনে হইল বেলা দ্বিতীয় প্রহর।
বসিয়া মন্ত্রণা করে যত নিশাচর।।
স্থানে স্থানে বসি যুক্তি করিছে রাক্ষস।
কহিতে রাবণ-আগে না করে সাহস।।
পাত্র মিত্র সকলেতে মন্ত্রণা করিয়ে।
ভগ্নদূত একজন দিল পাঠাইয়ে।।
রাবণ-সম্মুখে কহে যোড় করি হাত।
রণের সংবাদ শুন রাক্ষসের নাথ।।
লঙ্কাপুরী বীরশূন্যা হৈল এত দিনে।
ইন্দ্রজিৎ পড়ে আজি লক্ষ্মণের বাণে।।
দূতমুখে শুনি ইন্দ্রজিতের মরণ।
সিংহাসন হৈতে পড়ে রাজা দশানন।।
ঊচ্চৈঃস্বরে ডেকে বলে কোথা ইন্দ্রজিৎ।
আছাড় খাইয়া পড়ে হইয়া মূর্চ্ছিত।।
ধরিয়া তুলিল যত পাত্র মিত্র আসি।
দশ মুণ্ডে ঢালে জল কলসী কলসী।।
অনেক কষ্টেতে রাজা পাইল চেতন।
চেতন পাইয়া রাজা করিছে ক্রন্দন।।
রাক্ষসকুলের চূড়া পুত্র ইন্দ্রজিতে।
প্রাণ হারাইলে নর-বানরের হাতে।।
আমার সর্ব্বস্ব তুমি লঙ্কা-অধিকারী।
পিতা দশানন তোর মাতা মন্দোদরী।।
পর্ব্বত-কন্দর কাঁপে দেখে তোর বাণ।
একবাণে ইন্দ্র বেটা না সহিত টান।।
ত্রিভুবনে যোদ্ধা নাহি তোমার সমান।
মনুষ্যের বাণে পুত্র হারাইলে প্রাণ।।
কুম্ভকর্ণ ভাই-শোক রহিয়াছে বুকে।
তাহার উপর মরি তোমা পুত্র-শোকে।।
ভাই নহে চণ্ডাল পাপিষ্ঠ বিভীষণ।
যজ্ঞভঙ্গ করে তোমা বধিল জীবন।।
যদি প্রাণ বাঁচে রাম-তপস্বীর রণে।
আগে আমি কাটিব চণ্ডাল বিভীষণে।।
হা হা পুত্র ইন্দ্রজিৎ গেলি কোথাকারে।
সম্মুখে সংগ্রামে আমি পাঠাইব কারে।।
পুত্রশোকে কান্দি রাজা গড়াগড়ি যায়।
দশমুণ্ড কলেবর ধূলাতে লোটায়।।
ক্ষণে ক্ষণে অচেতন ক্ষণেকে চেতন।
কি হৈল কি হৈল বলি কান্দিছে রাবণ।।