৬১তম অধ্যায়
আশ্রমচতুষ্টয়ের ধৰ্ম্মনির্দেশ
ভীষ্ম কহিলেন, “হে ধৰ্ম্মরাজ! অতঃপর চারি-আশ্রম ও তৎসমুদয়ের কার্য্য কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। লোকে বানপ্রস্থ, ভৈক্ষ্য, গার্হস্থ্য ও ব্রহ্মচর্য্য এই চারিটি আশ্রম অবলম্বন করিয়া থাকে। ব্রহ্মচর্য্য-আশ্রমে কেবল ব্রাহ্মণেরই অধিকার আছে। আত্মজ্ঞানসম্পন্ন জিতেন্দ্রিয় ব্রাহ্মণগণ প্রথমে উপনয়নাদি সংস্কার প্রাপ্ত হইয়া ব্রহ্মচর্য্যগ্রহণ, অগ্ন্যাধানাধি [১] কাৰ্য্যসমাধান, বেদাধ্যয়ন ও তৎপরে গাৰ্হস্থ্যধর্ম্ম প্রতিপালন করিয়া কেবল স্ত্রীসমভিব্যাহারে বানপ্রস্থ অবলম্বন করিবেন। ঐ আশ্রমে তিনি আরণ্যক [২] শাস্ত্ৰসমুদয় অধ্যয়নপুৰ্ব্বক উৰ্দ্ধরেতাঃ হইয়া অনায়াসে ব্রহ্মে লীন হইতে পারেন। দ্বিজত্বলাভ প্রভৃতি পূর্বোক্ত কাৰ্য্যদ্বারা ব্রাহ্মণগণ অনায়াসে ঊৰ্দ্ধরেতাঃ হইতে সমর্থ হয়েন; অতএব সুবিজ্ঞ ব্রাহ্মণের ঐ সমুদয় কার্য্যের অনুষ্ঠান করা অবশ্য কর্ত্তব্য। ব্রহ্মচর্য্য সমাপন করিয়াই মোক্ষলাভার্থে ভৈক্ষ্যধৰ্ম্ম আশ্রয় করা ব্রাহ্মণের দোষাবহ নহে [নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচর্য্য— যাঁহারা গৃহস্থ না হন, তাঁহারা মধ্যের দুইটি আশ্রম বাদ দিয়া একবারে সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া থাকেন]। ঐ আশ্রমে তিনি সুখদুঃখরহিত, নিকেতন [বাসগৃহবিহীন] বিহীন, যদৃচ্ছালব্ধজীবী [যথাপ্রাপ্ত বস্তু দ্বারা প্রাণধারণকারী], দান্ত, জিতেন্দ্রিয়, সকলের প্রতি সমদৃষ্টিপন্ন, ভোগকামনাশূন্য, নির্ব্বিকার ও পরিশেষে ব্রহ্মপদ প্রাপ্ত হয়েন।
“ব্রাহ্মণ ধর্ম্মপত্নীনিরত, অকুটিলহৃদয়, মিতাহারী, কৃতজ্ঞ, দেবানুরক্ত, সত্যবাদী, শান্ত প্রকৃতি, অনৃশংস, ক্ষমাশীল, দান্ত ও মাৎসৰ্য্যশূন্য হইয়া বেদাধ্যয়ন, পত্নীর ঋতুরক্ষা, সন্তানোৎপাদন, অপ্রমত্তচিত্তে হব্যকব্যসম্পাদন, দ্বিজগণকে অন্নদান, আশ্রমে ধনদান ও অন্যান্য বেদবিহিত কার্য্যানুষ্ঠান করিলেই তাঁহার গাহস্থ্যধর্ম্ম প্রতিপালন করা হয়। মহানুভব মহিষগণ কহেন যে, নারায়ণ কহিয়া গিয়াছেন, লোকে সত্যবাক্যপ্রয়োগ, সরলব্যবহার, অতিথিসৎকার, ধর্ম্মার্থ উপার্জ্জন ও ধর্ম্মপত্নীর প্রতি অনুরাগ প্রদর্শন করিলে উভয়লোকে সুখভোগ করিতে পারে। মহর্ষিগণ কহেন যে, গৃহস্থ ব্যক্তির পুত্রকলত্রগণের ভরণপোষণ ও বেদাধ্যয়ন অবশ্য কর্ত্তব্য। যে ব্রাহ্মণ এইরূপে যথানিয়মে যজ্ঞানুষ্ঠান প্রভৃতি কার্য্যে ব্যাপৃত হইয়া গার্হস্থ্যধৰ্ম্ম প্রতিপালিত করিতে পারেন, তিনি স্বর্গে গমনপূর্ব্বক বিশুদ্ধ ফলভোগে অধিকারী হয়েন এবং তাঁহার অভিলষিত দ্রব্যজাত অক্ষয় ও বশীভূত হয়। যে ব্রাহ্মণ দীক্ষিত, জিতেন্দ্রিয় ও পক্ষপাতনিরপেক্ষ হইয়া দেবগণের স্মরণ, মন্ত্রজপ, আচার্য্যের শুশ্রষা, গুরুকে নমস্কার, বেদবেদাঙ্গ অধ্যয়ন, প্রাণায়ামাদি ষট্কাৰ্য্য সম্পাদন, সর্ব্ববাসনা পরিত্যাগ এবং ধর্ম্মদ্বেষীদিগের সংসর্গ পরিহার করেন, তিনি যথার্থ ব্রহ্মচারী।