৬০তম অধ্যায়
ভগীরথের মৃত্যুকথা
নারদ কহিলেন, হে সৃঞ্জয়! মহারাজ ভগীরথও করাল কালকবলে নিপতিত হইয়াছেন। ঐ মহাত্মা ভাগীরথী-তীর কাঞ্চনযূপে ব্যাপ্ত করিয়াছিলেন। তিনি রাজা ও রাজপুত্রগণকে পরাভব করিয়া হেমালঙ্কারভূষিত দশ লক্ষ কন্যা ব্রাহ্মণগণকে প্রদান করেন। ঐ সমুদায় কন্যা রথারূঢ়; রথ সমুদায় চারি চারি অশ্বে যুক্ত; প্রত্যেক রথের পশ্চাৎ হেমমালী শত মাতঙ্গ; প্রত্যেক মাতঙ্গের পশ্চাৎ সহস্র অশ্ব, প্রত্যেক অশ্বের পশ্চাৎ শত গো এবং গোগণের পশ্চাৎ অসংখ্য অজ ও ছাগ ছিল। মহারাজ ভগীরথের ভূরি ভূরি দক্ষিণাপ্রদান সময়ে গঙ্গা জনৌষ আক্রমণে ব্যথিত হইয়া তাঁহার ক্রোড়ে উপবেশন করিলেন। জাহ্নবী সেই দিন হইতে ভগীরথের কন্যা হইয়া ভাগীরথী নামে বিখ্যাত হন এবং পুত্রের ন্যায় ভগীরথের পূর্ব্বপুরুষগণকে উদ্ধার করেন। ভগবতী ভাগীরথী যে স্থানে ভগীরথের উরুদেশে উপবেশন করেন, ঐ স্থান উর্ব্বশী তীর্থ বলিয়া খ্যাত হইয়াছে। হে সৃঞ্জয়! সূৰ্য্য সদৃশ তেজ সম্পন্ন গন্ধৰ্ব্বগণ মধুরভাষী দেব, মনুষ্য ও পিতৃগণের নিকট এই গাথা কীৰ্ত্তন করিয়া থাকেন।
হে শ্বিত্যনন্দন! এইরূপে ভগবতী গঙ্গা ইক্ষাকুবংশাবতংশ ভূরি দক্ষিণ যজ্ঞের অনুষ্ঠাতা মহাত্মা ভগীরথকে পিতৃত্বে বরণ করেন। ইন্দ্র বরুণ প্রভৃতি সুৱগণ ভগীরথের যজ্ঞ অলঙ্কৃত করিয়া যজ্ঞাংশ গ্রহণ ও যজ্ঞ বিঘ্ন নিরাকরণ করিয়াছিলেন। যে যে ব্রাহ্মণ যে যে স্থানে থাকিয়া যে যে প্রিয় বস্তু প্রার্থনা করিতেন, মহাত্মা ভগীরথ সেই সেই ব্রাহ্মণকে সেই সেই স্থানে সেই সেই অর্থ সমুদায় প্রদান করিতেন। ব্রাহ্মণদিগকে তাঁহার কিছুই অদেয় ছিল না। পরিশেষে ঐ মহাত্মা ব্রাহ্মণগণের প্রসাদে ব্ৰহ্ম লোকে গমন করেন। মরীচিপায়ী মহর্ষিগণ মোক্ষ ও স্বর্গ লাভের নিমিত্ত চন্দ্র ও সূর্যের ন্যায় ব্রহ্ম বিদ্যা ও কর্ম্ম বিদ্যা সুনিপুণ মহাত্মা ভগীরথের নিকট গমন পূর্ব্বক তাহার উপাসনায় প্রবৃত্ত হইতেন। হে সৃঞ্জয়! তোমা অপেক্ষা সমধিক তপ, সত্য, দয়া ও দানশালী এবং তোমার পুত্র অপেক্ষা অধিক পুণ্যবান মহাত্মা ভগীরথকেও কালগ্রাসে পতিত হইতে হইয়াছে; অতএব তুমি অযাজ্ঞিক অধ্যয়নাদি রহিত স্বীয় পুত্রের নিমিত্ত আর অনুতাপ করিও না।