০৫.
ট্রাকিওশান সরিয়ে ফেলার প্রক্রিয়াটি ছিল যন্ত্রণাহীন, তবে খুবই সময়সাপেক্ষ। এটি রক্তের সাথে মিশে শরীরের ভেতর দিয়ে হৃৎপিণ্ডের ভেতর একটি জায়গায় স্থিতি হয়। সেখান থেকে এটাকে মুক্ত করে ধমনির ভেতর দিয়ে হাতের কোনো একটা আঙুলের মাঝে নিয়ে আসা হয়, এই সময়টিতে খুব সতর্ক থাকতে হয় যেন এটি কোনোভাবে রক্তের প্রবাহের সাথে মস্তিষ্ক চলে না যায়, একবার সেটি মস্তিষ্কে হাজির হলে আর মুক্ত করে আনা যায় না। এছাড়া ট্রাকিওশানের সিগন্যাল আদান-প্রদান মস্তিষ্কে একধরনের অনুরণন তৈরি করে, সে কারণে তখন মানুষের হ্যাঁলুসিনেশন শুরু হতে পারে।
রিটিন একটা অপারেশন টেবিলে শুয়ে ছিল, তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা টেবিলের সাথে আঁটকে রাখা হয়েছে–মাঝে মাঝে তাকেই নানা ধরনের শারীরিক প্রক্রিয়া করতে বলা হচ্ছিল এবং সে বাধ্য ছেলের মতো সেগুলো করে যাচ্ছে। তার উপর একজন মানুষ এবং দুইটা রোবট ঝুঁকে আছে। তারা চাপা স্বরে কথা বলছে, হঠাৎ করে তাদের মাঝে একধরনের উত্তেজনা দেখা গেল, একজন তার ডান হাতের তর্জনীটি চেপে ধরল, রোবটটি একটা সিরিঞ্জ দিয়ে তার ৩র্জনীর মাথা থেকে এক ফোঁটা রক্ত টেনে বের করে নেয় এবং তখন সম্মিলিতভাবে সবাই একটা আনন্দধ্বনি করে। রিটিন বুঝতে পারল ট্রাকিওশানটি বের করা সম্ভব হয়েছে।
মানুষ দুজন তার শরীরের বাঁধন খুলতে থাকে। একটি রোবট বলল, “তোমাকে অভিনন্দন ছেলে, তুমি এখন একজন ট্র্যাকিওশান মুক্ত মানুষ।”
মানুষটি বলল “অভিনন্দন শব্দটি যথার্থ হলো কি না বুঝতে পারলাম না। সম্ভবত বলা উচিত তুমি এখন থেকে একজন অভিশপ্ত মানুষ।” কথা শেষ করে মানুষটি আনন্দহীন একধরনের হাসি হাসতে থাকে।
একটি রোবট রিটিনের ট্র্যাকিওশানসহ রক্তের ফোঁটাটি সিরিঞ্জের ভেতর থেকে একটা এম্পুলে ঢুকিয়ে দিতে থাকে। রিটিন উঠে বসতে বসতে বলল, “আমার ট্র্যাকিওশানটি এখন কী করবে?”
মানুষটি বলল, “সংরক্ষণ করব, অনেক সময় পুরানো ট্র্যাকিওশান কাজে লাগানো যায়।”
“আমি শুনেছি শরীর থেকে বের করলে সেটা অকেজো হয়ে যায়।”
“হ্যাঁ। সেটাকে রক্তের প্রবাহে রাখতে হয়। যোগাযোগ না থাকলে ট্রাকিওশান নিজ থেকে বন্ধ হয়ে যায়।”
রিটিন টেবিল থেকে নামতে নামতে বলল, “আমি কি এখন যেতে পারি?”
“হ্যাঁ যেতে পারো। শরীর থেকে ট্র্যাকিওশান বের করার পর সবাইকে একটা কঠিন ট্রেনিংয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তোমাকেও যেতে হবে।”
রিটিন মাথা নাড়ল, বলল, “ঠিক আছে।”
.
রিটিন ভেবেছিল কঠিন শব্দটি একটি কথার কথা। কিন্তু সে আবিষ্কার করল ট্রেনিংটি সত্যিকার অর্থেই কঠিন। যেহেতু পুরো পৃথিবীটাকে সাজানো হয়েছে ট্র্যাকিওশানের তথ্যের উপর নির্ভর করে, সব মানুষ এটার ব্যবহার এত অভ্যস্ত হয়ে যায় যে, হঠাৎ করে সেটা শরীর থেকে সরিয়ে নেয়া হলে সে খুব সহজেই বিপদে পড়ে যাবে। অবাক হয়ে লক্ষ করবে ট্রেনের দরজা খুলছে না, দোকানে ঢুকতে পারছে না, রাস্তা পার হতে পারছে না, এক বোতল পানি পর্যন্ত কিনতে পারছে না। একজন মানুষ হঠাৎ করে অনুভব করতে থাকবে একটি দেহ থাকার পরও সে যেন অদৃশ্য, কেউ যেন আর তাকে দেখতে পাচ্ছে না।
কাজেই ট্রেনিংয়ের মাঝে রিটিনকে অসংখ্যবার একই জিনিস করতে হলো যতক্ষণ পর্যন্ত মাথার মাঝে সেটা ঢুকে না যায়। শুধু মাথার মাঝে নয় যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টুকু তার অবচেতন মনেও ঢুকে না যায়। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ পর রিটিনের ইন্ট্রাক্টর ঘোষণা করল সে ইচ্ছে করলে এখন শহরে যেতে পারবে। রাস্তায় হাঁটতে পারবে। দোকানে ঢুকতে পারবে–এমনকি একটা তরুণীকে নিয়ে ক্যাফেতে পানীয় খেতেও যেতে পারবে। তবে প্রতিটি মুহূর্ত তাকে সতর্ক থাকতে হবে, এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলতে পারবে না যে এখন সে কার্যত অদৃশ্য একজন মানুষ!
পরদিন রিটিন প্রথমবার তার গোপন আস্তানা থেকে বের হলো। জায়গাটা শহরতলিতে একটা নির্জন এলাকা। এক পাশে একটি অরণ্য, অন্য পাশে সারি সারি ওয়ারহাউস। বড় বড় স্বয়ংক্রিয় লরি ট্রাক যাচ্ছে-আসছে। রোবটেরা সেখান থেকে মালপত্র নামাচ্ছে এবং তুলছে। রিটিন পাশের সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেল এবং প্রথমবার ট্র্যাকিওশানহীনভাবে একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রামে উঠে গেল। নিয়মটি সহজ–অন্য একজন মানুষের সাথে সাথে উঠে যেতে হবে–কারণ তার জন্যে ট্রামের দরজা খুলবে না কিংবা বন্ধ হবে না। শহরকেন্দ্রে অন্যান্য মানুষের ভিড়ে নেমে গিয়ে সে ইতস্তত হাঁটাহাঁটি করল, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষজনকে যেতে-আসতে দেখল এবং তাদের মাঝে রোবটদের আলাদা করার চেষ্টা করতে থাকল। শুধু তাই নয় নিম্নশ্রেণির একটা সাইবর্গকে পেয়ে সে পাশাপাশি হেঁটে যেতে যেতে একটা মেটাকোড বলে সেটাকে অচল করে দিল। দূর থেকে লক্ষ করল সেটি একটি ব্যস্ত রাস্তার মাঝখানে থেমে গিয়ে হঠাৎ করে পুরোপুরি উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে শুরু করে এবং মুহূর্তের মাঝে অসংখ্য স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এবং বাইভার্বালের একটি জটলা তৈরি হয়ে যায়।
রিটিন দূর থেকে জটলাটি কিছুক্ষণ উপভোগ করে নিজের আস্তানায় ফিরে এল।
.
সন্ধেবেলা ডাইনিং টেবিলে একটা ঘটনা ঘটল। সে অন্যদের সাথে খেতে বসেছে, তখন হঠাৎ বুঝতে পারল ঘরের মাঝে একধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, কারণটি বোঝার জন্যে সে পাশের মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
মেয়েটি বলল, “ক্লিওন।”
“ক্লিওন কে?”
মেয়েটি চাপা গলায় বলল, “তুমি ক্লিওনের নাম শোননি? আমাদের পুরো আন্দোলনের নেতা।”
রিটিন অপ্রস্তুত হয়ে বলল, “কেউ আমাকে বলেনি। আমি কেমন করে জানব?”
রিটিন মাথা ঘুরিয়ে ক্যাটাগরি সি মানব প্রজাতির অধিকার আদায়ের নেতা ক্লিওনকে দেখার চেষ্টা করতে করতে বলল, “কোন জন ক্লিওন?”
“ওই যে বয়স্ক মানুষটি, খাবারের ট্রে থেকে খাবার নিচ্ছে।”
ঠিক কী কারণ জানা নেই রিটিন ভেবেছিল এরকম গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিকে নিশ্চয়ই আলাদাভাবে চোখে পড়বে কিন্তু সে দেখল ক্লিওন মানুষটির চেহারা খুবই সাধারণ। এলোমেলো চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, পরনে একটা রং জ্বলে যাওয়া শার্ট এবং একটা বর্ণহীন ট্রাউজার।
মেয়েটি ফিসফিস করে বলল, “কখনো ডাইনিং রুমে খেতে আসে না, আজকে কেন এসেছে কে জানে!”
রিটিন খেতে খেতে চোখের কোনা দিয়ে ক্লিওনকে লক্ষ করার চেষ্টা করল। দেখল ক্লিওন তার ট্রেতে খাবার তুলে ডাইনিং হলের মানুষগুলোকে দেখার চেষ্টা করছে। মনে হলো সে কাউকে খুঁজছে।
ক্লিওন রিটিনদের টেবিলের দিকে তাকাল এবং হঠাৎ করে তাদের টেবিলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। কাছাকাছি এসে থেমে গিয়ে রিটিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি নিশ্চয়ই রিটিন?”
টেবিলের সবাই তখন খাওয়া বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেছে, রিটিনও দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, “জি। আমি রিটিন।”
ক্লিওন বলল, “আমি কি তোমাদের টেবিলে বসতে পারি?”
টেবিলের সবাই একসাথে বলল, “অবশ্যই অবশ্যই।”
একজন উঠে প্রায় দৌড়ে গিয়ে ক্লিওনের জন্যে একটা চেয়ার নিয়ে এল। ক্লিওন ঠিক রিটিনের সামনের চেয়ারটিতে বসে খাবারের ট্রেটা টেবিলের উপর রাখে। তারপর প্লেটের খাবার এবং বাটির স্যুপের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “স্যুপের চেহারা দেখেছ? মনে হচ্ছে হাতধোয়া পানি!”
রিটিনের পাশে বসে থাকা মেয়েটি বলল, “কিন্তু এটি খুব পুষ্টিকর। এর মাঝে কিশিনি ফর্টি টু আছে।”
ক্লিওন হতাশার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, “সেটাই হচ্ছে সমস্যা। জৈব খাবার উঠে সব কৃত্রিম খাবার। আজ থেকে পাঁচশ বছর আগে জন্ম নেয়া উচিত ছিল–তাহলে সত্যিকারের জৈব খাবার খেতে পারতাম। না জানি সেগুলো খেতে কেমন ছিল!”
রিটিন সাহস করে আলোচনায় যোগ দিল, বলল, “আমি প্রাচীন সাহিত্যে দেখেছি সেখানে সবসময় খাবারের বর্ণনা থাকে। সেই সময় খাবারে অনেক বৈচিত্র্য ছিল।”
ক্লিওন মাথা নাড়ল বলল, “হ্যাঁ, মানুষ তখন সভ্য ছিল। এখন আমরা অসভ্য। বর্বর।”
ক্লিওনের কথার ভঙ্গি দেখে সবাই হেসে ওঠে। ক্লিওন এক চামচ স্যুপ খেয়ে রিটিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি আসলে তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি।”
রিটিনের গলায় খাবার আটকে গেল, কোনোমতে সেটা গলা দিয়ে নিচে নামিয়ে অবাক হয়ে বলল, “আমার সাথে?”
“হ্যাঁ। তোমার সাথে।” ক্লিওন আরেক চামচ স্যুপ মুখে দিয়ে বলল, “ট্রাকিওশান সরানোর পর আজকে তুমি প্রথমবার বাইরে গিয়েছিলে?”
রিটিন হঠাৎ একধরনের আতঙ্ক অনুভব করে। ট্র্যাক্রিওশান ছাড়া বের হবার পর তাদের খুব সতর্ক থাকার কথা। সে প্রথম দিকে সতর্ক ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে তার ভেতর খানিকটা নির্বোধ আত্মবিশ্বাস চলে এসেছিল, শহরের কেন্দ্রে সে একটা নিচু শ্রেণির সাইবর্গকে মেটাকোড দিয়ে অচল করে দিয়েছিল।
রিটিন যেটা ভয় পাচ্ছিল সেটাই হলো। ক্লিওন জিজ্ঞেস করল, “প্রথম দিন তুমি ঘর থেকে বের হয়ে শহরের কেন্দ্রে গাড়ি বাইভার্বাল ট্রাক লরির মহা জটলা লাগিয়ে চলে এসেছ?”
রিটিন শুকনো মুখে মাথা নেড়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করল কিন্তু ক্লিওন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “সেটা ঘটিয়েছ খুব কায়দা করে, একটা পিক্সি সাইবর্গকে মেটাকোড় দিয়ে অচল করে। এমনভাবে অচল করেছ যে রাস্তার ঠিক কেন্দ্রে গিয়ে তার কোঅর্ডিনেশন নষ্ট হয়েছে।”
রিটিন আবার কিছু একটা বলার চেষ্টা করল কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না। ক্লিওন হাসি হাসি মুখে রিটিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার একটি প্রশ্ন।”
রিটিন শুকনো গলায় বলল, “কী প্রশ্ন?”
“তোমার ভয় করেনি? কাজটি অসম্ভব বিপজ্জনক ছিল। এত অবলীলায় এত বিপজ্জনক কাজ করতে তোমার ভয় করেনি?”
রিটিন বলল “না, ভয় করেনি।”
“কাঁদের ভয় করে না, বলো দেখি।”
“নির্বোধদের। নির্বোধদের ভয় করে না।”
“তুমি কি নির্বোধ?”
রিটিন নিচু গলায় বলল, “আমি নিজেকে নির্বোধ মনে করি না। কিন্তু কী কারণ জানা নেই আমার নিজের উপর খুব বিশ্বাস–মনে
হয় কিছু হবে না।”
ক্লিওন কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে রিটিনের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, “আমি তোমার মতো একজনকে খুঁজছি। যে নির্বোধ না কিন্তু নির্বোধদের মতো যার কোনো কিছু ভয় করে না।”
“কেন?”
“একটা মিশনে পাঠাব। এই মিশনে পাঠানোর জন্যে আমার বিশেষ একজন মানুষ দরকার। তুমি রাজি আছ?”
“আছি। রাজি আছি।” রিটিন উত্তেজিত গলায় বলল, “অবশ্যই রাজি আছি।”
ক্লিওন হেসে ফেলল, হাসতে হাসতে বলল, “মিশনটা সম্পর্কে কিছুই না জেনে তুমি রাজি হয়ে গেলে?”
রিটিন মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। আমি কিছু জানতে চাই না। জানলে যদি ভয় পেয়ে যাই সে জন্যে আমি কিছু জানতে চাই না।”
ক্লিওন কিছুক্ষণ রিটিনের দিকে তাকিয়ে থেকে তার স্যুপটা আরেক চামচ মুখে দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যুপটাতে একটা ঝাঝালো গন্ধ আছে। এটা কোথা থেকে এসেছে বলে মনে হয়?”
সবাই বুঝল ক্লিওন রিটিনের বিষয়টি নিয়ে আর কারো সাথে কোনো কথা বলবে না। রিটিনের পাশে বসে থাকা মেয়েটি বলল, “এটি সিটিলা নাইন্টি টু। সিটিলা নাইন্টি টু এই ঝাঁঝালো গন্ধটি দেয়।”
সবাই খাবার নিয়ে আলোচনা করে, মনে হতে থাকে কী দিয়ে খাবার তৈরি হয় সেটাই বুঝি আলোচনার জন্যে খুবই বিচিত্র একটা বিষয়।
.
০৬.
গভীর রাতে ছোট একটা বাইভার্বাল রিটিনকে কন্ট্রোল সেন্টারের কাছাকাছি একটা রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গেল। রিটিন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কন্ট্রোল সেন্টারটির দিকে তাকায়। এর ভেতরে ঢুকে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মূল কোয়ার্টজ ওয়েব গাইডগুলোর একটি অংশ তাকে ধ্বংস করতে হবে। তার কাছে কিছু সি নাইন্টি বিস্ফোরক এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্যে একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দেয়া হয়েছে। মুখ ছাড়া তার সারা শরীর কালো নিওপলিমার দিয়ে ঢাকা, অপরেশনের আগের মুহূর্তে সে মুখটিকেও ঢেকে নেবে। এই নিওপলিমার পোশাকটি অনেক যত্ন করে তৈরি হয়েছে। এটি যেকোনো বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ একদিকে শোষণ করে নিয়ে অন্যদিক দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। নিরাপত্তার জন্যে যে অবলাল এবং অতিবেগুনি রশ্মি ব্যবহার করা হয় সেগুলোর কাছে এই পোশাকটি অদৃশ্য। মানুষের চোখে নয়।
মানুষের চোখের সামনে না পড়ে তাকে ভেতরে ঢুকতে হবে, কাজ শেষ করতে হবে এবং বের হতে হবে। এর আগে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে, যারা চেষ্টা করছে তারা সবাই মারা গেছে, কেউ কোয়ার্টজ ওয়েব গাইডগুলো ধ্বংস করতে পারেনি। রিটিনও পারবে না–কিন্তু তবু সে চেষ্টা করবে। প্রত্যেকবার আগের বার থেকে একটু বেশি সাফল্য আসে, এভাবে একসময় সফল হবে। অন্যবারের অভিযানের তুলনায় এবারে পার্থক্য একটাই, পুরো ব্যাপারটি নিয়ে রিটিনের ভেতর খানিকটা দুর্ভাবনা আছে কিন্তু কোনো আতঙ্ক নেই।
রিটিন এই কন্ট্রোল সেন্টারের ভেতরে কখনো যায়নি কিন্তু যারা আগে যাওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের মস্তিষ্ক থেকে স্মৃতি সংগ্রহ করে তার মস্তিষ্কের ভেতর সেটা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাই রিটিন এই কন্ট্রোল সেন্টারটি সম্পর্কে এখন খুব ভালো করে জানে। কোথায় কী ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সে সম্পর্কে তার পরিষ্কার একটা ধারণা রয়েছে।
এর আগে যারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছে তারা সবাই প্রতিরক্ষা দেয়াল পার হয়ে ঢুকেছে, রিটিন সেদিক দিয়ে ঢুকবে না। সে ঠিক করেছে মূল গেট দিয়ে ঢুকবে। তার শরীরে ট্র্যাকিওশান নেই তাই মূল নিরাপত্তা সিস্টেমে সে নিশ্চয়ই অদৃশ্য।
রিটিন তার মুখটা ঢেকে মূল গেটে এসে দাঁড়াল, এখানে কোনো মানুষ নেই, থাকার প্রয়োজনও নেই। সে গেটের উপরের দিকে তাকাল, হাই ভোল্টেজ তার এবং অদৃশ্য অবলাল রশ্মি থাকার কথা। রিটিন মাথা ঘামাল না, সে তার হুক লাগানো কর্ডটি উপরে ছুঁড়ে দিল সাথে সাথে সে একটা ক্ষীণ অ্যালার্মের শব্দ শুনতে পেল।
রিটিন অপেক্ষা না করে কর্ড ধরে দ্রুত উপরে উঠে যায় এবং একাধিকবার শরীরে তীব্র অবলাল রশ্মির উত্তাপ অনুভব করে। পোশাকটি তাকে রক্ষা করবে–তাই রিটিন সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামাল না।
গেটের উপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ার সাথে সাথে কয়েকজন গার্ড তার দিকে ছুটে আসে। গার্ডগুলো রোবট হলে দুর্ভাবনার কিছু নেই। তার কাছে যে জ্যামার আছে সেটা মেটাকোড ব্যবহার করে সবগুলোকে অচল করে দেবে। রিটিন কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করল এবং সত্যি সত্যি রোবটগুলো অচল হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুলতে শুরু করে। একটি রোবট তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে আকাশের দিকে গুলি করতে থাকে এবং সেই শব্দ শুনে আরো অনেকে দৌড়ে আসতে থাকে।
রিটিন অপেক্ষা না করে গেটের পাশে ছোট ঘরটায় ঢুকে পড়ল। বিস্মিত গার্ড তার দিকে তাকিয়ে তার অস্ত্রটি হাতে নেয়ার চেষ্টা করল, রিটিন সেই সুযোগ দিল না। নিজের হাতের অস্ত্রটি তুলে ফিস ফিস করে বলল, “তুমি ক্যাটাগরি এ নাকি সি?”
গার্ডটি কিছু বলল না। রিটিন ফিস ফিস করে বলল, “বলে ফেল। ক্যাটাগরি এ হলে মেরে ফেলতে হবে। সি হলে শুধু অচেতন করে রাখব।”
গার্ডটি শুকনো গলায় বলল, “ক্যাটাগরি সি।” সাথে সাথে রিটিন ট্রিগার টেনে ধরল এবং ধুপ করে একটা শব্দ হলো। গার্ডটি অচেতন অবস্থায় কাত হয়ে পড়ে যায়, চোখ দুটো তখনো খোলা, সেই চোখে বিস্ময়, কিন্তু কিছু দেখছে বলে মনে হলো না।
এখন পর্যন্ত সবকিছু পরিকল্পনামতো হয়েছে, তবে কঠিন কাজটুকু এখনো শুরু হয়নি, এখন শুরু হবে। রিটিন সময় বাঁচানোর জন্যে সি নাইন্টি বিস্ফোরকগুলো বের করে হাতে নিয়ে নেয়। তারপর গার্ড রুম থেকে বের হয়ে কন্ট্রোল সেন্টারের মূল গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করে–রিটিন ইতস্তত গুলির শব্দ শুনতে পায়, সে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না। তার শরীরে ট্র্যাকিওশান নেই, কেউ তাকে লক করে গুলি করতে পারবে না। ভাগ্যক্রমে যদি তাকে লাগাতে পারে শুধু তাহলে লাগবে। আজকে এখানে একটা ভাগ্য পরীক্ষা হচ্ছে রিটিনের ভাগ্য বনাম কন্ট্রোল সেন্টারের ভাগ্য।
মূল গেটের কাছে গিয়ে রিটিন মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর হাত বাড়িয়ে সি নাইন্টি বিস্ফোরকটি উপরে ছুঁড়ে দেয়। একটি ধাতব শব্দ করে সেটি মূল গেটের লকিং মডিউলে আটকে গেল। রিটিন তখন গড়িয়ে সরে গিয়ে কানে হাত দিল। এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গোনার আগেই চোখধাঁধানো একটা বিস্ফোরণ হলো, প্রচণ্ড উত্তাপের একটা হলকা রিটিনের উপর দিয়ে ছুটে গেল, সে মানুষের চিৎকার এবং তীক্ষ্ণ অ্যালার্মের শব্দ শুনতে পেল। তীব্র আলোতে চারদিক হঠাৎ করে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।
রিটিন মাটিতে শুয়ে শুয়ে বড় বড় সার্চলাইটগুলোতে গুলি করে কয়েকটাকে অন্ধকার করে দিল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে সে বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। গেটটিতে ধোয়া এবং আগুন, রিটিন সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামাল না। হাতের কব্জিতে লাগানো কন্ট্রোল প্যানেলে সুইচ টিপে দিতেই পায়ের তালুতে একধরনের ঝাঁকুনি অনুভব করে, সেখানে এখন হাই টিসি সুপার কন্ডাক্টরে বিদ্যুৎপ্রবাহ করিয়ে জুতোর তলায় তীব্র ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হওয়ার কথা। রিটিন সেগুলো ব্যবহার করে একটি সরীসৃপের মতো দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে গেল, নিচে মানুষ ছোটাছুটি করছে, চট করে কেউ এখন তাকে খুঁজে পাবে না।
রিটিন বাতাস প্রবাহের বড় ডাক্টটা খুঁজে বের করল, এটার ভেতর দিয়ে সে নিরাপদে নেটওয়ার্ক সেন্টারে চলে যেতে পারবে, রিটিন দেরি না করে ডাক্টের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যায়। ডাক্টটাকে একটা গোলকধাঁধার মতো মনে হলেও রিটিন সেটাকে হাতের তালুর মতো চিনতে পারে, তার মস্তিষ্কে এটি প্রতিস্থাপন করা আছে।
কিছুক্ষণের ভেতরেই সে আবার গুলির শব্দ শুনতে পেল, তার অবস্থানটি টের পেয়ে গেছে। রিটিন কয়েক মুহূর্ত ঘাপটি মেরে তার দ্বিতীয় পি নাইন্টিটি ব্যবহার করল। আবার একটি চোখধাঁধানো বিস্ফোরণ। ডাক্টটির বড় অংশ এবারে প্রচণ্ড শব্দ করে নিচে আছড়ে পড়ল এবং রিটিন কাত হয়ে থাকা সেই ডাক্ট বেয়ে নিচে এসে পড়ল। শরীরের কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই আঘাত পেয়েছে কিন্তু তার ভেতরে যন্ত্রণার কোনো অনুভূতি নেই। থাকার কথা নয়, আগামী দুই ঘণ্টার জন্যে তার মস্তিষ্কে যন্ত্রণার অনুভূতি অবদমিত করে রাখা আছে।
রিটিন উঠে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে এই মুহূর্তে কোথায় আছে। দেয়ালে বড় বড় করে কিছু একটা লেখা, রিটিন লেখাটা চিনতে পারে। এটি নিরাপত্তার একটি কোড, নেটওয়ার্ক কক্ষের পাশের ঘরে এটি থাকার কথা।
রিটিন নেটওয়ার্ক সেন্টারের দরজাটা খুঁজে বের করল। তারপর ধোয়া এবং ধুলোতে প্রায় অন্ধকার হয়ে থাকা ঘরটির ভেতর দিয়ে নেটওয়ার্ক সেন্টারের দরজার দিকে ছুটে গেল। দরজাটি স্পর্শ করতেই সেটি খুলে গেল। রিটিনেরও সেরকম ধারণা ছিল। নেটওয়ার্ক ঘরটি তুলনামূলকভাবে অক্ষত রয়েছে, রিটিন দ্রুত কোয়ার্টজের ওয়েব গাইডগুলো খুঁজে বের করল। সেন্টারের এক কোনায় কয়েকজন মানুষ হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কী শুরু হয়েছে তারা বুঝতে পারছে না।
রিটিন তার মুখের উপর থেকে নিওপলিমারের টুকরোটুকু সরিয়ে সহজ গলায় বলল, “বন্ধুরা। আমরা কন্ট্রোল সেন্টার দখল করে ফেলেছি। পুরোটা আমাদের দখলে। তোমরা মিছিমিছি কোনো ঝামেলা কোরো না।”
কাঁপা গলায় একজন মেয়ে বলল, “তোমরা কারা?”
“তুমি যদি ক্যাটাগরি সি মানুষ হয়ে থাক তাহলে আমরা আসলে তোমাদের মতো মানুষ! পৃথিবী থেকে মানুষে মানুষে বিভাজনের জন্যে কাজ করছি।”
মেয়েটি বলল, “কিন্তু–”
রিটিন বাধা দিল, বলল, “আমি জানি এই বিষয়টা নিয়ে খুবই চমৎকার একটা বিতর্ক করা যেতে পারে কিন্তু আমার হাতে এখন সেটি শুরু করার সময় নেই। আমাকে এই নেটওয়ার্ক সেন্টারের কিছু অংশ উড়িয়ে দিতে পাঠানো হয়েছে। এখন সেটাই করতে হবে। যে বিস্ফোরণটি হবে তার ঝাঁপটায় তোমাদের রীতিমতো ঝাঁঝরা হয়ে উড়ে যাবার কথা। কাজেই আমার একান্ত অনুরোধ থাকবে তোমরা ঘরটা ছেড়ে বের হয়ে যাও।”
রিটিনের কথায় কাজ হলো, মানুষগুলো রীতিমতো হুটোপুটি করে নেটওয়ার্ক ঘরটি থেকে বের হতে শুরু করে।
রিটিন কোয়ার্টজের ওয়েব গাইডগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। চারটি গাইডের একটিকে অক্ষত রেখে বাকি তিনটিকে ধ্বংস করতে হবে। রিটিন জানে না কেন একটাকে অক্ষত রাখতে হবে। চারটি একই সাথে ধ্বংস করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ ছিল।
রিটিন নির্দিষ্ট জায়গায় বিস্ফোরক লাগিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইল। এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গোনার আগেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠল। কাজটা ঠিকমতো হয়েছে কি না এখন আর দেখার সময় নেই। তার কব্জিতে লাগানো ছোট প্যানেলে অ্যালার্ট সিগন্যাল আসতে শুরু করেছে, তাকে এখন বের হতে হবে। তাকে সরিয়ে নেবার জন্যে একটি ড্রোন কন্ট্রোল সেন্টারের উপরে চলে এসেছে, দেরি করার কোনো সুযোগ নেই।
নেটওয়ার্ক সেন্টারের বড় দরজাটিতে কিছু মানুষ আর রোবট এসে ভিড় করেছে। রোবটগুলো নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু নেই, তার জ্যামার থেকে মেটাকোড সবগুলোকে অচল করে দেবে। মানুষগুলোকে নিয়ে সমস্যা। তাকে লক্ষ করে গুলি করার চেষ্টা করছে। শরীরে ট্র্যাকিওশান নেই বলে লক করে লক্ষ্যভেদ করতে পারছে না। রিটিন পাল্টা গুলি করতে করতে বড় দরজাটি দিয়ে বাইরে বের হয়ে এল। পায়ের চৌম্বকীয় জুতো চালু করে সে আবার সরীসৃপের মতো দেয়াল বেয়ে উঠে যায়, তারপর ছাদ থেকে ঝুলে ঝুলে শ খানেক মিটার ছুটে গিয়ে বড় একটি জানালা দিয়ে বাইরে চলে এল।
মাঝখানে ফাঁকা জায়গা, রিটিন সেখানে দাঁড়াতেই উপর থেকে একটা ড্রোন নিচে নেমে আসে, তারপর চোখের পলকে তাকে জাপটে ধরে সেটি আবার উপরে উঠে যায়। রিটিন ইতস্তত গুলির শব্দ শুনতে পায় কিন্তু সে জানে তাকে সেগুলো আর তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। দুই ঘণ্টা পর রিটিনের সাথে ক্লিওনের দেখা হলো। ক্লিওন একটা টেবিলে পা তুলে চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে ছিল, রিটিনকে দেখে সে সোজা হয়ে বসে বলল, “এসো রিটিন।”
রিটিন বলল, “মিশন শেষ হয়েছে।”
ক্লিওন বলল, “আমরা সেই খবর পেয়েছি। আমরা একটা কোয়ার্টজ গাইডের কিছু তথ্য এখন বের করে ফেলতে পারব। তোমাকে বলা হয়েছিল সেটা অক্ষত রেখে অন্যগুলো ধ্বংস করতে।”
“মনে হয় করতে পেরেছি।”
“হ্যাঁ। তুমি করতে পেরেছ। এখন সবগুলো কোয়ার্টজের ওয়েব গাইডের তথ্যগুলো এটা দিয়ে যাবে। আমরা বিশাল একটা তথ্যভান্ডার পেয়ে যাব। তোমাকে ধন্যবাদ রিটিন।”
রিটিন হাসল, বলল, “আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই ক্লিওন। তুমি জানো আমাকে প্রায় প্রোগ্রাম করে পাঠানো হয়েছিল। আমি নিজে কিছু করিনি, যেভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে যখন যেটা করার কথা সেটা করে গেছি!”
ক্লিওন বলল, “এর আগে আমরা যাদের পাঠিয়েছিলাম তাদেরও আমরা ঠিক তোমার মতো প্রোগ্রাম করে পাঠিয়েছিলাম। তাদের কেউ তোমার মতো বেঁচে ফিরে আসতে পারেনি।”
রিটিন বলল, “আমি নিশ্চয়ই অনেক ভাগ্যবান একজন মানুষ।”
ক্লিওন মাথা নাড়ল, বলল, “না, শুধু ভাগ্য দিয়ে এটা সম্ভব না। অন্য কিছু প্রয়োজন।”
রিটিন একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “অন্য কিছু? অন্য কিছু কী? আজকের আগে আমি জীবনে একটি অস্ত্র কখনো স্পর্শ করিনি–এখানে আমার নিজের বিন্দুমাত্র দক্ষতা ছিল না।”
ক্লিওন বলল, “আমি তোমার দক্ষতার কথা বলছি না।”
“তাহলে কিসের কথা বলছ?”
“আমরা সবাই মিলে একটু আগে তোমার মিশনের খুঁটিনাটি দেখেছি, আমাদের সিস্টেম দিয়ে বিশ্লেষণ করিয়েছি। আমরা যেটা দেখেছি সেটি অবিশ্বাস্য–”
“সেটি কী?”
“এই মিশন থেকে তোমার জীবিত ফিরে আসার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা ছিল না। তোমাকে লক্ষ করে মানুষ রোবট এবং স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা অস্ত্র অসংখ্যবার গুলি করেছে। মিশন শুরু করার পাঁচ মিনিটের ভেতর তোমার সারা শরীর গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাবার কথা ছিল। কিন্তু–”
“কিন্তু কী?”
“কিন্তু একটি গুলিও তেমার শরীরে লাগেনি। মনে হয়েছে” ক্লিওন কথা শেষ না করে থেমে গেল।
রিটিন জিজ্ঞেস করল, “কী মনে হয়েছে?”
ক্লিওন একটা নিঃশ্বাস নিল, নিজের হাতের দিকে তাকাল তারপর ঘুরে রিটিনের দিকে তাকাল। বলল, “মনে হয়েছে কেউ তোমাকে খুব যত্ন করে রক্ষা করছে।”
“রক্ষা করছে? আমাকে?”
“হ্যাঁ।”
রিটিন প্রায় হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমাকে কে রক্ষা করবে?”
“প্রকৃতি।”
“প্রকৃতি?” রিটিন হকচকিত হয়ে ক্লিওনের দিকে তাকাল; জিজ্ঞেস করল, “প্রকৃতি একজন মানুষকে রক্ষা করতে পারে?”
ক্লিওন মাথা নাড়ল, বলল, “নিশ্চয়ই পারে। তা নাহলে তুমি কেমন করে জীবন্ত ফিরে এলে? প্রকৃতির নিশ্চয়ই যেকোনো মূল্যে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তোমার নিশ্চয়ই কোনো একটি কাজ করার কথা যেটি আমরা জানি না। প্রকৃতি জানে, সে জন্যে তোমাকে রক্ষা করেছে।”
রিটিন মাথা নেড়ে বলল, “তুমি কী বলছ এসব? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
ক্লিওন হাসার চেষ্টা করল, বলল, “আমি কী বলছি সেটা আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। কিন্তু এছাড়া আমার আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। তোমার এখনো কোনো একটা কাজ করা বাকি। গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ।”
রিটিন হকচকিতের মতো ক্লিওনের দিকে তাকিয়ে রইল।