জয়িতাদেবী, মিতালিদেবীর খুনের কেসে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করার আছে।
কিন্তু পুলিশকে আমি তো যা বলার বলেছি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ। সেটা আমি জানি। কিন্তু তদন্ত যত এগোয় ততই নতুন নতুন তথ্য বেরোতে থাকে, নতুন নতুন সত্য উদঘাটিত হতে থাকে–একটু শক্ত বাংলা বলে ফেললাম, মাফ করবেন–আর যত এসব হতে থাকে ততই মামলার প্যাটার্নটা পালটে যেতে থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে জেরা করা ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না।
বলুন।
মিঠু মিত্র নামে কাউকে কি আপনি চেনেন?
চিনব না কেন? উনি আমার জামাইবাবু।
বাঃ, বেশ বেশ। কতদিন চেনেন?
মিতালিদির বিয়ের সময় থেকে।
চমৎকার। আপনি নিজেই বলেছেন যে, উনি আপনার জামাইবাবু। তার মানে কি যে, উনি এখনও আপনার জামাইবাবু এবং আপনি ওঁর শালি?
তার মানে?
মানে বিয়ের ইমিডিয়েট পরেই যে ওঁদের ডিভোর্স হয়ে যায় এটা কি আপনার জানা নেই?
কেন থাকবে না?
আফটার ডিভোর্স যখন আইনত স্বামী আর স্ত্রীর সম্পর্ক থাকে না তখন সেই বিয়ের সুত্রে গড়ে ওঠা আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোও কি থাকে? না, থাকা উচিত?
ওঃ হ্যাঁ। সেই অর্থে আমাদের সম্পর্ক নেই।
অন্য কোনও অর্থে আছে কি?
তার মানে?
মিঠু মিত্র আর আপনার জামাইবাবু নন, আপনিও ওঁর শালি নন। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। আত্মীয়তা ছাড়াও তো কতরকমের সম্পর্ক হয়। আমি জানতে চাই, মিঠু মিত্রের সঙ্গে আপনার কোনও যোগাযোগ ছিল কি?
ছিল।
সেটা কীরকম?
চেনাজানা ছিল।
আর কিছু?
আমি সাদার্ন ক্লাবে ক্যারাটে শিখতাম। উনি ওখানকার ইনস্ট্রাক্টর।
বাঃ, চমৎকার। ক্যারাটে শিখতেন? হঠাৎ ক্যারাটে কেন?
ইচ্ছে হল।
আপনি কি স্পোর্টিং টাইপ? খেলাধুলো ভালবাসেন?
বাসি।
স্কুল-কলেজের স্পোর্টসে নেমেছেন কখনও?
না।
ফুটবল ক্রিকেট বোঝেন?
না। একটু একটু।
কখনও দৌড়ঝাপ করেছেন?
না।
তবু হঠাৎ ক্যারাটে শেখার ইচ্ছে হল?
হ্যাঁ।
বেশ বেশ। আপনার বাড়ি থেকে সাদার্ন ক্লাব বেশ খানিকটা দূর। আপনি কীসে করে যাতায়াত করতেন?
বাসে।
বাসে যেতেন এবং আসতেন?
হ্যাঁ।
ভাল করে ভেবে বলুন। বাসে যেতেন এবং আসতেনও?
কখনও কখনও মিঠুদা মোটরবাইকে পৌঁছে দিতেন।
বাঃ, বেশ বেশ। ওঁদের বিয়ের সময় আপনার বয়স কত ছিল?
বারো-তেরো।
এখন কত?
কুড়ি চলছে।
গুড। আপনি কি জানেন যে, আপনারা অর্থাৎ আপনার বাবা, মা এবং আপনি বিশেষ করে আপনি মৃতা মিতালি ঘোষের সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী?
জানি না।
শুধু কলকাতার বা পশ্চিমবঙ্গের নয়, মিতালিদেবীর আমেরিকার যাবতীয় বিষয়সম্পত্তি এবং টাকাপয়সারও আপনারাই ওয়ারিশান। জানেন?
সেরকম কথা কিছু শুনিনি।
শুনবেন। কারণ আপনারাই মিতালিদেবীর নেক্সট অফ কিন।
হতে পারে।
আপনি না জানলেও অন্য অনেকেই কিন্তু খবর রাখত যে, বরুণ ঘোষ ও তার মেয়ে মিতালি ঘোষের নিকটাত্মীয় আপনারাই। আপনারাই তাদের ওয়ারিশান।
জয়িতা চুপ করে রইল।
সাদার্ন ক্লাবে আপনি কবে ভরতি হয়েছেন?
দু’বছর হবে।
নিজে থেকেই গিয়ে ভরতি হলেন?
হ্যাঁ।
মানে হঠাৎ আপনার ক্যারাটে শেখার ইচ্ছে হল আর সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে সাদার্ন ক্লাবে ভরতি হলেন–ব্যাপারটা এভাবেই ঘটেছিল কি?
হ্যাঁ।
আপনি কি জানতেন মিঠু মিত্র ওখানে ক্যারাটে শেখান?
জানতাম।
তার মানে কি ওঁর কাছেই ক্যারাটে শেখার আগ্রহ ছিল আপনার?
ঠিক তা নয়। মিঠুদা থাকলে সুবিধে হবে, তাই–
সুবিধে নানারকমই আছে। বাই দি বাই, মিঠুবাবুকে আপনি কি বরাবরই মিঠুদা বলে ডাকেন, নাকি জামাইবাবু?
মিঠুদা।
কেন, বাঙালি মেয়েরা তো বড় ভগ্নীপতিকে সাধারণত জামাইবাবু বলেই ডাকে।
অনেকে দাদাও ডাকে।
হ্যাঁ, তা বটে। আপনি দাদাটাই প্রেফার করেন তা হলে?
হ্যাঁ।
বাঃ বেশ। মিঠু মিত্র মাঝে মাঝে আপনাকে মোটরবাইকে লিফট দিতেন?
হ্যাঁ।
মাঝে মাঝে? না রোজ?
রোজ নয়। প্রায়ই।
একটু ভেবে বলুন। ক্যারাটে ক্লাবের অন্য মেম্বাররা যদি বলে রোজ?
রোজ পৌঁছে দিলেই বা ক্ষতি কী?
ক্ষতি? ক্ষতির প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সত্যি কথাটা জানতে চাইছি মাত্র।
রোজ।
বাঃ এই তো চাই। কবে থেকে আপনাদের মধ্যে শালি আর ভগ্নীপতির সম্পর্কটা ঘুচে গিয়েছিল বলতে পারেন?
না। জানি না।
আপনাদের মধ্যে সম্পর্কটা কি কেবল প্রশিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর?
হ্যাঁ।
একটু ভেবে বলুন। কারণ আমাদের সংগৃহীত তথ্য অন্য কথা বলছে।
কী বলছে?
আপনাদের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা পরস্পরকে ভালবাসেন। শুধু তাই-ই নয়, আপনাদের বিয়ের কথাবার্তাও চলছে। ঠিক বলছি?
জয়িতা খানিকক্ষণ চুপ থেকে মৃদু স্বরে বলল, হ্যাঁ।
দয়া করে বলবেন কি যে এই প্রেম এবং বিয়ের ব্যাপারে আসল ইনিশিয়েটিভ কার বেশি? আপনার না মিঠুবাবুর?
আমার।
আপনার?
হ্যাঁ। মিতালিদি ওঁকে ডিভোর্স করার পর থেকেই আমি ওঁর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি।
ডিভোর্স না করলে?
তা জানি না। হয়তো মেনে নিতাম।
বাঃ। কিন্তু একটা খটকা থেকে যাচ্ছে।
কীসের খটকা?
মিতালিদেবী হঠাৎ মারা গেলে আপনিই যে ওঁর বিপুল সম্পত্তি পাবেন এটা মিঠুবাবুর মতো বুদ্ধিমান লোকের না জানা থাকার কথা নয়।
তাতে কী হল?
আপনার সঙ্গে প্রেমের ব্যাপারে ওঁরই বেশি আগ্রহ থাকার কথা। তাই না?
আমি বুঝতে পারছি না।
যাকগে। এখন বলুন, মিতালিদেবী ফিরে আসার পর থেকেই কি আপনি ওঁর সঙ্গে ওঁদের বাড়িতে থাকতেন?
হ্যাঁ। মিতালিদি লোনলি ফিল করছিলেন, তাই আমাকে থাকতে বলেন।
একটানা ছিলেন?
হ্যাঁ। তবে রাতটা। দিনের বেলায় আমার কলেজ থাকত, মিতালিদিরও কাজ থাকত।
হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই তো। কিন্তু খুনের রাতে আপনি ছিলেন না?
না।
কেন জানতে পারি?
সেদিন মিতালিদি হঠাৎ মদ খেয়ে মাতাল হয়ে যান। মাতলামিকে আমি ভীষণ ভয় পাই।
ঠিকই তো। মাতলামি মোটেই পছন্দ করার জিনিস নয়। আচ্ছা, মিতালিদেবী কি প্রায়ই ড্রিঙ্ক করতেন?
না। কক্ষনও নয়।
তা হলে সেদিন ড্রিঙ্ক করলেন কেন বলতে পারেন?
না।
না? আপনি তার সঙ্গে বেশ কয়েকদিন একটানা বাস করেছেন, তবু জানেন না তিনি হঠাৎ সেদিন কেন ড্রিঙ্ক করলেন?
না।
আপনাকে তিনি কিছু বলেননি?
না।
আপনি কিছু দেখেননি?
না।
কিছু অনুমানও করেননি?
না।
সেদিন মিঠুবাবুর সঙ্গে মিতালিদেবীর দেখা হয়েছিল, তা তো জানেন?
জানি।
তাদের মধ্যে কী কথা হয়?
আমি শুনিনি।
আপনি কি জানেন যে, মিতালিদেবীর মিঠুবাবুর প্রতি মনোভাব বদলে গিয়েছিল?
না, আমি জানতাম না।
জানতাম না মানে তখন জানতেন না, কিন্তু এখন জানেন?
এখনও জানি না।
এই জেরক্স কপিগুলো দেখুন তো। এ কি মিতালিদেবীর হাতের লেখা?
হ্যাঁ।
কষ্ট করে একটু পড়বেন কি? সবটা পড়ুন।
জয়িতা পড়ল। শবর দাশগুপ্ত ঈগলের চোখে চেয়ে রইল তার মুখের দিকে। পড়ার পর জয়িতার হাত থেকে কাগজগুলো ফেরত নিয়ে শবর তার ব্রিফকেসে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, কিছু বুঝতে পারলেন?
হ্যাঁ। মিতালিদি মিঠুদার প্রতি সট হয়ে পড়েছিল।
এগজ্যাক্টলি। আপনি কি জানেন যে ওঁর সেই সফটনেস এতটাই ছিল যে উনি মিঠু মিত্রকে ওঁর যাবতীয় বিষয়সম্পত্তির কাস্টোডিয়ান করে দিয়েছেন?
জানি। মিঠুদা বলেছে।
জয়িতাদেবী, মিতালিদেবীকে কে খুন করেছে বলে আপনার মনে হয়?
জানি না।
জানতে বলছি না। লজিক্যাল অনুমান বলে তো একটা ব্যাপার আছে।
আমি জানি না।
তা হলে ঘটনাগুলো একটু সাজিয়ে দিই। আপনার সুবিধে হবে। মিঠু মিত্র একজন বড়লোকের একমাত্র সন্তান মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে যাকে বিয়ে করার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা তার ছিল না। বরুণ ঘোষের বেনামা অ্যাকাউন্ট এবং সম্ভবত আরও দু-চারটি গুপ্ত খবর তিনি জানতেন। মে বি দেয়ার ওয়াজ এ টাচ অফ ব্ল্যাকমেল ইন দা ম্যারেজ। কিন্তু বিয়ে টিকল না। মিতালিদেবী ডিভোর্স করে আমেরিকায় চলে গেলেন। সুতরাং মিঠু মিত্রের তেমন লাভ হল না। কিন্তু কপালটা ভাল, তিনি আপনার সন্ধান পেয়ে গেলেন এবং একটা চমৎকার প্ল্যান করে রাখলেন। প্ল্যানটা অবশ্য একটু ফার ফেচেড, এটা আমি স্বীকার করছি। হয়তো প্ল্যান ওঁর ছিল না। কিন্তু সুযোগ এসে গেল। বরুণ ঘোষ মারা গেলেন এবং মিতালিদেবী দেশে ফিরলেন। দেখুন কীরকম গোল্ডেন অপরচুনিটি। মিতালিকে সরিয়ে দেওয়া গেলে দুটো কাজই হয়। এক, বহুঁকালের হারানো অপমানের শোধ নেওয়া এবং আপনাকে প্রচুর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করে দেওয়া। শুধু তাই-ই নয়, আমেরিকাতেও বেশ ভাল সম্পত্তি থাকায় তার ইনহেরিটর হিসেবে আপনার এবং আপনার হাজব্যান্ড হিসেবে ওঁরও ভবিষ্যতে আমেরিকায় যাওয়া এবং গ্রিন কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা খুলে দেওয়া। সুতরাং মিঠু মিত্র এই সুযোগ ছাড়লেন না। কিন্তু মুশকিল দেখা দিল মিঠুর প্রতি হঠাৎ মিতালির প্রেম। মিতালিকে খুন না করে, শুধু আবার বিয়ে করে ফেললেই মিঠু মিত্রের উদ্দেশ্য সফল হয়ে যেত। কিন্তু আমার অনুমান, তিনি সত্যিই আপনাকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছিলেন। তাই মিতালিকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যানেই স্টিক করে থাকতে হল। ওঁর কপাল সত্যিই তুলনাহীন। কারণ মিতালিদেবী মারা গেলেই যে আপনি ওঁর সম্পত্তি বা টাকাপয়সা হাতে পেতেন তা নয়। উত্তরাধিকার আইন কমপ্লিকেটেড এবং সাকসেশন সার্টিফিকেট পাওয়া সময়সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রেও মিঠু কেল্লা মেরে দিলেন মিতালি ওঁকে কাস্টোডিয়ান করে দেওয়ায়। সুতরাং লজিক্যাল কনক্লশনে যাওয়া কি খুব শক্ত বলে মনে হচ্ছে আপনার? আপনি কাঁদছেন? গুড। আশা করি মূল্যবান চোখের জলটা আপনি সমাজের একজন জঘন্য অপরাধী, একজন ঠান্ডা মাথার খুনির জন্য অপব্যয় করছেন না। এই কান্নাটা যদি অসহায় হতভাগিনী মিতালিদেবীর জন্য হয়ে থাকে তবে ইট ইজ মোস্ট ওয়েলকাম।
আমি আর পারছি না। আমাকে আজ ছেড়ে দিন।
জয়িতাদেবী, আর একটা ছোট্ট প্রসঙ্গ আছে। খুব অপ্রিয় প্রসঙ্গ। কিন্তু জরুরি। আপনি বরং টয়লেট থেকে ঘুরে আসুন। চোখেমুখে ভাল করে জলের ঝাঁপটা দেবেন, ইউ উইল ফিল গুড। যান।
জয়িতা গেল। অনেকটা সময় নিয়ে চোখেমুখে জলের ঝাঁপটা দিল। তারপর আয়নায় নিজের মুখখানার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। মাত্র কুড়ি বছরের জীবন তাকে কত কিছু শেখাচ্ছে।
বাইরের ঘরে এসে বসতেই শবর হাসল, এই তো বেশ নরম্যাল লাগছে আপনাকে। গুড। এবার সেই কথাটা।
বলুন।
আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে মিতালিদেবীকে খুনের পিছনে আপনারও একটা মোটিভ আছে?
আমার?
আরে না না, ঘাবড়াবেন না। আমি আপনাকে সন্দেহ করছি না। কিন্তু কথাটা খুব সংগত কারণেই উঠতে পারে।
আমি কেন খুন করব?
করেনওনি। কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর মে রেইজ এ কোশ্চেন। প্রশ্ন তুলতে পারে মিঠু মিত্রের উকিলও। সব দিক ভেবে রাখা ভাল।
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
বুঝিয়ে দিচ্ছি। আপনি মিঠুকে ভালবাসেন। ঠিক তো?
হ্যাঁ।
ভালবাসার জন্য মানুষ সব কিছু করতে পারে, স্বীকার করেন?
হ্যাঁ।
আপনি যখন মিতালিদেবীর বাড়িতে ছিলেন তখন নিশ্চয়ই আপনারা দুই বোন অনেক বিষয়ে কথা বলতেন।
হ্যাঁ। আমরা রাত দুটো-তিনটে পর্যন্তও আড্ডা মারতাম।
গুড। কী বিষয়ে কথা হত আপনাদের?
মোস্টলি আমেরিকা। ওখানকার লাইফ স্টাইল, লোনলিনেস, ঐশ্বর্য–এইসব নিয়ে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, আমেরিকা তো থার্ড ওয়ার্ল্ড পিপলের কাছে সবচেয়ে বেশি আলোচ্য বিষয় হবেই। খুব স্বাভাবিক। ধরুন প্রশ্ন উঠল যে, এইসব গল্পের ফাঁকে ফাঁকে মিতালিদেবী আপনাকে তার হৃদয়ের পরিবর্তনের কথাও জানিয়েছিলেন। তিনি যে আসলে মিঠুকে ভুলতে পারেননি এবং নতুন করে তার প্রেমে পড়েছেন এবং রিকনসিলিয়েশনের চেষ্টা করছেন সেসব কথাও বলেছেন।
না, মিতালিদি বলেননি।
আহা, সে তো বটেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠলে কী করবেন? বিশেষ করে প্রশ্নটা যদি হয় ভীষণ লজিক্যাল অ্যান্ড ডাউন টু আর্থ? তাই বলছিলাম, এগুলোও ভেবে রাখা ভাল।
কী ভাবব?
ধরুন উকিল আপনাকে বলল যে, মিতালিদেবীর হৃদয়ের পরিবর্তনের কথা জানতে পেরে আপনি আপসেট হয়ে পড়েছিলেন অ্যান্ড ভেরি জেলাস। কারণ, আপনার বয়স মাত্র কুড়ি, আপনি অনভিজ্ঞ। হৃদয় জয়ের লড়াইতে আপনি মিতালিদেবীর সঙ্গে নাও পেরে উঠতে পারেন। জেলাসি ইজ এ ডেনজারাস থিং। তাই না? তা ছাড়া ইনহেরিটেনসের প্রশ্ন তো আছেই। মিতালি মারা গেলে আপনি প্রচুর লাভবান হবেন। সুতরাং আপনি যদি মিতালিদেবীকে মেরে ফেলতে চান সেটাও অস্বাভাবিক বলে মনে করার কিছু নেই।
কী বলছেন আপনি?
আহা, উত্তেজিত হবেন না। আমি শুধু আদালতের সম্ভাব্য প্রশ্নগুলি সম্পর্কে আপনাকে অ্যালার্ট করছি। আচ্ছা, মিতালিদেবী তার সেন্টের শিশিগুলো কোথায় রাখতেন আপনি জানেন?
কেন জানব না? ও অনেক পারফিউম এনেছিল। কিছু সুটকেসে ছিল, কয়েকটা বের করে ড্রেসিং টেবিলে রেখেছিল।
আপনি কি জানেন যে খুনি পালানোর সময় অনেকগুলো সেন্টের শিশি ভেঙে সুগন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল, যাতে পুলিশ কুকুর গন্ধ না পায়?
শুনেছি।
দ্যাটস গুড। ও বাড়ি থেকে আপনি ক’টার সময়ে চলে আসেন?
রাত দশটা।
একাই ফিরেছিলেন?
হ্যাঁ।
তখনও পার্টি চলছিল?
হ্যাঁ।
আপনাকে চলে আসতে কে কে দেখেছে?
জানি না। আমি কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে চলে আসি। পিছনের বাগানের রাস্তা দিয়ে।
সেদিন রাত একটা থেকে দুটোর মধ্যে আপনি কোথায় ছিলেন?
আমার ঘরে। আর কোথায় থাকব?
হুঁ। বেশ গণ্ডগোলে ফেলে দিলেন।
কেন?
আপনার কেসটা ফুলফ নয়। এনিওয়ে, ফর দি টাইম বিয়িং আপনার কথা মেনে নিচ্ছি। ধরুন খুনটা আপনি করেননি।
আমি করিনি। ছিঃ ছিঃ, এসব কী কথা বলুন তো!
ফের উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। মাথা ঠান্ডা রাখুন। আপনার যাতে বিপদ না হয় তা আমি দেখব। কিন্তু আমার কিছু তথ্য চাই।
কী তথ্য?
মিঠু মিত্র কেমন লোক?
ভীষণ ভাল।
ভেবে বলুন।
ওকে নিয়ে আমি সব সময়েই ভাবি।
আপনি ওঁর জন্য সবকিছু করতে পারেন?
পারি।
ইভন এ মার্ডার?
আমি খুন করিনি।
সেটা প্রমাণসাপেক্ষ। কথাটার জবাব দিন।
আমি ওকে ভালবাসি, ওর জন্য সব ত্যাগ করতে পারি। এর বেশি জানি না।
কথাটা লজিক্যাল হল না। অথচ আপনি লজিক ভালই জানেন। আপনি ফিলজফির ছাত্রী।
আমার লজিক ওরকম নয়। মিঠুদা খুব ভাল জেনেই আমি ওকে ভালবাসি।
সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়ছেন। কারও সম্পর্কে আগ বাড়িয়ে ধারণা করাটা অন্ধ বিশ্বাসের মতো। দুনিয়ায় এমন অনেক খুনি আছে যাদের পরম সাধুপুরুষ বলে মনে হয়। অ্যাপারেন্টলি।
আমি অত জানি না।
না জানাটা কাজের কথা নয়। শুনুন, আপনি যদি খুনটা নাও করে থাকেন তা হলেও আপনি খুনির সাহায্যকারী হিসেবে সন্দেহের পাত্রী হতে পারেন। কারণ আপনার অ্যালিবাই নড়বড়ে। কেউ আপনাকে ও বাড়ি থেকে চলে আসতে দেখেনি। আপনি লুকিয়ে ছিলেন। রাত গভীর হলে মিঠু ফিরে আসে এবং আপনি তাকে বাড়িতে ঢুকতে সাহায্য করেন। তারপর মিঠু মিতালিদেবীকে খুন করে। আপনি তাকে সেন্টের শিশি দেন। বারান্দা থেকে আপনারা শিশিগুলো ভিতরে ছুঁড়ে ভেঙেছিলেন। তাতে আপনাদের গায়ে সুগন্ধ লাগতে পারেনি। আপনারা নিরাপদে পিছনের বাগানে নেমে পালিয়ে যান।
আমার মাথা ঘুরছে। প্লিজ, আর নয়।
আহা, এটা শুধু অনুমান। এটা একটা রিকনস্ট্রাকশন মাত্র। এরকম নাও হতে পারে।
তা হলে?
আমার ধারণা খুনের সময় মিঠু একাই ছিল। ঠিক কি না?