পঞ্চম পরিচ্ছেদ – বেতসকুঞ্জ
পূর্ণ দুগ্ধপাত্র লইয়া রঙ্গনা যখন ফিরিয়া আসিল তখন সূর্য অস্ত গিয়াছে, আকাশে শুক্লা নবমীর চন্দ্র কিরণজাল প্রস্ফুটিত করিয়া সূর্যের অভাব পূর্ণ করিবার চেষ্টা করিতেছে। পলাশবনের মধ্যে আলো-অঁধারের লুকোচুরি খেলা।
রঙ্গনা দুগ্ধপাত্র মানবের সম্মুখে ধরিল; মানব দুই হাতে পাত্র লইয়া বিনা বাক্যব্যয়ে তাহার কানায় ওষ্ঠ-সংযোগ করিল। পাত্রটি নিতান্ত ক্ষুদ্র নয়, একটি ছোটখাটো কলসী বলা চলে। মানব এক চুমুকে তাহা নিঃশেষ করিয়া রঙ্গনাকে ফিরাইয়া দিল।
রঙ্গনা রুদ্ধশ্বাসে প্রশ্ন করিল— ‘আর কিছু খাবে?’
মানব হাসিয়া বলিল— ‘ক্ষুধার কি শেষ আছে? কিন্তু থাক, আপাতত এই যথেষ্ট। তোমাকে কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাব?’
মানব হাত ধরিয়া রঙ্গনাকে কাছে টানিয়া লইল। রঙ্গনার ঘন ঘন নিশ্বাস পড়িতে লাগিল, দেহ রোমাঞ্চিত হইল। মানব গাঢ়স্বরে বলিল— ‘আমার আজ কিছু নেই, আমি পলাতক। দু’দিন আগে যদি তোমার দেখা পেতাম, প্রাণভরে আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে পারতাম।”
রঙ্গনা উত্তর দিতে পারিল না, অধোমুখে রহিল। মুগ্ধা পল্লীযুবতী নাগরিক সভাসৌজন্য কোথায় শিখিবে? কিন্তু তাহার স্নিগ্ধ নীরবতা মানবের বড় মিষ্ট লাগিল। সে ধীরে ধীরে কথা বলিতে আরম্ভ করিল; কিন্তু সে রঙ্গনাকে বাক্চাতুর্যে সম্মোহিত করিবার চেষ্টা করিল না। বরং একটি সমধর্মী মানুষ পাইয়া তাহার অন্তরের সরলতা যেন সাগ্রহে বাহির হইয়া আসিল। দুইজনে বৃক্ষশাখায় হেলান দিয়া পাশাপাশি দাঁড়াইয়া মৃদুকণ্ঠে জল্পনা করিতে লাগিল। মানব অধিকাংশ কথা বলিল, রঙ্গনা তন্ময় হইয়া শুনিল। মানব যে-যে প্রশ্ন করিল, রঙ্গনা সরলভাবে তাহার উত্তর দিল।
এইভাবে এক দণ্ড অতীত হইবার পর মানব চকিত হইয়া বলিল— ‘সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়েছে, তুমি গৃহে যাও।’
‘আর তুমি?’
‘আমি গাছতলায় রাত কাটিয়ে দেব।’
রঙ্গনা আঙ্গুলে বস্ত্রাঞ্চল জড়াইতে লাগিল।
‘তুমি আমাদের কুটিরে চল না কেন? রাত্রে সেখানেই থাকবে।’
মানব একটু ইতস্তত করিয়া শেষে মাথা নাড়িল।
‘না। আমার পিছনে শত্রু আসছে, হয়তো আজ রাত্রেই গ্রামে এসে পৌঁছবে। আমি গ্রামে থাকলে ধরা পড়বার ভয় আছে।’
রঙ্গনা তর্জনী দংশন করিল, তারপর চকিত উৎফুল্ল চক্ষু তুলিল।
‘তুমি আমার কুঞ্জে থাকবে? আমার কুঞ্জের কথা কেউ জানে না।’
‘তোমার কুঞ্জ!’
রঙ্গনা তাহার নিভৃত বেতসকুঞ্জের কথা বলিল। শুনিয়া মানব বলিল— ‘এ ভাল। চল, তোমার কুঞ্জে রাত কাটাব।’
রঙ্গনা মানবকে পথ দেখাইয়া লইয়া চলিল। পলাশবনের বাহিরে অনিমেষ জ্যোৎস্না; দু’জনে মৌরির তীরে উপস্থিত হইল। মানব বলিল— ‘একি, এ যে নদী! আমি স্নান করব। কিন্তু আগে তোমার কুঞ্জ দেখি।’
কুঞ্জ দেখিয়া মানব দীর্ঘশ্বাস ফেলিল।
‘কি সুন্দর তোমাদের জীবন! কেন আমরা নগরে থাকি, রাজ্যের জন্য কড়াকাড়ি করি? মানুষের যত অনিষ্টের মূল নাগরিক জীবন। ইচ্ছা করে চিরদিন তোমার এই কুঞ্জে কাটাই।’
অস্ফুটস্বরে রঙ্গনা বলিল— ‘কাটাও না কেন?’
মানব বলিল— ‘উপায় নেই, কর্মফল ভোগ করতে হবে। — কিন্তু আবার আমি আসিব। তোমাকে ভুলতে পারব না।’
রঙ্গনাও বলিতে চাহিল, ‘আমিও তোমাকে ভুলতে পারব না’— কিন্তু লজ্জায় তাহা বলিতে পারিল না। বলিল— ‘তোমার কপাল কেটে গেছে— লাগছে না? এস, বেঁধে দিই।’
মানব বলিল— ‘ও কিছু নয়, তলোয়ারের আঁচড় লেগেছিল। আপনি সেরে যাবে।’
‘তবে তুমি স্নান করে এস।’
‘তুমি চলে যাবে না?’
‘না।’
মানব অল্পকাল মধ্যেই স্নান করিয়া ফিরিয়া আসিল; বর্ম চর্ম শিরস্ত্রাণ কুঞ্জের বাহিরে নামাইয়া রাখিল। ইতিমধ্যে রঙ্গনা খড় বিছাইয়া শয্যা রচনা করিয়া রাখিয়াছে, কুঞ্জদ্বারে চুপটি করিয়া দাঁড়াইয়া আছে।
মানব চারিদিকে চাহিল। আকাশে জ্যোৎস্না ফিন্ ফুটিতেছে; সুদূর-প্রসারিত বেতসবনের শাখাপত্র মৃদু মর্মর-ধ্বনি করিয়া কাঁপিতেছে। কোথাও জনমানবের চিহ্ন নাই। মানবের মনে হইল, ইহজগৎ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া সে কোন্ এক অর্ধ-বাস্তব মায়াপুরীতে উপনীত হইয়াছে। এখানে আর কেহ নাই, শুধু সে আর রঙ্গনা।
মানব রঙ্গনার হাত ধরিয়া ঈষৎ স্খলিতস্বরে বলিল— ‘রঙ্গনা—!’
‘কি বলছ?’
‘না, কিছু না—’ মানব নিশ্বাস ফেলিল— ‘তুমি এবার ঘরে যাও। কাল সকালে একবার তোমার দেখা পাব কি?’
রঙ্গনা বলিল— ‘আজ রাত্রেই আমি আবার আসব। — তোমার খাবার নিয়ে আসব।’
সহসা রঙ্গনার দুই স্কন্ধের উপর হাত রাখিয়া মানব নত হইয়া তাহার চোখের মধ্যে চাহিল—
‘রঙ্গনা, তুমি আমার বৌ হবে?’
রঙ্গনা তাহার হাত ছাড়াইয়া ছুটিয়া পালাইয়া গেল।
গ্রামের কুটিরগুলিতে দীপ নিভিয়া গিয়াছে; দিনের মাতামতির পর গ্রামবাসীরা ক্লান্তদেহে শয্যা আশ্রয় করিয়াছে। কেবল গোপা আপন কুটির দ্বারে দাঁড়াইয়া উৎকণ্ঠাভরা চক্ষে বাহিরের দিকে তাকাইয়া ছিল। তাহার উৎকণ্ঠা ক্রমে আশঙ্কায় পরিণত হইতেছিল, এমন সময় রঙ্গনা ছুটিতে ছুটিতে ফিরিয়া আসিল; গোপা কোনও প্রশ্ন করিবার পূর্বেই একবার ‘মা—’ বলিয়া ডাকিয়া মাতার কণ্ঠ জড়াইয়া ধরিয়া কাঁধের মধ্যে মুখ লুকাইল।
গোপা অনুভব করিল রঙ্গনার সর্বাঙ্গ থরথর করিয়া কাঁপিতেছে। দ্বার বন্ধ করিয়া দিয়া সে রঙ্গনাকে লইয়া মেঝেয় বসিল। ঘরের কোণে প্রদীপ জ্বলিতেছে, উনানের উপর ভাত চড়ানো রহিয়াছে। গোপা কন্যার চিবুক ধরিয়া মুখ দেখিল, তারপর বলিল— ‘এবার বল্ কি হয়েছে।’
রঙ্গনা কিছুই বলিতে পারিল না, কেবল মুখ নীচু করিয়া ভয়-ভঙ্গুর হাসিতে লাগিল। গোপা তখন একটি একটি প্রশ্ন করিয়া সব কথা বুঝিয়া লইল।
সব শুনিয়া গোপা কিছুক্ষণ বিভ্রান্তভাবে উনানের আগুনের দিকে চাহিয়া রহিল। কী করিবে সে এখন? এমন অচিন্তনীয় অবস্থা যে কল্পনা করাও যায় না। চাতক ঠাকুরের সহিত পরামর্শ করিবে? কিন্তু তিনি যদি বাধা দেন? রাজপুত্র যদি আসিল, এমনভাবে আসিল?
ভাবিতে ভাবিতে গোপা যন্ত্রবৎ বলিল— ‘রাঙা, দ্যাখ্ ভাত হল কিনা।’
রঙ্গনা উঠিয়া গেল। গোপা মৃন্ময় মূর্তির মত বসিয়া ভাবিতে লাগিল। বাহিরে সে নিশ্চল, কিন্তু ভিতরে যেন আগ্নেয়গিরির আন্দোলন চলিতেছে।
রঙ্গনা ভাতের হাঁড়ি নামাইয়া ফেন গালিল।
সহসা গোপা চমকিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। না না, সময় নাই, অধিক চিন্তা করিবার সময় নাই।
রঙ্গনার জীবনে যে শুভলগ্ন আসিয়াছে তাহা ভ্রষ্ট হইয়া না যায়। আজিকার রাত্রি আর ফিরিয়া আসিবে না, রাজপুত্র চলিয়া গেলে আর ফিরিয়া আসিবে না —
ঘরের কোণে একটি পুরাতন বেত্রনির্মিত পেটরা ছিল। গোপা তাহার তলদেশ হইতে দুইটি শোলার মালা বাহির করিল। তুচ্ছ শোলার টুকরা দিয়া গাঁথা দুটি মালা; গোপার নিভিয়া যাওয়া যৌবনের স্মৃতি। এক রাত্রির স্মৃতি। গোপার দুই চক্ষু ভরিয়া জল আসিল। কিন্তু সময় নাই; স্মৃতির মালা গলায় পরিয়া কাঁদিবার সময় নাই। আর একটি অভাবনীয় রাত্রি উপস্থিত হইয়াছে। হয়তো আজিকার রাত্রি উনিশ বছর আগের আর একটি রাত্রির সমাবর্তন তিথি— কালচক্র এক পাক ঘুরিয়া আসিয়াছে।
গোপা রঙ্গনাকে কাছে টানিয়া লইয়া তাহার কানে কানে দ্রুত-হ্রস্ব কণ্ঠে উপদেশ দিতে লাগিল; যে-সকল কথা মেয়েকে আজ পর্যন্ত বলে নাই তাহা বলিল। লজা করিল না, লজ্জার সময় কৈ? তারপর ছুটিয়া গিয়া ভাত বাড়িতে বসিল।
দুপুরের রান্না মৌরলা মাছ ছিল। তপ্ত ভাতে ঘি ঢালিয়া গোপা পাত্র রঙ্গনার হাতে দিল। রঙ্গনার মণিবন্ধ হইতে শোলার মালা দুটি ঝুলিতেছে; সে দুই হাতে আহার্যের পাত্র লইয়া চুপিচুপি কুটির হইতে বাহির হইল।
বিচিত্র অভিসার যাত্রা। কাব্যে পুরাণে, এরূপ অভিসারের কথা লেখে না। কিন্তু ইহাই হয়তো সত্যকার অভিসার।
বেতসকুঞ্জে তৃণশয্যায় মানব ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। মাথার উপর চাঁদ বেতসকুঞ্জের বিরলপত্র শীর্ষ হইতে ভিতরে উঁকি দিতেছিল, মানবের ঘুমন্ত মুখ ও প্রশস্ত নগ্ন বক্ষের উপর ক্রীড়া করিতেছিল, তাহার বাহুতে সোনার অঙ্গদের উপর ঝিক্মিক্ করিতেছিল।
রঙ্গনা নিঃশব্দে কুঞ্জে প্রবেশ করিল, মানবের পাশে বসিয়া তাহার জ্যোৎস্না-নিষিক্ত সুপ্ত মুখ দেখিতে লাগিল। রাজপুত্র— আমার রাজপুত্র! রঙ্গনার বুকের মধ্যে শোণিতনৃত্যের উন্মাদনা, রোমে রোমে হর্ষোল্লাস; মাথার কবরী আপনি শিথিল হইয়া পিঠের উপর এলাইয়া পড়িল। সে সন্তর্পণে অতি লঘুভাবে একটি আতপ্ত করতল মানবের বুকের উপর রাখিল।
মানব চমকিয়া উঠিয়া বসিল। রঙ্গনাকে দেখিয়া তাহার মুখে একটি তন্দ্রামুগ্ধ হাসি ফুটিয়া উঠিল, সে রঙ্গনাকে দুই হাতে বুকে টানিয়া লইয়া জড়িত স্বরে বলিল— ‘আমার বৌ!’
চক্ষু মুদিয়া রঙ্গনা নিস্পন্দ হইয়া রহিল; বিপুল রভসরসের প্লাবনে তাহার সম্বিৎ ডুবিয়া গেল। লজ্জার বাহ্য বিভ্রম-বিলাস সে শেখে নাই, শিথিলদেহে অনুভব করিল মানব তাহার অধরে চুম্বন করিতেছে। আতপ-তাপিতা ধরণী যেমন ঊর্ধ্বমুখী হইয়া বৃষ্টির চুম্বন গ্রহণ করে তেমনিভাবে রঙ্গনা মানবের চুম্বন গ্রহণ করিল।
মানব চুম্বনের সঙ্গে সঙ্গে গদ্গদ কণ্ঠে তাহার নাম ধরিয়া ডাকিতেছে। ক্রমে রঙ্গনার সম্বিৎ ফিরিয়া আসিল; সহজ অশিক্ষিত লজ্জাও জাগরূক হইল। সে অস্ফুট স্বরে বলিল— ‘ছেড়ে দাও।’
মানব বলিল— ‘না, ছাড়ব না। তুমি আমার বৌ।’
বৌ! রঙ্গনার মনে পড়িল, মা শিখাইয়া দিয়াছিল কি কি বলিতে হইবে। সে চোখ খুলিয়া মানবের মুখের পানে চাহিল। মানবের মুখ দেখিয়া আবার সব গোলমাল হইয়া গেল। কিন্তু না, মা বলিয়া দিয়াছে, কথাগুলি বলিতেই হইবে।
রঙ্গনা চুপিচুপি বলিল— ‘তোমার তো আরও বৌ আছে।’
মানব রঙ্গনাকে ছাড়িয়া দিয়া গম্ভীর চক্ষে তাহার পানে চাহিল। শেষে বলিল— ‘আছে। কিন্তু তারা আমার রানী, মনের মানুষ নয়।’
‘মনের মানুষ কে?’
‘তুমি। তোমাকেই এতদিন খুঁজেছি, পাইনি।’
‘আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে?’
‘না। এখন কোথায় নিয়ে যাব? যদি রাজ্য রক্ষা করতে পারি, ফিরে এসে তোমায় নিয়ে যাব। শপথ করছি।’
অতঃপর রঙ্গনার শেখানো বুলি ফুরাইয়া গেল। মা আরও অনেক কথা শিখাইয়া দিয়াছিল, কিন্তু তাহা আর সে মনে করিতে পারিল না। কি হইবে মনে করিয়া? তাহার রাজপুত্র ক্ষুধিত তৃষিত নেত্রে তাহার পানে চাহিয়া আছে। ব্যাকুল অনুরাগে রঙ্গনার নিশ্বাস দ্রুত বহিল। সে কম্পিতহস্তে একটি শোলার মালা রাজপুত্রের গলায় পরাইয়া ছিল।
অন্য মালাটি মানব রঙ্গনার গলায় দিল।
মোহ-বিহ্বল রাত্রি; নব-অনুভবের বিস্ময়-পুলক-ভরা বাসকরজনী। দু’জনে দু’জনের মুখে অন্ন দিল, চুম্বন দিল। প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর। একসঙ্গে আকুলতা ও চটুলতা, লজ্জা ও প্রগল্ভতা। তন্দ্রা ও প্রমীলায় মেশামেশি, ঘুমে জাগরণে জড়াজড়ি।
রাত্রি নিবিড় হইল। চাঁদ অস্ত গেল।
প্রত্যূষে ঘুম ভাঙ্গিয়া মানব ও রঙ্গনা কুঞ্জের বাহিরে আসিল। পূর্বাকাশে ঊষা ঝলমল করিতেছে। পাখি ডাকিতেছে।
মানব দেখিল অদূরে নদীতীরে তাহার অশ্ব শষ্পাহরণ করিতেছে; তাহার পৃষ্ঠে কম্বলাসন, মুখে বল্গা যেমন ছিল তেমনি আছে। প্রভুকে দেখিতে পাইয়া জয়ন্ত মৃদু হ্রেষাধ্বনি করিল।
মানব ম্লান হাসিয়া বলিল— ‘আমার বাহনও উপস্থিত। তবে যাই, রাঙা-বৌ।’
রঙ্গনা তাহার বাহু জড়াইয়া কাঁদিতে লাগিল। বলিল— ‘কবে ফিরে আসবে?’
মানব রঙ্গনাকে দুই হাতে বুকের কাছে তুলিয়া মুখে মুখ রাখিয়া বলিল— ‘যেদিন শত্রুকে রাজ্য থেকে দূর করব, সেদিন তোমাকে নিতে আসব। যদি রাজ্য যায় আর বেঁচে থাকি, তাহলেও তোমার কাছে ফিরে আসব।’
কণ্ঠলগ্না রঙ্গনা কাঁদিতে কাঁদিতে বলিল— ‘আসবে?’
‘আসব। শপথ করছি।’
রঙ্গনাকে নামাইয়া দিয়া মানব নিজ বাহু হইতে অঙ্গদ খুলিয়া তাহার বাহুতে পরাইয়া দিল, বলিল— ‘এই অঙ্গদ নাও। যতদিন না ফিরে আসি, এটিকে দেখো; আমায় মনে পড়বে।’
তারপর রঙ্গনার সোনাপোকা উড়িয়া গেল। জয়ন্তের পৃষ্ঠে চড়িয়া মানব চলিয়া গেল। রঙ্গনা অশ্রুবিধৌত মুখে দাঁড়াইয়া বিলীয়মান অশ্বারোহীর পথের পানে চাহিয়া রহিল। মানবের বৃহৎ অঙ্গদ তাহার বাহু হইতে খসিয়া খসিয়া পড়িতেছিল, সে তাহা খুলিয়া একবার বুকে চাপিয়া ধরিল, তারপর আঁচলে বঁধিয়া ঘরের দিকে চলিল।
নিশান্তের পাণ্ডুর চন্দ্রমা।