সূর্য্যবংশে বৃক নামে ছিল নরপতি।
মহাধর্ম্মশীল রাজা জগতে সুখ্যাতি।।
সুমতি কুমতি তার যুগল বনিতা।
কোশলনন্দিনী দোঁহে মাতা পতিব্রতা।।
যুবাকাল গেল তবু পুত্র না হইল।
পুত্রবাঞ্ছা করি দোঁহে স্বামীরে কহিল।।
কত দিনান্তরে বিভাণ্ডক তপোধন।
অয্যোধ্যায় করিলেন শুভ আগমন।।
ভার্য্যা সহ নরপতি ছিল অন্তঃপুরে।
তথা গিয়া উত্তরিল কে নিবারিবে তাঁরে।।
জিতেন্দ্রিয় তেজোময় দেখি তপোধন।
ভার্য্যা সহ নরপতি করিল বন্দন।।
রাণী সহ করযুড়ি মনি অগ্রে স্থিত।
বিভাণ্ডক জিজ্ঞাসেন কিবা, চাহ হিত।।
মহাধর্ম্মশীল তুমি নৃপতিপ্রধান।
তোমা সম সংসারেতে নাহি ভাগ্যবান।।
রূপে কামদেব জিনি শীলতায় ইন্দু।
তেজে দিনকর তুমি গুণে গুণসিন্ধু।।
কীর্ত্তবীর্য্য প্রতাপে সামর্থ্যে হনুমান।
কীর্ত্তিতে গণি যে পৃথু রাজার সমান।।
সেনাপতি মধ্যে গণি যেন ষড়ানন।
সর্ব্বজ্ঞ শ্রেণীতে যেন জীবের নন্দন।।
কেন দেখি চিন্তামগ্ন উদ্বিগ্ন তোমারে।
ইহার বৃত্তান্ত রাজা কহিবে আমারে।।
রাজা বলিলেন মুনি বলিলা প্রমাণ।
যে হেতু চিন্তিত আমি বলি সে বিধান।।
যুবাকাল গেল মম পুত্র না হইল।
এই হেতু মনস্তাপ মনেতে রহিল।।
সকল হইতে সেই জন অতি দীন।
সর্ব্ব সুখ বিহীন যে হয় পুত্রহীন।।
জলহীন নদী যেন নহে সুশোভন।
পদ্মহীন সর ফলহীন তরুগণ।।
চন্দ্র বিনা রাত্রি যেন সর্ব্ব অন্ধকার।
শাস্ত্রবিদ্যাহীন যেন ব্রাহ্মণ-কুমার।।
ধর্ম্মহীন জন যেন ধনহীন গৃহী।
জীবহীন জন্তু যেন দন্তহীন অহি।।
পুত্রহীন জনের জীবন অকারণ।
এই হেতু চিন্তা মম শুন তপোধন।।
এত শুনি হৃদয়ে ভাবিল মুনিবর।
রাজারে চাহিয়া পুনঃ করিল উত্তর।।
পুন্ত্রেষ্টি করহ রাজা করিয়া যতন।
মহাবলবন্ত হবে তোমার নন্দন।।
পরাজিবে সকল পৃথিবী বাহুবলে।
হইবে তনয় তব যজ্ঞ পুণ্যফলে।।
এত বলি অন্তর্হিত হন তপোধন।
করিল পুত্রেষ্টি রাজা করি আয়োজন।।
সুমতির গর্ভে হয় যুগল নন্দন।
পরম সুন্দর রূপে নৃপতি লক্ষণ।।
কুমতির গর্ভে হৈল একমাত্র পুত্র।
দিনকর সম তেজ তেজপুঞ্জ গাত্র।।
দিনে বাড়ে সবে রাজার নন্দন।
পুত্র দেখি নরপতি আনন্দিত মন।।
সুমতির গর্ভে হৈল দুই গুণধাম।
পাইলেন তালজঙ্ঘ হৈহয় যে নাম।।
রূপে গুণে অনুপম কুমতিনন্দন।
বাহু নাম রাখিলেন বাছিয়া রাজন।।
কত দিনে বৃদ্ধকালে বৃক নরপতি।
তিন পুত্রে ডাকিয়া আনিল শীঘ্রগতি।।
তিন পুত্রে রাজ্যধন ভাগ করি দিল।
ভার্য্যা সহ নরপতি অরণ্যে চলিল।।
তপঃযোগ সাধিয়া পাইল দিব্যগতি।
রাজ্যতে হইল রাজা বাহু নরপতি।।
রাজার পালনে প্রজা দুঃখ নাহি জানে।
একচ্ছত্র নরপতি এ মর্ত্ত্য ভুবনে।।
মহাধর্ম্মশীল রাজা বৃকের নন্দন।
নিরন্তর যজ্ঞে রত অন্য নাহি মন।।
অযোনিসম্ভবা কন্যা নামে সত্যবতী।
বিবাহ করিল শুনি আকাশ ভারতী।।
এক ভার্য্যা বিনা তার অন্যে নাহি মতি।
পুরুরবা রাজা যেন বুধের সন্ততি।।
কতদিনে ঋতুযোগে রাণী গর্ভবতী।
গণিয়া গণকগণ কহিল ভারতী।।
ইহার গর্ভেতে যেই হইবে নন্দন।
ত্রিভুবনে রাজা হবে সেই বিচক্ষণ।।
অস্ত্রে শস্ত্রে বিজ্ঞবর মহাধনুর্দ্ধর।
করিবেন শত অশ্বমেধ নরবর।।
শুনি আনন্দিত রাজা হইল অন্তরে।
বহু পুরস্কার দিল ব্রাহ্মণগণেরে।।
তবে কত দিনান্তে নারদ তপোধন।
হৈহয় রাজার পুরে করিল গমন।।
নারদে দেখিয়া রাজা অভ্যর্থনা করি।
বসাইল দিব্য রত্ন সিহাসনোপরি।।
পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া রাজা পূজন করিল।
মুনিবরে বিনয়পূর্ব্বক জিজ্ঞাসিল।।
সর্ব্বশোস্ত্রে বিজ্ঞ তুমি কুলপুরোহিত।
বশিষ্ঠ মুখেতে তব শুনিয়াছি নাত।।
জ্ঞাতি মধ্যে যেই ধনে জনে বলবান।
ক্ষত্রিয়েতে সেই শত্রু গণি যে প্রধান।।
বলে ছলে শত্রুকে না ক্ষমি কদাচন।
হেন নাতি শাস্ত্রেতে লেখেন মুনিগণ।।
কহ মুনি আমা প্রতি ইহার বিধান।
নারদ বলেন রাজা কহিলে প্রমাণ।।
বলে ছলে শক্রকে না ক্ষমিবে কখন।
নিজবশে আনি পরে করিবে নিধন।।
কহিলা প্রমাণ রাজা না হয় অন্যথা।
শত্রুকে করিবে নষ্ট পাবে যথা তথা।।
গর্ভে যদি জন্মে শক্র দৈববাণী কয়।
তাহারে বধিবে প্রাণে শাস্ত্রের নির্ণয়।।
পূর্ব্বে শুনিয়াছি আমি বিরিঞ্চির স্থান।
কহিব তোমারে নৃপ কর অবধান।।
বাহুর ঔরসে যেই হইবে নন্দন।
বাহুবলে পরাজিবে সমস্ত ভুবন।।
শত অশ্বমেধ যজ্ঞ করিবে নিশ্চয়।
তোমা আদি জ্ঞাতিগণে করিবেক ক্ষয়।।
উপায়েতে গর্ভ যদি পার নাশিবারে।
তবে তব শ্রেয়ঃ হয় জানাই তোমারে।।
এত বলি নারদ হইল অন্তর্দ্ধান।
শুনিয়া নৃপতি হইল সচিন্তিত প্রাণ।।
অনুক্ষণ চিন্তিয়া আকুল নরবর।
একদিন বসিলেন সভার ভিতর।।
পঞ্চ পাত্রে লয়ে যুক্তি করেন রাজন।
বাহুর ঔরসে যেই হইবে নন্দন।।
আমা আদি করিয়া যতেক জ্ঞাতিচয়।
বাহুবলে করিবেক সবাকারে ক্ষয়।।
উহার উপায় কিছু কর মন্ত্রিগণ।
কিরূপে রাণীর গর্ভ করিব নিধন।।
উহাতে সমর্থ না হইব কদাচন।
যদি না করিব যুদ্ধ হারাব জীবন।।
মন্ত্রিগণ বলিলেন শুন নৃপমণি।
নিমন্ত্রিয়া আন হেথা ভূপতি রমণী।।
বধি খাওবার ছলে উপায় কারণে।
বিষপান করাইয়া মারহ পরাণে।।
ইহ ভিন্ন উপায় না দেখিতেছি আর।
এইমত করি রাজা শিশুকে সংহার।।
ভূপতি বলেন মন্ত্রী কহিলে শোভন।
শীঘ্র ভক্ষ্য ভোজ্য দ্রব্য আয়োজন।।
বন্ধন করিতে বল সূপকারগণে।
অঙ্কেতে করিবা যেন কেহ নাহি শুনে।।
রবিবারগণ সহ বরিয়া রাজারে।
এত দিয়া নিমন্ত্রিয়া আন হেথাকারে।।
জার আদেশ মত যত মন্ত্রিগণ।
বাহুরাজে আনিলেন করি নিমন্ত্রণ।।
বিষ দিয়া উপহারে ভোজনের কালে।
বাহুর ভার্য্যারে খাওয়াল তবে ছলে।।
তথাপিহ গর্ভপাত নহিল তাহার।
পরিবার সহ রাজা কৈল আগুসার।।
সে সব বৃত্তান্ত রাণী কহিল রাজারে।
বিষ খাওয়াইল মোরে মারিবার তরে।।
অহিংসক মোরে হিংসা করে দুরাচার।
শুনিয়া নৃপতি মনে হইল ধিক্কার।।
হিংসক কপট জ্ঞাতি মধ্যে যেই জন।
তাহার নিকটে নাহি জ্ঞাতি সুশোভন।।
অহিংসকে হিংসয়ে যে পাপিষ্ঠ দুর্জ্জন।
তাহার সংসর্গে নাহি রহি কদাচন।।
পাপী সঙ্গে রহে যদি, পাপে ধায় মন।
পুণ্যাত্মার সঙ্গ হয় মোক্ষের কারণ।।
অপত্য নহিল, হৈল বিধির ঘটন।
তাহে দুষ্ট জ্ঞাতিগণ করিল হিংসন।।
এইরূপে সদা রাজা করে অনুভব।
দ্বিতীয় বৎসর গর্ভ নহিল প্রসব।।
অনুদিন হৈহয় অনুজ তালজঙ্ঘ।
রিপুভাব করিলেন নৃপতির সঙ্গ।।
কার্ত্তবীর্য্যার্জ্জুন সহ মৈত্রভাব করি।
সংগ্রামে জিনিয়া তার রাজ্য নিল হরি।।
যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাহু নরপতি।
অরণ্যে প্রবেশ করে ভার্য্যার সংহতি।।
দেখিল আশ্রম বন অতি সুশোভন।
ফল ফুলে সুশোভিত যত বৃক্ষগণ।।
দিব্য সরোবর আছে বনের মাঝারে।
তাহে জলচরগণ সদা কেলি করে।।
পুণ্য সরোবর সেই বিন্দুসর নাম।
প্রফুল্ল সরোবর সেই বিন্দুসর নাম।।
প্রফুল্ল উৎপল কত অতি অনুপাম।।
ভার্য্যা সহ তথা রাজা করিল গমন।
সরোবর দেখি রাজা আনন্দিত মন।।
তথায় আশ্রম করি রচিল কুটীর।
চিন্তায় আকুল রাজা, চিত্ত নহে স্থির।।
অনুক্ষণ চিন্তাকুল বাহু-নরবর।
বৃদ্ধকালে ব্যাধিযুক্ত হৈল কলেবর।।
কালপ্রাপ্তে নৃপতির হইল নিধন।
ব্যাকুলা হইয়া রাণী করয়ে রোদন।।
অনেক রোদন করে বনে একেশ্বরী।
নিবৃত্ত হইল তবে মনে যুক্তি করি।।
চিতা করি কাষ্ঠ দিয়া জ্বালি বৈশ্বানর।
তদুপরি রাখে সতী পতিকলেবর।।
চিতা আরোহিতে চিতা প্রদক্ষিণ করে।
হেনকালে ঔর্ব্ব মুনি আসে তথাকারে।।
গর্ভবতী নারী চিতা আরোহণ করে।
দেখিয়া বিস্ময় মুনি মানিল অন্তরে।।
নিকটেতে গিয়া শীঘ্র করে নিবারণ।
রাণীরে চাহিয়া তবে বলে তপোধন।।
চিতা আরোহণ নাহি কর কদাচিত।
অবধান কর মাতা শাস্ত্রের বিহিত।।
দিব্য চক্ষে আমি সব পাই যে দেখিতে।
রাজচক্রবর্ত্তী আছে তোমার গর্ভেতে।।
বাহুবলে জিনিবেক যত রিপুগণে।
একচ্ছত্র রাজা হবে এ মর্ত্ত্য ভুবনে।।
রাজরাজেশ্বর হবে মহাতেজোময়।
শত অশ্বমেদ-যজ্ঞ করিবে নিশ্চয়।।
ব্রাহ্মণে দিবেক সদা অপ্রমিত দান।
না হইল, না হইবে, তাহার তুলন।।
গর্ভবতী নারী যদি সহমৃতা হয়।
পঞ্চ মহাপাপ আসি তাহারে বেড়ায়।।
কদাচিৎ স্বামীসঙ্গে না হয় মিলন।
ঘোর নরকেতে তার হয়ত গমন।।
যত পুণ্যকর্ম্ম তার সব নষ্ট হয়।
কদাচিৎ পুণ্যফল নাহিক সে পায়।।
রজঃস্বলা কিম্বা শিশু পুত্রেরে রাখিয়া।
পতি সঙ্গে যেই জন মরয়ে পুড়িয়া।।
পঞ্চ পাতকের ভাগী হয় সেই নারী।
ব্যর্থ হয় যত পুণ্য ধর্ম্মকর্ম্ম তারি।।
অগ্নিহোত্রে মৃত-তনু করিয়া দাহন।
নারীরে লইয়া গেল আপন সদন।।
প্রেতকর্ম্ম করিল যে শাস্ত্রের বিধানে।
আদ্য শ্রাদ্ধ শান্তি দান ত্রয়োদশ দিনে।।
এইরূপে রহে রাণী মুনির সদন।
সেবাতে সন্তুষ্ট হন মহা তপোধ।।
অন্যথা না হয় কভু বিধির লিখন।
মহারাণী প্রসবিল অপূর্ব্ব নন্দন।।
গরল সহিত পুত্র হৈল যে কারণ।
সগর বলিয়া নাম রাখে সে কারণ।।
দিনে দিনে বাড়ে শিশু সুন্দর লক্ষণ।
শুক্লপক্ষে চন্দ্রকলা বাড়য়ে যেমন।।
দরিদ্র পাইল যে হারানিধি ধন।
সে মত পাইল রাণী অপত্য-রতন।।
মধু ক্ষীর দুগ্ধ চিনি করি আনয়ন।
যত্ন করি যেই শিশু করেন পালন।।
নানা অস্ত্র-শস্ত্র করাইলে অধ্যয়ন।
অল্প দিনে হৈল সর্ব্বশাস্ত্রে বিচক্ষণ।।
নবীন বয়স শিশু মহাবলধর।
একদিন তীর্থস্থানে গেল মুনিবর।।
একান্তে মায়েরে শিশু জিজ্ঞাসিল বাণী।
কোন্ বংশে জন্ম মম, কহ গো জননী।।
কাহার তনয় আমি কহিবে নিশ্চয়।
এই মুনিবর বুঝি মম পিতা হয়।।
শিশুকালে পিতৃহীন হয় যেই জন।
দুঃখী হতে দুঃখী সেই, জন্ম অকারণ।।
জলহীন নদী যথা নহে সুশোভন।
ফলহীন নদী যথা অতি কুলক্ষণ।।
চন্দ্র বিনা রাত্রি যথা সব অন্ধকার।
গায়ত্রী বিহনে যথা ব্রাহ্মণ-কুমার।।
ধনহীন গৃহী যথা ধর্ম্মহীন নর।
বেদহীন বিপ্র যথা পদ্মহীন সর।।
পিতৃহীন পুত্র তথা শোভা নাহি পায়।
সে কারণে কহ মাতা, জিজ্ঞাসি তোমায়।।
এত শুনি কহে রাণী করিয়া রোদন।
বড় ভাগ্যবশে তোমা পাইনু নন্দন।।
মহা রাজবংশে পুত্র জনম তোমার।
তুমি সূর্য্যবংশে রাজা বাহুর কুমার।।
তালজঙ্ঘ হৈহয় পাপিষ্ঠ জ্ঞাতিগণ।
কপটে তোমার বাপে করিল নিধন।।
যেই কালে তোমা আমি ধরিনু উদরে।
বিষ খাওয়াইল মোরে তোমা মারিবারে।।
দৈববলে রক্ষা হৈল তোমার জীবন।
আমা সহ এই বনে আসিল রাজন।।
হিংসকের হিংসা হেরি চিন্তি নরবর।
ব্যাধিযুক্ত নরপতি ত্যজে কলেবর।।
সহমৃতা হতে মম চিন্তা উপজিল।
ঔর্ব্ব মুনি আসি মোরে বারণ করিল।।
মুনির আশ্রমে আমি আছি সে কারণ।
এতেক বলিয়া রাণী করেন রোদন।।
শুনিয়া সগর ক্রোধে অরুণ লোচন।
মাতার ক্রন্দন পুত্র করে নিবারণ।।
প্রণমিয়া জননীরে লইয়া বিদায়।
নানাবিধ অস্ত্র শস্ত্র সঙ্গে করি লয়।।
মুনিরে প্রণাম করি বিদায় হইয়া।
সৃহৃদ বান্ধবগণে সহায় করিয়া।।
যতেক পিতার শত্রু পূবর্ব হৈতে ছিল।
অস্ত্রেতে কাটিয়া সব খণ্ড খণ্ড কৈল।।
একেশ্বর বিনাশিল যত রিপুগণ।
প্রাণভয়ে কেহ নিল বশিষ্ঠে শরণ।।
কাতর দেখিয়া তারে দিল প্রাণদান।
কোন জন মুনিস্থানে রাখিল পরাণ।।
তখন বশিষ্ঠ মুনি তারে নিবারিল।
অযোধ্যায় লয়ে সিংহাসনে বসাইল।।
একচ্ছত্র রাজা হৈল ধরণীমণ্ডলে।
যত ক্ষত্রগণে শাসে নিজ বাহুবলে।।
পুত্র ষাটি সহস্র যে তাহার ঔরসে।
অদ্যাবধি যার কীর্ত্তি সংসারেতে ঘোষে।।
পুত্রগণ সবে হৈল মহা দুরাচার।
কপিলের শাপে তারা হইল সংহার।।
অহিংসকে হিংসে যেই, পায় এই গতি।
জগতে অকীর্ত্তি হয়, অশেষ দুর্গতি।।
সে কারণে শুন পুত্র না হও বিমন।
পাণ্ডবের সহ দ্বন্দ্বে কিবা প্রয়োজন।।
সমুচিত ভাগ দিতে উচিত যে হয়।
তাহা দিয়া প্রীত কর পাণ্ডুর তনয়।।
ভাই ভাই বিরোধেতে নাহি প্রয়োজন।
অনুমতি দেহ আনাইতে পঞ্চ জন।।
সেই ইন্দ্রপ্রস্থে পুনঃ দেহ অধিকার।
তাহার সহিত দ্বন্দ্বে কি কাজ তোমার।।
দুর্য্যোধন বলে, ইহা নহেত বিচার।
আমার পরম শত্রু পাণ্ডর কুমার।।
বিনা যুদ্ধে ছাড়িয়া না দিব রাজ্যধন।
ক্ষত্র-ধর্ম্ম শাস্ত্র মত আছে নিরূপণ।।
ক্ষত্র হয়ে শত্রুকে না করিবে বিশ্বাস।
শত্রুর মহিমা কেহ না করে প্রকাশ।।
যে হৌক, সে হৌক, তাত ক্রোধ কর তুমি।
বিনা যুদ্ধে পাণ্ডবে না দিব রাজা ভূমি।।
এত বলি সভা হৈতে চলিল উঠিয়া।
কর্ণ দুঃশাসন আর দুষ্ট মন্ত্রী লৈয়া।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
ব্যাস বিরচিত দিব্য ভারত পুরাণ।।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে, নাহিক সংশয়।
পয়ার প্রবন্ধে কাশীরাম দাস কয়।।