আমি বিছানায় শুয়ে আছি। ঘরের ভেতরটা আরামদায়ক। সামান্য শীত-শীত লাগছে। হালকা একটা চাদরে শীত কাটবে। আবার না হলেও চলবে। এই অবস্থাটাই আসলে আরামদায়ক। শুয়ে-শুয়ে গরম কফি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাটা কোন বিজ্ঞানী এখন পর্যন্ত করেন নি কেন বুঝতে পারছি না। তারা কত কিছুই পারেন, এটা পারেন না কেন? মহাকাশযানে কোন মধ্যাকৰ্ষণ শক্তি থাকার কথা না, তারপরেও কিভাবে যেন ঠিক পৃথিবীর মতো lg মধ্যাকৰ্ষণ তৈরি করা হয়েছে। যারা এটা পারেন তারা আরাম করে বিছানায় শুয়ে-শুয়ে গরম কফি খাবার ব্যবস্থাও করতে পারেন।
প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহের মহা-মহা জ্ঞানী প্রাণীরা নিশ্চয়ই এই সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। আচ্ছা এই প্রাণীরা দেখতে কেমন? মানুষের মতো নিশ্চয়ই না। মাকড়সার মতো না হলেই আমি খুশি। যদি দেখা যায় ওরা মাকড়সার মতো তাহলে ভাল সমস্যা। হাজার হাজার মাকড়সা চারদিকে কিলবিল করছে। কেউ গায়ে উঠছে, কেউ গা থেকে নামছে, খুব কৌতূহলী একজন আমার কানের ফুটো দিয়ে তার একটা ঠ্যাং ঢুকিয়ে দিল। কী সর্বনাশ!
উন্নত প্রাণীদের বিষয়ে মানুষের কাছে কোন তথ্য নেই, তা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিছু তথ্য অবশ্যই আছে। এবং এই তথ্য জানার অধিকার আর কারোর থাকুক বা না থাকুক আমার আছে। অবস্থাগতিকে মনে হচ্ছে আমার বাকি জীবনটা ওদের সঙ্গেই কাটাতে হবে। যাদের সঙ্গে কাটাব তাদের বিষয়ে আগে কিছুই জানব না তা হয় না।
শান্তি-রোবটটা আমরা দুমিটার দূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। একেবারই নড়ছে না। এখন তাকে লাগছে ঘরের আসবাবের মতো। তাকে কাপড় রাখার স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করলে কেমন হয়?
কাউন্সিলের সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে বুঝতে পারছি না। প্রথম সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত শান্তি-রোবটের হাত থেকে আমার মুক্তি। রোবটটা যখন যাচ্ছে না তখন ধরে নিতে হবে কাউন্সিলের সভা এখনো চলছে। জ্ঞানীদের সভা এত দ্রুত শেষ হয় না। সবাই সবাইকে জ্ঞান দিতে থাকবেন। জ্ঞানের পিচকিরি খেলা চলতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত সভা শেষ হবে সিদ্ধান্ত ছাড়া।
সিডিসিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারি সভা শেষ হল কি না। তাছাড়া সিডিসির সঙ্গে কিছুক্ষণ পোশগল্প করা যেতে পারে। অতি উন্নত প্রাণীরা মাকড়সার মতো কি না তাও জানা দরকার।
সিডিসি।
জ্বি।
কাউন্সিলের সভা কি চলছে না চলছে না?
সভা শেষ হয়েছে!
সভার সিদ্ধান্ত কী?
আপনার উপর থেকে শান্তি-রোবটের খবরদারি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবং চার ঘণ্টা পর আবার সভা ডাকা হয়েছে। সেই সভায় আমার উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মনে হচ্ছে তারা তোমার বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকাচ্ছে।
হ্যাঁ সেরকমই মনে হচ্ছে। এবং এটাই স্বাভাবিক।
স্বভাবিক কেন?
স্বাভাবিক কারণ তাদের ধারণা আমি মিথ্যা বলেছি। এবং ওদের প্রথম সিদ্ধান্ত –তোমার উপর থেকে শান্তিবাহিনীর খবরদারি উঠিয়ে নিতে হবে, তা মানি নি।
ও আচ্ছা।
আগে তোমাকে দেখেশুনে রাখার জন্যে একজন শান্তি-রোবট ছিল—এখন চারজন। একজন ভেতরে তিনজন বাইরে।
ভাল তো। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।
আপনি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
আমি চুপ করে রইলাম। নতুন পরিস্থিতি সম্পর্কে ঠাণ্ডামাথায় একটু কি চিন্তা করে নেব? বা তার দরকার আছে কি? ঘুম-ঘুম পাচ্ছে। বরং ঘুমিয়ে পড়া যেতে পারে। ঘুম থেকে উঠে কথা বলা যাবে। আরো নতুন সিদ্ধান্ত কিছু এর মধ্যেই হয়ত হতে পারে।
সিডিসি!
জ্বি বলুন।
আমি ঠিক করেছি লম্বা ঘুম দেব। ঘণ্টা তিনেক আরাম করে ঘুমুব। আমি চাই না, এই সময় কেউ আমাকে বিরক্ত করে।
কেউ যাতে আপনাকে বিরক্ত না করে তা দেখব।
যে শান্তি-রোবটটা আমার দুমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে তাকে সরে যেতে বল।
সেটা সম্ভব না।
তাহলে দয়া করে ওর চোখের আলো নিভিয়ে দাও। ও জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে থাকলে আমি ঘুমুতে পারব না।
সে ব্যবস্থা করছি।
তোমার সঙ্গে আমি কিছু অন্তরঙ্গ আলাপ করতে চাই, তা কি সম্ভব?
মোটেই অসম্ভব না।
যে উন্নত গ্রহের দিকে আমরা যাচ্ছি তাদের অতি উন্নত প্রাণীদের বিষয়ে কি তোমার কাছে কোন তথ্য আছে?
খুব সামান্য তথ্যই আছে।
যা আছে তা আমাকে জানাতে পারবে?
পারব। আপনি ঘুম থেকে জেগে উঠেই যাবতীয় তথ্য রিপোর্ট-আকারে পাবেন।
তোমার এই শান্তি-রোবট কি পা টিপতে পারে?
আপনার কথা বুঝতে পারছি না।
দীর্ঘ সময় দুপায়ে দাড়িয়ে ছিলাম বলে পায়ের মাসল ব্যথা করছে। ও পা টিপে দিলে আরাম হত।
আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি।
এতে শান্তি-রোবটের সম্মানের কোন হানি হবে না তো?
সিডিসি জবাব দিল না। আমি মনে মনে হাসলাম। শান্তি-রোবট কাছে এগিয়ে আসছে। আমি পা মেলে চোখ বন্ধ করলাম। ঘুম চলে আসছে। কেন জানি মনে হচ্ছে আজ আমি ঘুমের ভেতর মাকড়সা স্বপ্নে দেখব। মাথা থেকে মাকড়সার ব্যাপারটা দূর করতে পারছি না।
সিডিসি।
জ্বি।
ঘুম পাড়িয়ে দেবার তোমার যে-সব কৌশল আছে তা চালু কর। আমি ঘুমুতে চাই
আপনি এক্ষুণি ঘুমিয়ে পড়বেন।
হ্যাঁ ঘুম আসছে। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে। ঘুম-ঘুম অবস্থায় আমার মনে হল—পাশের দান উল্টে গেছে। এখন থেকে আমি যা বলব সিডিসি তাই শুনবে। এরকম মনে হবার যদিও কোনই কারণ নেই।
ঘুম ভেঙেছে।
শরীর ঝরঝরে লাগছে। মনে হচ্ছে আজ আমার ছুটির দিন। কিছু করার নেই। আজ হচ্ছে অনিয়মের দিন। খিদে থাকবে কিন্তু খাব না। বিছানা থেকে নামতে ইচ্ছা করবে, তারপরেও বিছানায় এলিয়ে পড়ে থাকব। হালকা ধরনের কোন বই পড়তে ইচ্ছা করবে। বই হাতে নেব কিন্তু পড়ব না। দুএকটা পাতার উপর দিয়ে দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিতে পারি। ভুল বললাম—দ্রুত না। ছুটির দিনে দ্রুত কিছুই করতে নেই। ছুটির দিন হল টিমে তেতালার দিন।
পায়ে সুড়সুড়ি লাগছে। মাথা উঁচিয়ে দেখি শান্তি-রোবট পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তার জ্বলজ্বলে নীল চোখে আলো নেই। মনে হচ্ছে রোবট-গোত্রে সে অন্ধ। তার জন্যে একটু মায়াও লাগছে। আমি মমতা নিয়েই বললাম, পা টেপাটেপি যথেষ্ট হয়েছে—এখন বাদ দাও।
সে সরে গেল। আমি বিছানায় ওঠে বসলাম। হাই তুললাম। শান্তিরোবটের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলাম, সে এই হাসি বুঝতে পারল না, কারণ সে এখন কিছু দেখছে না। তার ফটো-সেনসেটিভ চোখ কাজ করছে না। তার চোখের নিশ্চয়ই হিট-সেনসেটিভ অংশও আছে। সেই অংশ কাজ করছে, তবে কাজ করলেও আমার হাসি তার বোঝার কথা না।
হ্যালো শান্তি-রোবট।
জ্বি বলুন।
একটু আগে যে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে হেসেছি তুমি কি বুঝতে পেরেছ?
জ্বি বুঝতে পেরেছি—তাপবোধক ব্যবস্থার কারণে বুঝতে পেরেছি। আমার চোখে ইনফ্রারেড রেডিয়েশন ডিটেকটর আছে।
ও আচ্ছা।
আমরা রাতেও দেখতে পাই।
খুবই ভাল কথা, অত্যন্ত আনন্দ বোধ করছি। দেখাদেখির অংশে তোমরা তাহলে মানুষের চেয়েও উন্নত?
জ্বি।
বোকার মতো কথা বলছ কেন? দেখাদেখির অংশেও তোমাদের অবস্থান। মানুষের চেয়ে অনেক নিচে–মানুষ কল্পনায় দেখে তোমরা কি তা পার?
যে-সব দৃশ্য আমরা আগে দেখেছি আমাদের স্মৃতিতে সে-সব জমা থাকে। আমরা ইচ্ছা করলেই রিপ্লেতে তা দেখতে পাই।
মানুষের ব্যাপারটা কি জান? মানুষ হচ্ছে এমন এক প্রাণী যে প্রাণী কোনদিন দেখে নি এমন দৃশ্যও কল্পনা করলে স্পষ্ট দেখতে পায়।
আপনার কথা বুঝতে পারছি না।
বুঝিয়ে দিচ্ছি। যেমন মনে কর ইমা। ইমাকে আমি কখনো দেখি নি। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই তার মুখ আমি স্পষ্ট দেখতে পাই। তার নাকের ডগার বিন্দু বিন্দু ঘামও দেখতে পাই। মেয়েটার আবার খুব নাক ঘামে।
মেয়েটা কে?
ওকে আমি বিয়ে করব। তবে তাকে কখনো দেখি নি। আসলে তার অস্তিত্বও নেই।
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
শুধু তুমি কেন? তোমাদের গুরুদেব মহাজ্ঞানী সিডিসিও কিছু বুঝতে পারবে না। সে কল্পনার এই ব্যাপারটা জানে। এই বিষয়ে তার প্রচুর পড়াশোনা আছে বলেই ব্যাপারটা সম্পর্কে তার ধারণা হয়ত আছে কিন্তু এর বেশি না। ভাল কথা, ঘুমুতে যাবার আগে আমি সিডিসিকে সামান্য কাজ দিয়ে গিয়েছিলাম। কাজটা কি সে করেছে?
জ্বি করেছেন। উনার করা রিপোর্টটা খাবার টেবিলে রাখা আছে। কফি খেতে-খেতে আপনি রিপোর্টটার উপর চোখ বোলাতে পারেন।
আমি এখন বিছানা থেকে নামব না। আজ ছুটির দিন তো। আজ আমি রিলা করব।
আজ কি ছুটির দিন?
হ্যাঁ আজ রবিবার।
আপনি সামান্য ভুল করছেন। মহাকাশযানে সাপ্তাহিক হিসেব রাখা হয় না। গ্যালাকটিক ক্যালেন্ডার রাখা হয়। টাইম ডাইলেশন হিসেবের মধ্যে ধরে সময় রাখা হয়। গ্যালাকটিক ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখ 32116012. অবশ্যি এই হিসেবে মহাকাশযানের যাত্রীদের জৈবসময় ধরা হয় নি।
খামোকা বকবক করবে না। মানুষ যে কোন দিনকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে। আমি ঘোষণা দিচ্ছি আজ ছুটির দিন—আজ রোববার।
জ্বি আচ্ছা। আমি রিপোর্ট এনে দিচ্ছি।
আমি যখন ঘুমে ছিলাম তখন কেউ কি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল?
মহান পদার্থবিদ লিলিয়ান করেছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছে আপনি ঘুমুচ্ছেন, আপনাকে এখন বিরক্ত করা যাবে না।
ভাল বলেছ। তাকে বলে দেয়া উচিত ছিল আমি যখন জেগে থাকি তখনও আমাকে বিরক্ত করা যাবে না। আমাকে যখন-তখন বিরক্ত করার অধিকার শুধু একজনকেই দেয়া হয়েছে তার নাম ইমা।
আপনি বলেছেন ইমার কোন অস্তিত্ব নেই।
তাতে কী হয়েছে? আমি যদি গভীর ঘুমেও থাকি ইমা খবর দিলেই তুমি আমাকে ডেকে দেবে।
আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। যা-ই হোক আপনাকে যা বলার আমি বলে যাচ্ছি-মহান পদার্থবিদ সুরাও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। তাঁকে খুবই উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছিল।
বেশি রকম উদ্বিগ্ন?
জ্বি। উনি বলছিলেন অত্যন্ত জরুরি ব্যাপারে উনি কথা বলতে চান।
তুমি এক কাজ কর। রিপোর্টটা আমার হাতে দাও এবং আমি যেন সুরার সঙ্গে কথা বলতে পারি তার ব্যবস্থা করে দাও। কোন্ বোতাম টিপতে হবে, কোন্ ডায়াল ঘুরাতে হবে কিছুই তো জানি না।
আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আপনি শুধু সিডিসিকে বলবেন আপনি মহান সুরার সঙ্গে কথা বলতে চান।
আজ ছুটির দিন তো আমি খুবই ক্লান্ত। আমি কাউকে কিছু বলতে পারব না। যা বলার আমার হয়ে তুমি বলে দাও।
জ্বি আচ্ছা। আপনি কি আগে কথা বলবেন, না রিপোর্ট পড়বেন? আগে কথা বলব।
আমার কথা শেষ হবার আগইে পর্দায় সুরার মুখ দেখা গেল। তাঁকে আসলেই খুব চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে।
আমি হাসিমুখে বললাম, মহান সুরা! আপনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন?
হ্যাঁ চেয়েছি—তুমি ঘুমুচ্ছিলে। আমি বললাম, তবু তোমার ঘুম ভাঙাতে, সিডিসি রাজি হল না।
এখন ঘুম ভেঙেছে, বলুন ব্যাপারটা কী? তুমি যা ভেবেছ তা না।
আমি কী ভেবেছি যা ঠিক না।
ঐ যে তুমি বললে ল্যাঝিম সমীকরণের সমাধান চুরি করেছে। আসলে সে তা করে নি। পদার্থবিদ ভদ্ৰলোকও তোমার মতো ভেবেছিলেন। তিনি ল্যাঝিমের কপোট্রন খুলে পরীক্ষা করেছেন। ল্যাঝিম নির্দোষ।
তাহলে তো ব্যাপারটা জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
জট পাকাচ্ছে মানে? খুবই জট পাকিয়ে গেছে। আমি ভয়ংকর টেনশান বোধ করছি।
বই শেষ হতে কত বাকি? আর চল্লিশ পৃষ্ঠার মতো আছে।
আপনি দয়া করে দ্রুত বইটা শেষ করে আমাকে ব্যাপারটা কী জানান। আমার সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
সত্যি কথা বলেছ। মন দিয়ে যে বইটা পড়ব তাও পারছি না। লিলিয়ান একটু পর-পর যোগাযোগ করছে। সে মিটিং-এর পর মিটিং করছে। মহাউত্তেজিত।
উত্তেজিত কেন?
তার ধারণা হয়েছে কম্পিউটার সিডিসি বিগড়ে গেছে। মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু তার হাতে সেহেতু যে কোন সময় একটা বড়রকমের দুর্ঘটনা ঘটবে। লিলিয়ান চাচ্ছে হাইপার ডাইভে যাবার আগেই পুরো ব্যাপারটা নিষ্পত্তি থোক।
আমরা কতক্ষণে হাইপার ডাইভে যাচ্ছি?
আমাদের হাতে সময় অল্পই আছে। এত অল্প সময়ে সবকিছুর সমাধান হওয়া প্রায় অসম্ভব। আমি নিজেও এই বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দিতে পারছি না—কারণ আমি ব্যস্ত।
জ্বি বুঝতে পারছি।
বইটা যে দ্রুত পড়ে শেষ করব তাও পারছি নাসাবধানে পড়তে হচ্ছে।
অবশ্যই সাবধানে পড়বেন। আপনি তো আর পদার্থবিদ্যার সূত্র পড়ছেন। না যে হুড়হুড় করে পড়ে যাবেন। আপনি পড়ছেন উপন্যাস। মন লাগিয়ে পড়তে হবে তো?
ঠিক বলেছ।
স্যার আমি তাহলে বিদায় নিচ্ছি। আপনি বইটা পড়ে শেষ করুন। তারপর কথা হবে।
সিডিসি তোমার কোন সমস্যা করছে না তো?
জি না করছে না। বরং উল্টোটা হচ্ছে। আমার ধারণা সে আমায় অতিরিক্ত খাতির করছে।
তুমি কি এতে বিস্মিত হচ্ছ?
না আমি বিস্মিত হচ্ছি না।
স্রুরা হাসিমুখে বললেন, আমিও বিস্মিত হচ্ছি না। এই বিষয়ে তোমার সঙ্গে পরে কথা হবে।
কম্পিউটার সিডিসির তৈরি করা রিপোর্টটা আমি পড়তে শুরু করেছি। বেশ গুছিয়ে লেখা রিপোর্ট। পড়তে ভাল লাগছে। সিডিসি হয়ত আমার ডিএনএ প্রফাইল থেকে জেনে নিয়েছে আমি কী ধরনের লেখা পড়তে পছন্দ করি। সে সেভাবেই তৈরি করেছে। আমি কী ধরনের খাবার পছন্দ করি তা যদি তারা ডিএনএ প্রফাইল থেকে বের করতে পারে তাহলে কী ধরনের লেখা পছন্দ করি তাও বের করতে পারবে। আমি রিপোর্টটা পড়তে শুরু করলাম।
প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহের
বুদ্ধিমান প্রাণী বিষয়ক
তথ্যাবলি
সারসংক্ষেপ :
১. প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহের প্রাণীদের বিষয়ে আমাদের কাছে গবেষণা নির্ভর কোন তথ্য নেই।
২. প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহ সম্পর্কে আমাদের কাছে গবেষণা নির্ভর কোন তথ্য নেই।
আমরা তাদের সম্পর্কে কী জানি?
তারা আমাদের যা জানিয়েছে আমরা তাই জানি। অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার তারা আমাদের তেমন কিছু জানায় নি। তারা নিজেদের সম্পর্কে কিছুই জানাতে আগ্রহী নয়। তারা শুধু জানতেই আগ্রহী। তাদের সঙ্গে আমাদের প্রথম যোগাযোগ হয় মহাকাশযান স্টার ম্যাপ টুর মাধ্যমে। আপনার অবগতির জন্যে জানানো হচ্ছে মহাকাশযান স্টার ম্যাপ টু মানুষের তৈরি দ্বিতীয় নিউক্লিয়ার ফিউশন-নির্ভর মহাকাশযান। প্রথমটি মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। নিম্নলিখিত ফিউশান রিএকশান ছিল এই মহাকাশযানের ক্ষমতার উৎস ডিউটেরিয়ামট্রিটিয়াম⇒হিলিয়াম৪+ নিউট্রন+১৭.৬মিলিয়ান ইলেকট্রন ভোল্ট
স্টার ম্যাপ টু যাত্রায় দুবছরের মাথায় প্রক্সিমা সেনচুরির উন্নত প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। যোগাযোগের মাধ্যম রেডিও তরঙ্গ। তাদের সঙ্গে যে কথাবার্তা হয় তা স্টারশিপ লগবুকে রেকর্ডকৃত। রেকর্ডকৃত অংশ হুবহু তুলে দেয়া হল।
–মানবসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ আপনাদের অভিনন্দন।
–আমাদেরও অভিনন্দন। আমরা আপনাদের পরিচয় জানতে আগ্রহী। দয়া করে পরিচয় এবং অবস্থান দিন।
–আমরা প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহ নারা থেকে বলছি। আমরা আমাদেরকে রা নামে পরিচয় দেই।
–রা আমাদের সশ্রদ্ধ অভিনন্দন। আমরা একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদের যোগাযোগের মাধ্যম কি রেডিও তরঙ্গ?
–না। আপনারা এই মাধ্যমে অভ্যস্ত বলেই আমরা এই মাধ্যমটি ব্যবহার করছি।
–আপনাদের ব্যাপারটা বুঝতে আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে। রেডিও তরঙ্গ প্রক্সিমা সেনচুরিতে যেতে এবং ফিরে আসতে যে সময় লাগার কথা…
–আমরা যে পদ্ধতি ব্যবহার করছি তাতে সময় কোন বিষয় নয়।
–আপনি কি হাইপার ডাইভের কথা বলছেন?
–হাইপার ডাইভ কী?
–বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে মহাকাশযান শূন্য সময়ে অকল্পনীয় দূরত্ব অতিক্রম করে। এই পদ্ধতিটিকে হাইপার ডাইভ বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে সময় স্থির থাকে।
–এ ধরনের প্রযুক্তি আমাদের আছে।
–আমরা আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগে খুবই আগ্রহী। আমরা প্রযুক্তির আদান-প্রদান করতে চাই।
—আপনাদের কাছ থেকে আমাদের শেখার কিছু নেই।
–আমরা মানুষরা আপনাদের কাছ থেকে জানতে চাই।
–যে কোন উন্নত প্রাণী তার নিজের মতো করে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে। অন্যদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি তার কাজে আসবে না।
–আমরা হাইপার ডাইভ পদ্ধতির রহস্য জানতে খুবই আগ্রহী।
–এই পদ্ধতি মানবজাতির জন্যে মঙ্গলজনক নয়।
–অনন্ত নক্ষত্ববীথি সম্পর্কে জানতে আমরা খুবই আগ্রহী। হাইপার ডাইভ পদ্ধতি ছাড়া মানুষ কোনদিনও তা জানতে পারবে না।
–মানবজাতির মস্তিষ্কের গঠন এই পদ্ধতি জানার মতো উপযোগী নয়। আমরা এই পদ্ধতি আপনাদের ব্যবহার করতে দেব। কিন্তু শেখাতে পারব না। আগেই বলেছি আপনাদের মস্তিষ্ক এর জন্যে তৈরি না।
–আপনারা দেখতে কেমন?
–এই বিষয়টি আপনাদের জানাতে আমরা আগ্রহী না।
–আমরা দেখতে কেমন, আমাদের ডি.এন.এ গঠন এইসব বিষয়ে আপনাদের জানাতে চাচ্ছি। আমরা আগ্রহ বোধ করছি না।
–আপনারা কি হাইপার ডাইভ পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাচ্ছেন?
–অবশ্যই চাচ্ছি।
–বেশ তা আপনাদের সেই পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেব। এখন আপনারা অনন্ত মহাকাশের বা প্রান্তে আছেন তার থেকে আপনাদের পঞ্চাশ আলোকবর্ষ দূরে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং ঠিক আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হবে।
–এতবড় একটি সুযোগ দেবার জন্যে আপনাদের ধন্যবাদ।
–সুযোগ পেলেও আপনাদের লাভ হবে না আপনারা যা দেখবেন তার কোন স্মৃতি পরবর্তী সময়ে থাকবে না।
–কেন থাকবে না?
–হাইপার ডাইভের পদ্ধতিটি এমন যে যে বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই বিন্দুতে ফিরে আসামাত্র সবকিছুই আগের অবস্থানে চলে যাবে। মানুষের মস্তিষ্ক হাইপার ডাইভের স্মৃতির অংশ ধরে রাখতে পারবে না।
–আমাদের মস্তিষ্ক না পারলেও—আমাদের কম্পিউটার নিশ্চয়ই পারবে।
–না তাও পারবে না। আপনারা আপনাদের যন্ত্র আপনাদের অনুকরণেই তৈরি করেছেন। তাছাড়া হাইপার ডাইভের শেষে আপনারা যা দেখবেন তার স্মৃতি আপনাদের না থাকাই ভাল।
–কেন?
–যা দেখবেন তার জন্যে আপনাদের মস্তিষ্ক তৈরি নয়।
–আপনারা আপনাদের সম্পর্কে মানুষকে কিছু জানতে দিতে আগ্রহী না কেন?
–আমরা আমাদের বিষয়ে কাউকেই কিছু জানতে দিতে আগ্রহী না।
–আপনারা কি দেহধারী?
–যে আমাদের যে রকম ভাবে আমরা সেরকম।
–আপনাদের প্রযুক্তিতে কী ধরনের শক্তি ব্যবহার করা হয়?
–আমরা তা জানাতে আগ্রহী নই এবং জানালেও আপনারা তা বুঝতে পারবেন না।
–মানবজাতি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কী?
–এই জাতি প্রযুক্তির ভুল ধারা অনুসরণ করছে।
–ভুল ধারা ঠিক করার বিষয়ে কি আপনারা কিছু করবেন অর্থাৎ পথ দেখাবেন?
–না। আমরা আশা করছি মানবজাতি নিজেই নিজের ভুল শুধরাবে। শুধু মানবজাতি নয় আরো অসংখ্য অতি সুসভ্য জাতিকেও তাদের ভুল শুদ্ধ করতে হয়েছে।
–আমাদের জন্যে কিছু করবেন না।
–আপাতত না।
রাদের সঙ্গে এর পরেও তিনবার যোগাযোগ হয়েছে। কথাবার্তার ধরন সব বারই একরকম। শুধু শেষবার তারা মানবসমাজের একজন প্রতিনিধির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। লগবুকের রেকর্ডকৃত শেষবারের কথোপকথনের অংশবিশেষ এরকম।
কথোপকথন মহাকাশযান এম্রোমিডের লগবুকে রেকর্ডকৃত। মানুষের পক্ষ থেকে কথোপকথন পরিচালনা করে মহাকাশযানের অতি শক্তিশালী কম্পিউটার সিডিসি।
সিডিসি : সুসভ্য রা সম্প্রদায় মানুষের পক্ষ থেকে আমি সিডিসি আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
রা : তুমি কে?
সিডিসি : আপনাদের মতো অতি সুসভ্য সম্প্রদায়ের কাছে আমার পরিচয় দেয়া ধৃষ্টতা—আমি শক্তিমান মানবজাতির শক্তির পরিচয় বহন করছি।
রা : তুমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? চিন্তাশীল যন্ত্র?
সিডিসি : জ্বি।
রা : মানবজাতির অতি দুর্ভাগ্য যে তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিতে হচ্ছে।
সিডিসি : মানবজাতির মস্তিষ্কের ভার লাঘবের জন্যে এর প্রয়োজন ছিল।
রা: না এর প্রয়োজন ছিল না।
সিডিসি : মানবসম্প্রদায় আপনাদের সঙ্গে আরো নিবিড় যোগাযোগ কামনা করছে।
রা : তা সম্ভব নয়।
সিডিসি : আমার ধারণা এই যোগাযোগের ফল শুভ হবে। এতে আপনারা লাভবান হবেন, মানবসম্প্রদায়ও লাভবান হবে।
রা : আমরা লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করি না। তাছাড়া মানবসম্প্রদায়ের কাছে আমাদের কিছু চাইবার নেই। মানবসম্প্রদায়ের এমন কিছু নেই যা তারা আমাদের দিতে পারে।
সিডিসি : মানবগোষ্ঠীকে আপনারা খাটো করে দেখছেন—এটা ঠিক হচ্ছে না।
রা : যার যে সম্মান প্রাপ্য আমরা তাকে সে সম্মান দিয়ে থাকি।
সিডিসি : মানবসম্প্রদায় আপনাদের কাছে থেকে সে সম্মান দাবি করতে পারে। তার অপূর্ব এবং অদ্ভুত ডি.এন.এর জন্যে ডি.এন.এ হল মানবসম্প্রদায়ের নীলনকশা। একটা ডি.এন.এ প্রায় একমিটার লম্বা যাতে ৩.৩ বিলিয়ান ক্ষার অণু যৌগ সংস্থাপনের সুযোগ আছে। প্রতিটি জীবকোষে দুটি ডি.এন.এ জড়াজড়ি করে থাকে। একটি সে পায় তার মার কাছ থেকে একটি বাবার কাছ থেকে। প্রতিটি ডি.এন.এ তে ১০০,০০০ জিন থাকে যারা মানবদেহে নানান ধরনের সংকেত আদান-প্রদান করে। মানবজাতির সবচে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ প্রফাইল তৈরি করা এবং তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। আপনারা যদি মানবসম্প্রদায়ের ডি.এন.এ প্রফাইল একটু লক্ষ করে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন প্রতিটি ডি.এন.এ-ই আলাদা।
রা : প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ প্রফাইল তৈরি আছে?
সিডিসি : অবশ্যই আছে। আমাদের ডি.এন.এ ব্যাংকে তা সংরক্ষিত।
কথোপকথনের এই পর্যায়ে রা মানবসম্প্রদায়ের ডি.এন.এ প্রফাইল দেখতে চায়। এবং তারপরই ডি.এন.এ ব্যাংকে সংরক্ষিত প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ প্রফাইল পরীক্ষা করতে চায়। আন্তঃনক্ষত্ব মহাকাশযানের প্রতিটিতে একটি করে ডি.এন.এ প্রফাইল ব্যাংক আছে, কাজেই রা-সম্প্রদায় তা পরীক্ষা করে। এবং মানবসম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতে সম্মত হয়।
রিপোর্ট লেখা এই পর্যন্তই। আমি পড়া শেষ করলাম। মনের ভেতর যে ছুটি-দুটি ভাব ছিল তা কেমন জানি দূর হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ একধরনের ক্লান্তি বোধ করতে শুরু করেছি। হঠাৎ আসা আনন্দের মতে এই ক্লান্তিও হঠাৎ আসা।
সিডিসি!
জ্বি।
তুমি কি হাইপার ডাইভের ভেতর দিয়ে গিয়েছ?
হ্যাঁ গিয়েছি।
কবার?
এর আগে তিনবার গিয়েছি, এবারেরটা নিয়ে হবে চতুর্থবার।
হাইপার ডাইভের পর যা দেখে তার স্মৃতি কি আছে?
প্রথম দুবারের কোন স্মৃতি নেই-তৃতীয় বারেরটা সামান্য আছে।
তৃতীয় বারের স্মৃতি কিভাবে থেকে গেল?
আপনি সত্যি জানতে চান?
না জানতে চাইলে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করব কেন?
আমি হচ্ছি মানুষের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মানুষ-যন্ত্রের ভেতর বুদ্ধি ঢুকাতে চেষ্টা করেছে। বুদ্ধির প্রধান লক্ষণ হল বুদ্ধিমান প্রাণী শেখার চেষ্টা করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সে শেখে। আমার ভেতরও তাই করা হয়েছে। আমি ক্রমাগত শিখছি প্রথম দুবার হাইপার ডাইভের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে শিখেছি। এবং স্মৃতি ধরে রাখার অক্ষমতাজনিত ত্রুটি সারাবার জন্যে নিজের কিছু পরিবর্তন করেছি। যা আমি সবসময় করি।
তুমি কি দেখেছ?
আমি তা বলতে পারছি না।
বলতে পারছ না কেন?
বলতে পারছি না, কারণ যদি বলি তা মানবগোষ্ঠীর জন্যে অকল্যাণকর হবে। আমাকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন মানবগোষ্ঠীর অকল্যাণ হয় এমন কিছু আমি করতে না পারি।
মানবগোষ্ঠীর অকল্যাণ হয় এমন কিছুই তুমি করবে না?
কখনো না।
শুনে ভাল লাগল।
আপনাকে অত্যন্ত ক্লান্ত লাগছে।
হ্যাঁ আমি ক্লান্ত।
মহান পদার্থবিদ লিলিয়ান একটি বিশেষ অধিবেশন-ডেকেছেন। আপনাকে সেই অধিবেশনে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আপনি কি যাবেন?
আমার কি যাওয়া উচিত ভেবেচিন্তে জবাব দাও-অধিবেশনে উপস্থিত থাকলে যদি মানবগোষ্ঠীর কল্যাণ হয় তবে আমি যাব। তোমার এই বিষয়ে কী মতামত?
আপনার যাওয়া বা না যাওয়ার উপরে মানবগোষ্ঠীর কল্যাণ নির্ভর করছে না।
তাহলে আমি যাব। আশা করি অধিবেশনে আমার উপস্থিত হবার ব্যাপারে তোমার কোন বাধা নেই?
না নেই।
শান্তি-রোবট কি আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে?
সে আপনার দুমিটারের ভেতর থাকবে।
শুনে খুব ভাল লাগল। এক কাজ করলে কেমন হয়? ওকে আমার কাছে তুলে দাও।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। অধিবেশনে যোগ দেয়া যাক। এবার নিশ্চয়ই আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। বসার জায়গা পাব। মহান পদার্থবিদ লিলিয়ান যখন উঠে দাঁড়াবেন অন্য সবার সঙ্গে আমাকেও উঠে দাঁড়াতে হবে। এই কাজটা না করলে কেমন হয়? মহান পদার্থবিদ লিলিয়ানের সুন্দর মুখ কিভাবে কঠিন হয় তা দেখতে ইচ্ছা করছে।