পরের দিনের কাগজেও অনেকখানি লেখা বেরিয়েছে লোহিয়া সম্পর্কে। এখনও তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি, কেউ তাঁর জন্য মুক্তিপণও দাবি করেনি। পুলিশ সব জায়গায় তাঁর খোঁজ করছে। এর মধ্যে একজন তোক নিজের নাম না জানিয়ে পুলিশের বড়কর্তাকে একটা ফোন করেছিল। সে জানিয়েছে যে, সে বিখ্যাত ব্যবসায়ী লোহিয়াকে দেখতে পেয়েছে মোম্বাসা শহরে। সেখানে একটা পার্কের বেঞ্চিতে তিনি চুপ করে বসে ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল একটা ধূপের ধোঁয়া রঙের গলাবন্ধ কোট আর সাদা রঙের প্যান্ট। এই লোকটি লোহিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিল, কিন্তু লোহিয়া কোনও উত্তর না দিয়ে উঠে চলে যান। আর তাঁকে দেখা যায়নি।
পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে মোম্বাসায় খবর পাঠিয়ে সেখানকার পুলিশ দিয়ে অনেক তল্লাশি করে। কিন্তু কোনও চিহ্নই পাওয়া যায়নি। সেখানকার পুলিশের ধারণা, যে-লোকটি ফোন করেছিল, সে একটা ধাক্কা দিয়েছে। নিশ্চয়ই তার কোনও মতলব আছে।
কাকাবাবু ব্রেকফাস্ট টেবিলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব খবর পড়লেন।
অরুণকান্তির আগেইকাগজপড়া হয়ে গিয়েছে। তিনি বললেন, লোহিয়াজি হঠাৎ মোম্বাসা চলে যাবেন কেন? তাঁর অমন প্রিয় বাড়ি, সেখানে আগুন লাগলে তিনি তো তাঁর খুব দরকারি জিনিসপত্র উদ্ধার করারই চেষ্টা করবেন। ওই অবস্থায় বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার তো কোনও কারণই নেই।
কাকাবাবু বললেন, তা তো ঠিকই। ওই সময় কোথাও চলে যাওয়াটা মোটেই স্বাভাবিক নয়।
অরুণকান্তি আবার বললেন, লোহিয়াজি বাড়িতে আগুন লাগার চেয়েও আরও বড় কোনও বিপদের গন্ধ পেয়েছিলেন। তাই আত্মগোপন করেছেন।
কাকাবাবু বললেন, সেটাও হতে পারে। সেটাই বোধহয় ওঁর লুকিয়ে থাকার আসল কারণ।
অরুণকান্তি এবার খানিকটা ক্ষুব্ধভাবে বললেন, কী ব্যাপার, বলুন তো কাকাবাবু? আমি যা বলছি, তাতেই আপনি সায় দিয়ে যাচ্ছেন? আপনি কি আমার কথা ভাল করে শুনছেন না? এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনি কি নিজে কিছু ভাবছেন না?
কাকাবাবু বললেন, না না, শুনব না কেন? তোমার সব কথা শুনছি। তুমি তো ঠিক কথাই বলছ। আমি আর কিছু ভেবে পাচ্ছি না।
অরুণকান্তি বললেন, পুলিশের কাছে যে লোকটা ফোন করেছিল, ওরকম কিছু কিছু লোক থাকে, কিছু একটা ঘটনা ঘটলেই বানিয়ে বানিয়ে নানান কথা বলে। ওতেই ওদের আনন্দ। অনেক সময় পুলিশ ওদের কথা শুনে ভুল পথে চলে যায়। তাতে অনেক সময় নষ্ট হয়।
কাকাবাবু বললেন, তবে, ওই লোকটি লোহিয়াজির পোশাকের যা বর্ণনা দিয়েছে, তা কিন্তু মিলে যায়। আমি সব সময় লোহিয়াজিকে একটা হালকা রঙের কোট আর সাদা প্যান্ট পরে থাকতেই দেখেছি। অত ধনী মানুষ, কিন্তু সাজপোশাকের কোনও বাড়াবাড়ি ছিল না।
তা হলে আপনি কি মনে করেন লোহিয়াজি মোম্বাসা শহরেই গিয়েছেন কোনও কারণে?
সেটাও তো নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। যে লোকটি ফোন করেছিল, সে হয়তো লোহিয়াজিকে চেনে, কিন্তু পার্কে দেখা হওয়াটা সত্যি না-ও হতে পারে।
কাকাবাবু, আপনি এখন কী করবেন?
দু-একদিন অপেক্ষা করে দেখি, লোহিয়াজির কোনও খোঁজ পাওয়া যায় কি না। যদি নাই-ই পাওয়া যায়, তা হলে, তা হলে আর শুধু শুধু বসে থেকে কী করব? বাড়ি ফিরে যাব!
আপনি নিজে থেকে ওঁকে খোঁজার কোনও চেষ্টা করবেন না?
আমি কী চেষ্টা করব বলো তো? এটা আমার দেশ নয়। বিশেষত, লোকজনদের চিনি না। কোনও লোক উধাও হয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব পুলিশের। এর মধ্যে আমি নাক গলাতে গেলে এ দেশের পুলিশ তা সহ্য করবে কেন?
এ দেশের পুলিশের উপর আমার তেমন ভরসা নেই। লোহিয়াজি লোকটি বড় ভাল। এখানকার ইন্ডিয়ানদের অনেক সাহায্য করতেন।
কাকাবাবু অন্যমনস্কভাবে বললেন, হুঁ।
ব্রেকফাস্ট শেষ করার পরে অরুণকান্তি বললেন, আমাকে একবার অফিসে যেতে হবে। বেশিক্ষণ থাকব না। তারপর বিকেলে চলুন, বিনায়ক ঘোষদের বাড়িতে যাই। উনি ফোন করেছিলেন।
কাকাবাবু অন্যমনস্কভাবেই জিজ্ঞেস করলেন, বিনায়ক ঘোষ কে বলো তো?
অরুণকান্তি বললেন, ওই যে প্লেনে দেখা হয়েছিল, এক মহিলার কোলে বাচ্চা ছিল। আপনি তার গান শুনতে চাইলেন?
কাকাবাবু বললেন, ও, হা হ্যাঁ। তা হলে চলো, বিকেলে তো কোনও কাজ নেই, ওখানে গিয়ে গান শোনা যাক। তুমি ঘুরে এসো অফিস থেকে।
অরুণকান্তি উপরে গিয়ে পোশাক পালটে যখন নেমে এলেন, তখনও কাকাবাবু চোখের সামনে খবরের কাগজ মেলে বসে আছেন। তাঁর দৃষ্টি দেখলেই বোঝা যায়, কাগজটা সামনে রয়েছে বটে, কিন্তু তিনি পড়ছেন না।
অরুণকান্তি বললেন, স্যার। আমার সত্যি খুব অবাক লাগছে। আপনার সম্পর্কে এত কিছু শুনেছি, অথচ এখানে শুধু চুপচাপ বসে আছেন, এটা যেন ভাবাই যাচ্ছে না!
কাকাবাবু হেসে বললেন, চুপচাপ বসে থেকে তা হলে কি আমি লাফালাফি করব? এই পা নিয়ে তা পারি না যে! তা ছাড়া তুমি আমার সম্পর্কে যা শুনেছ, তা বেশি বেশি শুনেছ। লোকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে।
অরুণকান্তি বললেন, বাড়িয়ে বলবে কী, আমি নিজের চোখেই তো দেখলাম। হাইজ্যাকারদের হাতে অমন সব মারাত্মক অস্ত্র, আমরা ভয়ে সিঁটিয়ে আছি, আর আপনি তাদের এক ঘুসি মেরে ঠান্ডা করে দিলেন। সব কটা ধরা পড়ে গেল!
কাকাবাবু আরও জোরে হেসে উঠে বললেন, আরে, আমি কি ওদের প্ল্যান করে ধরিয়ে দিয়েছি? অত সাহস আমার নেই। আজকাল আমার রাগটা বড্ড বেড়ে গিয়েছে। ওদের একটা ছেলে অকারণে আমাকে অপমান করছিল, আমার গোঁফ ধরে টানল, তাতেই আমার মাথা এত গরম হয়ে গেল যে, পরে কী হবে না-হবে তা না ভেবেই মেরে দিলাম এক ঘুসি। আসলে ওই ছেলেগুলোই একেবারে নভিস, ভাল করে ট্রেনিং নেয়নি, তাই অত সহজে ধরা পড়ে গেল। এতে আমার কোনও কৃতিত্ব নেই।
অরুণকান্তি বললেন, সে আমরা ঠিক বুঝে নিয়েছি। যাই হোক, আপনি টিভি দেখুন, আমি অফিস থেকে ঘুরে আসছি।
কাকাবাবুর টিভি দেখার বিশেষ অভ্যেস নেই। তিনি মহাভারত খুলে বসলেন। কৃষ্ণ ফিরে গিয়েছেন পাণ্ডবদের কাছে। এবার যুদ্ধ লাগবে।
কতবার পড়ছেন এই বই, তবু কিছুদিন অন্তর অন্তর পড়তে ভাল লাগে।
দুপুরে একবার ফোন করলেন কলকাতার বাড়িতে।
সন্তু নেই, বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছে। পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, এখন তো কয়েকটা দিন আড্ডা মারবেই। বউদির সঙ্গে খানিকক্ষণ গল্প করলেন কাকাবাবু।
বিকেলের দিকে অরুণকান্তি ফিরে এসে কাকাবাবুকে নিয়ে বেরোলেন।
এখানে সন্ধের আগের রোদটাকে ঠিক সোনালি মনে হয়। আকাশ একেবারে তকতকে নীল। রাস্তার পাশে পাশে মাঝে মাঝেই দেখা যাচ্ছে। একটা ফুলের গাছ, খুব সম্ভবত কাঞ্চন ফুল।
গতকাল সারাদিনই শহরের নানান জায়গায় দেখা গিয়েছে লোহিয়াজির নিজস্ব চিড়িয়াখানার ছাড়া পাওয়া জন্তু-জানোয়ার। এখানকার লোকরা বন্যপ্রাণী দেখতে খুবই অভ্যস্ত, তাই কেউ কিছু গ্রাহ্য করেনি। শুধু এক জায়গায় একটি বাচ্চা ছেলে হাতি দেখে ভয় পেয়ে পালাতে গিয়ে নর্দমায় পড়ে গিয়েছিল, আর কোনও ক্ষতি হয়নি কারও।
এর মধ্যে সেই জানোয়াররা শহর ছেড়ে চলে গিয়েছে নিশ্চয়ই। তবে জেব্রা দেখা যায় যে-কোনও জায়গায়। আমাদের দেশের গাধার মতো। গাধা আর জেব্রা তো প্রায় একই প্রাণী, তবে গাধার গায়ের রং দেখতে ভাল নয়, আর মুখোনা বোকা বোকা। জেব্রাদের গা ডোরাকাটা বলে বেশ সুন্দর দেখায়। গাধার বদলে শুধু জেব্রাদের গা-ই কেন ডোরাকাটা? শুধু তাই-ই নয়, গায়ের ওই ডোরাকাটাগুলো নাকি প্রত্যেক জেব্রার আলাদা।
হেমন্তিকা আর বিনায়ক ঘোষদের বাড়িও নিরিবিলি এলাকায়। আলাদা বাড়ি নয় অবশ্য, তিনতলার উপরে ফ্ল্যাট। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই বয়স বেশি নয়, ত্রিশ-বত্রিশের মধ্যে। বেশিদিন আগে আসেননি এদেশে। পাঁচ বছর। বিনায়ক এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, হেমন্তিকাও একটা লাইব্রেরিতে চাকরি করতেন। ছোট বাচ্চা আছে বলে এখন চাকরি ছেড়ে বাড়িতেই থাকেন।
ফ্ল্যাটটি বেশ বড়। বসবার ঘরে এক দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথের বিরাট ছবি, অন্য দেওয়ালে নজরুলের। নজরুলের ছবিটা অন্যরকম, ধুতি ও হলুদ পাঞ্জাবি পরা পুরো চেহারা। কাকাবাবু খুব কাছে গিয়ে দেখলেন, ফোটোগ্রাফ বলে মনে হলেও আসলে সেটা আঁকা ছবি।
চা খেতে খেতে শুরু হয়ে গেল সেই প্লেন হাইজ্যাকের গল্প। হেমন্তিকা চোখ বড় বড় করে বলতে লাগলেন, উঃ বাবা, ভাবলেও এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। এক ভদ্রলোকের গলায় ফাঁস জড়িয়ে কীরকম অত্যাচার করল?
একটু পরে কাকাবাবু বললেন, ও গল্প থাক। হেমন্তিকা, তোমার গান শোনাবার কথা ছিল?
আগে থেকেই একটা হারমোনিয়াম এনে রাখা হয়েছে। হেমন্তিকা তাঁর সামনে বসে পড়ে বললেন, আপনি যে বললেন, রবীন্দ্রনাথ নাইরোবি নিয়ে গান লিখেছিলেন, সেটা তো খুঁজে পেলাম না!
কাকাবাবু বললেন, রবীন্দ্রনাথ নাইরোবি নিয়ে গান লিখেছেন, তা বলিনি। বলেছিলাম, রবীন্দ্রনাথের গানে নাই রবি আছে। তুমি এই গানটা জানো, সকালবেলার আলোয় বাজে, বিদায় বেলার ভৈরবী?
হেমন্তিকা বললেন, শুনেছি, পুরোটা জানি না।
কাকাবাবু বললেন, পুরো গানটা হচ্ছে:
সকালবেলার আলোয় বাজে
বিদায় বেলার ভৈরবী–
আন্ বাঁশি তোর, আয় কবি ॥
শিশিরশিহর শরতে শিউলিফুলের গন্ধ সাথে
গান গেয়ে যাস আকুল হাওয়ায়,
নাই যদি রোস নাই র’বি।
কাকাবাবু শেষ লাইনটা বলতেই সবাই হেসে উঠলেন।
অরুণকান্তি বললেন, নাইরোবি তো নয়। এর তো অন্য মানে। নাই যদি রোস নাই রবি, এর মানে হচ্ছে, থামতে না চাস, তা হলে থামিস না।
কাকাবাবু হেসে বললেন, সে যাই হোক, যখন সবাই এ গানটা গায়, তখন উচ্চারণ করে নাইরোবি!
বিনায়ক বললেন, কেনিয়া কিংবা নাইরোবি নিয়ে বাংলায় কি কোনও বই আছে?
অরুণকান্তি বললেন, আমার তো কখনও চোখে পড়েনি।
কাকাবাবু বললেন, আমি একটা বই পড়েছিলাম, সে বইটা এখন পাওয়া যায় কি না জানি না। বইটার নাম, নাইরোবি থেকে রবি।
হেমন্তিকা বললেন, এ আবার কী নাম? এর কোনও মানে আছে?
কাকাবাবু বললেন, লেখকের নাম খুব সম্ভবত শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ। ভদ্রলোক অনেকদিন আগে এই নাইরোবিতেই থাকতেন। সেকালের অনেক বর্ণনা দিয়েছেন। তখন এই শহরটাই নতুন হয়েছে বলা যায়।
অরুণকান্তি বললেন, কেনিয়া দেশটাই তো নতুন। আগে নানা জাতের লোক থাকত, কিন্তু দেশ যাকে বলে, ইংরেজরা এসে সেটা বানিয়েছে। ওরাই একটা পাহাড়ের নাম নিয়ে দেশটার নাম দেয় কেনিয়া।
কাকাবাবু বললেন, সেই বইয়ের প্রথম অংশে দারুণ সব কাহিনি আছে, তার মধ্যে বাড়িতে সিংহ ঢুকে পড়ার কথাও মনে আছে। তারপর সেই ভদ্রলোক একসময় দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ঠিক করলেন। কলকাতায় গিয়ে আস্তে আস্তে তাঁর কিছু লেখকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হল। কলকাতা থেকে একদিন শান্তিনিকেতনে গিয়ে সেখানেই থেকে যেতে চাইলেন। রবীন্দ্রনাথ তখনও বেঁচে ছিলেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও তাঁর দেখা হল। সেই জন্য বইয়ের নাম নাইরোবি থেকে রবি।
বিনায়ক বললেন, বইটা জোগাড় করার চেষ্টা করব তো!
কাকাবাবু হেমন্তিকার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার নামেও তো রবীন্দ্রনাথের গান আছে। তুমি সেই গানটা জানো নিশ্চয়ই?
হেমন্তিকা ঘাড় হেলিয়ে বললেন, জানি!
কাকাবাবু বললেন, সেটাই আগে শোনাও! তিনি গাইলেন :
হিমের রাতের ওই গগনের দীপগুলিরে
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো—
দীপালিকায় জ্বালাও আলো
জ্বালাও আলো, আপন আলো…
মেয়েটি বেশ ভালই গান করেন! কাকাবাবু মুগ্ধ হয়ে শুনে বললেন, চমৎকার। তুমি আরও একটা গাও?
বিনায়ক জিজ্ঞেস করলেন, কাকাবাবু, আপনিও নিশ্চয়ই গান জানেন?
কাকাবাবু বললেন, না না, একদম না। আমি অনেক গান মুখস্ত বলতে পারি। কিন্তু গাইতে পারি না। তাই আমি বাথরুম সিঙ্গার।
হেমন্তিকা বললেন, আপনার নাম রাজা রায়চৌধুরী। রাজাকে নিয়েও তো রবীন্দ্রনাথের অনেক গান আছে। সেরকম একটা…!
কাকাবাবু বললেন, আমার নাম নয়, শুধু রাজা বা মহারাজ নিয়ে অনেক গান আছে ঠিকই। কিন্তু সেসব গাইতে হবে না। তুমি এই গানটা গাও: আলো
আমার আলো ওগো, আলো ভুবন ভরা!
সে গান সবেমাত্র শুরু হতেই সামনের রাস্তায় একটা দারুণ হইহই চিৎকার শোনা গেল।
প্রথমে বিনায়ক উঠে গিয়ে উঁকি দিলেন সামনের বারান্দায়।
সেখানে গিয়ে তিনিও চেঁচিয়ে উঠলেন, অ্যাই, অ্যাই!
তারপর ও, মাই গড, বলতে বলতে তিনিও সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেন দুপদুপিয়ে।
একত্রে সবাই দৌড়ে গেলেন বারান্দায়। দেখা গেল একটা অদ্ভুত দৃশ্য। সামনের রাস্তায় খেলা করছিল আট-দশটি বাচ্চা ছেলেমেয়ে। ফুটপাথ ঘেঁষে পার্ক করানো আছে তিনটি গাড়ি।
কয়েকটা লোকের মুখে কালো মুখোশ, তারা সেই তিনটি গাড়িরই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকছে। বাচ্চারা চাচাচ্ছে। কয়েকটি ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে কিছু লোকও চঁচামেচি করছে, মুখোশধারীরা গ্রাহ্যই করছে না।
বিনায়ক নীচে যেতে যেতেই গাড়ি তিনটি স্টার্ট নিয়ে বেরিয়ে গেল। বিনায়ক শুধু শুধু একটা গাড়ির পিছনে কিছুটা দৌড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন এক জায়গায়।
হেমন্তিকা বললেন, দেখলেন, দেখলেন! এখনও তেমন অন্ধকার হয়নি, এ একেবারে দিনের আলোয় ডাকাতি। ইস, গাড়িটা ওর খুব ফেভারিট ছিল।
অরুণকান্তি ম্লান হেসে বললেন, আমার গাড়িটাও তো নিয়ে গেল। ওটা অবশ্য আমার নিজস্ব নয়, অফিসের গাড়ি।
হেমন্তিকা বললেন, একসঙ্গে তিনটে গাড়ি চুরির ঘটনা আমি আগে কখনও শুনিনি। তাও এত লোকের চোখের সামনে।
কাকাবাবু বললেন, বাচ্চারা ওখানে খেলছে। আমার ভয় করছিল, ওরা গাড়ি নিয়ে হুড়োহুড়ি করে পালাতে গিয়ে কাউকে না চাপা দেয়!
অরুণকান্তি বললেন, গাড়ি চুরি এখানে খুব সাধারণ ঘটনা। এখানে এমন কেউ নেই, যার একটা না-একটা গাড়ি চুরি হয়নি। আজ ইংল্যান্ডের একজন মন্ত্রী এ দেশ সফরে আসছেন। কোনও ভি আই পি এলে সেইসব দিনে কয়েকটা রাস্তা পুলিশে পুলিশে একেবারে ছয়লাপ হয়ে যায়। অন্য অনেক রাস্তায় পুলিশ থাকেই না। এইসব দিনে গাড়ি চোরদের দারুণ মজা। ওরা জানে, এইসব রাস্তায় আজ হাজার ডাকলেও পুলিশ আসবে না।
হেমন্তিকা বললেন, পুলিশ থাকলেই বা কী হয়? অনেক সময় এরা চুরি করে, পুলিশ অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। এই দেশটা এমনিতে এত ভাল, এত সুন্দর, খাবারদাবারও ভাল পাওয়া যায়, কিন্তু বড় চোর-ডাকাতের উৎপাত। সব সময় কাঁটা হয়ে থাকতে হয়।
বিনায়ক উপরে ফিরে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, আনবিলিভেল। এত লোকের চোখের সামনে দিয়ে গাড়ি তিনটে নিয়ে গেল? আমার গাড়িটা এত পছন্দের, এত ভাল পিকআপ, জোরে ব্রেক কষলেও বিচ্ছিরি শব্দ হয় না!
কাকাবাবু বললেন, গাড়ির ইনশিয়োরেন্স আছে নিশ্চয়ই?
বিনায়ক বললেন, তা আছে! কিছু টাকা দেবে। কিন্তু এই গাড়ি তো আর ফিরে পাব না?
এর পর আর গান জমে না। চেনাশুনো আর কার বাড়িতে কবে কেমন রোমহর্ষক ডাকাতি হয়েছে, সেই গল্পই চলতে লাগল।
হেমন্তিকা অনেক রকম রান্নাবান্না করে রেখেছেন। কিন্তু গাড়ির শোকে কারও বিশেষ কিছু খেতে ইচ্ছে করল না। কাকাবাবু এমনিতেই রাত্তিরবেলা খুব কম খান।
ট্যাক্সি নিয়ে ফিরতে হবে, তাড়াতাড়ি ফেরা দরকার। আজকের রাতটা সাবধানে থাকতে হবে। পুলিশরা সব ইংরেজ মন্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত, চোরডাকাতরা বাড়িতেও হানা দিতে পারে।
অরুণকান্তি বাড়ির সামনে ট্যাক্সিটা ছেড়ে দেওয়ার পর দেখা গেল, কাছেই একটা পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
অরুণকান্তি বললেন, নিশ্চয়ই এ পাড়ায় কোনও ভি আই পি কিংবা কোনও মন্ত্রীর আত্মীয় এসেছে, তাই পুলিশ এসে পাহারা দিচ্ছে। যাক বাঁচা গেল, আমরাও নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারব!
ভিতরে এসে অরুণকান্তি বললেন, আমি আজ একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ব ভাবছি। কাল সকাল সাড়ে আটটায় আমার অফিসে একটা মিটিং আছে। আমি দুপুর বেলাতেই ফিরে আসবার চেষ্টা করব। তারপর আমরা বেড়াতে যেতে পারি কোথাও!
কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো!
অরুণকান্তি উপরে চলে যাওয়ার পরেই কাকাবাবু ভাবলেন, এবার কলকাতাতেই ফিরে যাওয়া উচিত। অরুণকান্তির অফিসের বেশ চাপ আছে, বোঝাই যাচ্ছে। তারই মধ্যে মধ্যে ছুটি নিয়ে সে আর কত তাঁকে নিয়ে ঘুরবে? তা ছাড়া বেড়াবারও মন নেই কাকাবাবুর। তিনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন, সেটার আর কিছুই করা যাবে না। কালকেই প্লেনের টিকিটটা বদলাতে হবে।
এক্ষুনি দরকার নেই, তবু কাকাবাবু হ্যান্ডব্যাগে টিকিটটা খুঁজতে লাগলেন। প্রথমেই পেয়ে গেলেন একটা লম্বা খামের চিঠি। লোহিয়াজির লেখা। এই চিঠির উপর নির্ভর করেই তিনি এ দেশে এসেছেন।
এই সময় বেজে উঠল বাইরের দরজার বেল।
এ দেশে রাত্রের দিকে কেউ তো আসে না। টেলিফোন না করে হঠাৎ কারও উপস্থিত হওয়ার কোনও রেওয়াজই নেই। আমাদের দেশের মতো বিনা কারণে আড্ডা দিতে এরা জানেই না।
দরজা খোলারও কেউ নেই। এখানে কাজের লোকের ডিউটি আওয়ার্স আছে। সন্ধের সময় ঠিক সাতটা বাজলেই এরা চলে যায়। যে রান্না করে, সে টেবিলের উপর রেখে যায় খাবারদাবার। নিজেদের গরম করে নিতে হয়।
অরুণকান্তি উপর থেকে নামবার আগেই কাকাবাবু নিজেই গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
বাইরে দাঁড়িয়ে আছে পুরোদস্তুর পোশাক পরা দুজন পুলিশ অফিসার। তাদের একজন পরিষ্কার ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, এ বাড়িতে কি রাজা রায়চৌধুরী নামে কেউ থাকেন?
কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ, আমিই।
পুলিশটি আবার জিজ্ঞেস করল, আপনি ইন্ডিয়া থেকে আসছেন?
কাকাবাবু বললেন, ইয়েস।
পুলিশটি বুকপকেট থেকে একটা ফোটোগ্রাফ বের করে কাকাবাবুর চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে লাগল।
কাকাবাবু এবার একটু অবাক হলেন।
পুলিশটি তাঁর ফোটো পেল কোথা থেকে? এ ফোটোটা কোথায় তোলা হয়েছে?
পুলিশটি ফোটোটা আবার পকেটে ভরে বলল, ঠিক আছে। স্যার, আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে আসছি। আপনাকে একবার থানায় যেতে হবে।
কাকাবাবু খুব নিরীহভাবে প্রশ্ন করলেন, এত রাত্তিরে থানায় যেতে হবে? কেন বলুন তো?
পুলিশটি বলল, বেশি তো রাত হয়নি। আমাদের বড়সাহেব আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলবেন।
এর মধ্যে চটি ফটফটিয়ে উপর থেকে নেমে এলেন অরুণকান্তি। ব্যস্তসমস্ত হয়ে বলতে লাগলেন, কী ব্যাপার, কী ব্যাপার?
পুলিশই জিজ্ঞেস করল, স্যার, এটা আপনার বাড়ি? আপনি এখানে কতদিন আছেন?
অরুণকান্তি নিজের নাম জানিয়ে বললেন, আমি এদেশে আছি সতেরো বছর। আমি কেনিয়াট্টা পেপার ওয়ার্কস নামে একটা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার। আপনারা এই কোম্পানির নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। জেমো কেনিয়াট্টা নিজে এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।
জেমো কেনিয়াট্টা ছিলেন স্বাধীনতাসংগ্রামী বীর, এ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম রাষ্ট্রপতি। তাঁর নাম শুনলেই সবাই শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।
পুলিশটি অবশ্য সেরকম কোনও ভাব দেখাল না। গম্ভীরভাবে বলল, এই ভদ্রলোক আপনার গেস্ট? এঁকে একবার থানায় যেতে হবে।
অরুণকান্তিও কাকাবাবুর মতো একই প্রশ্ন করলেন, এত রাত্রে থানায় যেতে হবে কেন?
পুলিশটি বলল, আমাদের বড়সাহেব এঁর সঙ্গে কথা বলতে চান।
অরুণকান্তি বললেন, সকালবেলা কথা বলা যায় না? কী এমন জরুরি কথা আছে?
পুলিশটি এবার কঠোরভাবে বলল, আমার উপর যা অর্ডার আছে, আমি তাই-ই পালন করতে এসেছি। শুধু শুধু দেরি করে লাভ নেই।
অরুণকান্তি কাকাবাবুকে বাংলায় বললেন, এদের সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই। এরা বড্ড গোঁয়ার হয়। তারপর তিনি পুলিশটিকে বললেন, ঠিক। আছে, একটু অপেক্ষা করুন। আমি তৈরি হয়ে আসছি। আমিও সঙ্গে যাব।
পুলিশটি বলল, না, সেরকম অর্ডার নেই। ওঁকে একাই নিয়ে যেতে হবে।
অরুণকান্তি জিজ্ঞেস করলেন, উনি ফিরবেন কী করে? উনি এখানকার রাস্তাঘাট কিছুই চেনেন না।
পুলিশটি এবার একটু নরম হয়ে বলল, আপনি চিন্তা করছেন কেন? বেশিক্ষণ লাগবে না। আমাদের গাড়িই পৌঁছে দিয়ে যাবে। চলুন, চলুন?
কাকাবাবু অরুণকান্তিকে বললেন, তুমি চিন্তা কোরো না, এরা তো আমাকে পৌঁছে দেবে বলেছে।
বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার পর সেই পুলিশটি বসল সামনে। আরএকজন বন্দুকধারী পুলিশ এসে বসল কাকাবাবুর পাশে। সারা রাস্তায় কেউ কোনও কথা বলল না।
পুলিশস্টেশনে পৌঁছোবার পর সামনের দিকে কয়েকটি ঘর পেরিয়ে ভিতরের দিকের একটা ছোট ঘরে এসে সেই পুলিশ অফিসারটি একটি চেয়ারে বসল। সে ঘরে আর কোনও চেয়ার নেই। শুধু একটা টুল রয়েছে।
সেটা দেখিয়ে পুলিশটি বলল, বসুন ওখানে!
কাকাবাবু বসলেন না, দাঁড়িয়ে রইলেন।
পুলিশটি জিজ্ঞেস করল, আপনি কিছু খেয়েটেয়ে এসেছেন?
কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ। ডিনার খাওয়া হয়ে গিয়েছে।
পুলিশটি বলল, গুড! আপনাকে এখন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে। রাত্তিরটা আপনাকে গারদে কাটাতে হবে।
কাকাবাবু দারুণ অবাক হয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, অ্যারেস্ট করা হবে মানে? আমি কী দোষ করেছি?
পুলিশটি এবার টেবিলের উপর দুপা তুলে দিয়ে বলল, দোষ? ওসব আমি জানি না। আপনাকে গারদে ঢোকাতে বলা হয়েছে, তাই-ই করছি।
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, আমার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আছে?
পুলিশটি অবহেলার সঙ্গে একটা হাত নাড়তে নাড়তে বলল, ওসব লাগে। জরুরি অবস্থায় আমরা যাকে-তাকে ধরতে পারি!
কাকাবাবু বললেন, আপনি যে বলেছিলেন, আপনাদের বড়সাহেব আমার সঙ্গে কথা বলতে চান?
পুলিশটি বলল, এক্ষুনি শুনলাম, আজ রাত্তিরে তাঁর সময় হবে না। তাঁর যখন মর্জি হবে, তখন কথা বলবেন। কাল হতে পারে, পরশুও হতে পারে।
কাকাবাবু বললেন, আমি যাঁর বাড়িতে ছিলাম, তাঁকে একটা খবর দিতে পারি? তা ছাড়া, আমি একজন উকিলও ঠিক করতে চাই!
লোকটি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, ওসব হবে না। ওসব হবে না। বেশি। কথা বলবেন না। আমি বেশি কথা পছন্দ করি না।
কাকাবাবু এবার একটু গলা চড়িয়ে বললেন, আমি যদি গারদে যেতে রাজি না হই? আমি কোনও ক্রাইম করিনি। কেন শুধু-শুধু…!
পুলিশটি টেবিলে প্রচণ্ড জোরে এক চাপড় মেরে বলল, রাজি না হই মানে? এখান থেকে পালাবেন নাকি? এতক্ষণ গায়ে হাত দিইনি। এবার…?
কাকাবাবু মাথা নিচু করলেন। মনে মনে বলতে লাগলেন, রাজা রায়চৌধুরী, মাথা গরম কোরো না। পুলিশের সঙ্গে রাগারাগি করলে কোনও লাভ হবে না। ওরা মারতে শুরু করলে তুমি বাধা দিতেও পারবে না!
মাথা তুলে কাকাবাবু বিনীতভাবে বললেন, না না, পালাবার কথা উঠছেই না। আমি খোঁড়া লোক। কেন অ্যারেস্ট করা হল সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিলাম। ঠিক আছে, আপনি যা বলবেন, তাই-ই শুনব।
পুলিশটি অন্য একজনকে ডাকল।
সেই লোকটি এসে অকারণেই কাকাবাবুকে প্রায় ধাক্কা মারতে মারতে নিয়ে চলল।
এক জায়গায় কাকাবাবুর পকেট সার্চ করে দেখা হল।
কয়েকশো ডলার আর কিছু কার্ড ছাড়া কিছুই নেই। সেগুলো রেখে দিল লোকটি।
তারপর কাকাবাবুর পোশাক ছাড়িয়ে পরানো হল কয়েদিদের ডোরাকাটা ঢোলা জামা আর পায়জামা।
তারপর একটা লোহার দরজা খুলে কাকাবাবুকে ঠেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল ভিতরে।
ঘরটি বেশ লম্বামতো। এটা ঠিক জেলখানার মতো নয়। থানার গারদে এক ঘরেই অনেকে থাকে।
এই ঘরেও রয়েছে আটজন। বিছানাটিছানা কিছু নেই। সবাই বসে আছে মেঝেতে ছড়িয়ে। কয়েকজনের চেহারা দেখলে রীতিমতো ভয় করে। ঠিক যেন যমদূত। আরও কয়েকজন নিরীহ মতো। একজনকে দেখলেই মনে হয় স্কুলশিক্ষক।
প্রথম কয়েক মুহূর্ত সবাই দেখল কাকাবাবুকে। তিনি কোনওরকমে একটা ফাঁক খুঁজে দেওয়াল ঘেঁষে বসে পড়লেন।
যমদূতের মতন চেহারার একজন হেঁড়ে গলায় জিজ্ঞেস করল, কী হে, তুমি কোন কেসে এসেছ? খুন, ডাকাতি, রাহাজানি কিংবা ছিচকে চুরি?
কাকাবাবু বললেন, সেটা আমি ঠিক এখনও জানি না!
সবাই একসঙ্গে হ্যাঁ হ্যা করে হেসে উঠল।
কাকাবাবুও তাদের সঙ্গে হাসিতে যোগ দিলেন। তারপর তিনি বললেন, হাকুনা মাটাটা। হাকুনা মাটাটা।
এবার অন্যরা আরও জোরে বলতে লাগল।