দুর্গাচরণ হাত বাড়িয়ে খাতাটা নিয়ে বলল, মনে হয় এই ইনফরমেশনটুকু আপনাকে জানানোর জনাই ইন্দ্র আপনাকে একবার এখানে আসতে বলেছিল।
লীনা প্রায় কাঁদো-কাঁদো হয়ে বলল, কিন্তু আমার পিছনে গোয়েন্দা লাগানোর মানে কী?
তা তো জানি না। তবে ইন্দ্র প্রায়ই বল, ববির অতি বিপজ্জনক লোক। তার সঙ্গে খুব সমঝে চলতে হয়।
বিপজ্জনক? কতখানি বিপজ্জনক?
দুর্গাচরণ খাতটা রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বলল, এর ওপর আমাদের হাতের ছাপ থেকে যাওয়াটা উচিত হবে না। দাঁড়ান, আমি এটা জায়গামতো রেখে হাসি।
ফোকর দিয়ে দুর্গাচরণ ইন্দ্রজিতের ঘরে ঢুকে গেল। লীনা টের পেল, তার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে, রাগে-উত্তেজনা। মাথাটা গুলিয়ে যাচ্ছে। তাঁর সম্পর্কে তত ইনফরমেশন তা হলে এভাবেই সংগ্রহ করেছিল বলি রায়। কিন্তু কেন? কেন? কেন?
দুর্গাচরণ ফিরে এসে তক্তা দিয়ে ফাঁকটা বন্ধ করে দিল। তারপর বলল, আপনি একটু সাবধানে থাকবেন, মিস ভট্টাচার্য।
কে বলুন তো?
আমার সন্দেহ হচ্ছে ইন্দর মৃত্যুর সঙ্গে ববি রায়ের একটা যোগ আছে। ইন্দ্রজিতের তো বরি ৰায় ছাড়া কোনও মক্কেল ছিল না।
কিন্তু উনি তে বললো. বণি রায়কে, করার জন্য ওঁকে পাঠানো হয়েছিল।
দুর্গাচরণ মৃদু একটু হেসে বলল, হতেও পারে, না-ও হতে পারে! ডিটেকটিভরা সত্যি কথা কমই বলে।
কথা বলতে বলতে দু’জনে হাঁটছিল। বাইরের অফিস-ঘরটায় এসে লীনা করিডোরটার দিকে সভয়ে তাকাল। পুলিশ এসে বসে ঢুলছে।
আমি যাচ্ছি।
আসুন, দরকার হলে যোগাযোগ করবেন।
লীনা করিডোর পার হয়ে লম্বা সিডি ধীর পায়ে ভেঙে নেমে এল।
অত্যন্ত বিবর্ণ মুখে দোলন গাড়িতে বসে আছে।
কী হয়েছে লীনা? তোমাকে এত গম্ভীর দেখাচ্ছে কেন?
লীনা স্টিয়ারিং-এ বসে দুহাতে মুখ ঢাকল। অবরুদ্ধ কান্নাটাকে কিছুতেই আর আটকাতে পারল না।
কাঁদছ কেন? কী হয়েছে।
লীনা জবাব দিল না।
দোলনের একবার ইচ্ছে হল ওর পিঠে হাত রাখে। হাতটা তুলেও আবার সংবরণ করে নিল। মনে হল, কাজটা ঠিক হবে না।
লীনা, কী হয়েছে বলবে না?
প্রাণপণে কান্না গিলতে গিলতে লীনা বলল, তোমাকে একদিন সবই বলব, দোলন। তবে আজ নয়।
কেউ তোমাকে অপমান করেনি তো, লীনা?
লীনা চোখ দুটো রুমালে মুছে নিয়ে বলল, করেছে, ভীষণ অপমান করেছে। কিন্তু আই শ্যাল টিচ হিম এ গুড লেসন।
দোলন একটু চুপ করে থেকে বলল, তুমি যখন ভিতরে গিয়েছিলে তখন এখানেও একটা ঘটনা ঘটেছে।
কী ঘটেছে?
আমি চুপচাপ বসে অপেক্ষা করছিলাম হঠাৎ কাচের শার্শিতে একটা লোক টোকা দিল। আমি সুইচ টিপে দরজাটা একটু যাক করতে লোকটা বলল, ওইখানে এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, আপনাকে একটু ডেকে দিতে বললেন।
সর্বনাশ! তুমি কী করলে?
আমি ভাবলাম নির্ঘাত তুমিই ডাকছ। তাই তাড়াতাড়ি নেমে এগিয়ে গেলাম। দরজাটা বন্ধ করে যাইনি, কারণ খুলতে তো জানি না।
তারপর কী হল?
এদিক-ওদিক খুঁজে তোমাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ফিরে আসছি, হঠাৎ দেখলাম, লোকটা খোলা দরজা দিয়ে গাড়ির মধ্যে ঝুঁকে কী করছে। আমি ছুটে আসতে না আসতেই লোকটা পট করে পালিয়ে গেল।
কোথায় পালাল?
ভিড়ের মধ্যে কোথায় যে মিশে গেল!
কীরকম চেহারা? বলা মুশকিল। মাঝারি হাইট, মাঝারি স্বাস্থ্য। মু
খটা ফেল দেখলে চিনতে পারবে?
একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। ভাল করে লক্ষ করিনি।
উঃ, দোলন! তুমি যে কী ভীষণ ভুলো মনের মানুষ!
দোলন একটু লজ্জা পেয়ে বলল, কিন্তু চুবি করার মতো তো গাড়িতে কিছু ছিল না।
লীনা গাড়ি স্টার্ট দিল। ভিড়াক্রান্ত ধর্মতলা স্ট্রিট এড়িয়ে সূরেন ব্যানার্জি রোড হয়ে ময়দানের ভিতরে নিয়ে এল গাড়ি।
হঠাৎ গাড়ির লুকোনো স্পিকার থেকে পুরুষের সেই কণ্ঠস্বর বলে উঠল, মিরর, মিরর, হোয়াট ড়ু ইউ সি?
লীনা চমকে উঠল, তারপর রিয়ারভিউ আয়নার দিকে তাকাল, কিছুই দেখতে পেল না তেমন। রাজ্যের গাড়ি তাড়া করে আসছে।
পুরুষকণ্ঠ উদাস গলায় একটা বিখ্যাত ইংরেজি কবিতার একখানা ভাঙা লাইন আবৃত্তি করল, দি মিরর ক্র্যাকড ফ্রম সাইড টু সাইড, দি কার্স ইজ আপন মি ক্রাইড দি লেডি অফ শ্যালট…
লীনা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, অসহ্য।
তোমার গাড়ি একটু পাগল আছে, লীনা।
পাগল নয়, শয়তান।
পুরুষকণ্ঠ: কান্ট ইউ ড্রাইভ এ বিট ফাস্টার ডারলিং? ফাস্টার?… টেক ইট লাভ…
মিরর! ড্রাইভ ফাস্টার! এর অর্থ কী? লীনা রিয়ারভিউতে একবার চকিতে দেখে নিল। একখানা মারুতি, দুটো অ্যাম্বাসাডার খুব কাছাকাছি তার পিছনে রয়েছে। তার বাইরে আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। কেউ তাকে অনুসরণ করছে কি? করলেই বা তা গাড়ির ইলেকট্রনিক মগজ কী করে জানতে পারবে?
লীনার মাথা আবার গুলিয়ে গেল। একটা ট্র্যাফিক সিগন্যালে থেমে আবার যখন গাড়ি চালাল সে তখন স্পিড বাড়িয়ে দিল।
দ্যাটস ও কে ডারলিং! ইউ রান সুইট!… ওঃ ইউ আর ড্রাইভিং রিয়াল ফাস্ট ডারলিং! কিপ ইট আপ…
গঙ্গার ধার বরাবর একটু নির্জন জায়গা দেখে গাড়িটা দাড় করাল লীনা। তারপর দোলনের দিকে তাকাল।
দোলন তার দিকেই চেয়ে ছিল। বলল, কী ব্যাপার বলো তো!
লীনা মাথা নাড়ল, কিছু বুঝতে পারছি না।
দোলন চিন্তিত মুখে বলল, একটা কালো মারুতি কিন্তু সেই থেকে আমাদের পিছু নিয়ে এসেছে।
ঠিক দেখেছ?
ঠিকই দেখেছি। কিন্তু এখানে এসে আর সেটাকে দেখতে পাচ্ছি না।
লীনা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, তবু বুঝতে পারছি না। যদি কেউ ফলো করেই থাকে তা হলে গাড়িটা তা বুঝতে পারবে কী করে?
জানি না। এখন চলো, খোলা হাওয়ায় একটু বসি। তোমার খুব বেশি টেনশন যাচ্ছে।
সকালবেলা যখন সিকিউরিটি ব্যারিয়ার পার হচ্ছিলেন ববি রায় তখন সিকিউরিটি চেক নামক প্রহসনটি তার কাছে সময়ের এক নির্বোধ অপচয় বলে মনে হচ্ছিল। বেশ কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে রোম যাওয়ার পথে যখন তাঁদের প্লেনটি আকাশপথে ছিনতাই করে ইজরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও ববি রায় দেখেছিলেন, সিকিউরিটি চেক ব্যাপারটার কত ফাঁক-ফোকর থাকে।
হিথরোর শক্ত বেড়া পার হয়ে চার ইহুদি যুবক সশস্ত্র উঠেছিল প্লেনে। খুব বিনীতভাবেই তারা হাইজ্যাক করেছিল বিমানটি, কোনও বাচালতা নয়, চারজন চার জায়গায় উঠে দাঁড়াল, হাতে উজি সাব-মেশিনগান। কাউকে ভয় দেখাযনি, চেঁচামেচি করেনি, গম্ভীর মুখে শুধু কোন পথে যেতে হবে তা বিমানসেবিকা মারফত জানিয়ে দিয়েছিল পাইলটকে।
নির্দিষ্ট জায়গায় প্লেন নামল। চার ইহুদি যুবক কোনও অন্যায় দাবি দাওয়া করল না। শুধু একজন যাত্রীকে প্লেন থেকে নামিয়ে নিয়ে প্লেনটিকে মুক্তি দিয়ে দিল। সেই যাত্রী ছিলেন ববি রায়।
সেই থেকে প্লেনে ওঠার সময় প্রতিবার সিকিউরিটি চেক-এর সময় তাঁর হাসি পায়।
আজ যখন সিকিউরিটির অফিসার তার অ্যাটাচি কেসটা খুলে দেখেটেখে ছেড়ে দিচ্ছিল, তখন ববি রায় তাকে খুব সহৃদয়ভাবে বললেন, ওর লুকোনো একটা চেম্বার আছে, সেটা দেখলেন না?
অফিসার হাঁ, লুকনো চেম্বার?
ববি রায় অ্যাটাচি কেসটা নিজের কাছে টেনে এনে হাতলের কাছ বরাবর একটা বোতামে চাপ দিয়ে তলাটা আলগা করে দেখালেন।
অফিসার আমতা-আমতা করে বলল, কী আছে এতে?
বলি রায় একটা চকোলেট বার করে দেখালেন, নিতান্তই একটা চকোলেট বার, তবে ইচ্ছে করলে ডিজম্যান্টল করা সাব-মেশিনগান বা লিভলবার বা গ্রেনেড অনায়াসে নেওয়া যায়। হয়তো কেউ নিয়েছে, হয়তো রোজই নেয়।
অফিসার খুবই বিপন্ন মুখে চেয়ে থেকে বলল, অ্যাঁ মানে— আচ্ছা, আমরা এর পর থেকে আরও সাবধান হন।
বিরক্ত বরি বা অ্যাটাচিটা ছেড়ে দিলেন। শরীর যখন সার্চ করা হল তখন তিনি অত্যন্ত বিরক্তি সঙ্গে লক্ষ করলেন, এরা তার জুতোজোড়া লক্ষই করল না।
ভালই হল। জুতোর নকন হিল-এর মধ্যে রয়েছে পৌনে চার ইঞ্চি মাপের একটা লিলিপুট পিস্তল। দুটো অতিরিক্ত গুলির ম্যাগাজিন।
লাউঞ্জে বসে খবরের কাগজে মুখ ঢেকে বলি রায় যাত্রীদের লক্ষ করতে লাগলেন। তাকে যে আগাগোড়া অনুসরণ করা এবং নজরে রাখা হয়েছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই বলি রায়ের। যারা তাঁকে নজরে রাখছে, তারা নিতান্তই খুনে। এদের কোনও স্বাজাত্যভিমান বা দেশপ্রেম নেই, ভাড়াটে খুনে মাত্র। এরা হয়তো ববি রায়কে বাগে পাওয়ার জন্য একটা প্লেনকে হাইজ্যাক করবে না। কিন্তু সাবধানের মার নেই।
যাত্রীদের সংখ্যা অনেক। সকলকে সমানভাবে লক্ষ করা সম্ভব নয়। গোটা লাউঞ্জটাকে কয়েকটা কাল্পনিক জোন-এ ভাগ করে নিলেন ববি। তারপর জোন ধরে ধরে লোকগুলোকে লক্ষ করে যেতে লাগলেন।
প্রায় আধঘণ্টা পর দুটো লোককে চিহ্নিত করলেন ববি রায়। দুজনেই শীতের জ্যাকেট পরেছে। পরনে চাপা ট্রাউজার। কাঁধে একজনের স্যাচেল ব্যাগ। অন্যজনের হাতে একটা ডাক্তারি কেস।
লোকদুটো তার দিকে একবারও তাকায়নি।
প্লেনে ওঠার সময় বলি বা লোকদুটির পিছনে রইলেন। কোথায় বসে, তা দেখতে হবে।
বিশাল এয়ারবাসে কোনও লোকের হদিশ ল’খা খুবই শক্ত। তার ওপর আজকাল প্লেনে ফার্স ক্লাস তার অর্ডিনারি ক্লাস তালাদা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ববি রায়ের টিকিট কোর্স ক্লাসের। নিজের প্রকোষ্ঠে ঢুকবার আগে ববি রায় হোঁচট খাওয়ার ভান করে একটু সময় নিলেন। লোক দুটো প্লেনের বাঁ ধারে পনেরো নম্বর রো-র জানালার দিকের সিট নিয়েছে বলে মনে হল।
ববি রায় উদ্বিগ্ন হলেন না। এর আগেও বহুবার তিনি বিপদে পড়েছেন। একাধিকবার তাকে মৃত্যুর সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে হয়েছে। প্যারিসে এক টেররিস্ট দলের জন্য একবার তাকে আগুনে-বোমাও বানিয়ে দিতে হয়েছিল পিস্তলের মুখে বসে। ছেলেগুলো খুবই বোকা, তারা বুঝতে পারেনি, বোমা তৈরি হয়ে গেলে সেটা বলি বা তাদের ওপরই ব্যবহার করতে পারেন।
এক কাপ কফি খেয়ে ববি রায় বোম্বে পর্যন্ত টানা ঘুমোলো। সকালের ফ্লাইট ধরতে সেই মাঝরাতে উঠে পড়তে হয়েছে।
এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল অবধি কোনও ঘটনা ঘটবে না, এটা ববি রায় জানতেন। ট্যাক্সিতে ববি এত জুতোর ফাঁপা হিল থেকে লিলিপুটটাকে বের করে পকেটে রাখলেন।
একবার আন্তর্জাতিক বিমানে উঠে পড়লে তার অনুসরণকারীরা বোধহয় তার নাগাল পাবে না। যা কিছু তারা করে প্লেনে ওঠার আগেই। ফাইভ স্টার হোটেলের নির্জন সুইট এসব কাজের পক্ষে খুবই উপযোগী সন্দেহ নেই।
ববি রায় তাঁর নির্দিষ্ট হোটেলে আগে থেকে বুক করা ঘরে চেক-ইন করলেন। গরম জলে ভাল করে স্নান করালে, ব্রেকফাস্ট খেলেন। খবরের কাগজে চোখ বোলালেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ সমূদ্রও দেখলেন। সবচেয়ে বেশি লক্ষ করলেন, নীচের ব্যালকনিটায় কেউ নেই।
তারপর খুব ধীরে-সুস্থে পোশাক পরলেন। অ্যাটাচি কেস ছাড়া তাঁর সঙ্গে কোনও মালপত্র নেই। দরকারও হয় না। প্যারিসে তার একটা অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সবই আছে সেখানে।
কিন্তু এই অ্যাটাচি কেসটা নিয়ে বেরোলে অনুসরণকারীদের সন্দেহ হতে পারে যে তিনি হোটেল ছেড়ে পালাচ্ছেন। ববি রায়ের যতদূর ধারণা, তার অনুসরণকারীরা এই ফ্লোরে ঘর নিয়েছে। অপেক্ষা করছে। লক্ষ রাখছে।
কলিংবেল টিপে বেয়ারাকে ডাকলেন ববি।
আমার দুই বন্ধুর এই হোটেলে চেক-ইন করার কথা। কেউ কি করেছে এর মধ্যে?
বেয়ারা মাথা নাড়ল, দু’জন সাহেব পঁচিশ নম্বর ঘরে এসেছেন। মিস্টার মেহেরা আর মিস্টার সিং।
ববি রায় উজ্জ্বল হয়ে বললেন, ওরাই, ঠিক আছে।
কোনও খবর দিতে হবে, স্যার?
না। আমি নিজেই যাচ্ছি।
বেয়ারা চলে গেলে ববি রায় উঠে আটাচি কেসটা খুলে আর-একটা গুপ্ত প্রকোষ্ঠ থেকে খুব সরু নাইলনের দড়ি বের করলেন। অ্যাটাচি কেসটা দডিতে ঝুলিয়ে ব্যালকনি থেকে খুব সাবধানে নামিয়ে দিলেন নীচের ব্যালকনিতে।
তারপর শিস দিতে দিতে দরজা খুলে বেরোলেন। পচিশ নম্বর ডানদিকে, সিঁড়ির মুখেই। ববি জানেন।
পঁচিশ নম্বরের দরজাটা যে সামান্য ফাঁক তা লক্ষ কবলেন ববি রায়। ভাল, খুব ভাল। ওরা দেখছে, ববি রায় খালি হাতে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং এখনই পিছু নেওয়ার দরকার নেই। শিকারকে তত ফিরে আসতেই হবে।
লিফটের মুখে দাঁড়িয়ে তবু ববি আয়ের শিরশির করছিল। যদি এইসব রাফ স্বভাবের খুনি সাইলেন্সার লাগানো রিভলবার চালায় এখন?
না, অত মোটা দাগের কাজ করবে না। করিডোরে ব্যস্ত বেয়ারদের আনাগোনা রয়েছে। ওরা অপেক্ষা করবে।
লিফটে ঢুকে ববি রায় নীচের তলার পূহঁচ টিপলেন, লিট থামতেই চকিত পায়ে নেমে পড়লেন। পকেট থেকে একটা স্কেলিটন চাবি বের করে একটা স্যুইটের দরজা খুলে ঢুকে পড়লেন।
এবং তারপরই বজ্রাহতের মতো দাঁড়িয়ে পড়তে হল তাকে। ঘরে লোক আছে। বাথরুমে জলের শব্দ হচ্ছে। শোওয়ার ঘর থেকে কথাবার্তার শব্দ আসছে। অথচ বারান্দায় তার অ্যাটাচি কেস। কিন্তু ভাববার সময় নেই। ববি রায় সাবধানে শাওয়ার ঘরের দরজাটা সামান্য খুললেন।
ঘুম জড়ানো গলায় এক বাপ তার ছেলের সঙ্গে কড়া ভাষায় কথা বলছে।
ববি রায় দরজায় নক করলেন।
হু ইজ ইট?
হোটেল ইন্সপেক্টর, স্যার। ইজ এভরিথিং ক্লিন?
ইয়াঃ।
লেট মি সি স্যার? মে আই কাম ইন?
কাম ইন।
ববি রায় ঘরে ঢুকলেন। চারদিকটা দেখলেন, ব্যালকনিতে গিয়ে দ্রুত দড়িটা খুলে পকেটে রাখলেন। অ্যাটাচি কেসটা তুলে নিয়ে চলে এলেন।
ইটস ওকে, স্যার। থ্যাংক ইউ।
অঃ রাইট।
ববি রায় বেরিয়ে এলেন। সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলেন নাচে। হোটেলের বাইরে এসে ট্যাক্সি ধরলেন।
হোটেলের বিলটা দেওয়া হল না। সেটা পরে পাঠালেও চলবে। আপাতত ভিন্ন একটা নিরাপদ আশ্রয় দরকার।
থ্রি স্টার একটা হোটেলে এসে উঠলেন ববি রায়। একটু ভিড় বেশি। তা হলেও অসুবিধে কিছু নেই। তিনি সব অবস্থায় মানিয়ে নিতে পারেন।
দরজা লক করে ববি রায় পোশাক ছাড়লেন। তারপর ঘুমোলেন দুপুর অবধি।
ধীরেসুস্থে লাঞ্চ খেলেন হোটেলের রেস্তোরাঁয়, ভ্রু কুঁচকে একটু ভাবলেন। তিনি কি নিরাপদ? তিনি কি সম্পূর্ণ নিরাপদ? তা হলে একটা অস্বস্তি হচ্ছে কেন?
ববি রায় বিশাল রেস্তোরার চারদিকে একবার হেলাভরে চোখ বুলিয়ে নিলেন।
তারপর আবার যথেষ্ট ক্ষুধার্তের মতোই খেতে লাগলেন নিশ্চিন্তে।
না, ববি রায় তাঁর দু’জন অনুসরণকারীকে বোকা বানালেও সব বিপদ ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। বোধ হয় ফাইভ স্টার হোটেলের লবিতে ওদের লোক ছিল। হদিশ পেয়েছে।
বাঁ দিকে চারটে টেবিলের দূরত্বে বসে আছে দুজন। সেই দু’জন।