০৫. দুপুর থেকেই বরফ-বৃষ্টি

দুপুর থেকেই বরফ-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখানে বৃষ্টি মানেই বরফাবৃষ্টি, তবে এক-এক সময় খুব নরম, পাতলা পেজ-তুলোর মতন তুষারপাত হয়, তার মধ্য দিয়ে হাঁটতে বেশ আরাম লাগে, তাতে গা ভেজে না। আর এক-এক সময় তুষারপাতে আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়, চার-পাঁচ হাত দুরের কোনও জিনিসও দেখা যায় না। সেই রকম বৃষ্টির মধ্যে হাঁটাচলা করাও অসম্ভব।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করার পর থেকেই সন্তু গম্বুজের মধ্যে শুয়ে আছে। দিনের বেলাতেও এই গম্বুজের মধ্যে আলো খুব কম ঢোকে, তাই ব্যাটারি-লণ্ঠনটা জেলে রাখতে হয়। সেই আলোতে কাকাবাবু তাঁর কালো রঙের খাতাটিতে খসখস করে কী সব লিখে চলেছেন।

মাঝখানে কাঠের বাক্সের ছোট টেবিলটিতে রাখা সেই চৌকো কাচের বাক্সটি, তার মধ্যে ভেলভেটের ওপর সাজানো সেই দাঁতের মতন জিনিসটা। সেটা দাঁত হতে পারে না। মানুষের দাঁতের মতনই আকৃতি, কিন্তু যে-কোনও মানুষের দাঁতের চেয়ে বোধহয় ছ। গুণ বড়! প্রায় দু ইঞ্চি। মানুষ ছাড়া এরকম দাঁত অন্য কোনও প্রাণীর হয় না, আবার কোনও মানুষেরই এত বড় দাঁত হতে পারে না।

জুতোর দোকানের বাইরে এক-এক সময় একটা বিরাট ঢাউস জুতো সাজিয়ে রাখা হয়। মনে হয়, সেই জুতো কোনও মানুষের জন্য নয়, দৈত্যদের জন্য তৈরি। সেই রকম এই দাঁতটাও নিশ্চয়ই কেউ মজা করে বানিয়েছে।

সেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে সন্তুর অনেক সময় মনে হয়, জিনিসটার যেন রং বদলায়। কখনও মনে হয়, সেটা বেশ হলদেটে, কখনও মনে হয় ফুটফুটে সাদা, আবার, এক-এক সময় একটু লালচে ভাবও আসে যেন। সত্যিই কি রং বদলায়, না। ওটা সন্তুর চোখের ভুল?

কাকাবাবু লেখা থামিয়ে পাইপ ধরাতে যেতেই সন্তু বলল, কাকাবাবু, তুমি দাঁতটার কথা বলবে বলেছিলে?

কাকাবাবু বললেন, আর বুঝি কৌতূহল চেপে রাখতে পারছিস না? ভেবেছিলাম, তোকে আরও কয়েকদিন পরে বলব! আচ্ছা শোনা তা হলে?

পাইপে কয়েকবার টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, এটা দেখে তোর কী মনে হয়? এটা মানুষের দাঁত?

সন্তু একবার বলল, হ্যাঁ। তারপর বলল, না!

কাকাবাবু বললেন, পৃথিবীর বড় বড় বৈজ্ঞানিকরাও, ঠিক তোরই মতন, কেউ বলেছেন, এটা মানুষের দাঁত। কেউ বলেছেন, তা হতেই পারে না! এটা নিয়ে অনেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হয়েছে। সে-সব কথা বলবার আগে, একজন লোকের কথা বলা দরকার। তাঁর নাম রালফ ফন কোয়েনিংসওয়ান্ড। ইনি থাকতেন নেদারল্যান্ডসে, কিন্তু এর একটা শখ ছিল, যে-সব জীবজন্তু পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে গেছে, তাদের নিয়ে গবেষণা করা। সেই জন্য তিনি পৃথিবীর বহু জায়গা ঘুরেছিলেন। আমাদের ভারতবর্ষেও তিনি এসেছেন, চীনেও গেছেন। চীন দেশে, পিকিং শহরের রাস্তায়-

সন্তু বাধা দিয়ে বলল, এখন সেই শহরটার নাম বেইজিং!

কাকাবাবু সন্তুর চোখের দিকে তাকিয়ে একটুক্ষণ থেমে রইলেন। তাঁর কথার মাঝখানে তিনি অন্য কারুর কথা বলা পছন্দ করেন না।

সন্তু তা বুঝতে পেরে অপরাধীর মতন মুখ করল।

কাকাবাবু বললেন, আচ্ছ বেশ, এখন নাম বেইজিং। যখনকার কথা বলছি, তখন ১৯৩০ সাল, সেই সময় সবাই পিকিং-ই বলত। সে সময় ঐ পিকিং শহরের রাস্তায় একদল লোক নানারকম অদ্ভুত জিনিস বিক্রি করত। এরকম আমাদের দেশের রাস্তায়ও এখনও দেখা যায়। ফুটপাথে একটা কাপড় বিছিয়ে তার ওপর নানা রকম জীবজন্তুর হাড়, কঙ্কাল, ধনেশ পাখির ঠোঁট, এই সব বিক্রি করে। রালফ ফন কোয়েনিংসওয়ান্ড পিকিংয়ের রাস্তায় এক ফেরিওয়ালার কাছে নানারকম হাড় ও পাখির পালকের সঙ্গে এই রকম তিনটি দাঁত দেখতে পেলেন। দেখে তো তিনি স্তম্ভিত! এত বড় মানুষের দাঁত? ফেরিওয়ালাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই দাঁতগুলো কোথায় সে পেয়েছে? সে ঠিক উত্তর দিতে পারে না। সে খালি বলে, পাহাড় থেকে! কোয়েনিংসওয়ান্ড খুব কম দামে দাঁত তিনটি কিনে নিলেন।

সন্তু বলল, কাকাবাবু, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

কী?

ফেরিওয়ালারা ঐ টুকরো-টুকরো হাড় আর কঙ্কাল বিক্রি করে কেন? ওগুলো কাদের কাজে লাগে? ডাক্তারি ছাত্রদের?

হ্যাঁ। ডাক্তারি ছাত্রদেরও কাজে লাগতে পারে। তা ছাড়া, অনেক লোকের ধারণা, সে সময় চীনাদের খুবই বিশ্বাস ছিল যে, এই সব জিনিস গুঁড়ো করে খেলে অনেক রোগ সেরে যায়। কেউ-কেউ আবার বিশ্বাস করত যে, পুরনো দিনের শক্তিশালী প্ৰাণীদের হাড় গুঁড়ো করে খেলে শরীরের তেজ বাড়ে। এখনও যেমন অনেকের ধারণা, গণ্ডারের শিং খেলে শরীরে দারুণ তেজ হয়।

গণ্ডারের শিং মানুষে খায়?

হ্যাঁ। সেইজন্যই তো লুকিয়ে-লুকিয়ে গণ্ডার মারা হয়। গণ্ডার মারা এখন আইনে নিষেধ। তবু কিছু লোক লুকিয়ে-লুকিয়ে গণ্ডার মেরে তার শিংটা আরব শেখদের কাছে বিক্রি করে। এক-একটা শিং-এর দাম তিরিশ-চল্লিশ হাজার। আরবরা ঐ শিং কাঁচা-কাঁচাই খেয়ে ফেলে!

তারপর কোয়েনওয়ান্ড কী করলেন?

কোয়েনওয়ান্ড নয়, কোয়েনিংসওয়ান্ড। তিনি তারপর খোঁজ করে দেখলেন পিকিং, হংকং, জাভা, সুমাত্রা, বাটাভিয়ার অনেক ওষুধের দোকানেই এরকম দাঁত বিক্রি হয়। সেগুলোও বেশ বড় বড়, কিন্তু ঐ তিনটির মতন অতি বড় নয়। লোকের দাঁতের অসুখ হলে ঐ দাঁত কিনে গুঁড়ো করে সেই গুঁড়ো দিয়ে দাঁত মাজে, তাতেই সব অসুখ সেরে যায়। এত বড় বড় দাঁত কোন প্রাণীর, আর কোথায় এগুলো পাওয়া যায়, সেই খোঁজ-খবর নিতে শুরু করলেন কোয়েনিংসওয়ান্ড। অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তিনি দেখলেন যে, ঐ দাঁতগুলোর গোড়ায় একটু যেন হলদে হলদে ধুলো লেগে আছে। সেই ধুলো নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন, সেই রকম হলদে রঙের মাটি আছে। ইয়াংসি নদীর ধারে পাহাড়ের কোনও-কোনও গুহায়। তখন তিনি ভাবলেন, ঐ দাঁতওয়ালা প্ৰাণীরা নিশ্চয়ই তাহলে এক সময় ঐ ইয়াংসি নদীর ধারের পাহাড়ের গুহাতেই থাকত। ঐগুলি যদি মানুষের দাঁত হয়, তাহলে সেই মানুষগুলো অন্তত কুড়ি-পঁচিশ ফুট লম্বা হওয়া উচিত। কিন্তু অত বড় লম্বা মানুষের কথা কক্ষনো শোনা যায়নি, প্রাগৈতিহাসিক কালেও মানুষের মতন কোনও প্রাণী অত লম্বা ছিল না। যাই হোক, কোয়েনিংসওয়ান্ড সেই দাঁতওয়ালা কাল্পনিক প্ৰাণীদের নাম দিলেন জাইগ্যান্টোপিথিকাস। অথাৎ দৈত্যের মতন বন-মানুষ। পৃথিবীর অনেক বৈজ্ঞানিকই কিন্তু তাঁর কথা বিশ্বাস করলেন না।

একটু থেমে কাকাবাবুপাইপ টানতে লাগলেন।

তারপর আবার বললেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন কোয়েনিংসওয়ান্ড জাভায় ছিলেন। তিনি বন্দী হলেন জাপানিদের হাতে। তাঁকে আটকে রাখা হল একটা ব্যারাকে, তাঁর জিনিসপত্র সব কেড়ে নেওয়া হল। সেখানে থাকতে-থাকতে রোগ হয়ে গেলেন তিনি, মাথার চুলগুলো সব সাদা হয়ে গেল, অনেকেরই ধারণা হল তিনি আর বেশিদিন বাঁচবেন না। তাই যুদ্ধ শেষ হবার কিছুদিন আগেই ছেড়ে দেওয়া হল তাঁকে। কেউ ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করতে পারেনি যে, তিনি তাঁর কোমরে একটা ছোট্ট থলির মধ্যে বেঁধে সৰ্বক্ষণ নিজের কাছে রাখতেন কিছু মহামূল্যবান জিনিস। সে জিনিসগুলো আর কিছু নয়, ঐ তিনটে দাঁত।

ছাড়া পাবার পর কোয়েনিংসওয়ান্ড নানা দেশ ঘুরতে ঘুরতে এলেন আমেরিকায়। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ক্লাবে একদিন দুপুরে তিনি কয়েকজন অধ্যাপকের সঙ্গে খেতে বসেছিলেন, কথায়-কথায় প্রাচীনকালের মানুষদের প্রসঙ্গ উঠল। একজন অধ্যাপক ঠাট্টা করে বললেন, মিঃ কোয়েনিংসওয়াল্ড, আপনি সেই জাইগ্যান্টোপিথিকসের খবর রটিয়ে দিয়ে আমাদের খুব চমকে দিয়েছিলেন। দু ইঞ্চি লম্বা দাঁত মানুষের মতন কোনও প্রাণীর হতে পারে? তা হলে তার মুখখানা কত বড় হবে?

বুড়ো কোয়েনিংসওয়ান্ড এই কথা শুনে দারুণ চটে গেলেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, কী, হয় না? দেখবেন? প্রমাণ চান? তা হলে দেখুন।

সামনেই খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এক পরিচারিকা। কোয়েনিংসওয়ান্ড কোমর থেকে সেই ছোট্ট থলিটা বার করে দাঁত তিনটে সেই খাবারের প্লেটের ওপর ফেলে দিয়ে বললেন, এগুলো তা হলে কী?

অত বড় বড় দাঁত দেখে সেই পরিচারিকাটি ও মাগো! বলে চিৎকার করে উঠল, তার হাত থেকে প্লেটটা পড়ে গিয়ে ঝন ঝন শব্দে ভেঙে গেল। পরিচারিকাটি সঙ্গে-সঙ্গে অজ্ঞান। ছুটে এল আরও অনেক লোক। দাঁত তিনটেও ছিটকে কোথায় চলে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে দুটো দাঁত পাওয়া গেল, একটা আর পাওয়া গেল না কিছুতেই। সেখানকার সব চেয়ার, সোফা, মেঝের কাপোর্ট উল্টেপাল্টে দেখা হল, কিন্তু একটা দাঁত যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। হঠাৎ। দাঁতের শোকে বুড়ো কোয়েনিংসওয়ান্ড কাঁদতে লাগলেন শিশুর মতন। তারপর বেশিদিন আর তিনি বাঁচেনওনি।

সন্তু আঙুল দিয়ে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, এইটাই কি সেই তৃতীয় দাঁত?

কাকাবাবু হেসে বললেন, তোর বুদ্ধি আছে দেখছি। ঠিক ধরেছিস! হাঁ, এটাই সেই তৃতীয় দাঁতটা। অন্য দুটো দাঁতের একটা আছে আমেরিকার মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে। আর-একটা দাঁত কোয়েনিংসওয়ান্ড নিজেই তাঁর মৃত্যুর আগে দিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু মাইকেল শিপটনকে। তাঁর ধারণা ছিল, ঐ দাঁত মানুষের সৌভাগ্য এনে দেয়। ঐ দাঁত সঙ্গে ছিল বলেই জাপানিরা তাঁকে মারেনি। তৃতীয় দাঁতটা ঐ হাভার্ড ক্লাবের এক পরিচারক চুরি করে। গোলমালের মধ্যে সে সেটা সরিয়ে ফেলেছিল চটপট। অনেকদিন পরে সে সেটা বিক্রি করেছিল স্যার আথরি রকবটম নামে এক বৈজ্ঞানিকের কাছে। গতবার বিলেতে গিয়ে আমি স্যার আথারের ছেলে লেননের কাছ থেকে এই দাঁতটা ধার করে এনেছি। লেনন আমার অনেকদিনের বন্ধু।

সন্তুর কাছে এখনও সব কিছু পরিষ্কার হল না। তাহলে এই দাঁতটা কিসের? দাঁতটা পাওয়া গিয়েছিল পিকিংয়ে, এখন সেটাকে নিয়ে এই নেপালে আসার মানে কী?

সে জিজ্ঞেস করল, এই দাঁতটা তাহলে কি ইয়েতির, কাকাবাবু?

কাকাবাবু বললেন, ইয়েতি বলে কিছু আছে নাকি? তুই ইয়েতি সম্পর্কে কী জানিস?

হিমালয়ের এই রকম উঁচু জায়গায় বরফের মধ্যে একরকম মানুষ থাকে, তারা খুব হিংস্ৰ—

কেউ তাদের দেখেছে?

অনেকেই তো দেখেছে বলে। অবশ্য কেউ তাদের ছবি তুলতে পারেনি। আমার মনে হয় এখানে ইয়েতি আছে, কারণ শেরপা নোরবু ভাই বাচ্চা ইয়েতির মূর্তি বানাচ্ছিল।

তাই নাকি? দেখতে হবে তো। তুই লক্ষ করেছিস, সেই মূর্তির পায়ে কটা আঙুল?

তা তো দেখিনি। কেন?

সব জিনিস ভাল করে লক্ষ করতে হয়। ইয়েতির যে-সব পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়, সেই সব ছাপগুলোতেই কিন্তু পায়ের আঙুল মোটে চারটে। মানুষ তো দূরের কথা, গোরিলা কিংবা শিম্পাঞ্জিদেরও পায়ে পাঁচটা আঙুল থাকে। পায়ের চারটি আঙুলওয়ালা মানুষের মতন কোনও প্ৰাণীর কথা কল্পনাও করা যায় না!

সন্তু চুপ করে গেল। এতখানি সে জানত না।

কাকাবাবু আবার বললেন, যদি ইয়েতি নামে বাঁদর বা ভালুক জাতীয় কোনও প্রাণী থাকেও, সেগুলোও কিন্তু ছ। সাত ফুটের চেয়ে লম্বা নয়। যারা ইয়েতি দেখেছে বলে দাবি করে, তারাও কেউ বলেনি যে, ইয়েতি খুব লম্বা প্রাণী। সুতরাং এতবড় দাঁত ইয়েতির হতে পারে না।

তাহলে?

মহাভারতের ঘটোৎকচের কথা মনে আছে? সে এত লম্বা ছিল যে, কর্ণের বাণে সে যখন মারা যায়, তখন তার দেহের চাপেই মরে গিয়েছিল অনেক কৌরব-সৈন্য! রামায়ণ-মহাভারত পড়লে মনে হয়, এক সময় বনেজঙ্গলে কিছু খুব লম্বা জাতের মানুষ থাকত, তাদের বলা হত রাক্ষস। হয়তো সেই রকম এক-আধটা রাক্ষস এখনও রয়ে গেছে!

এখনও?

স্যার আর্থর রকবটম। এই দাঁতটা নিয়ে মাইক্রো-কার্বন পরীক্ষা করেছেন। তাঁর মতে, এটা দেড়শো-দুশো বছরের বেশি পুরনো নয়। অথাৎ এই দাঁত যার মুখে ছিল, সে দেড়শো-দুশো বছর আগেও বেঁচে ছিল। স্যার আথারের মতে, এরা কোনও আলাদা জাতের প্রাণী নয়। সাধারণ মানুষই এক-দুজন হঠাৎ খুব লম্বা হয়ে যেতে পারে, যদি তাদের থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের গোলমাল দেখা দেয়।

আমরা সেইরকম কোনও লোককে খুঁজতে এসেছি এখানে?

না।

তবে?

আসল কারণটা এখন তোকে বলা যাবে না। যতক্ষণ না ঠিকমতন প্রমাণ পাচ্ছি, ততক্ষণ বলার কোনও মানে হয় না। তবে, আর-একটা কারণ আছে। তোকে বললাম না, বুড়ো কোয়েনিংসওয়ান্ড মৃত্যুর আগে একটা দাঁত দিয়ে যান তাঁর বন্ধু মাইকেল শিপটনকে। এই মাইকেল শিপটনের এক ছেলের নাম কেইন শিপটন। তুই তার নাম শুনেছিস?

না।

অনেকেই তার নাম জানে। বিখ্যাত অভিযাত্রী। বছর দুএক আগে সব খবরের কাগজে কেইন শিপটনকে নিয়ে খুব লেখালেখি হয়েছিল। কেইন শিপটন একটা ছোট দল নিয়ে এসেছিল। এভারেস্ট অভিযানে। এই গম্বুজটার কাছেই তারা তাঁবু ফেলেছিল। তারপর একদিন সন্ধেবেলা কেইন শিপটন এখান থেকে মাত্র দুশো তিনশো গজ দূরের মধ্যে বেড়াতে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। তন্ন-তন্ন করে তাকে খোঁজা হয়েছে, তার মৃতদেহের কোনও সন্ধানই মেলেনি, এই দ্যাখ কেইন শিপটনের ছবি।

কাকাবাবু কালো খাতাটার ভেতর থেকে একটা ছবি দেখালেন সন্তুকে। খবরের কাগজ থেকে কাটা ছবি। একজন ত্রিশ-বত্ৰিশ বছরের সাহেব, মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ, তার গলায় হারের মতন কী যেন একটা ঝুলছে।

কাকাবাবু সেখানে আঙুল রেখে বললেন, এই হারের একটা লকেটে কেইন শিপটন সব সময় রেখে দিত। তার বাবার বন্ধুর দেওয়া দাঁতটা। সে ঐ দাঁতটাকে মনে করত। সত্যিই একটা সৌভাগ্যের চিহ্ন। কিন্তু ঐ দাঁতটা বুকে ঝুলিয়ে এখানে এসেছিল বলেই বোধহয় কেইন শিপটনের প্রাণ গেল!