০৫.
খুব তাড়াতাড়ি চার্লস তার টাইপ শেষ করল। যখন টাইপ মেশিন থেকে সমস্ত কাগজ বের করে মেশিনে চাপা দিল তখন ঘড়িতে বাজে ঠিক দশটা।
রিক ভেবেছিল চার্লস আরও সময় নেবে। কম করে রাত এগারোটা হবে। কিন্তু তা হল না, রিকের অন্তরের সব সুপ্ত বাসনা যেন ভণ্ডুল হয়ে যাচ্ছে।
রিক টাইপ করা পাতাগুলো নিয়ে চোখ বোলাতে শুরু করল। বলল, চমৎকার হয়েছে। তবে এই মেশিনেও কিছু গণ্ডগোল আছে তা স্পষ্ট।এ আর এন অক্ষর দুটো মোটা পড়ছে আর এস টা একটু বাঁকা হয়ে পড়েছে তবে পড়তে কোনও অসুবিধা হবে বলে মনে হচ্ছে না।
রিকের কোনও কথাই চার্লসের কানে ঢুকছে না। সে মেমোরেন্ডামগুলো ঠিকমতো গুছিয়ে ড্রয়ারে রাখতে ব্যস্ত।
রিক বলল, আচ্ছা দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডটা আমাকে একবার দেখতে দেবে না?
চার্লস ড্রয়ারে তালা দিতে দিতে বলল, এই জিনিসগুলো নিয়ে বেশী নাড়াচাড়া না করাই ভালো। এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। আমাদের যতটা প্রয়োজন ততটা দেখব। তার বেশী দেখার দরকার নেই।
রিক যেন নিশ্চিন্ত হলো, সে একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলল, যা চার্লস তাহলে তাকে সন্দেহ করছে না। কিন্তু একটা কথা মনে হতেই সে ভয় পেয়ে গুটিয়ে গেল। যদি তার অজান্তে ড্রয়ারে আঙ্গুলের ছাপ পড়ে যায়!
চার্লস একটু গুছিয়ে নিয়ে রিককে বলল, হোলজাইমারকে ফোন করো।
রিকের মাথা সেই চিন্তায় যেন কিলবিল করছে।কিছুতেই সে আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। নিজেকে নিজে সে বোকা ভাবছে। ইসকী বোকার মত কাজ করলাম, কেটির ফ্ল্যাটে আমার গ্লাভস রয়েছে। চার্লস চলে গেলে সে অনায়াসে সেগুলো আনতে পারত। মিশচার যখন শুনবে তার এই বোকামিকে সে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবে না। সিক্রেট এজেন্টদের সবসময় সতর্ক থাকতে হয় তা সে তিক্ততার সঙ্গে তাকে স্মরণ করাবে।
চার্লসের কথায় রিক একটু যেন চমকে উঠল। নাও নাও দেরী করো না হোলজাইমারকে ফোন করো। তুমি তো বলেছিলে সে আমাদের জন্য রাত দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তা ঠিক সময়েই ত ফোন করা হচ্ছে।
রিক অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু সে চাইছিল না এক্ষুনি হৈ চৈ হোক। রিক চাইছে মাইক্রোফিলমটা চুপিচুপি রাশিয়ায় বিনা ঝাটে পৌঁছে যাক। তারপর প্রথম খণ্ডটা প্রকাশ করতে। কারণ প্রথম খণ্ড প্রকাশ পেলেই, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডদুটো নিয়ে আলোচনা হতে থাকবে তখন মাইক্রোফিল্ম রাশিয়ায় পাঠানো মুশকিল হয়ে যাবে। তাই সে চার্লসকে একটু বোঝাতে চাইল।
রিক রিসিভার থেকে হাত নামিয়ে বলল, চার্লস বলছিলাম কী, আজ রাত হয়ে গেছে। হোলজাইমারকে তার অফিসে নাও পাওয়া যেতে পারে। কাল বরং ফোন করলে হয় না?
চার্লস গোলাবারুদের মত ফেটে পড়ল, কখনো না। তোমার এই কুঁডেমীপনা আমার একদম পছন্দ নয়। কাল রবিবার আমাকে যে ভাবেই হোক একবার শ্যানডন হাউসে গিয়ে ফাইলটা রেখে আসতে হবে। আমি এত ঝামলা সামলাতে পারবো না। নাও হোলজাইমারকে ফোন লাগাও। শেষের কথাগুলো চালর্স রিককে অনেকটা হুকুমের সুরে বলল।
রিক আর কিছু বাহানা দিতে পারল না। তাকে অগত্যা হোলজাইমারকে ডায়াল করতে হলো। রিক ভেবেছিল হোলজাইমারকে হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু না ও ব্যাটাও ঠিক বসে আছে। অবশেষে রিককে কথা বলতে হল।
রিক ফোনে হোলজাইমারের সঙ্গে কথা বলার আগে চার্লস তাকে কতকগুলো নির্দেশ দিয়ে দিল। বলল, ওকে এখানে আসতে বলবে না, বলবে কেটির ফ্ল্যাটে আসতে।
রিক জিজ্ঞাসা করল–কেন?
চার্লস বলল, কোনো প্রশ্ন কোরো না। যা বলছি শুধু তাই কর।
রিক বলল, কিছু বুঝতে পারছি না, কেটির ফ্ল্যাটে কেন?
চার্লস বলল অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে, ওহো এই সাধারণ কারণটুকু বুঝতে তোমার এত দেরী হবে ভাবতে পারছি না। আমাদের ফ্ল্যাটে এলে সে আমাদের পরিচিতি জেনে যাবে না?
রিক একটু বোকার ভান করে বলল, এবার বুঝেছি। আচ্ছাচার্লস হোলজাইমারের সঙ্গে তোমার সরাসরি দেখা হওয়াটা কী ঠিক হবে?
চার্লস বলল, হবে হবে। সে ব্যবস্থা আমি ভেবে রেখেছি ঘরের আলো নিভিয়ে রাখবো। শুধু টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে রাখবো। তাছাড়া আমাকে হোলজাইমারের সঙ্গে সামনা সামনি কথা বলতে হবে। তাকে বলতে হবে কোনও ভাবেই যেন শ্যানডন হাউসের নাম প্রকাশ না পায়।
রিক বলল–কিন্তু ও যদি তোমার নাম জানতে চায়?
চার্লস বলল, জানতে চাইলেও তুমি কোনও মতেই নাম জানাবে না। শুধু বলবে যে শ্যানডন হাউসে আমার যাতায়াত আছে, ব্যস্।
রিক বলল, বুঝেছি তুমি এক ঢিলে দুই পাখী মারতে চাইছ। কেটির ফ্ল্যাটে হোলজাইমার এলে ও শুধু কেটির নাম জানবে আর সেই ফাঁকে তুমি ওকে দেখেও নিতে পারবে। তাই তো।
রিক চার্লসের নির্দেশমত হোলজাইমারকে সমস্ত কথা বলে ফোন ছেড়ে দিল।
চার্লস তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল। ঘরের চারিদিকে নজর বুলিয়ে নিল কোথাও কিছু বেঠিক আছে কিনা, জানালাগুলো ঠিকমত বন্ধ করে দিল। যখন দেখল ঘরের নিরাপত্তা অটুট রয়েছে তখন রিককে বলল, বেড়িয়ে এসো। দরজায় নতুন তালা লাগিয়েছি কোন রকম স্কেলিটন চাবিতে কাজ হবে না। আমাদের অনুপস্থিতিতে কেউ ঘরে ঢুকতে পারবে না।
চার্লসের কথাটা শুনে রিক চমকে উঠলো। তাহলে সে যদি কেটির ফ্ল্যাটে গ্লাভস আনতে যেত ফিরে এসে নতুন তালা খুলতে পারত না। তাহলে তার কাজ একেবারে ভেস্তে যেত। যা ভাগ্যিস র কাজ হাসিল হয়ে গেছে। কোনও রকম অঘটন ঘটেনি।
কিন্তু প্রথম খণ্ডের প্রকাশ রিক তাহলে কিছুতেই আটকাতে পারল না। প্রথম খণ্ডটা বেরুলে একটা ঝড় হবে। কী আর করা যাবে। চার্লসকে ক্ষেপিয়ে লাভ নেই। রিকের মত অবস্থায় পড়লে মিশচারকেও তাই করতে হত।
কেটির ফ্ল্যাটে আধো আলো আধো অন্ধকারে ওদের কথাবার্তা পনেরো মিনিটে শেষ হয়ে গেল। চার্লস হোলজাইমারের হাতে ফাইলের প্রথম খণ্ডটা তুলে দিল। হোলজাইমার কাগজগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বলল, আলো জ্বেলে দিলে হোত না।
চার্লস বলল, না কোনও প্রয়োজন নেই। এটা আপনি আপনার অফিসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন। আমি কোনোরকম রিস্ক নিতে চাইনা। যতদিন না এটা ছাপা হচ্ছে ততদিন আমি আপনাকে একদিন বাদে বাদে ফোন করবো।
হোলজাইমার একটু বিমর্ষ হয়ে বলল, ঠিক আছে।
চার্লস ছটফট করছে। সে উঠে গিয়ে বাইরের দরজা খুলে দিয়ে একরকম প্রায় জোর করেই হোলজাইমারকে বিদায় জানালো–তাহলে আসুন, পরে আরো কথা হবে, গুড নাইট।
হোলজাইমার একটু অনিচ্ছার সঙ্গে চার্লস ও রিককে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে চলে গেল।
চার্লস এবার রিককে বিদায় জানালো, গুড নাইট রিক, পরে কথা হবে।
চার্লস মনে মনে ভাবছে তাহলে এখনকার মত কাজ শেষ। সারাদিন যা ধকল গেল এবার একটু বিশ্রাম নেওয়া যাবে। কাল সকালে অবশ্যই টমকে মেশিনটা ফেরৎ দিতে হবে আর শ্যানডন হাউসেপ্রহরীর চোখ এড়িয়ে ফাইলট ঠিকমত রেখে আসতে হবে। এত সব কথা ভাবতে ভাবতে সে তার গাড়ির দিকে ছুটছে।
রিকও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেনা। সে তার উত্তেজনা বশে আনতে পারছেনা। বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে। দু চোখের পাতা সে কিছুতেই এক করতে পারছে না। তার অনেক কাজ বাকী। যে ভাবেই হোক মাইক্রোফিল্মটা আমেরিকার গোয়েন্দা দপ্তরের চোখে ফাঁকি দিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছে দিতে হবে।হঠাৎই তার মিশচার–এর কথা মনে পড়ে গেল। কিন্তু যথেষ্ট বাধা আছে। ওখানে নাক গলাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেই সর্বনাশ। ওলেগই বা কী করছে? সব ভারই তো ওর উপর ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওলেগের কাছ থেকে তো কোনও খবর নেই। কিন্তু নিজের দায়িত্ব সেই বা এড়িয়ে যায় কি করে? ওয়াশিংটনে যে একটা লিঙ্ক আছে, সেখানে কী খবরটা জানিয়ে দেবে। এটা কী ওর নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে? বোধহয় পড়ে। যদিও মিশচার এখন ওর কম্যান্ডিং অফিসার ওর প্রকৃত আনুগত্য মস্কোর কাছে, তবুও মিশচার ডিসইনফরমেশন ব্যাঙ্কের অধিকর্তা। ওর কোনও বিপদ রাশিয়ার গোটা পাইং লিঙ্কের বিপদ ডেকে আনবে। আর ওলেগ যখন পুরো ব্যাপারটা জানে তখন রিক যদি চেপে যায় তাহলে সে মুখতার পরিচয় দেবে। সব থেকে ভালো বেশী গভীরে না গিয়ে সাধারণ একটা রিপোর্ট করে দেওয়া।মিশচার ওকে নিউইয়র্ক–এর সেন্ট্রাল পার্কে ডেকেছিল। সেখানে যা কথা হবার হয়েছে। সেখানে ওরা বোধহয় সি আই এ অথবা ন্যাটোর ইনটেলিজেন্সের বুদ্ধির কাছে প্রতারিত হয়েছে। মিশচার এখন আহত। তবে কাজ হয়ে গেছে।
রিকের মাইক্রোফিল্মটার কথা মনে পড়লো। মিশচার বলেছিল এটা উদ্ধার হলেই ওলেগকে দিয়ে দিতে। ওলেগ ওটা রাশিয়ায় পাচারের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু ওলেগ সম্বন্ধে বা তার কাজকর্ম সম্বন্ধে রিক তেমন কিছু জানেনা। মিশচার যখন বলেছেতখন হয়তো হতে পারে ওলেগের আরও গভীরে যাতায়াত। এই মাইক্রোফিল্মটা পেলে রাশিয়ার গোয়েন্দা দপ্তর কেজিবির হাতের মুঠোয় চাঁদ পাওয়ার মত অবস্থা হবে, তাকে ওর নিজের চ্যানেলে পাঠিয়ে দেওয়াই ঠিক। রিক ভাবল তার আগে মিশচার–এর একটা খবর নেওয়া দরকার।
রিক চাপা উত্তেজনায় একটা সিগারেট ধরিয়ে ফোনের রিসিভার তুলে নিল। তারপরনাইনটিনহ্ প্রিসিট যে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট প্রথমে সেখানে ডায়াল করল তারা বলল–আপনি সেন্ট্রাল পার্ক প্রিসিঙ্কট–এ ফোন করুন। পার্কের ভিতরের ব্যাপার ওরা দেখে।
রিক কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেন্ট্রাল পার্ক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই তারা বলল, হা একজন ব্যক্তিকে লেনেক্সি হিল হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। উনি কি আপনার পরিচিত? হ্যাঁ তার বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি।
রিক একটু থেমে গলার স্বর যথা সম্ভব ভারী করে বলল–না আমি যার খোঁজ করছি সে আমার মামাতো ভাই তার বয়স বাইশ।
আচ্ছা দুঃখিত, বলে ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিল।
রিক যেন একটু নিশ্চিন্ত হল। যাক্ মিশচারকে তাহলে হসপিটালে দেওয়া হয়েছে আর আরও স্বস্তি পেল যে কোন রকম পরিচয় সে দেয়নি।
এইবার রিক নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেল। কাল তাহলে ওর ওয়াশিংটন যেতে কোনও বাধা নেই। এখানকার বাকী সব কাজ ওলেগ করবে।
.
০৬.
ওলেগ লেনেস্কি হিল হসপিটালের সামনে এল। সে মনে মনে চিন্তা করে নিল যে সে এখানে কী কী করবে। ওলেগের মনে হল ঐ অ্যালেক্সি। হা ওই আহাম্মকের যদি একটু বুদ্ধি থাকত। ওলেগের শরীর রাগে রি রি করে উঠল। ওর উপর সব দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নিজে ঝাড়া হাত পা হয়ে বসে আছে।
হঠাৎ একটা গাড়ি ওলেগের পাশ দিয়ে গিয়ে হসপিটালের চত্বরে ঢুকে গেল। ওলেগ ভাবল না এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক হচ্ছে না, তাতে সন্দেহ হতে পারে।
মিশচার আর ওলেগের ডিপার্টমেন্ট এক হলেও তাদের কাজ আলাদা আলাদা। মিশচার–এর কাজ গোপন খবর ডি সাইফার করা অর্থাৎ মূল বক্তব্য বের করে পাচার করে দেওয়া আর ওলেগ হচ্ছে একজিকিউটিভ অ্যাকশন ব্রাঞ্চের লোক। অর্থাৎ হঠাৎ বিপদ এসে গেলে তার মোকাবিলা করা।
এখানেও তাকে সেই কাজই করতে হবে।মিশচারমুখ থেকে কোনও খবর বের করার আগেই তাকে লোপাট করতে হবে। কিন্তু এত নিরাপত্তার মধ্যে তার একার পক্ষে একাজ করা কি সম্ভব হবে?
ওলেগ আবার চলতে শুরু করল। মেইন গেট ছেড়ে সে হাসপাতালের চওড়া প্রাঙ্গনে এসে গেল। তার মনে হল না যে কেউ তাকে লক্ষ্য করছে। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। ওলেগ দেখল এমারজেন্সীর গায়ে একটা গ্যারেজ আর তাতে একটা খালি এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। ওলেগের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। হ্যাঁ এই পথেই সে তার কাজ হাসিল করবে।
নভেম্বরের রাত পরিষ্কার আকাশ। অতিরিক্ত ঠাণ্ডার জন্য রাস্তায় বিশেষ লোক নেই। একবার বেরুতে পারলে ওকে আর কেউ ঠেকাতে পারবেনা।ওলেগ জীবনে এরকম কাজ অনেক করেছে তাই তার সন্ধানী চোখে কোনও কিছুই বাদ যাচ্ছে না।
এমারজেন্সীর ভিতর চলে এল ওলেগ। সামনে ইনফরমেশন কাউন্টার। সেখানে একজন নিগ্রো মেয়ে হসপিটালের পোষাক পরে কি যেন লিখে চলেছে। পায়ের শব্দে সে ওলেগের দিকে তাকাল। তার দৃষ্টিতে কোনও সন্দিগ্ধতা নেই কেননা কত লোকই তোতার কাছে আসে আত্মীয়ের খোঁজে।
ওলেগ ঠিক করে নিয়েছিল মেয়েটি প্রশ্ন করলে সে কি উত্তর দেবে। বলবে যে ও আজই কানাডা থেকে নিউইয়র্ক এসেছে তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা না হওয়ায় সে এখানে এসেছে খোঁজ করতে। মিশচার নামটা সে কিছুতেই বলবে না। ক্যানাডিয়ান বা আমেরিকান পাসপোর্টে মিশচার–এর যে নাম আছে তার একটা সে বলবে। কিন্তু যদি মিশচার এর সঙ্গে দুটোর একটাও না থাকে তাহলে তো সে ভীষণ বিপদে পড়বে।
অনেকক্ষণ ধরে অন্যমনস্ক ভাবে ওলেগ এইসব কথাগুলো ভাবছিল। না, বেশীক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে সন্দেহ হতে পারে। মেয়েটির সপ্রশ্ন দৃষ্টির সামনে আর এমন হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়।
ওলেগ একটু ইতস্ততঃকরে বলতে শুরু করল,না মানে মিস আমি আমার একজন বন্ধুর খোঁজ করছি।এইমাত্র পুলিশের কাছ থেকে খবর পেলাম একজন বয়স্ক ভদ্রলোক সেন্ট্রাল পার্কে আঘাত পেয়ে এইখানে ভর্তি হয়েছে। হতে পারে এই আমার সেই বন্ধু।
মেয়েটি নিরাসক্ত চোখে জানিয়েছে লোকটিকে ছটা নাগাদ ভর্তি করা হয়েছে। আপনি কী একটু দয়া করে দেখবেন?
মেয়েটি পাশের টেবিল থেকে একটা খাতা নিয়ে দেখতে লাগল।
ওলেগ নিতান্ত নিরীহ লোকের মত দাঁড়িয়ে রইল।
মেয়েটি কিছুক্ষণ খাতা দেখে বলল, হ্যাঁ একজন লোককে সেন্ট্রাল পার্ক থেকে এখানে পাঁচটা সাতান্ন মিনিটে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তারসঙ্গে কোনও পরিচয় পত্র পাওয়া যায়নি।
ওলেগ মনে মনে খুশীই হলো, যাক বাঁচা গেছে।
মেয়েটি বলল, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তার পরিচয় পেতে কিন্তু কোনও কাজই হয়নি।
ওলেগ হতাশার ভঙ্গী করে বলল, মুশকিল হলো, কোনও পরিচয় না পেলে আমিই বা বুঝব কী করে এই লোকই আমার বন্ধু। একঘণ্টা ধরে ওকে ফোন করছি। কোন সাড়া নেই দেখে খোঁজ করতে বেরিয়েছি।
মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা আপনি ওর বাড়ির লোকজনকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি?
ওলেগ দেখল যে মেয়েটি বেশ বুদ্ধিসম্পন্ন। বলল, ওতো এখানে একাই থাকে। আমি যতদূর জানি ওর স্ত্রীর সঙ্গে ওর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে অনেকদিন। ওর স্ত্রী এখন লং–আইল্যান্ডে থাকে। ভাবছি ওখানেও একটা খোঁজ নেব। কিন্তু যদি একবার এই অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকটিকে দেখতে পেতাম।
ওলেগের অবস্থা দেখে মেয়েটির মনে একটু বুঝি দয়া জাগলো। বলল, দাঁড়ান দেখছি কিছু করা যায় কিনা।
মেয়েটি উঠে গিয়ে একটা নার্সের সঙ্গে কথা বলল, নার্সটি গিয়ে কোথায় যেন ফোন করল। এদিকে ওলেগ জানালা দিয়ে বাইরেটা ভালো করে দেখে নিল, কী ভাবে কি করা যাবে।
মেয়েটি ফিরে এসে ওলেগকে বলল, হ্যাঁ বসুন একটু অপেক্ষা করুন। ওরাও আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়।
ওলেগ ভয় পেয়ে গেল, বলল ওরা মানে আপনি কাদের কথা বলছেন? আমি কী লোকটিকে এখুনি দেখতে পাবো না?
মেয়েটি বলল, পুলিশ আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়।
পাশের ফোনটা বেজে উঠতে মেয়েটি ই, হাঁ শব্দে কিছু উত্তর দিল। তারপর ওলেগকে বলল, আপনি এলিভেটর ধরে সোজা উঠে যান। ফার্স্ট ফ্লোরেই পেয়ে যাবেন। সামনে যে ঘর সেই ঘরে ঢুকে যাবেন। বলেই মেয়েটি তার কাজে মন দিল।
ওলেগ ভাবতে লাগল, আবার পুলিশ কেন তার সঙ্গে দেখা করতে চায়। পুলিশের হাতে পড়া মানেইহাজার প্রশ্ন। কিন্তু আর দেরী করা ঠিক হবেনা। ওর ইতস্ততঃ ভাব দেখে মেয়েটির সন্দেহ হতে পারে।
মেয়েটির নির্দেশ মত ওলেগ এলিভেটর ধরে সোজা ফাস্ট ফ্লোরে এলো। সামনেই ঘর।ওলেগ দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখল ঘরটিতে তিনজন আছে। একজন বয়স্কা নার্স টেবিলের সামনের চেয়ারে বসে আছে। আর একজন অল্প বয়স্ক নার্স ওষুধপত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। আর একজন অল্প বয়স্ক পুলিশ অফিসার নোট নিচ্ছিল। তারা তিনজনেই ওলেগের দিকে তাকালো।
ওলেগ ঘরে ঢুকে বয়স্কা নার্সটিকে খুবই করুণ সুরে বলল, আচ্ছা আমাকে একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আইডেন্টিফাই করার জন্য এখানে পাঠানো হয়েছে। এটাই কী সেই জায়গা?
নার্সটি বলল, আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন।
ওলেগ বলল, আচ্ছা সেই লোকটি কোথায়?
নার্স জানালো, তাকে অ্যানাস্থেসিয়ায় রাখা হয়েছে। এখন আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরে আসছে।
ওলেগ বলল, অনুগ্রহ করে যদি বলেন কী হয়েছিল?
নার্স জানালো ভয়ের কিছু নেই। সুস্থ হয়ে উঠছে। হাতে চোট খেয়েছিল।
ওলেগ দেখল আর একজন নার্স কিছু জামা কাপড় সরিয়ে রাখছে।
ওলেগ তৎক্ষণাৎবয়স্কা নার্সকে বলল, আচ্ছা যদি ওই পোষাকগুলো আহত ব্যক্তির হয় তাহলে আমার কোন সন্দেহ নেই যে সেই আমার বন্ধু। আমি আমার বন্ধুকে এখুনি বাড়ি নিয়ে যেতে চাই।
নার্সটি বলল, লোকটির কেটে যাওয়া জায়গাগুলোতে অনেক সেলাই দেওয়া হয়েছে। তাই একমাত্র ডাক্তার বলতে পারবে তাকে এখন ছাড়া যাবে কিনা।
ওলেগ বলল, আমি জানি আমার বন্ধু হসপিটালে থাকা একদম পছন্দ করে না। আমি বাড়ি নিয়ে গিয়ে ওর চিকিৎসার আরও ভালো ব্যবস্থা করব।
নার্স জানালো, অনেক রক্ত বেরিয়েছে। এখন বাড়ি নিয়ে যাওয়া রিস্ক। অন্য হসপিটালে ভর্তি করলে করতে পারেন।
এবার পুলিশ অফিসারটি কথা বলল। সে উঠে ওলেগের কাছে এসে বলল, আচ্ছা আপনি কী আপনার বন্ধুর কোন বিবরণ দিতে পারেন? এই যেমন উচ্চতা, ওজন, বয়স, গঠন ইত্যাদি।
ওলেগ আগে থেকেই ভেবে রেখেছিল, পুলিশ জেরা করলেই সে কী বলবে।
ওলেগ বলল, আমার সঙ্গে আমার বন্ধুর দেখা প্রায় দু বছর হল হয়নি। শেষবার মন্ট্রিলে দেখা হয়েছিল। আমি আজই এখানে এসেছি। ওর কোনও খোঁজ না পেয়ে পুলিশের ইনফরমেশন মত এই হসপিটালে খোঁজ নিতে এসেছিলাম।
পুলিশ অফিসারটিও ছাড়বার পাত্র নন। বলল, আমি উচ্চতা, বয়স, ওজন ইত্যাদি জানতে চাইছি। যদি না মেলে তাহলে এখানে আপনার বৃথাই সময় নষ্ট করা হবে।
ওলেগ একটু চিন্তার ভান করে বলল, সঠিক হবে না জানি তবু যতদূর বলতে পারি উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চির মত হবে। ওজন ধরুন একশ আশি পাউন্ডের মত।
পুলিশ অফিসার আবার প্রশ্ন করল, চুল? চোখ?
ওলেগ বলল, চুল এখন হয়তো একটু একটু পাকতে শুরু করেছে। চোখ ধূসর বর্ণের। বয়স পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে।
পুলিশ অফিসার বলল, হু, কিছু কিছু বিবরণ মিলছে। যাইহোক আপনার বন্ধু যে লেনেক্সি হসপিটালে আছে এই খবর আপনি কোথা থেকে পেলেন?
ওলেগ একটা সিগারেট ধরিয়ে সিগারেট টানার অছিলায় একটু সময় নিল, তারপর বলল, আমার বন্ধু যেই হোটেলে থাকে সেই হোটেলে আমি ফোন করি। হোটেল ম্যানেজার আমায় জানায় সে সেন্ট্রাল পার্কে গেছে। যদি তাকে ফোন করে তবে যেন সে একঘন্টা পরে ফোন করে। একঘণ্টা পরে আমি ওকে ফোন করি। জানতে পারি তখনও সে ফেরেনি। তখন আমি সেন্ট্রাল পার্কে আসি। তা প্রায় সাড়ে ছটা নাগাদ। এখানে একটু হৈ চৈ লক্ষ্য করে কর্তব্যরত পুলিশকে জিজ্ঞাসা করে ঘটনাটা জানতে পারি। আমি আমার বন্ধু সম্বন্ধে বিশেষ ভাবে চিন্তিত ছিলাম। যদি তারই আঘাত লেগে থাকে এই ভেবে, তার উপর যখন জানলাম ওই ব্যক্তিটি বয়স্ক তখন হসপিটালে খোঁজ নিতে এলাম।
ওলেগ একটু নিশ্চিন্ত হয়ে নড়েচড়ে বসল।
পুলিশ অফিসারটি বলল, তাহলে আপনাকে তো আরও কয়েকটি প্রশ্ন করতে হয়।
ওলেগ একটু হকচকিয়ে গেল, আবার কী ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
পুলিশ অফিসার একটু হেসে বলল, আপনার নাম কী? কোথায় উঠেছেন? আপনার বন্ধুর নাম কী?
ওলেগ বলল, আমার নাম জন ব্রাউনিং। আমি হোটেল টরেন্টোতে উঠেছি। আমার বন্ধুর নাম রবার্ট জনস্টোন।
আপনার বন্ধুর ঠিকানা? পুলিশ অফিসারটি প্রশ্ন করল।
ওলেগ বলল, এখনকার ঠিকানা ঠিক বলতে পারবনা। তবেতখন সেভেন্টি টু স্ট্রীটের কাছাকাছি। থাকত।
আপনার বন্ধুর টেলিফোন নাম্বার আপনার কাছে আছে?
ওলেগ বলল, হ্যাঁ অবশ্যই। বলে নিজের পকেটগুলো হাতড়াতে শুরু করল। তারপর বলল, সরি মনে হচ্ছে নোট বইটা হোটেল রুমে ফেলে এসেছি।
পুলিশ অফিসারটি বলল, আচ্ছা ঠিক আছে ওটা পরে দেখা যাবে।
তারপর একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে ওলেগের দিকে তাকিয়ে বেশ গম্ভীর স্বরে বলল, আপনার বন্ধুর যে নাম আপনি বললেন, সেটা সঠিক তো?
ওলেগ একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। কোথাও কোনও ভুল হলো নাতো?
ওলেগ বলল, হ্যাঁ, সঠিক জানি ওর নাম রবার্ট জনষ্টোন।
পুলিশ অফিসারটি বলল, ঠিক করে ভেবে বলুন, জনসন না জনষ্টোন?
ওলেগ একটু কুঁকড়ে গেল। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। বলল, জনসন নয় জনস্টোন।
পুলিশ অফিসারটির ঠোঁটের কোণে তেরছা হাসি খেলে গেল।
ওলেগের সারা শরীর কেঁপে উঠল। তার ভয় আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল অল্প বয়সী নার্সটির মন্তব্যে।
নার্সটি তিক্ত কণ্ঠে বলে উঠল, তখনই ধরেছি। এই অজ্ঞাত পরিচয় লোকটি রাশিয়ান না হয়ে যায়ই না। আমি রাশিয়ান ভাষা বেশ ভালো ভাবেই জানি।
ওলেগের চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসলো। এমন অবস্থায় যে সে কখনো পড়েনি নয়।একটু সামলে নিয়ে ওলেগ বলল–আমার বন্ধু রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে–ষ্টেকু! তবে তার ইংরাজী ছাড়াও ফরাসী ভাষায় ভালো দখল আছে। কিন্তু রাশিয়ান বলেই একটু রাগতঃ ভাব দেখালো।
নার্সটি চেঁচিয়ে উঠল, বিশ্বাস না হলে ডঃ ব্রোনস্কীকে জিজ্ঞাসা করুন। ঐ লোকটি অ্যানাস্থেসিয়া নেওয়ার সময় রাশিয়ান ভাষায় আর্তনাদ করছিল।
ওলেগ বলল, হতে পারে আমার বন্ধু কয়েকটি রাশিয়ান শব্দ শিখে থাকবে।
নার্সটি আরও চিৎকার চেঁচামেচি করে তার নিজের সপক্ষে সাক্ষী জোগাড় করতে চাইল।
বয়স্কা নার্সটি ভীষণ চটে গেল চেঁচামেচিতে।বলল তোমরা কী করছ, এটা কী চেঁচামেচি করার জায়গা! দরকার হলে তোমরা আস্তে আস্তে কথা বলল। তারপর পুলিশ অফিসারটিকে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা আপনার কাজ কী এখনও শেষ হয়নি?
পুলিশ অফিসারটি বলল, এই আর কিছুক্ষণ সময় নেব, বলে ওলেগকে কড়া সুরে জিজ্ঞাসা করল, মিঃ ব্রাউনিং অ্যালেক্সি বলে কাউকে আপনি চেনেন?
ওলেগের মাথাটা বন্ বন্ করে ঘুরে গেল। বলল, কই না তোর
পুলিশ অফিসারটি বলল, আহত লোকটি বার বার এইনামটা উচ্চারণ করছিল। অ্যালেক্সি ওনার স্ত্রী নন তো?
নার্সটি আবার চেঁচিয়ে উঠল, ওটা কোন মেয়ের নাম নয়। তাছাড়া আহত লোকটি আর একজনের নাম উচ্চারণ করছিল, ওলেগ।
পুলিশ অফিসারটি বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ ওলেগ। আচ্ছা ওলেগ ওনার স্ত্রীর নাম নয় তো?
ওলেগা জোর করে মুখে হাসি এনে বলল, না না ওনার স্ত্রীর নাম ওইলমা জন ষ্টোন।
ওনার স্ত্রীর ঠিকানা? পুলিশ অফিসারটি প্রশ্ন করল।
প্যাটোগ! লং আইল্যান্ড। ওলেগ বলল,হতে পারে তিনি তার কুমারীজীবনের নাম ব্যবহার করছেন। কোনিগ। উইলমা কোনিগ। আমি ঠিক নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।
পুলিশ অফিসারটি উইলমার সঠিক ঠিকানা জানতে চাইল যোগাযোগ করার জন্য।
সেই মুহূর্তে ও ঘরের ভিতর থেকে দুই জন যুবক বেরিয়ে এল তাদের একজনের গলায় ক্যামেরা আর অন্যজনের গলায় স্টেথো। পুলিশ অফিসারটি তার জেরা থামিয়ে দিল।
ওদের একজন পুলিশ অফিসারটিকে বলল, লেফটেন্যান্টকে বলবেন যে আমাদের কাজ মোটামুটি শেষ। হাতের আঙুলের ছাপ ভালোমতই নেওয়া গেছে। কাল সব পাঠিয়ে দেব।
বয়স্কা নার্সটি জানতে চাইল, জ্ঞান ফিরে এসেছে?
হ্যাঁ ভালোমতই ফিরেছে, হাতের আঙুলের ছাপ দিতে চাইছিল না।
ওলেগ খুবই ব্যস্তভাবে জিজ্ঞাসা করে উঠল, উনি কী ওর নাম জনস্টোন বলেছেন?
ডাক্তারটি উত্তর দিল, না উনি কিছুই বলছেন না, কোন কিছুই মনে করতে পারছেন না।
অল্প বয়স্ক নার্সটি মিশচার–এর জামা কাপড় দেখিয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করল, এগুলো কী করব?
ক্যামেরা কাঁধে যুবকটি একটা সিগারেটের আর জামার হাতায় আটকানোর মত একজোড়া বোম যা দেখতে অন্যসব কাফ–লিঙ্কের মত নয়, নার্সের টেবিলে রেখে বলল, এগুলো ওর কাছে পাওয়া গেছে। জামা প্যান্টের সাথে রেখে দিন। লেফটেন্যান্ট–এর নির্দেশ মত কাজ করবেন।
কাফ লিঙ্ক দুটোর দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো ওলেগ। ও দুটো মোটেই কাফ–লিঙ্ক নয়। জামার হাতায় লাগানো হয় এমন মারণাস্ত্র। পরীক্ষা করলেই বুঝে যাবে। ওলেগ যে প্ল্যান করেছিল সবই ভেস্তে যাচ্ছে। মিশচারকে নিয়ে পালানো সম্ভব হবে না।
বয়স্কা নার্সটি মিশচার–এর ঘরে ঢুকে যেতে ওলেগও আস্তে আস্তে মিশচার–এর ঘরে ঢুকে পড়লো। ওলেগ পকেটে হাত ঢুকিয়ে যা খুঁজছিল তা থাকাতে নিশ্চিত হল।
মিশচার নিঃসাড়ে পড়ে আছে।নার্স ওর শিরায় আটকানোনলটা পরীক্ষা করছিল। ঘরে একটা জিরো পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছিল। ওলেগ আস্তে আস্তে মিশচার–এর বিছানার গা ঘেষে দাঁড়ালো।
ওলেগ নার্সটিকে অনুরোধ করল, আলোটা জ্বেলে দিন। ভালো করে একটু মুখটা দেখি।
নার্সাট ওলেগের এই সকরুণ অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারল না। আলো জ্বালাবার জন্য সে সুইচবোর্ডের দিকে গেল।
ওলেগ এই মুহূর্তটুকুর জন্য অপেক্ষা করছিল। সে পকেট থেকে হাত বার করে মিশচার–এর ডান হাতটা তুলে হ্যান্ডশেকের ভঙ্গিতে মনিবন্ধে মৃদু চাপ দিল। আলো জ্বলে উঠলে মিশচার তাকালো। ওলেগকে দেখে তার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল। ওলেগ আবার পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিল।
নার্স বলল, বোধহয় উনি আপনাকে চিনতে পেরেছেন।
ওলেগ বলল না, ইনি আমার সেই বন্ধু নন। ভাঙা অ্যালের কাঁচ ওর আঙুলে বিঁধছিল।
ওরা বেরিয়ে এল। পুলিশ অফিসারটি জিজ্ঞাসা করল, কেমন দেখলেন?
নার্স বলল, উনি ঘুমাচ্ছেন।
ওলেগ পুলিশ অফিসারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, ইনি আমার বন্ধু নন। আচ্ছা চলি, দেখি অন্য হসপিটালে খোঁজ করতে হবে।
.
০৭.
আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে টম যখন প্যারিস থেকে নিউইয়র্ক ফিরছিল তখন ভাবলো একটু ঘুমিয়ে নেবে। নিউইয়র্ক টাইমস্ পত্রিকার ও রোড়িং অ্যাম্বাসাডার সমস্ত কঠিন কাজগুলো ওকেই করতে হয়। মাসের প্রায় অর্ধেকের বেশী দিন তাকে আজ ব্রাসেলসকাল লন্ডন পরশু প্যারিস করতে হয়। এবার একদিনের জন্য প্যারিস গেছিল। এখন ফিরছে। নিউইয়র্ক পৌঁছাবে কাল।
হঠাৎ টমের ডরোথির কথা মনে পড়লো। ডরোথি এখন কী করছে? ডরোথির মত সুন্দর মেয়ে সে আর একটাও দেখেনি। সত্যি এমন স্ত্রী পাওয়া ভাগ্যের কথা। মাত্র একটা রাত সে ডরোথিকে কাছে পায়নি মনে হচ্ছে কত যুগ কেটে গেছে।
টম বাড়ি ফিরতে ডরোথি দরজা খুলেই টমকে জড়িয়ে ধরল। টম আলতো চুমু খেল।
ডরোথি অভিমান করে বলল, আমায় ফেলে তুমি কি করে থাক বলত।
টম দেখলো ডরোথি ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। কোথাও কিছু এলো মেলো নেই।
গভীর আবেগে পুলকে ডরোথিকে টম আরও জোরে আঁকড়ে ধরে দীর্ঘ চুম্বনে ভরিয়ে দিল।
টম জামা কাপড় পাল্টে পরিষ্কার হয়ে নেয়। তারপর দুজনে বারান্দায় দু গ্লাস মাটিনি নিয়ে বসে। দুজনে নানা রকম গল্প করে। তাতে ভবিষ্যতের স্বপ্নও মিশে থাকে।
ডরোথি বলতে থাকে যে সময়টুকু টম ছিল না সে কি কি করেছে।
টম মুচকি হাসে আর শোনে।
ডরোথি বলে, এবার তুমি নিশ্চয়ই ছুটি পাবে। আমরা কিন্তু এবারের ছুটিটা বাইরে কাটাবো।
টম জিজ্ঞাসা করে, তা কোথায় যাবে বলে ঠিক করেছ?
এমন একটা জায়গায় যাবো যেখানে কেউ তোমার নাগাল পাবেনা। আমি তোমায় শুধু আমার একার করে পাবো। ওই দিন রাত কাজ আর কাজ। অসহ্য। ডরোথি বলল।
কি আর করবো বলল, যার যেমন কাজ। হতাশার সুরে বলল টম।
তোমার কোন কথাই শুনছি না। ডরোথি বলল, এবার বাইরে যাবই যাবো।
হঠাৎ টম বলল, আচ্ছা ডরোথি দক্ষিণ ফ্রান্সে গেলে কেমন হয়?
ইয়ার্কি করো না, ডরোথি বলল, ওখানে যেতে কত খরচ জানো?
টম বলল, না না ইয়ার্কি করছি না, সিরিয়াসলি। তোমায় বলতে ভুলে গেছি, এবার প্যারিসে মরিস মিচেলের সঙ্গে ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ওদের সঙ্গে লাঞ্চ খেলাম। ওরা এবার ওয়াশিংটন বেড়াতে আসছে।
টম বলল, আচ্ছা এমন করলে হয় না ওরা তিনমাস আমাদের বাড়িতে থাকুক আর আমরা তিনমাস দক্ষিণ ফ্রান্সে ওদের বাড়ি থাকবে। এতে দুই তরফেরই বাড়ি ভাড়া বেঁচে যাবে।
ডরোথি বলল, তার মানে বদলা বদলি।
টম বলল, তাতে মন্দ কি?
ডরোথি একটু ভেবে বলল, না মন্দ নয়। তাহলে আজই ফোন করে ওদের প্রস্তাবটা জানিয়ে দাও।
ইতিমধ্যে ফোন বেজে উঠল। ডরোথি একটু বিরক্তির সঙ্গে বলল, ওহ, ওরা জানতে পারে কী করে বলতো?
টম ফোন ধরার জন্য গেল। ওপাশ থেকে নিউইয়র্ক টাইমসের সহকর্মী জিম বলল হ্যালো কী খবর! আজকের খবরের কাগজ দেখেছ?
টম বলল, না, তেমন কোনও খবর আছে নাকি?
ইয়ার্কি মেরো না টম তুমি একেবারে মার মার কাট কাট ব্যাপার করে দিয়েছ।
টম বলল অবাক হয়ে, তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
জিম বলল, বুঝতে পারছি না তুমি ওটা হোলজাইমারের নামে প্রকাশ করলে কেন? এমন একটা খবর তুমি ছাড়া আর কেউ জোগাড় করতে পারেনা। নিজের নাম প্রকাশ করতে পারতে। একেবারে হট কেকের মত কাগজ কাটছে।
টমের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
জিম তখনও বলছে তুমি যদি গোপন করতে চাও তাহলে কারো কিছু করার নেই।
টম বিনয়ের সঙ্গে বলল, জিম আমাকে একটু পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলবে প্লিজ।
জিম এবার মনে হয় সত্যিই একটু থম মেরে গেল। ন্যাটোর একটা সিক্রেট মেমোরেন্ডাম সম্বন্ধে তুমি জানো না?
টম বলল, কী উল্টোপাল্টা বক বক করছ?
জিমবলল, তোমার টাইপ মেশিনের সমস্ত অক্ষর আমাদের জানা। মেমোরেন্ডামের কপি তো ঐ মেশিনে করা।
টম বলল, অসম্ভব। এ হতেই পারে না। তোমার ভুল হচ্ছে।
জিম কিন্তু টমের কথা তখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। বলল, আচ্ছা এতে তো জাতীয় নিরাপত্তা নষ্ট হয়নি। আমার মনে হয় এতে আমাদের উপকারই হবে।
টম রাগে উত্তেজনায় ফেটে পড়ল, ইমপসিবল, আমি এখনও বলছি আমি ওটা পাঠাই নি।
জিম বলল,টম তোমার এত উত্তেজিত হবার কিছু নেই। এডিটোরিয়াল বোর্ডে এই নিয়ে কথা হয়েছে। তারা বলছে এটা ভালোই হয়েছে। তারা টাইপ করা কপি দেখে এটা ছাপতে রাজি হয়েছে কারণ তাদের তোমার উপর অগাধ বিশ্বাস। অন্য কারুর হলে ওরা এটা এত সহজে ছাপাতে দিত না। এখন তোমার নিরাপত্তার কথাই ভাবা হচ্ছে। তুমি ভয় পেও না,সমস্ত সম্পাদকমণ্ডলী তোমার সঙ্গে আছে। আমিও তোমার সঙ্গে আছি। আমার খুব ভালো লাগল তাই তোমাকে ফোন না করে পারলাম না।
টম ক্লান্ত হয়ে বলল, জিম আমি এখনও বলছি, আমি এটার সম্বন্ধে কিছুই জানি না।
জিম বলল, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে কাল দেখা হলে কথা হবে।
জিম ফোন ছেড়ে দিল। টম বুঝতে পারছে না কী বলবে। ডরোথি সবই শুনছে ওদের কথা। কেউ কোন কথা না বলে চুপ করে গেল।
.
০৮.
নিউইয়র্ক টাইমসের সেই কয়েকটি অক্ষর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মত সমগ্র আমেরিকাকে ঝলসিয়ে দিল! পেন্টাগন, শ্যানডন হাউস, সি আই এ এমন কি ন্যাটোর ইনটেলিজেন্সের ভিত পর্যন্ত নড়িয়ে দিল।
এদিকে টনি লটন হোলজাইমারের লেখার পাশে একটা ছোট্ট লেখা দেখে লাফিয়ে উঠল আর জামা প্যান্ট পরে তখনই রওনা দিল।
ব্রাড জিলনশ্যানডন হাউসের ডিরেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন আর যে ঘরে মেমোরেন্ডাম ছিল সেই ঘরে গিয়ে দেখে এসে নিশ্চিন্ত হলেন।
ব্রাড জিলনের ফোন পেতেই তিনি জানালেন আমার এখান থেকে মেমোরেন্ডাম ফাঁস হয়নি আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। এখানকার ফাইলপত্র যেমনটি ছিল ঠিক তেমনটি আছে। কোনও ভাবে হাত বদল হয়নি।
ওদিকে সেক্রেটারী অফ ডিফেন্স ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্ক টাইমসকে চেপে ধরলেন হোলজাইমার সম্বন্ধে জানার জন্য। এবং সে কোথা থেকে মেমোরেন্ডাম পেল তা জানার জন্য।
টাইমস পত্রিকার সম্পাদক খুবই ভদ্রলোক। তিনি বললেন, দেখুন মার্টিন হোলজাইমার আমাদেরই পত্রিকার একজন রিপোর্টার। আর আজকের শাসনতন্ত্রে নিজের মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা সকলেরই আছে। আর তাছাড়া কোন্ সূত্র থেকে খবর পাওয়া গেছে তা জানাতে আমরা বাধ্য নই।
সেক্রেটারী অফ ডিফেন্স পেন্টাগনেও একটা কড়া নোট দিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রথম খণ্ডের সঙ্গেই যুক্ত। হোলজাইমার যদি সেই দুটোও পেয়ে থাকে তাহলে সর্বনাশ হতে আর বাকী থাকলোনা।ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত সমস্ত দেশ এতে বিব্রত হবে আর আমেরিকার মানসম্মান সব ধুলোয় মিশবে।
ব্রাড জিলন অস্থির ভাবে তার ঘরে পায়চারি করছে। এই সময় টনি এল।
টনি জিজ্ঞাসা করল, সকালবেলা কোথায় চলে গেছিলে আমি ফোন করে করে হয়রান?
ব্রাড জিজ্ঞাসা করল, কোনও খবর জোগাড় করতে পেরেছো?
টনি একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, আগে আপনি বলুন।
ব্রাড বলল, বলছি আর ভবিষ্যতে আমরা কি করব তাও ঠিক করে নেব। ডিফেন্স সেক্রেটারী তো আর ছাড়বে না। চাকরি যায় যায় অবস্থা।
টনি ব্রাডকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ঘাবড়াবেন না। এই নিয়ে আলোচনা হবে।
ব্রাড খুশী হল। তারপর বলল, আমি শ্যানডন হাউসে ফোন করেছিলাম। সেখান থেকে মেমোরেন্ডাম চুরি যায়নি। যেমন ছিল তেমন আছেতিনটি খণ্ডই। প্রথমটি প্রকাশ পেয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড হল খুবই বিপদ জনক। ওতে আমেরিকার ভবিষ্যৎ নীতি আর যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিশদ বিবরণ আছে। কিছুদিনের মধ্যেই ব্রাসেলসে ন্যাটোর বৈঠক বসবে। সেইজন্য মেমোরেন্ডাম ওয়াশিংটনে আসে। তারপর এটা শ্যানডন হাউসে পাঠানো হয়। শুধু মাত্র টপ সিকিউরিটি অফিসাররা এর খবর জানে।
টনি বলল, হুঁ তাহলে শ্যানডন হাউসে পাঠানোর মানে মেমোরেন্ডামটি দ্বিতীয় বারের মত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া।
ঠিক এই রকম, ব্রাড বলল, এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী পলিসি কাজেই পেন্টাগন এতে খুত রাখতে রাজী নয়।
কিন্তু শ্যানডন হাউসে এত দেরী হবার কারণ কী, টনি জিজ্ঞাসা করল।
ব্রাড বলল, বুঝতেই পারছ খুব একটা সহজ কাজ নয়। তবে আগামীকালই ওটা ফেরৎ পাঠানোর দিন ঠিক করা হয়েছিল।
কিন্তু পেন্টাগন এত তাড়াহুড়ো করে মেমোরেন্ডাম শ্যানডন হাউসে পাঠালো কেন বুঝতে পারছি না, টনি বলল।
কারণ অতিরিক্ত সাবধানতা যাতে মেমোরেন্ডামের কোন অংশ কোন কারণে আমেরিকার কূটনীতিকে দুর্বল না করে দেয়। ব্রাড বলল।
ব্রাড আবার জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা টনি তোমার কি মনে হয় মেমোরেন্ডাম শ্যানডন হাউস থেকে ফাঁস হয়েছে?
টনি বলল, আমার তো তাই মনে হয়। তবে তাদের কথা অনুযায়ী ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোন অংশে কম নয়। ডিনামাইট দিয়ে না উড়িয়ে প্রহরীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে এটা চুরি করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
মেমোরেন্ডাম তার জায়গাতেই আছে কেউ যে তাতে হাত দিয়েছে তার প্রমাণ এখনও নেই। তবে যদি একটু ভাবা যায় যদিও প্রমাণিত নয় যে কারো হয়তো সুযোগ এসে গেছিল ওটা দেখার আর তুলে নেবার। সে সেই সুযোগে ওটা নিয়ে টাইপ করে নিয়ে আবার যথাস্থানে রেখে দিয়েছে। এটা আবার ভাববার বিষয়, সে কি দ্বিতীয় আর তৃতীয় খণ্ড টাইপ করার সময় পেয়েছে?
ব্রাড বলল, হতে পারে সে হয়তো শুধুমাত্র প্রথম খণ্ডটাই টাইপ করেছে।
টনি বলল, হতে পারে সেখানের নিরাপত্তা কঠোর। কিন্তু সেখানে কারো যাতায়াত থাকবে না এটা ভাবা ভুল। আমি ধরে নিচ্ছি কেউ এর সুযোগ অবশ্যই নিয়েছে। আর সে সবগুলোই তুলে নিয়ে গেছিল কারণ প্রহরীর সামনে তা করা ছাড়া উপায় ছিল না।
ব্রাড বলল, তাহলে তুমি বলছ সবগুলো তুলে নিয়ে গিয়ে ফটো তুলেমস্কোয় পাঠিয়ে দিয়েছে।
কে জি বি–র নজর এর উপর পড়েছে, টনি বলল, আমরা এর খবর রাখি।
ভ্রাদিমির কোনোভ।
তুমি যেন এর কথাই বলছিলে। সে তত মঙ্গলবার আসছে, তাই না?
টনি বলল, আজ্ঞে না। তিনি আটদিন আগে নিউইয়র্কে এসে পৌঁছে গেছেন।
ব্রাড বলল, বলল কী? তাহলে তো মেমোরেন্ডাম এতক্ষণে কোনোভ–এর হাতে চলে গেছে।
টনি বলল, না তা আর সম্ভব হয় নি, কারণ কোনোভ ইতিমধ্যে মৃত।
ব্রাড লাফিয়ে উঠল, মারা গেছে?
টনি মুচকি হেসে, হোলজাইমারের খবরের পাশের একটা ছোট্ট খবর ব্রাডকে দেখালো।
ব্রাড খুব তাড়াতাড়ি তাতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, এ তো একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি সেন্ট্রাল পার্কে আহত হয়ে লেননক্সি হসপিটালে ভর্তি হয়। সেখানে হার্টফেল করে মারা যায়। তার সঙ্গে একটা বেতের লাঠি আর ফ্ল্যাশ লাইটার ছিল।
টনি, ব্রাডকে যেন একের পর এক অদ্ভুত ধাঁধায় ফেলতে লাগল। ব্রাডের প্রসারিত চোখের দিকে তাকিয়ে টনি বলতে লাগল–কোনোভ যে নিউইয়র্কে পৌঁছেছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা দপ্তর আমায় এই খবর জানায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে এফ বি আই–কে খবর পৌঁছে দিই। কোনোভ খুবই চতুর লোক। ওকে ধরা খুবই কঠিন কাজ। হঠাৎ একটা খবর পাওয়া যায় যে কোনোভ শনিবার রাতে সেন্ট্রাল পার্ক যাবে। ওকে ফলোকরা হয়, আমি এই খবরটা জানতে পারি গতকাল। আজকের খবরের কাগজে সেন্ট্রাল পার্কের ঘটনাটা চোখে পড়তেই আমি লেনেক্সি হসপিটালে যাই তখন সে মৃত এবং মর্গে আইডেন্টিফাই এর জন্য রাখা হয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি, কোনোভকে চিনতে আমার একটুও দেরী হয়নি।
ব্রাড যেন কোন অ্যাডভেনচারাস গল্প শুনছে। সে বলে উঠল তারপর
টনি আরাম করে সিগারেটে একটা টান দিয়ে বলল–আমার আবার কোন জিনিস সম্বন্ধে খুঁটিনাটি না জানলে চলে না। কোনোভ এল আক্রান্ত হল এবং মারাও গেল। আঘাত তাহলে খুব বেশীই লেগেছিল। খোঁজ নিয়ে জানলাম যে সেন্ট্রাল পার্কে তার সঙ্গে আরও একজন যুবক ছিল। কোনোভকে যখন ধরা হয় তখন সে পালাতে সক্ষম হয়। পুলিশের দৃষ্টি ছিল কোনোভের ওপর তাই তারা অন্য ব্যক্তিটিকে গুরুত্ব দেয়নি। যাইহোক তারপর পুলিশ তাকে আহত অবস্থায় লেনেক্সি হসপিটালে ভর্তি করে।
রবিবার রাত্রে একজন তৃতীয় ব্যক্তি তার বন্ধুকে খোঁজার নাম করে হসপিটালে আসে। পুলিশ তাকে ঘেরাও করে। কিন্তু সে খুবই চতুর লোক ছিল। সুযোগ বুঝে কোনোভকে মেরে সে কেটে পড়ে। লোকটি চলে যাবার কিছু সময় পরে জানা যায় কোনোভ মারা গেছে।
ব্রাড সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল।
টনি তার সিগারেটে আবার একটা সুখটান দিয়ে একমুখ ধোয়া ছেড়ে বলল–এই গেল কোনোভের কথা। এবার আসছি তোমার বন্ধু টম কেলসোর কেচ্ছার কাহিনী নিয়ে।
ব্রাড হাঁ হয়ে গেল, টম কেলসো!
হ্যা টম কেলসো। টনি বলে চলল টাইমসের পত্রিকা অফিসে আমি গিয়েছিলাম। আজ সেখান থেকে দুটো লেখা বেরিয়েছে, একটা টম কেলসোর ফ্রান্সের ঘটনার প্রতিবেদন, দ্বিতীয়টি হোলজাইমারের এই বিদ্যুবাহী খবর। আমি সম্পাদকের দপ্তরে গিয়ে দুটো লেখার টাইপ কপি দেখেছি। দুটোই একই মেশিনে টাইপ করা। বুঝতে আমার দেরী হয়নি, কারণ দু–চারটে অক্ষর একই ভাবে বাঁকানো, টাইপও একই জায়গায় মোটা সরু।
বুঝলে ব্রাড এরজন্য কোনও পরীক্ষার দরকার হয়না দুটো চোখই যথেষ্ট, টনি বলল।
ব্রাড বলল, আমি টমকে বহুদিন থেকে চিনি। আমি বিশ্বাস করি না।
টনি বলল কিন্তু এটাই সকলে বলাবলি করছে এমন কি টাইমসের সবার ধারণা টম নিজের নাম প্রকাশ করতে না চাওয়ায় হোলজাইমারের নামে প্রকাশ করেছে।
ব্রাড জোর গলায় বলল, হতেই পারে না। টম একাজ কখনোই করতে পারে না।
টনি বলল, তাহলে টাইপ মেশিন?
ব্রাড বলল, ওটা বানানো গল্প।
ব্রাডকে একটু খোঁচানোর জন্য টনি বলল, এমনও হতে পারে কেউ ওর টাইপ মেশিন ধার নিয়েছিল।
ব্রাড বলল, অবিশ্বাস্য, টম হল স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড ছেলে, ওর হাতে যদি মেমোরেন্ডাম এসে থাকে তবে তা নিজের নামে ছাপানোর সৎসাহস আছে।
ব্রাড হল পেন্টাগনের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন হর্তাকর্তা। তার নিশ্চয়ই কিছু বুদ্ধি আছে। তাই ব্রাড যখন এত জোর দিয়ে বলছে তখন টনিকে একটু নরম হতে হল।
টনি চিন্তিত হয়ে বলল, তাহলে এটা নিশ্চয়ই কোনও দ্বিতীয় ব্যক্তির কাজ যে এই মেমোরেন্ডাম সংগ্রহ করে হোলজাইমারকে দিয়েছে। তাকে ধরতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান।
ব্রাড বলল, হোলজাইমারকেও জেরা করে কোনও লাভ হয়নি। কেননা সে তত বাধ্য নয়।
টনি বলল, এর একটা পথ মনে হয় আমি খুঁজে পাচ্ছি। এইসব কথাবার্তা তো আর রাস্তাঘাটে হয় না কোন হোটেল বা আস্তানায় নিশ্চয়ই হয়েছে।
হা হা, ব্রাড বলে উঠল, হোলজাইমার বলেছে নিউইয়র্কের কোনও এক ফ্ল্যাটে। কিন্তু তার নাম ঠিকানা বলতে সে রাজী নয়।
ওটা আমরা ঠিক বের করে নেব, বরং একবার টম কেলসোকে বাজিয়ে দেখ।
ব্রাড বলল, আচ্ছা সেও না হয় একবার দেখা যাবে।
টনি চেয়ার থেকে উঠে মাথায় টুপিটা দিয়ে বলল, তাহলে গুড বাই।
.
০৯.
বিরাট বড় একটা হোটেল, ভেতরটা দেখলে মনে হবে শহরের মধ্যে একটা ছোট শহর। প্রশস্ত নাচঘর। আলো এত বাহারী মনে হচ্ছে যেন হীরে পান্না ঝরে পরছে। অসংখ্য ছেলে ও মেয়ে আনাগোনা করছে। ফ্যাশন শো হচ্ছে।
টনি লটন নাচঘরের এক কোণে খবরের কাগজে মুখ ঢেকে বসে আছে। তার সামনে টেবিলে একটা ভর্তি পানীয়ের গ্লাস তাতে বরফের টুকরো ভাসছে।
আজ হোটেলে একটা প্রোগ্রাম চলছে। কৃষি সংক্রান্ত যে ডেলিগেশন রাশিয়া থেকে এসেছে তাকে বিদায় অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে।
টনি বসে বসে নিজের মনে হাসছিল, ভাবছিল আজকের পৃথিবীতে মানুষ কত সহজে আলোর আড়ালে নিজের কালো মুখটা ঢেকে সকলকে ধাঁধিয়ে দিতে পারে।
এই মুহূর্তে যখন ওয়াশিংটনের বড় বড় কর্তাদের ঘুম ও মনের শান্তি কেড়ে নিয়েছে যে ন্যাটোর মেমোরেন্ডামের কেলেঙ্কারী আবার সেই ওয়াশিংটন কত সহজে সেই রাশিয়ার ডেলিগেশনের বিদায় সম্বর্ধনা জানাচ্ছে।
এই অনুষ্ঠানে টনি লটন নিমন্ত্রিত হয়ে আসেনি। ন্যাটো মেমোরেন্ডামের ফাঁস হয়ে যাবার পেছনে কেজিবির যে হাত আছে এবং পেছনের মগজটি ভাডিমির কোনোভ এবং তার সহকারী যে, টনির মতে বরিস গেরস্কি ছাড়া আর কেউ নয় এ বিষয়ে সে নিশ্চিত।
কোনোভ–এর মৃত্যু হয়ে গেছে, এখন দরকার গেরস্কিকে। আন্দাজে টনি আজ এখানে এসেছে। মনে হয় ওর আন্দাজ সফল, সেন্ট্রাল পার্কের সেই তৃতীয় ব্যক্তিটি…
টনি হাততালির শব্দে স্টেজের দিকে তাকালো, দেখলো একজন দোভাষীভীষণ ব্যস্ত। একবার আমেরিকান প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছে আর পরক্ষণেই রাশিয়ান ডেলিগেশন এর নেতাদের সঙ্গে কথা বলছে। টনি যথেষ্টই আন্দাজ করতে পেরেছে, লোকটার মুখ যদিও টনি দেখতে পাচ্ছে না, পিছন দিকে টনি বসে আছে, তবুও তার বুঝতে দেরী হয়নি এই লোকটিই লেনেক্সি হসপিটালে বন্ধুর খোঁজে গেছিল কারণ পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী ঐ লোকটির চেহারার যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে দোভাষী লোকটির চেহারার সাদৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে।
চওড়া কাঁধ, পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চির মত লম্বা, চুল সাদা কালো মেশানো। ইস্ যদি একবার এদিকে ঘুরত তাহলে টনি তার মুখটা স্পষ্ট করে দেখতে পেত। তখন সে তার চোয়ালের খাঁজ আর নীল চোখটা মিলিয়ে নিত। না! কিছুতেই লোকটা এদিকে ফিরছে না।
হঠাৎ টনির চোখে পড়ল–আরে ঐ সুন্দরী যুবতীটি ডলোথি কেলসো না? তাহলে সেও কি এখানে নিমন্ত্রিত? টনি দেখলো, না! কোথাও টম কেলসোকে দেখা যাচ্ছে না।
ডরোথি ক্লোকরুমের সামনেই দাঁড়িয়ে গেল…ওই যুবকটি কে? বেশ স্মার্ট চেহারা।ঝলমলে কালো চুল, চমৎকার মুখশ্রী। ধূসর রং–এর স্যুট–এ ভালো মানিয়েছে। যুবকটিকে যেন ডরোথির পাশ কাটিয়ে যেতে হচ্ছে কিন্তু ডরোথি ভীষণ ব্যর্থ ওর সঙ্গে কথা বলতে…ডরোথি ওকে ধরে ফেলল।
হ্যালো রিক, ডরোথি বলল।
রিক চমকে উঠে তাকালো, ওর মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। তবুও মুখে হাসি টেনে বলল, সরি, আমি একটু ব্যস্ত আছি। ডরোথি জিজ্ঞাসা করল, চার্লস কেমন আছে?
আমার সঙ্গে তার বহুদিন সাক্ষাৎ নেই, রিক জানালো।
ডরোথি হতাশ হল বলল, ওকে আমাদের ভীষণ দরকার ছিল, ভেবেছিলাম নিউ ইয়র্কে আপনার সঙ্গে চার্লসের প্রায়ই দেখা হয়ে থাকবে।
না আমার সঙ্গে দেখা হয়নি, রিক জানালো, আমিও বেশ অনেকদিন হল নিউ ইয়র্কে যাই নি।
রিক দু চারটে কথা খুব ব্যস্ততার সঙ্গে সেরে ডরোথিকে বিদায় জানিয়ে চলে গিয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞদের দলে মিশে গেল।
টনি সজাগ হয়ে উঠল। ভীড় ঠেলে আস্তে আস্তে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল। দোভাষী লোকটির মুখটি তার দেখা দরকার। টনি নিজেকে ভীড়ে আড়াল করে রাখলো।
টনি খুশিতে ছটফট করে উঠল। হ্যাঁ এই তো সেই বরিস গেরস্কি, তুমিও ওয়াশিংটনে।
টনি সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের বাইরে টেলিফোনবুথে ছুটে গেলাব্রাডকে খবরটা জানানোদরকার। গেরস্কি খুবই মারাত্মক লোক, তাকে চোখের আড়াল করা চলবে না। যা করার ব্রাডকেই করতে হবে।
টনি কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুটে যাচ্ছিল। আর একটু হলে ডরোথির সঙ্গে ধাক্কা লাগত। ডরোথি চমকে উঠে বলল–আপনি এখানে?
টনি বলল সহাস্যে, তাহলে চিনতে পেরেছেন ম্যাডাম! আমি ব্রাড জিনের বন্ধু টনি লটন। লন্ডনে থাকি। তারপর বিনয়ের সঙ্গে বলল, আমি কী আপনার মূল্যবান সময়ের কয়েক মিনিট ধার চাইতে পারি? আপনার সঙ্গে দুটো কথা বলে নিতাম।
ডরোথি বলল, ও সরি, আমার জন্য টম বাড়িতে অপেক্ষা করছে
আমি কিন্তু খুব বেশী সময় নেব না ম্যাডাম! তাছাড়া আমি হয়তো আপনাকে চার্লসের খবর জানাতে পারবো, টনি বলল।
ডরোথি বলল, চালর্স সম্বন্ধে আপনি বলবেন, তাহলে আসুন একটা টেবিলে বসা যাক। এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।
টেবিলে বসে টনি পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে ডরোথির হাতে দিল।
ডরোথি কার্ড দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল, বলল, তাহলে আপনি…
টনি ডরোথিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল…ব্যস আর কোনও কথা বলবেন না। জানেন তো দেওয়ালেরও কান আছে।
টনি এবার বলতে শুরু করল–এবার আমি যা বলছি মন দিয়ে শুনুন, ন্যাটোর মেমোরেন্ডাম শ্যানডন হাউস থেকে বেরিয়েছে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছি। আর ওই মেমোরেন্ডাম। টম কেলসোর টাইপ মেশিনে টাইপ করা হয়েছে।
ডরোথি ভয়ে কুঁকড়ে গেল।
আমার মনে হচ্ছে আপনারাও বিবাদের বাইরেনন।সমস্ত কেজিবি এখন ওয়াশিংটন নিউইয়র্কে তৎপর। চার্লসের উচিৎ ছিল সব কিছু খুলে বলা। এই প্রসঙ্গে আমি আরও একটু জানতে চাই। তাহলে আপনাদেরই সুবিধা হবে। আচ্ছা আপনি কী অস্বীকার করেন চার্লস কখনোই আপনাদের টাইপ মেশিনটা ধার করে নি?
ডরোথি ভয়ে কাঁপছে। বুঝতে পারছে না এই লোকটাকে কতটা বলা উচিৎ।
টনি বলল, দেখুন মিসেস কেলসো আমাকে আপনিশ ভাববেন না। আমি ব্রাডের বন্ধু। ব্রাড আমাকে নিজের ভাই–এর মত ভালবাসে। চার্লসের জীবনে মস্ত বড় বিপদ আসছে তাই কেজিবির গতিবিধি ছাড়াও আমাদের নিজেদের লোকেদের বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হচ্ছে।
আমাদের এখন সবথেকে জরুরী কাজ হল ওদের লোকেদের খুঁজে বের করা। আপনি আশাকরি আমার সব কথা বুঝতে পারছেন, টনি বলল ডরোথিকে।
ডরোথি সম্মতি সূচক ঘাড় নেড়ে বলল, হ্যাঁ।
তাহলে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনাদের টাইপ মেশিনটা চার্লস কখনো ধার নিয়েছিল? এটা খুবই জরুরী, শুধু ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য নয়, জীবন বাঁচানোর জন্যও।
ডরোথি বলল, হ্যাঁ।
আচ্ছা কিছুক্ষণ আগে ক্লোকরুমের সামনে আপনি একজন যুবকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ও মনে হয় ব্যাসিল মীডি–তাই না? টনি জিজ্ঞাসা করল।
ডরোথি চমকে উঠল। না তো! ও তো রিক নীলে, চার্লসের বন্ধু।
টনি বলল ও তাহলে ইনিও শ্যানডন হাউসেরই স্টাফ।
ডরোথি বলল, না না, উনি হলেন কমুনিকেশন ডিপার্টমেন্টের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী।
না তাহলে মনে হয় আমার চিনতে ভুল হয়েছে। টনি বলল, ওর সঙ্গে চার্লসের দেখা সাক্ষাৎ হয়
আগে দুজনের খুব ভাব ছিল। এখন শুনছি ওদের আর তেমন দেখা সাক্ষাৎ হয় না, ডরোথি বলল, আমি ওর কাছে চার্লসের খবর জানতে চাওয়ায় ও বলল বোধহয় একযুগ ওদের দেখা সাক্ষাৎ নেই।
নিউইয়র্কে থাকে?
একই বাড়িতে, নিজের ফ্ল্যাটে।
টনি বলল, তাহলে ওদের দুজনের সাক্ষাৎ নেই কেন?
ডরোথি বলল, মনে হচ্ছে দুজনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়েছে।
খুবই দুঃখের, সহানুভূতি জানালো টনি।