চন্দ্ররূপে সোম
ব্ৰাহ্মণ-সাহিত্যের সাক্ষ্য অনুযায়ী নৌ-বাণিজ্য সে সময়ে সমৃদ্ধতির হয়ে উঠেছিল এবং সেই সঙ্গে যে সমস্ত গ্রহ ও নক্ষত্ৰ নাবিকদের সমুদ্রযাত্রাকে পরিচালিত করত–সেই সব গ্রহনক্ষত্র জনসাধারণের কাছে অতিরিক্ত তাৎপৰ্যপূর্ণ হয়ে উঠল। ব্যাবিলন থেকে অর্জিত জ্যোতির্বিদ্যা ভারতীয়দের চিত্তলোকে সুদূর-প্রসারী প্রভাব বিস্তার করায় ভারতবর্ষে তার চর্চা শুরু হল এবং তারকাপুঞ্জকে বিভিন্ন দেবতার সঙ্গে সম্পর্কিত করে তোলা হল। সোমের দৈবীকরণ এবং আকাশের চন্দ্রের সঙ্গে তার একাত্মীকরণ এই প্রেক্ষিতেই বিবেচ্য। আর্যদের দেব-সঙ্ঘের বহু সৌর-দেবতা থাকলেও তখনও পর্যন্ত কোনো চান্দ্ৰ দেবতা ছিল না, যা মধ্যপ্রাচ্যে সর্বত্রই ছিল। সোমকে চন্দ্ররূপে উপস্থাপিত করে এই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা হল। তারকা-পরিবৃত চন্দ্ৰ যেন সামন্ত অভিজাতবর্গ ও সভাসদ-পরিবেষ্টিত পার্থিব রাজারই দৈবপ্রতিরূপ হয়ে উঠল। তাছাড়া, পাত্রে ঢেলে দেওয়ার সময় ফেনিল শুভ্ৰ সোমরসে শ্বেত শুভ্ৰ চন্দ্রালোকের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা হ’ল। রাজা সোম ও উদ্ভিদ সোম আকাশ-বিহারী চন্দ্ররূপে নতুন তাৎপর্যে মণ্ডিত হ’ল।