[২০শে সেপ্টম্বর, দশম দিবসের অধিবেশনে প্রদত্ত]
খ্রীষ্টানদের সর্বদাই স্পষ্ট কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত; আমার বোধ হয়, যদি আমি তোমাদের একটু সমালোচনা করি, তাহাতে কিছু মনে করিবে না। তোমরা খ্রীষ্টানেরা পৌত্তলিকদের আত্মাকে উদ্ধার করিবার জন্য তাহাদের নিকট ধর্মপ্রচারক পাঠাইতে খুব উদ্গ্রীব, কিন্তু বলো দেখি, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের কবল হইতে তাহাদের দেহগুলি বাঁচাইবার জন্য কোন চেষ্টা কর না কেন? ভারতবর্ষে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের সময় সহস্র সহস্র মানুষ ক্ষুধায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়, কিন্তু তোমরা খ্রীষ্টানেরা কিছুই কর নাই! তোমরা ভারতে সর্বত্র গির্জা নির্মাণ কর, কিন্তু প্রাচ্যে সর্বাধিক অভাব-ধর্ম নয়, ধর্ম তাহাদের প্রচুর পরিমাণে আছে। ভারতের কোটি কোটি আর্ত নরনারী শুষ্ককন্ঠে কেবল দুটি অন্ন চাহিতেছে। তাহারা অন্ন চাহিতেছে, আর আমরা তাহাদিগকে প্রস্তরখন্ড দিতেছি। ক্ষুধার্ত মানুষকে ধর্মের কথা শোনানো বা দর্শনশাস্ত্র শেখানো, তাহাকে অপমান করা। ভারতে যদি কেহ পারিশ্রমিক লইয়া ধর্মপ্রচার করে, তবে তাহাকে জাতিচ্যুত হইতে হয়, সকলে তাহাকে ঘৃণা করে। আমি আমার দরিদ্র দেশবাসীর জন্য তোমাদের নিকট সাহায্য চাহিতে আসিয়াছিলাম, খ্রীষ্টান দেশে খ্রীষ্টানদের নিকট হইতে অখ্রীষ্টানদের জন্য সাহায্য লাভ করা যে কি দুরূহ ব্যাপার, তাহা বিশেষরূপে উপলব্ধি করিতেছি।
[ইহার পর সনাতনধর্মের পুনর্জন্মবাদ সম্বন্ধে কিছু বলিয়া তিনি বক্তৃতা শেষ করিলেন।]
[২২শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার দ্বাদশ দিবসের অধিবেশনে হিন্দুধর্মের বিষয়েই অধিক বলা হইয়াছিল। সেই দিবস স্বামী বিবেকানন্দ সনাতনধর্ম সম্বন্ধে অনেক কথা বলেন। নানামতাবলম্বী নরনারীগণ তাঁহাকে অতিশয় আগ্রহ সহকারে শত শত ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন করিয়া ছিলেন। তিনিও তৎক্ষণাৎ অতি নিপুণতার সহিত সেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়া তাঁহাদের কৌতুহল চরিতার্থ করেন। সেদিন তিনি তাঁহাদের হৃদয়ে হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে এতদুর কৌতূহল উদ্দীপিত করিয়াছিলেন যে, তাঁহারা সকলে সমবেত হইয়া তাঁহাকে সনাতনধর্ম সম্বন্ধে আর একদিবস অন্যত্র বক্তৃতা দিবার জন্য অনুরোধ করেন, তিনিও তাহাতে স্বীকৃত হন।]