০৫. কলকাতার খবরের কাগজ

॥ পাঁচ ৷৷

আঃ! আবার কতদিন পর কলকাতার খবরের কাগজ! কলকাতার ভোর। কলকাতার সোঁদা স্যাঁতা গন্ধ! গত রাত্রি যেন দুঃস্বপ্নের মতো প্যাভেলিয়নে ফিরে গেছে।

মাঝরাত্তিরে শুয়েও ভোরবেলা উঠেছে শ্যামল। পৌঁনে ছ’টায়। উঠেই কেমন ফ্রেশ লাগছে। ক্লান্তি নেই, গ্লানি নেই। মনটা ফুরফুর করছে। আজ অবধি তার ছুটি। কাল জয়েন করবে অফিসে। একটি আলস্যে ভরা শ্লথ দিন সামনে পড়ে আছে ভাবলেই মনটা খুশিয়াল হয়ে ওঠে।

তার ফ্ল্যাটটা মাঝারি মাপের। তিনটে শোওয়ার ঘর, একটা লম্বা ডাইনিং কাম লিভিং, ছোট ব্যালকনি। চারতলার মনোরম আবাস, তার রঙিন টিভি আছে, দেয়ালে প্লাস্টিক পেইন্ট, দু-চারটে বেশ দামি আসবাব, ওয়াল ক্যাবিনেট, প্রাণপণে খরচ করে সাজিয়েছে তারা। যদি তাতে সুখী হওয়া যায়। মুশকিল হল সুখ একবগ্না জিনিস নয়। এই যে সকালবেলাটা তার এত ভাল লাগছে— এ সুখ হয়তো বেলা দশটায় আউট হয়ে প্যাভেলিয়নে ফিরে যাবে, ব্যাট করতে নামবে তিক্ততা এবং রাগের একটি জুটি। তারা হয়তো অনেকক্ষণ টিকে থাকবে উইকেটে। যতক্ষণ বকুল ঘুম থেকে উঠছে না ততক্ষণে নিশ্চিন্ত। উঠলেই কিন্তু অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।

বকুল এখন গভীর ঘুমে। পাশে টুকুস, গভীর ঘুমে। চটপট নিজের হাতে চা করে নিল শ্যামল। তারপর চায়ের কাপ আর খবরের কাগজ নিয়ে বসল তার অভ্যস্ত প্রিয় সোফায়, পাশেই জানালা। পুবের রোদ একটু কোনাচে হয়ে এই সময়টায় ঢোকে তার ফ্ল্যাটে। দু’পাশে এবং সামনে উঁচু উঁচু বাড়ি থাকায় এ বাড়িতে ঢুকতে রোদকে রীতিমতো ব্যায়াম করতে হয়। তা হোক তবু তার ফ্ল্যাটে যথেষ্ট আলো হাওয়া আছে। সে সুখী। যতক্ষণ বকুল ঘুমোচ্ছে ততক্ষণ সে সুখী…

কিন্তু বকুল জাগা মানেই বিবেক জাগল। বিবেক জেগে উঠেই তাকে নিয়ে পড়ল। সে যে কত অপদার্থ, কত অযোগ্য, কত ভিতু, কত অসফল সেই সব কথাই তার বিবেকের হয়ে প্রম্পট করে বকুল। সেই বকুল যাকে ছাড়া বাঁচবে না, নির্ঘাত মরে যাবে বলে মনে হয়েছিল তার, একদা। ওই একদা কথাটাই তাকে পেড়ে ফেলে। কেন সে একদা যে অত বোকা ছিল, প্রেমিক ও রোমান্টিক। শেকসপিয়র সাহেবও কি বোকা ছিলেন না? রোমিও জুলিয়েটের ট্র্যাজিক প্রেমের গল্প আজও দুনিয়াসুদ্ধ লোককে কাঁদায়। দুনিয়াসুদ্ধ লোক যদি তারই মতো বুরবক হয় তা হলে কী করতে পারে শ্যামল? শেকসপিয়র সাহেব, যদি রোমিও আর জুলিয়েটকে মিলিয়ে দিতেন তা হলে কী হত স্যার, একবার ভেবে দেখেছেন। প্রেমের কথাটুকুই লিখেই কলম পুঁছে ফেললেন, কিন্তু গল্পের পরও তো গল্প আছে। ধরুন স্যার, রোমিও আর জুলিয়েট বিয়েতে বসল, তিন মাস পর থেকে শুরু হল খটাখটি, তারপর চেঁচামেচি এবং চঁা ভা, আর তারপর সাহেবদের দেশ বলে কথা, রোমিওর হয়তো জুটল আরও জুলিয়েট, জুলিয়েটের জুটল আরও রোমিও, কেঁচে গেল বিয়ে কেঁচে গেল প্রেম, খাট্টা হয়ে গেল সম্পর্ক। এইসব প্রেমের কী দাম আছে মশাই? তবু যে প্রেমটা কেন বর্তে আছে দুনিয়ায় সেটাই হল প্রশ্ন।

আজকাল তার মাঝে মাঝেই মনে হয়, খুব মনে হয়, মানুষের এইসব ভ্যাবলাকান্ত আচরণের পিছনে কারও একটা অদৃশ্য হাত আছে। অতি পাজি ও ধূর্ত একটা হাত। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেওয়া যায় যে হাতটা ওই বিতর্কিত পার্সোনালিটি ভগবানের তা হলে স্বীকার করতেই হয় ওরকম লোকের জন্য গির্জা-মন্দির-মসজিদ বানানো নিতান্তই গাঁটগচ্চা দেওয়া। রামমন্দির বাবরি মসজিদের কাজিয়ার পিছনে কি ওই কালো হাতটাই নেই? একটা অ্যান্টি-গড মিছিল বের করলে কেমন হয়? তাতে স্লোগান থাকবে, ভগবানের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও।

রোদটা চোরের মতো ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে ঘাড়ের কাছে। উত্তরমুখো ফ্ল্যাট বলে শীতে রোদ আসে না। এই ভৌগোলিক গণ্ডগোলের জন্য সে ছাড়া আর কোন অদূরদর্শী আহাম্মক দায়ী। সকালের এই এক চিলতে রোদ দাঁত কেলিয়ে তার সঙ্গে একটু হেঁ হেঁ ভদ্রতা করতে আসে। মাঝে মাঝে তার চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, গেট আউট! নিকালো হিয়াসে! ছ্যাচড়া কোথাকার, যারা কপাল করে এসেছে তাদের বাড়ি গিয়ে চাকরের মতো শীতের রোদ ঢেলে দিয়ে এসো গিয়ে। তোমাদের সবাইকে হাড়ে হাড়ে জানি।

সকালের সুখ-সুখ ভাবটা মানসিক উত্তেজনায় চলে যেতে চাইছে। শ্যামল নিজেকে শাসন ও সংযত করল। রোদের দিকে চেয়ে বলল, অলরাইট ম্যান, তোমার ওপর আমার রাগ নেই। এসেছ যখন, ওয়েলকাম। কিন্তু আমার দুঃখের কপালটার কথাও একটু ভেবো হে। দুনিয়ায় আমার যত চেনা-জানা সবাই কেমন সাউথ-ফেসিং ফ্ল্যাট পায়? কার কালো হাত অলক্ষ্যে কাজ করে বলল তো! গ্রেটা গার্বো নয়, সায়রা বানু নয়, শ্রীদেবী নয়, মোস্ট অর্ডিনারি একটা বাঙালি মেয়ের কাছে এই নর্থ-ফেসিং ফ্ল্যাটের জন্য আমাকে কীরকম নাকাল হতে হয়, জানো? আর বদমাশ প্রোমোটার ব্যাটা আমাকে বুঝিয়েছিল, বেশ মোলায়েম আন্তরিক গদগদ গলায় সেই পাক্কা হেড টু ফুট চারশো বিশ আমাকে বুঝিয়েছিল, দুটো → একটু বিস্ময়ে উপরে তুলে বুঝিয়েছিল, সে কী দাশগুপ্ত সাহেব, আপনিও এই দক্ষিণের দলে? আপনি তো কালচার্ড মানুষ, নিশ্চয়ই জানেন, আর্টিস্টদের পছন্দ উত্তরের ফ্ল্যাট, উত্তরের আলো হচ্ছে ছবি আঁকার পক্ষে সবচেয়ে ভাল। যার চোখ আছে, পছন্দ আছে, রুচি আছে সে যে কেন দক্ষিণের ফ্ল্যাট নেয়! আমার হয়ে গেল ওই শুনে। তেলে ভগবান মজে, আমি তো ছার। ভেবে বোসো না যে আমি ভগবানে বিশ্বাস করি। তবে আমি যে এক সময়ে একটু আধটু ছবিও আঁকতুম, সেই ধূসর স্মৃতি এমন ঠেলে উঠল যে, অন দি স্পট ডিসিশন নিয়ে ফেললুম, নাঃ, উত্তরের ফ্ল্যাটই নেব। এখনও সেই আহাম্মকির হ্যাপা সামলাতে হচ্ছে।

কাগজে মন বসাতে পারছিল না শ্যামল। কত অ্যাং ব্যাং খবরে বোঝাই, মিথ্যের ঝুড়ি, পলিটিকসের কূটকচালিতে আঁস্তাকুড় খবরের কাগজ জিনিসটা না হলে কেন যে তবু সকালে মানুষের কোষ্ঠ পরিষ্কার হতে চায় না তা বোঝে না শ্যামল। চা খেতে খেতে অন্তত পঁচিশ দিন বাদে কলকাতার খবরের কাগজ পড়ছে সে।

পাতা উলটে একটা খবরে চোখ আটকাল তার। দেওঘরে একজন এম পি তার নিজের বাড়িতে খুন হয়েছেন। হত্যাকারীরা উগ্রবাদী এবং বহিরাগত। হত্যার আগে কয়েকদিন তারা নিহতের পুরো পরিবারকে একরকম বন্দি করে রাখে এবং প্রচুর টাকা আদায় করে নেয়। সন্দেহ করা হচ্ছে উগ্রবাদীদের নেতা কুখ্যাত সুরিন্দর। পীতাম্বর মিশ্রকে সপরিবারে খুন করার পর তারা গভীর রাতের ডাউন দানাপুর এক্সপ্রেসে কলকাতা পালিয়ে গেছে।

সন্ত্রাস আর সন্ত্রাস। অন্তত পশ্চিমবঙ্গটা এদের আওতায় ছিল না এতদিন। এখন যদি একে একে দুইয়ে দুইয়ে এখানেও ঢুকতে থাকে তা হলে আর ভরসাটা কীসের? ওরা বাজারে হাটে যেখানে সেখানে ট্যারা-রা-রা ট্যাট… ট্যাট করে ছেড়ে দিচ্ছে ঝাকে ঝাকে গুলি, টু হুম ইট মে কনসার্ন। রাম গেল না রহিম গেল তাতে কিছু যায় আসে না। মাত্র দুটো এ কে ফর্টি সেভেন নিয়ে দুটো শিখ উগ্রবাদী গোটা পুরুলিয়াকে প্রায় দখল করে নিয়েছিল, ভোলেনি শ্যামল। মাত্র সপ্তদশ অশ্বারোহী একদিন বুড়ো রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজ্য বাংলাকে জয় করে নিয়েছিল, তার চেয়েও এটা আরও খারাপ ঘটনা। আবার তার চেয়েও খারাপ এই সুরিন্দরের এদিকপানে আসা।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে কিছু নেই ঠিকই, যেমন ভগবান নেই, হিপনোটিজম নেই, ভূত নেই, পরি নেই, পক্ষীরাজ ঘোড়া নেই। তবু শ্যামলের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে অনেকক্ষণ ধরে। শ্যামল সেটা বুঝতে পারছিল না এতক্ষণ। হঠাৎ দেয়ালের ইলেকট্রনিক ঘড়িটার দিকে চেয়ে সে ঝড়াক করে উঠে দাঁড়াল। বাজার! আজ সকালে বাজার না হলে রান্না হবে না। বাজার এনে ফেলতে হবে পৌঁনে আটটার মধ্যেই, কারণ প্রতি সকালে সে সাতটা পঞ্চাশ মিনিটের টিভি-র ইংরিজি খবরটা ভক্তিভরে দেখে এবং শোনে। সকালের খবরটায় কিছু বিদেশি সংবাদ থাকে।

ঘরে এসে পাতলুন চড়াতে চড়াতে সে তার বউ আর মেয়েকে লক্ষ করে। তার গোটা দুনিয়া কনসেনট্রেট করে আছে এইখানে, ওই বিছানায়। সে যা-কিছু করে তার যাবতীয় শ্রম ও চিন্তা, উদ্বেগ ও প্ল্যানিং সব কিছু মাত্র এই দু’জনকে কেন্দ্র করে। অথচ পৃথিবীটা কত বড় এবং তাতে জীবাণুর মতো কোটি কোটি মানুষ। রোগ-ভোগ, এইডস, ক্যানসার, ভূমিকম্প, বন্যা, আগুন, সুরিন্দর সবাই মিলে এত মেরে মেরেও নিকেশ করতে পারছে না। রক্তবীজের ঝাড় জনসংখ্যা ক্রমে সংখ্যা ছাড়িয়ে চলেছে অসীমের দিকে। এই এত মানুষের জন্য তার কোনও চিন্তা নেই, দায় নেই, দায়িত্ব নেই। তার জন্য মাত্র দুটো মানুষ! ওনলি টু! এবং দুটোই লেডিজ!

বকুলের মুখে কোনও আঁচিল ছিল কি? সর্বনাশ! মনে তো পড়ছে না! কিন্তু ঘুমন্ত বকুলের মুখে বাঁ চোখের নীচে মস্ত আঁচিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে! তাহলে কি ছিল, সে লক্ষ করেনি এতদিন! এবং আঁচিলটার ফলে বকুলকে যে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে, এটাও সে লক্ষ করেনি নাকি এতদিন! সর্বনাশ! এতকালের— না হোক পাঁচ বছরের তো বটেই বিয়ে করা বউয়ের আইডেন্টিফিকেশন মার্কগুলো তার জানা নেই, এটা কেমন কথা? সত্য বটে মেয়েদের চেনে এমন বাপের ব্যাটা আজও জন্মায়নি, তা বলে আঁচিলটা এতকাল তার চোখকে ফাঁকি দিয়ে রয়ে গেল কী করে?

একটু ঝুঁকে সে দেখতে পেল, না আঁচিল নয়, একটা মাছি। আগন্তুকের সাড়া পেয়েই উড়ে গেল। বাঁচা গেল বাপ! শ্যামল তো ঘামতে শুরু করেছিল, মাঝরাতের ট্রেন থেকে কোনও পরমহিলাকে ঘুমচোখে নামিয়ে নিয়ে এল নাকি।

জামা পরতে পরতে হঠাৎ আবার শ্যামল একটু ঝুঁকে বকুলের মুখখানা দেখল। হতেও পারে, এ এক পরমহিলাই। মুখে একটু মৃদু সুন্দর সুখের হাসি, একটা স্বপ্নময়তার চোরা ঢেউ যেন উথলে আনছে মুখের লাবণ্যকে। বকুল সুন্দর বটে, কিন্তু এ যে সামথিং এল। পলকহীন চোখে চেয়ে থাকে শ্যামল। সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে, এখন এই মুহূর্তে বকুল তার বউ নয়। বকুল এখন অন্য কাউকে দেখছে স্বপ্নে। অন্য এক পুরুষ কি? যার মধ্যে শ্যামলের ড্র-ব্যাকগুলো নেই?

কে লোকটা? কাল গাড়ির সেই পুলিশ অফিসারটি কি? সেই বিষণ্ণ রুস্তম!হ্যাঁ, হ্যান্ডসাম, মেলাঙ্কলিক, লোনলি সব ঠিক আছে। পুরুষালিও। তাই বলে… ঠিক আছে ভাই, চালিয়ে যাও। চালিয়ে যাও। লাইফ তো দু’দিনের বই নয়। যা পাও, কুড়িয়ে কাচিয়ে লুটেপুটে তুলে নাও জীবন থেকে। শ্যামল আদ্যন্ত স্পোর্টসম্যান। কিছু মাইন্ড করবে না।

ছোকরা ব্রড-মাইন্ডেড বলে ভেবেছিল শ্যামল। এখন মনে হচ্ছে, ডাল মে কুছ কালা ভি হ্যায়। এমন তো হতেই পারে যে, ট্রেনে গতকাল অনেকক্ষণ দু’জনে দু’জনকে একটু একলাএকলি পেয়েছিল। এবং তখন একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে যায়! কিছুই অসম্ভব নয়। ট্রেনটা ওইরকম অসম্ভব লেট না করলে হয়তো ঘটতে পারত না ব্যাপারটা।

ট্রেন লেট করা যে খুব খারাপ তা বাজারের দিকে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ হৃদয়ঙ্গম করল সে। ট্রেন লেট হওয়ার বিরুদ্ধে সে কাগজে খুব কড়া করে চিঠি লিখবে।

এমন কি হতে পারে যে, সুরিন্দরকে ধরার জন্যই বিশ্বরূপকে দিল্লি থেকে পাঠানো হয়েছে! হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে বিশ্বরূপের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম। সুরিন্দরের এ কে ফটি সেভেন আছে। বাক আপ সুরিন্দর, তোলো এ কে ফর্টি সেভেন, চালাও গোলি, খতম কর দো শ্যালেকো…

বাজার করাটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়ে থাকে শ্যামল। তার ভিতরে যে লড়াকু লোকটা আছে সে মালকেঁাচা মারে, আস্তিন গোটায়, পাঁয়তারা ভাঁজে, বাজার মানেই ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতাঃ যুযুৎসবঃ, প্রত্যেকেই দুর্যোধন, দুঃশাসন, জরাসন্ধ। কাম অন দুর্যোধন, কাম অন দুঃশাসন..

স্যার, অনেকদিন দেখিনি আপনাকে! পুজোয় বাইরে গিয়েছিলেন বুঝি! ভাল পিরশে আনলাম একদিন, আপনি তো পারশে খুব ভালবাসেন, খুব মনে হচ্ছিল আপনার কথা।

সাবধান! সাবধান!–বলে ভিতরের লড়াকু লোকটা চেঁচিয়ে উঠল, দুঃশাসন প্যাঁচ কষছে স্যার ডেকে, নেই আঁকড়ে ভাব করে তোমাকে ভিজিয়ে ফেলছে, বি স্ট্রং অ্যান্ড আনবেন্ডিং …

কিন্তু এখনকার দুঃশাসনদের অস্ত্রশস্ত্র আলাদা। এ এক অন্য ধরনের এ কে ফর্টি সেভেন।

আজ ফার্স্টক্লাস কই আছে স্যার, এ বাজারে এই প্রথম উঠল। দর একটু কম করে দেব’খন।

শ্যামল ভিজল এবং নেতিয়ে পড়ল। দশখানা কই মাছ দাপাতে লাগল তার নাইলনের ছোট ব্যাগে। সম্ভবত তারাও ভৎসনাই করতে চাইছে তাকে। সে যে কলকাতায় ছিল না, অনেকদিন সে যে বাজারে আসেনি এটা লক্ষ করেছে আলুওয়ালাও। লক্ষ করেছে সবজিওয়ালাও। লক্ষ করেছে ডিমউলিও। খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। তার বিরহে এরা খানিকটা কাতরও ছিল! দীর্ঘ বিরহের পর নিজের প্রিয়জনকে দেখে মানুষ যেমন খুশি হয় তেমনই খুশির ভাব এদের মুখেচোখে! পকেটে রুমাল থাকলে চোখের আনন্দাশ্রু মুছে ফেলত শ্যামল। তাড়াহুড়োয় রুমাল আনতে ভুলে গেছে। তবু সজল চোখে চারদিকে চেয়ে দেখল শ্যামল, ওহে কৃষ্ণ, উভয় সেনার মধ্যে আমার রথ স্থাপন করো, আমাকে দেখতে দাও কে আমার শত্ৰু, কে আমার মিত্র। আজ শ্যামল শত্রুপক্ষ খুঁজেই পেল না। সকলকেই তার বন্ধু বলে মনে হতে লাগল।

কই মাছ!–বলে আর্তনাদ করে উঠল বকুল। আর্তনাদ না হর্ষধ্বনি তা ঠিক বুঝতে পারল না শ্যামল। সে তো হর্ষধ্বনিই আশা করছিল। সিজনের প্রথম কই!

একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আত্মবিশ্বাসহীন গলায় সে প্রতিধ্বনি করে, কই মাছ! হ্যাঁ, কই। মাছই তো!

কঠিন-সুন্দর, হাস্যবিহীন মুখখানা তার দিকে ফিরিয়ে পলকহীন চোখে তিন সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বকুল বলে, কে কাটবে এখন কই মাছ! সরলা আজ আসেনি। ওই কাঁটাওলা মাছ এখন কে সামলাবে! কাল রাতেই না তোমাকে বলে রেখেছিলুম, শুধু ডিম পেঁয়াজ আর আলু আনলেই হবে!

শ্যামল খুব নিশ্চিন্ত গলায় বলে, নো প্রবলেম। ডিম সামনের মুদির দোকানেই পাওয়া যায়। মাছ বরং ফ্রিজে রেখে দাও।

ফ্রিজে! জ্যান্ত মাছ কখনও ফ্রিজে রাখে কেউ? কী বুদ্ধি!

তা হলে!

জ্যান্ত মাছ জলে রাখতে হয়।

ইয়েস ইয়েস, মাকেও দেখেছি ছেলেবেলায় জিয়োল মাছ জলে ছেড়ে রাখতে। ভুলে। গিয়েছিলাম।

রাখলেই তো হল না। জিইয়ে রাখলে সারাদিন খলবল করবে। সে এক অশান্তি।

কুইজ কনটেস্টের প্রতিযোগীর মতো শক্ত প্রশ্নের পাল্লায় চিন্তিত হয়ে পড়ে শ্যামল। ছোটখাটো কত ব্যাপারই যে কী সাংঘাতিক হয়ে উঠতে পারে!

যাবে? যাও না ওই লাল বাড়িটার পিছনে থাকে। ওর বরের নাম পরিতোষ।

শ্যামল ভারী অবাক হয়ে বলে, কোথায় যেতে বলছ!

সরলাকে ডেকে আনতে। খবর দিলেই চলে আসবে। ভাল ঘুম হয়নি, শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। সরলা এলে সব সামলে নেবে। আজ একটু রেস্ট নেওয়া দরকার।

ঝাড়া দশ মিনিট এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করল শ্যামল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উঠতে হল। লালবাড়ির পেছনে যে একটা বস্তি আছে তাই জানত না সে। বস্তি এমনিতেই নোংরা ও বিপজ্জনক বলে সে শুনেছে। পরিতোষকে সে চেনে না। সরলাকে পাওয়া যাবে কি না কে জানে! বস্তিবাসীরা ফ্ল্যাটবাড়ির লোকদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন কি? তারা আগন্তুকদের কী নজরে দেখে? অনেক প্রশ্ন মনের মধ্যে। তৎসহ গভীর উদ্বেগ।

অতিশয় উৎকণ্ঠার সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগল শ্যামল। এ যেন সুরিন্দরের রাইফেলের মুখে এগিয়ে যাওয়া।

লালবাড়ির পিছনে বস্তির চত্বরে ঢুকেই সে দেখতে পেল, রাস্তাময় বাচ্চাকাচ্চা খেলছে। তার মেয়ের চেয়েও ছোট বাচ্চারা বেওয়ারিশের মতো ধুলোবালি নোংরায় পড়ে আছে। সর্পিল একটা রাস্তায় প্রাণ হাতে করে ঢুকল সে এবং একজন মাঝবয়সি মহিলাকে পেয়ে একটু কাঁপা গলায় বলল, পরিতোষের ঘরটা কোথায়?

পরিতোষ! আরও ভিতরবাগে চলে যান। শেষের বাঁ দিকের ঘর।

সরলা কি আছে?

থাকতে পারে। দেখুন গিয়ে।

এগোতেই একটা বাঁধানো চাতাল। সেখানেও বিস্তর বাচ্চা, তবে নোংরা সব কাপড় শুকোচ্ছে, আঁশটে বিচ্ছিরি গন্ধ আসছে পচা মাছ রান্নার।

দাদাবাবু!–বলে আহ্লাদিত সরলা আঁচল সামলে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়াল। সম্ভবত কোলের বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিল।

উদ্বেগটা কেটে গেল শ্যামলের। একটা গভীর শ্বাস ফেলে বলে, তোমার বউদি ডাকছে তোমাকে।

কাল সন্ধেবেলাই তো ফেরার কথা ছিল আপনাদের। আমি গিয়ে সাতটা থেকে সেই রাত ন’টা অবধি বসে ছিলুম।

হ্যাঁ, আমরা মাঝরাতে পৌঁছেছি।

আপনি যান, আমি দশ মিনিটের মধ্যেই যাচ্ছি। খবর পেলে কোন সকালে চলে যেতাম।

বস্তি ছেড়ে ভদ্রলোকদের এলাকায় ঢুকে আরামের শাস ফেলল শ্যামল। চেনা দোকান থেকে এক প্যাকেট দামি ব্র্যান্ডের সিগারেট কিনল। প্রবলেম সলভড়। একটা মস্ত কাজ করার পর বিজয়ীর মতো লাগছে না নিজেকে? কই মাছ রান্না হবে, বকুলের বিশ্রাম হবে, এর চেয়ে সুসংবাদ আর আপাতত কী হতে পারে?

সিগারেট ধরাতে গিয়েই হঠাৎ বিশ্বরূপকে মনে পড়ল। নন-স্মোকার যখন সিগারেট খায় তখন স্মোকাররা স্পষ্টই বুঝতে পারে, লোকটা আনাড়ি। বিশ্বরূপ তাদের পারিবারিক জীবনে খানিকটা ঢুকে পড়ল নাকি? হয়তো আর দেখা হবে না কখনও, শরীরী হয়ে আর আসবে না কাছাকাছি, কিন্তু স্মৃতি হয়ে? চোরাপথে? গোপন হৃদয়ের দরজা খুলে?

বিশ্বরূপ কি একজন হিরো? ডার্ক, টল, হ্যান্ডসাম। জীবন-মৃত্যু নিয়ে নিয়ত ছেলেখেলা করে! যার প্রতিদ্বন্দ্বী সুরিন্দরের মতো ভয়ংকর সব লোক! মেয়েরা কি শুধুই বীরের পূজারি?

এইজন্যই খেলোয়াড়, হিন্দি সিনেমার নায়ক, পাইলট এবং গায়কদের তেমন পছন্দ করে না শ্যামল। এরা হল অনেকটা দীপশিখার মতো, যাতে ঝাপ দিয়ে পুড়ে মরতে চায় নারী পতঙ্গেরা। একটু যাত্রার ডায়ালগের মতো শোনালেও কথাটা তো আর মিথ্যে নয়।

কিন্তু বিশ্বরূপ হিরো কেন? বিশ্বরূপকে কাল অধিক রাত্রি পর্যন্ত পছন্দই তো ছিল শ্যামলের, আজ সকাল থেকে তবে অপছন্দ হচ্ছে কেন? বেলা বাড়ছে, খিদে পেয়েছে। খুব সম্ভবত সরলা গিয়ে জলখাবারের জন্য পরোটা আর আলুচচ্চড়ি বানাচ্ছে। তবু পাড়ার মস্ত সুন্দর পার্কটাতে কিছুক্ষণ বসে গভীরভাবে চিন্তা করল শ্যামল। দুটো সিগারেট উড়ে গেল। কোথাও পৌঁছানো গেল না। চিরকাল তার চিন্তার ধারা একটা চৌমাথায় এসে হারিয়ে যায়। পথ পায় না। ওইখানে একজন ট্র্যাফিক পুলিশ থাকলে তার সুবিধে হত, চিন্তার গতিটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারত সঠিক রাস্তায়।

পরোটাই। এবং আলুচচ্চড়িও। সরলাকে পাওয়া না গেলে এই প্রিয় জলখাবারটি আজ কিছুতেই জুটত না শ্যামলের কপালে। বড়জোর পাউরুটি এবং সম্ভবত একটি ডিমসেদ্ধ।

তিনখানা পরোটা খেয়ে তৃপ্ত শ্যামল উঠল এবং খবরের কাগজ নিয়ে আর-একবার বসল গিয়ে প্রিয় সোফায়। খবরের কাগজ কী বলছে? খবরের কাগজ বলছে, পৃথিবীর অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়। দিনকে দিন আরও খারাপ হবে। এবং আরও। শ্যামল সেটা জানে। কথা হল, ততটা খারাপই হবে যার ঢেউ এসে লাগবে তার চারতলার নিরিবিলি প্রিয় এই ফ্ল্যাটে? ভাবী পৃথিবী গোল্লায় যাক, কিন্তু টুকুসটার কোনও বিপদ হবে না তো! একটু আগে বস্তির বাচ্চাগুলোকে দেখে এসেছে সে, ওরকম কিছু অপেক্ষা করছে না তো তার ডলপুতুলের মতো মেয়েটার জন্য?

তোমার মুখটা আজ এত গোমড়া কেন বলো তো! বাথরুমের দরজায় মুখোমুখি দেখা হল দু’জনের। বকুল বেরোচ্ছে, শ্যামল ঢুকতে যাচ্ছে। কথাটা বলল বকুল।

শ্যামল তার গালে একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে বলে, বোধহয় দাড়ি কামাইনি বলে।

দাড়ি কামালেই বুঝি তোমাকে হাসিখুশি লাগে?

মেলাঙ্কলিক ফেস-এরও তো একটা অ্যাট্রাকশন আছে।

সে তোমার মুখ নয়। বিষণ্ণ মুখ আর গোমড়া মুখ কি এক হল?

তফাতটা কী?

সবার মুখে বিষাদ থাকে না, মানায়ও না।

তা হলে কাকে মানায়! হু ইজ দ্যাট রোমিও?

বাঃ রে, কাকে মানায় তা কে খুঁজতে গেছে! তোমাকে মানায় না এটা বলতে পারি।

 আমাকে কিছুই মানায় না, আমি জানি।

আহা, আবার ছেলেমানুষের মতো রেগে যাচ্ছে দেখো! তোমাকে অপমান করার জন্য মোটেই কথাটা বলিনি। শুধু সিম্পল একটা প্রশ্ন করেছি, মুখ গোমড়া কেন? তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হল?

হল। আমি মোটেই গোমড়া মুখ করে নেই। আমি একটু চিন্তিত। সেটাকে গোমড়া মুখ বললে অপব্যাখ্যা হয়।

আচ্ছা বাবা, ঘাট মানছি।— চুলে জড়ানো গামছাটা খুলতে খুলতে শ্যামলের দারুণ সুন্দরী স্ত্রী স্নানের পর আরও সুন্দরী দেখাচ্ছে— বলল, জিজ্ঞেস করতে পারি কি যে তুমি চিন্তিতই বা কেন? সকাল থেকে কী এমন ঘটল চিন্তার মতো?

শ্যামল তিলেক বিলম্ব না করে ঝটিতি একটা গল্প বানিয়ে নিয়ে বলল, সুরিন্দর ইজ হিয়ার অ্যান্ড বিশ্বরূপ ইজ হিয়ার। একটা ফ্যাটাল এনকাউন্টার অবশ্যম্ভাবী। উই মে লুজ এ গুড ফ্রেন্ড।

অবাক বকুল বলে, কিছুই তো বুঝলাম না, কী যা-তা বলছ?

শ্যামল একটা কপট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, বিশ্বরূপ এখানে কেন এসেছে জানো? সুরিন্দরকে ধরতে।

সুরিন্দরটা কে?

ওঃ, ইগনোরেন্স দাই নেম ইজ উয়োম্যান। সুরিন্দর হল সেই সাংঘাতিক আতঙ্কবাদী যার ভয়ে সরকার থরহরি। মাত্র কয়েকদিন আগে দেওঘরে একজন প্রাক্তন এম পি-কে সপরিবারে খুন করেছে। টোটাল ম্যাসাকার। সে এখন কলকাতায়। বিশ্বরূপের আসার কারণ হল সুরিন্দর।

এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারল কি শ্যামল? বউয়ের দ্বিচারিণী মুখখানা সে জহুরির মতো লক্ষ করছিল। সামান্য ফ্যাকাসে হয়ে গেল কি মুখটা?

তোমাকে কে বলল?

নির্বিকারচিত্তে মিথ্যে কথা বলে গেল শ্যামল।— কে আবার বলবে! বিশ্বরূপ নিজেই। করিডোরে সিগারেট খেতে খেতে। ওর মুখে যে মেলাঙ্কলিক ব্যাপারটা দেখতে পেয়েছ। সেটা আসলে ভয়।

সুরিন্দর কি টেররিস্ট?

টেররিজমের গডফাদার বলতে পারো। সুরিন্দর ইজ দা রুট অব টেররিজম। আজকের কাগজেই খবরটা আছে। দেখবে?

কেন যে মেয়েরা সাজে, সেটা এক বিরাট কুইজ শ্যামলের কাছে। বকুল স্নান করেছে। সব রূপটান ধুয়ে মুছে গেছে মুখ থেকে। এখন তার কাটা কাটা মুখচোখে স্বাভাবিক সৌন্দর্যের যে অসহনীয় প্রকাশ ঘটেছে তা কি বোঝে তার বোকা বউ?

বকুল শ্লথ অন্যমনস্ক হাতে মাথা থেকে গামছাটা সরিয়ে আনমনা পায়ে শোয়ার ঘরে চলে গেল।

বাথরুমে আজ গান গেয়ে হুল্লোড় করে স্নান করল শ্যামল। গল্পটা দারুণ বানিয়েছে সে। এ কথা খুবই সত্য যে, দুনিয়াতে কোথাও কিছুরই পুরো দখল পাওয়া যায় না। এই যে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি, কন্যা-পুত্র-কলত্রাদি কোনও কিছুরই ওপরেই মানুষের পুরো প্রভুত্ব নেই। লিজ, লং লিজ বা শর্ট টার্ম পজেশন মাত্র। বউও তাই। বকুলের সম্পূর্ণ হৃদয় জয় করে। নেওয়ার যথেষ্ট যোগ্যতা তার নেই। সম্ভবও নয়। তা হলে একই সঙ্গে তাকে রাজীব গাঁধী, অমিতাভ বচ্চন, ফাইটার পাইলট, ব্রিগেডিয়ার, হেমন্ত মুখার্জি, মাইক টাইসন, মারাদোনা এবং বোরিস বেকার হতে হয়। সুতরাং আংশিক দখল নিয়ে সে মোটামুটি খুশি। মাঝে মাঝে এক-আধজন আগন্তুক যদি সেই দখলে নাক গলায় তা হলেও তেমন কিছু নয়। সেটা স্পোর্টিংলি নিতে পারে শ্যামল। তবে তখন নিজের দখলটা একটু জাহির করেও নেওয়া উচিত। বিষণ্ণবদন ওই পুলিশ অফিসারটি যে খানিকটা মাথা খেয়েছে বকুলের এবং বকুল ওই বিষবেদন অফিসারের, তাতে সন্দেহ নেই। নইলে কেউ গভীর রাতে কষ্ট করে বাড়ি পৌঁছে দেয়! গাড়ির পরিচয় যত প্রগাঢ়ই হোক তা গাড়িতেই শেষ হওয়া উচিত। তাকে আবার বাড়িতে লাঞ্চে বা ডিনারের নেমন্তন্ন করা কেন বাপু?

যখন স্নান করে বেরোল শ্যামল তখন বাইরের ঘরে খবরের কাগজের ওপর আলুথালু হয়ে ঝুঁকে আছে বকুল। আলুথালু বলেই মনে হল শ্যামলের। শোয়ার ঘরে এসে আলমারির পূর্ণাঙ্গ আয়নায় এক কাপুরুষের মুখোমুখি হল শ্যামল।