কহিলেন মুনি, শুন নৃপমণি,
পূর্ব্ব-পিতামহ-কথা।
ব্যাস তপোনিধি, পূজে নিরবধি,
গান্ধারী সুবল-সুতা।।
তাঁর সেবাবশে, বর দিল ব্যাসে,
হইয়া হরষ-যুত।
মহা বলবান, স্বামীর সমান,
পাইবে শতেক সুত।।
পরম হরিষে, কতেক দিবসে,
গর্ভ ধরিল গান্ধারী।
কুড়ি মাস যায়, প্রসব না হয়,
চিত্তে চিন্তিত সুন্দরী।।
হেনকালে ধ্বনি, আচম্বিতে শুনি,
কুন্তীর হইল সুত।
শুনিয়া গান্ধারী, আপনা পাসরি,
হৈয়া পড়িল মূর্চ্ছিত।।
পুত্র হইলে জ্যেষ্ঠ, রাজ্যে হবে শ্রেষ্ঠ,
কুরুকুলে হবে রাজা।
কুন্তী ভাগ্যবতী, পাইল সন্ততি,
সবাই করিবে পূজা।।
আমি অভাগিনী, পরম পাপিনী,
কর্ম্মফল আপনার।
দ্বিবৎসর হইল, কিছু না জন্মিল,
পরিশ্রম মাত্র সার।।
প্রসবি যদ্যপি, ভাবনা তথাপি,
সহজে হইবে দাস।
হেন অনুমানে, দৃঢ় কৈল মনে,
গর্ভ করিব বিনাশ।।
লোহার মুদগরে, আপন উদরে,
নির্ঘাত করিয়া হানে।
পাই লোহাঘাত, গর্ভ হৈল পাত,
ধৃতরাষ্ট্র নাহি জানে।।
নাহি পদ মুণ্ড, সবে মাংসপিণ্ড,
গান্ধারী প্রসব হৈল।
ডাকাইয়া দাসী, চিত্তে ঘৃণা বাসি,
ফেলাইতে ইচ্ছা কৈল।।
জানিয়া কারণ, মুনি দ্বৈপায়ন,
আসি হৈল উপনীত।
বল ক্রোধ করি, শুন গো গান্ধারী,
এ কর্ম্ম কোন বিহিত।।
জানি সর্ব্ব ধর্ম্ম, কর হেন কর্ম্ম,
তোমার উচিত নহে।
হিংসা মহাক্লেশ, অধর্ম্ম অশেষ,
আপনা আপনি দহে।।
শুনিয়া বচন, লজ্জিত বদন,
কহে করযোড় করি।
তোমার বচন, হইল লঙ্ঘন,
এ বড় বিস্ময় হেরি।।
তুমি দিলা বর, শতেক কুমার,
হবে বলি আশা ছিল।
যুগল বরষে, মহাশ্রম ক্লেশে,
মাংসপিণ্ড জনমিল।।
বলে ব্যাস মুনি, শুন সুবদনি,
মোর বাক্য অন্য নয়।
দুঃখ পরিহর, মোর বাক্য ধর,
হইবে শত তনয়।।
শত কুম্ভ করি, ঘৃতে তাহা পূরি,
মাংসপিণ্ড সিঞ্চ জলে।
এত বলি মুনি, বসিলা আপনি,
মাংসপিণ্ড করি কোলে।।
শীতল জলেতে, সিঞ্চিতে সিঞ্চিতে।
যেন বিধি নিরমিল।
এক মাংসপিণ্ড, হৈল খণ্ড খণ্ড,
একাধিক শত হৈল।।
অঙ্গুলির পর্ব্ব, প্রায় হৈল খর্ব্ব,
ঘৃতকুম্ভে লৈয়া তুলে।
তবে তপোধন, সুদৃঢ় বচন,
গান্ধারী দেবীরে বলে।।
এই কুম্ভগণে, রাখিবা যতনে,
নাহি হও উতরোল।
আপন ইচ্ছায়, জন্মিবে তনয়,
নাহি ভাঙ্গ মোর বোল।।
এত বলি ঋষি, হিমালয়বাসী,
গেল হিমালয়ে চলি।
তবে কত দিনে, হৈল দুর্য্যোধনে,
মূর্ত্তিমন্ত যুগ কলি।।
ভীম যেই দিনে, জন্মিল কাননে,
সেই দিনে দুর্য্যোধন।
জনম মাত্রকে, ঘোর শব্দে ডাকে,
যেমন গৃধ্র গর্জ্জন।।
তার ডাক শুনি, যেন গৃধ্রধ্বনি,
গৃধ্রগণ সব ডাকে।
কুক্কুট শৃগাল, ডাকে পালে পাল,
নগর পূরিল কাকে।।
বহে তপ্ত বাত, সঘনে নির্ঘাত,
দশদিক যায় পড়ি।
মিহির মুদিল, রুধির বর্ষিল,
ঝনঝনা হর গিরি।।
এ সব চরিত, দেখি বিপরীত,
চিন্তিত কৌরবপতি।
ভীষ্ম মহামতি, বিদুর প্রভৃতি,
আনাইইল শীগ্রগতি।।
সবার অগ্রেতে লাগিল কহিতে,
ধৃতরাষ্ট্র গুণাধার।
শব্দ শুনা গেল, পাণ্ডুপুত্র হৈল,
বংশের জ্যেষ্ঠ কুমার।।
রাজা হবে সেহ, নাহিক সন্দেহ,
মোর মন তাহে সুখী।
মোর পুত্র হৈতে, অতি বিপরীতে,
বহু অমঙ্গল দেখি।।
বিধান ইহার, করিয়া বিচার,
কহ মোরে সর্ব্বজন।
রাজার বচন, শুনে সর্ব্বজন,
বিদুর কৈল তখন।।
ভারত সঙ্গীত জগত মোহিত,
কেবল অমৃতনিধি।
কাশীদাস কয়, খণ্ডে যম-ভয়,
পান কর নিরবধি।।