জন্মেজয় বলে, তবে কহ মুনিবর।
পিতামহে কোন্ বাক্য বলিল ধীবর।।
মুনি বলে, দাসরাজ বিবিধ বিধানে।
বিনয় পূর্ব্বক বলে শান্তনু-নন্দনে।।
পূর্ব্বেতে তোমার পিতা এসেছিলা এথা।
কন্যার কারণে কহিলেন এই কথা।।
এক্ষণে আপনি তুমি কহ মহাশয়।
মোর কর্ম্মদোষে ইহা ঘটনা না হয়।।
রূপেতে তোমার পিতা কামদেবে জিনে।
কুরুকুল মহাবংশ বিখ্যাত ভুবনে।।
হেন বংশে দিব কন্যা, ভাগ্য নাহি করি।
তবে এক কথা আছে এই হেতু ডরি।।
দেবব্রত বলে কহ আছে কোন্ কথা।
মম বশ হৈলে তাহা করিব সর্ব্বথা।।
দাস বলে, যুবরাজ কর অবধান।
যে কারণে নৃপে নাহি করি কন্যা দান।।
কন্যা দান করিলে শান্তনু নরবরে।
বৈরানল প্রজ্জ্বলিত হইবে যে পরে।।
তোমা হেন পুত্র যাঁর রাজ্যের ভাজন।
তাঁর কি উচিত পুনঃ পত্নীর গ্রহণ।।
তোমার মহিমা যত বিখ্যাত সংসারে।
তোমার ক্রোধেতে ইন্দ্র-আদি দেব ডরে।।
এতেক শুনিয়া বলে গঙ্গার নন্দন।
অনুমানে বুঝিলাম তোমার বচন।।
যতেক কহিলা তুমি নহে অপ্রমাণ।
নাহিক কন্যার দুঃখ আমা বিদ্যমান।।
সে কারণে সত্য আমি করি দাস-রাজ।
অবধানে শুন যত ক্ষত্রিয়-সমাজ।।
পিতার বিবাহ হেতু করি অঙ্গীকার।
আজি হৈতে রাজ্যে মম নাহি অধিকার।।
তোমার কন্যার গর্ভে যে হবে কুমার।
হস্তিনা-নগরে তার হবে রাজ্যভার।।
দাসরাজ বলে তব অব্যর্থ বচন।
আর এক মহাশয় আছে নিবেদন।।
তুমি সত্য করিলে, তা করিবে পালন।
পাছে দ্বন্দ্ব করিবে তোমার পুত্রগণ।।
সে কারণে ভয়ান্বিত আমার অন্তর।
এত শুনি দেবব্রত করিল উত্তর।।
আমি ত্যাগ করিলাম যদি রাজ্যভার।
পুত্র হেতু ভয় কেন হইল তোমার।।
তোমার অগ্রেতে আমি করি অঙ্গীকার।
বিবাহ-না করিব যে প্রতিজ্ঞা আমার।।
দেবব্রত এইমত বচন কহিল।
দেবতা গন্ধর্ব্ব নহে বিস্মিত হইল।।
ধন্য ধন্য শব্দে সবে চারিভিতে ডাকে।
হেন কর্ম্ম কেহ নাহি করে নরলোকে।।
যত বিদ্যাধরী আর অপ্সরী অপ্সর।
ঝাঁকে ঝাঁকে পুষ্পবৃষ্টি করে নিরন্তর।।
স্বর্গ হৈতে ডাক দিয়া বলে দেবগণ।
ভয়ঙ্কর কর্ম্ম কৈলা শান্তনু-নন্দন।।
দেবাসুর-নরে এই কর্ম্ম অনুপাম।
ভয়ঙ্কর কর্ম্ম কৈলা, ভীষ্ম তব নাম।।
সত্য করি কন্যা লয়ে দিবা জনকেরে।
আজি হৈতে সত্যবতী নাম কন্যা ধরে ।।
ভীষ্মেরে প্রতিজ্ঞা শুনি কৈবর্ত্তের পতি।
ভীষ্মে আনি নিবেদিল কন্যা সত্যবতী।।
সত্যবতী দেখি ভীষ্ম বলে যোড়-হাতে।
নিজ গৃহে চল মাতা, চড় আসি রথে।।
কন্যা লয়ে যায় ভীষ্ম রথ-আরোহণে।
হস্তিনা-নগরে প্রবেশিল কতক্ষণে।।
ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য যত জন ছিল।
অপূর্ব্ব শুনিয়া সবে দেখিতে আসিল।।
ধন্য ধন্য বলিয়া ডাকয়ে সর্ব্বজনে।
ভীষ্ম ভীষ্ম বলি রব হইল ভুবনে।।
কন্যা লৈয়া দিল তবে পিতার গোচর।
দেখিয়া শান্তনু হৈল বিস্ময় অন্তর।।
তুষ্ট হয়ে বর তবে দিলেন নন্দনে।
ইচ্ছামৃত্যু হবে তুমি আমার বচনে।।
ভীষ্ম-জন্ম-কর্ম্ম আর গঙ্গার চরিত্র।
অপূর্ব্ব ভারত-কথা ত্রৈলোক্য-পবিত্র।।
এ সব রহস্য কথা যেই নর শুনে।
শরীর নির্ম্মল হয় জ্ঞান ততক্ষণে।।
ব্যাসের রচিত চিত্র অপূর্ব্ব ভারত।
কাশীরাম দাস কহে পাঁচালীর মত।।