অশ্বশালে গিয়া ভৈমী. নিকটে দেখিল স্বামী,
পরিধান জীর্ণ ছিন্ন বাস।
দুঃখানলে অঙ্গ দহে, চক্ষে অশ্রুজল বহে,
সকরুণে কহে মৃদু ভাষ।।
শুন হে বাহুক নাম, দেখিয়াছ কোন ঠাম,
ধর্ম্মিষ্ঠ পুরুষ একজনে।
ক্ষুধা তৃষ্ণা পরিশ্রমে, স্ত্রীলোক আছিল ঘুমে,
একা ছাড়ি পলাইল বনে।।
বিনা নল পুণ্যশ্লোক, পৃথিবীর অন্য লোক,
কে করিল কহ নাম ধরি।
সদাকাল অনুব্রতা, বিশেষ পুত্রের মাতা,
কোন দোষে নহে দোষকারী।।
যমাগ্নি বরুণ ইন্দ্র, ত্যজিয়া অমরবৃন্দ,
করিল বরণ যেই জনে।
সদা বাঞ্ছা অনুবর্ত্তী, কি হেতু এমন বৃত্তি,
ত্যাগ করে নির্জ্জন কাননে।।
সভায় করিল সত্য, রাখিব তোমারে নিত্য,
না ছাড়িব জীবনে মরণে।
নল হেন সত্যবাদী, এমন করিল যদি,
তবে আর কি করিবে অন্যে।।
দময়ন্তী বাক্য শুনি, লাজে কহে নৃপমণি,
পাইলে কে ছাড়ে হেন রামা।
রাজ্যভ্রষ্ট লক্ষ্মীভ্রষ্ট, করিলেক যেই দুষ্ট,
বিচ্ছেদ করায় তোমা আমা।।
প্রিয়াকে ছাড়িয়া বনে, এবে দেখ বরাননে,
অস্থিচর্ম্ম প্রাণমাত্র ভোগ।
ইহা না ভাবিয়া চিতে, দেখিয়া আমারে জীতে,
না বুঝিয়া কর অনুযোগ।।
কলি ছাড়ি গেল আমা, তেঁই দেখিলাম তোমা,
ক্রোধ সম্বরহ শশিমুখি।
যেই নারী পতিব্রতা, না ধরে স্বামীর কথা,
স্বামী দোষ নয়নে না দেখি।।
আর শুনিলাম বার্ত্তা, করিবা কি অন্য ভর্ত্তা,
কহিল তোমার দ্বিজবর।
রাজ্যে রাজ্যে দূত গেল, সর্ব্বলোকে বার্ত্তা দিল,
ভৈমীর দ্বিতীয় স্বয়ন্বর।।
কোশলে শুনিয়া কথা, তেঁই আইলাম হেথা,
কারে বর দেখিব নয়নে।
এমত কুৎসিত কর্ম্ম, রাজকুলে লয়ে জন্ম,
কহ করিয়াছে কোন্ জনে।।
শুনিয়া স্বামীর বাণী, করিয়া যুগলপাণি,
নিতম্বিনী কহে সবিনয়।
তব হেতু মহারাজ, ত্যজিলাম কুললাজ,
ত্যজিলাম গুরুজন ভয়।।
পূর্ব্বে তব অন্বেষণে, পাঠাইনু দ্বিজগণে,
পর্ণাদ কহিল সমাচার।
তেঁই এ উপায় করি, পাঠাই অযোধ্যাপুরী,
কোন স্থানে নাহি যায় আর।।
সদা কায় মন প্রাণে, তোমা বিনা অন্যজনে,
নাহি চাহি নয়নের কোণে।
যদি কর পাপজ্ঞান, তোমার সাক্ষাতে প্রাণ,
বাহির হউক এইক্ষণে।।
চন্দ্র সূর্য্য বায়ু সাক্ষী, এখনি বলিবে ডাকি,
যদি আমি হই পতিব্রতা।
ভৈমী বলে উচ্চৈঃস্বরে, পুষ্পবৃষ্টি দেবে করে,
ডাকি বলে পবন দেবতা।।
ত্যজ রাজা মনস্তাপ, বৈদর্ভীর নাহি পাপ,
স্বধর্ম্মেতে হয়েছে রক্ষিতা।
যাবৎ গিয়াছ তুমি, রক্ষা করিয়াছি আমি,
তোমা হেতু কেবল চিন্তিতা।।
অকস্মাৎ এই বাণী, শুনিল দুন্দুভি ধ্বনি,
গগনে হইল আচম্বিত।
দেখি মনে হৈল শান্তি, খণ্ডিল নলের ভ্রান্তি,
ভৈমীর বুঝিয়া ধর্ম্মচিত।।
ধরিয়া যুগল করে, বসাইল ঊরু পরে,
আশ্বাস করিল মৃদুভাষে।
কর্কোটক নাগে স্মরি, কুৎসিত রূপ ছাড়ি,
পূর্ব্বরূপ তখনি প্রকাশে।।
অপূর্ব্ব ভারত-কথা, বিচিত্র নলের গাথা,
শ্রবণে সর্ব্বপাপ বিনাশে।
কমলাকান্তের সুত, হেতু সুজনের প্রীত,
বিরচিল কাশীরাম দাসে।।