এত শুনি রাজমাতা আপনা পাসরে।
দময়ন্তী কোলে করি অশ্রুজল ঝরে।।
এত কাল গুপ্তভাবে আছ মম ঘরে।
কি কারণে পরিচয় না দিলে আমারে।।
তোমার জননী হয় মম সহোদরা।
সুদাম রাজার কন্যা ভগিনী আমরা।।
বীরবাহু মম পতি, ভীম তব পিতা।
সে কারণে তুমি মোর ভগিনী দুহিতা।।
এই রাজ্য ধন যে আপন করি জান।
এত বলি বৈদর্ভীর করিল সম্মান।।
শুনি দময়ন্তী তাঁরে প্রণাম করিল।
বিনয় পূর্ব্বক তাঁরে কহিতে লাগিল।।
নন্দিনী সমান মোরে রাখিলা ভবনে।
না হইব কভু মাতা মুক্ত তব ঋণে।।
তোমায় আমায় আছে রক্তের যে টান।
তাই মোরে এত স্নেহ করেছিলা দান।।
এবে পিত্রালয়ে মাতা করিব গমন।
পিতৃ মাতৃহীন আছে নন্দিনী নন্দন।।
আজ্ঞা কর আমারে গো করিতে গমন।
শুনি রাজমাতা আজ্ঞা দিল সেইক্ষণ।।
দিব্য বস্ত্র অলঙ্কারে করিয়া সুবেশ।
দিব্য রথ দিয়া পাঠাইল নিজদেশ।।
সুদেব ব্রাহ্মণ সঙ্গে চলিল তখন।
নানাদেশ ভ্রমি আসে পিতার ভবন।।
শুনিয়া ভীমের পত্নী আইল তনয়া।
ঊর্দ্ধমুখে ধায় রাণী মুক্তকেশী হৈয়া।।
পিতা মাতা পুত্র কন্যা কৈল সম্ভাষণ।
একে একে মিলিলেক যত বন্ধুজন।।
ভোজন করিয়া ভৈমী করিল শয়ন।
একান্তে মায়েরে কহে করিয়া ক্রন্দন।।
জীয়ন্ত আছি যে আমি, না করিহ মনে।
কেবল আছয়ে তনু নল দরশনে।।
নিশ্চয় নলের যদি না পাই উদ্দেশ।
অনেলের মধ্যে আমি করিব প্রবেশ।।
এত শুনি মহাদেবী রাজস্থানে গিয়া।
কন্যারে যতেক কথা কহিল কান্দিয়া।।
শুন শুন নরপতি মোর নিবেদন।
চতুর্দ্দিকে পুনর্ব্বার যাক্ দ্বিজগণ।।
নলের বিচ্ছেদে কন্যা প্রাণ না রাখিবে।
কন্যার বিচ্ছেদে মম প্রাণ কিসে রবে।।
এত শুনি নরপতি আনে দ্বিজগণে।
চতুর্দ্দিকে পাঠাইল নল অন্বেষণে।।
সব দ্বিজগণে তবে বৈদর্ভী ডাকিল।
সবাকারে এইরূপে বচন বলিল।।
একাকী নির্জ্জন চিরি লয়ে অর্দ্ধ শাড়ী।
কোন দোষে ছাড়ি গেলা অনুরক্তা নারী।।
যেই দেশে যেই গ্রামে করিবে প্রয়াণ।
এই কথা জিজ্ঞাসিহ সবে সেই স্থান।।
ইহার উত্তর যদি দেয় কোন জন।
শীঘ্র আসি মম পাশে কহিবে তখন।।
ইহার সম্বাদ মোরে যেই আসি দিবে।
নিশ্চয় জানহ, সেই ভৈমীকে কিনিবে।।
এত শুনি চলিলেন যত দ্বিজগণ।
দেশে দেশে রাজ্যে রাজ্যে করে অন্বেষণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
শুনিলে পরম সুখ, জন্মে দিব্য জ্ঞান।।