০৪. রিয়াজের বাসা থেকে ফিরে

রিয়াজের বাসা থেকে ফিরে এসেই পরের দিন নিশীতা আমেরিকান এজেন্সিতে খোঁজ করে জানার চেষ্টা করল সত্যি সত্যি আমেরিকা থেকে কিছু বিজ্ঞানী এসে হাজির হয়েছে কি না, কিন্তু সে ভালো সদুত্তর পেল না। পরদিন বড় বড় হোটেলগুলোতে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু সেখানেও লাভ হল না, হোটেলগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় বাড়াবাড়ি রকমভাবে গোপন রাখে। পরদিন ভোরে সে এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনে একবার খোঁজ নেবার পরিকল্পনা করছিল, কার সাথে যোগাযোগ করলে সবচেয়ে ভালো হয় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে অন্যমনস্কভাবে খবরের কাগজটি হাতে নিয়ে সে চমকে ওঠে। প্রথম পৃষ্ঠার মাঝামাঝি বক্স করে। একটা খবর ছাপা হয়েছে, খবরের শিরোনাম–শহরে রহস্যময় আলোর রেখা! নিচে লেখা। গত রাত বারোটার দিকে দক্ষিণ-পূর্ব আকাশ থেকে একটা রহস্যময় আলো ঢাকা শহরের বুকে নেমে এসেছে। রাতে ঝড়বৃষ্টি ছিল না কাজেই এটি বজ্রপাত নয়। আলোটি বজ্রপাতের মতো আঁকাবাকা নয়, একেবারে সরলরেখার মতো। মনে হয়েছে উত্তরার কাছাকাছি কোথাও আলোটি নেমে এসেছে। খোঁজখবর নিয়েও সেই এলাকায় কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায় নি। আলোটি কোথা থেকে এসেছে কেউ বলতে পারে নি। এটাকে উল্কাপাত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, যদিও উল্কাটির কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় নি।

নিশীতা নিশ্বাস বন্ধ করে খবরটা কয়েকবার পড়ে ফেলল। তাকে কেউ বলে দেয় নি কিন্তু সে একেবারে নিশ্চিত হয়ে যায় এটিও ঠিক আগের মতো একটি মহাকাশযান। ব্যাপারটি নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে পারলে হত কিন্তু সেরকম একজন মানুষও নেই। একটা মহাকাশযান পৃথিবীতে চলে এসেছে এই কথাটি গুরুত্ব দিয়ে শুনেছে, হেসে উড়িয়ে দেয় নি সেরকম একমাত্র মানুষ হচ্ছে রিয়াজ হাসান। কিন্তু রিয়াজ হাসানও কোনো একটা বিচিত্র কারণে এই ব্যাপারটায় মাথা ঘামাতে চাইছে না। নিশীতা নাশতার টেবিলে বসে চা খেতে খেতে ঠিক করে ফেলল সে আবার রিয়াজ হাসানের সাথে দেখা করতে যাবে।

তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে সে তার মোটর সাইকেলে বসতেই তার সেলুলার ফোন বেজে উঠল, বাংলাদেশ পরিক্রমার সম্পাদক মোজাম্মেল হক ফোন করেছেন। দুপুর বারোটার সময় প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন, তাকে যেতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির নতুন ইনস্টিটিউট তৈরি হবে, সাংবাদিক সম্মেলনে সে ব্যাপারে একটি মহাপরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হবে। মোজাম্মেল হক নিশীতাকে দায়িত্ব দিলেন তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো আগে থেকে জেনে নিতে, সাংবাদিক সম্মেলনে যেন ঠিকভাবে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করতে পারে। নিশীতা মনে মনে একটা হিসাব করে বুঝতে পারে রিপোর্টটি লিখে শেষ করে জমা দিয়ে রিয়াজ হাসানের কাছে যেতে যেতে তার রাত হয়ে যাবে। এমনও হতে পারে যে আজ হয়তো যেতেই পারবে না।

নিশীতা মাথা থেকে রহস্যময় আলোর রেখা ব্যাপারটি এক রকম জোর করে সরিয়ে দিয়ে মোটর সাইকেলে চেপে বসল, কয়েক মুহূর্ত পরেই দেখা গেল তার সুজুকি এক্স এল ২০০ গর্জন করে বিজয় সরণি দিয়ে ছুটে চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনটি খুব প্রাণবন্ত সম্মেলন হল, এতজন প্রবীণ সাংবাদিকের মাঝে তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে নিশীতার একটু সন্দেহ ছিল,

কিন্তু শার্ট-প্যান্ট পরা মেয়ে বলেই কি না কে জানে, প্রধানমন্ত্রী তাকে বেশ সুযোগ দিলেন। জনশক্তি নিয়ে নিশীতার প্রশ্নটি ছিল খুব সুন্দর এবং একেবারে যথাযথ উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীরও একটু চিন্তা করতে হল।

সাংবাদিক সম্মেলনের রিপোর্টটা টাইপ করে জমা দিয়ে বার্তা সম্পাদকের সাথে কথা বলে সে যখন পত্রিকা অফিস থেকে বের হয়েছে তখন রাত দশটা, রিয়াজ হাসানের বাসায় যাবার জন্য বেশ দেরি হয়ে গেছে। পরদিন সকালেই যাবে ঠিক করে সে যখন তার মোটর। সাইকেলে বসেছে তখন তার সেলুলার ফোনটি আবার বেজে উঠল, নিশীতা অবাক হয়ে দেখল টেলিফোন নম্বরের জায়গায় বিচিত্র তারকা চিহ্ন! সে ফোনটি কানে লাগাতেই শুনল পুরুষ কণ্ঠে কেউ একজন বলল, নিশীতা?

গলার স্বরটি সে আগে শুনেছে কিন্তু কোথায় শুনেছে মনে করতে পারল না। নিশীতা ভুরু কুঁচকে বলল, হ্যাঁ, কথা বলছি।

আপনি কি এক্ষুনি আসতে পারবে?

আমি? কোথায় আসব?

আপনি বুঝতে পারছেন না?

না। বুঝতে পারছি না।

রিয়াজ হাসানের কথা মনে আছে?

আছে। অবশ্যই মনে আছে। কী হয়েছে তার?

নিশীতার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মানুষটি বলল, আপনি কি তার বাসায় আসতে পারবেন?

মানুষটির কথোপকথনে একটা বিচিত্র ব্যাপার রয়েছে কিন্তু সেটি কী নিশীতা ঠিক ধরতে পারল না। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা নিয়ে সে মাথা ঘামাল না, বলল, আসছি। আমি এক্ষুনি আসছি।

নিশীতার কথা শেষ হবার আগেই অন্য পাশের মানুষটি টেলিফোন রেখে দিল। নিশীতা কয়েক মুহূর্ত টেলিফোনটা হাতে নিয়ে বসে থাকে এবং খানিকটা বিভ্রান্তভাবেই টেলিফোনটা তার ব্যাগে রেখে দিয়ে মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন স্টার্ট করল। কিছুক্ষণের মাঝেই দেখা গেল নিশীতার সুজুকি এক্সএল ২০০ গর্জন করে এয়ারপোর্ট রোড ধরে উত্তরার দিকে ছুটে যাচ্ছে।

রিয়াজ হাসানের বাসায় পৌঁছানোর আগেই নিশীতা বুঝতে পারল সেখানে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। তার নির্জন বাসার সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বেশ কিছু গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে বোঝা যায় না কিন্তু কেন জানি নিশীতার মনে হল গাড়িগুলোর মাঝে এক ধরনের অশুভ ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে।

নিশীতা রিয়াজ হাসানের বাসার সামনে মোটর সাইকেল থামিয়ে গাড়িগুলোর ভিতরে তাকাল। আবছা অন্ধকারে ভালো করে দেখা যায় না, কিন্তু মনে হল ভিতরে পুলিশ কিংবা মিলিটারি। নিশীতা তাদের না দেখার ভান করে গেটের দিকে এগিয়ে যেতেই প্রায় অন্ধকার থেকে একজন মানুষ গেটের সামনে এসে দাঁড়াল, মানুষটি পুলিশ কিংবা মিলিটারির পোশাক পরে নেই কিন্তু তার হাঁটা বা দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গি দেখেই বোঝা যায় সে সশস্ত্র বাহিনীর লোক।

গেটে দাঁড়ানো মানুষটি নিশীতার পথ আটকে দাঁড়াল, নিশীতা মোটর সাইকেল থামিয়ে মাথা থেকে হেলমেট খুলে নিতেই মানুষটি একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল, শার্ট–প্যান্ট এবং হেলমেট পরে থাকায় নিশীতাকে সে মেয়ে ভাবে নি।

নিশীতা মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি একটু সরুন আমি ভিতরে যাব।

মানুষটি রুক্ষ গলায় বলল, আপনি এখন ভিতরে যেতে পারবেন না।

কেন?

মানুষটি একটু অবাক হয়ে নিশীতার দিকে তাকাল, তাকে যে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা যায় সে যেন সেটাই বুঝতে পারছে না। খানিকক্ষণ চেষ্টা করে আগের থেকেও রুক্ষ গলায় বলল, কারণ অর্ডার আছে।

কার অর্ডার?

আমার কমান্ডারের।

আপনার কমান্ডারের অর্ডার আপনার জন্য আমার জন্য নয়। আপনি সরে দাঁড়ান আমি ভিতরে ঢুকব।

মানুষটি নিশীতার কথা শুনে এত অবাক হল যে, সে প্রথমে রেগে উঠতেই ভুলে গেল। খানিকক্ষণ হাঁ করে নিশীতার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ সে রেগে উঠল, নিশীতার কথার জন্য যেটুকু তার চাইতে অনেক বেশি একজন মেয়ে হয়ে একজন পুরুষের সাথে এই ভাষায় কথা বলার জন্য। মানুষটি প্রায় চিৎকার করে বলল, এখান থেকে যান। না হলে–

না হলে কী?

না হলে ঝামেলা হবে।

কী ঝামেলা?

মানুষটি মুখ খিঁচিয়ে বলল, আমি আপনার সাথে রং-তামাশা করার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে নেই। এখান থেকে যান এটা আমার অর্ডার। তারপর দাঁত চিবিয়ে নিচু স্বরে এক দুটি শব্দ বলল যেটা নিশ্চিতভাবেই মেয়েদের সম্পর্কে একটি কুৎসিত গালি।

নিশীতা শীতল চোখে মানুষটির দিকে তাকাল, হঠাৎ করে মনে হল তার মাথার ভিতরে একটা বিস্ফোরণ ঘটে গেছে। সে নিশ্বাস আটকে রেখে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। মানুষটি এবার তার দিকে প্রায় এক পা এগিয়ে এল, ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয় তার গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দেবে। নিশীতা খুব ধীরে ধীরে তার মাথায় হেলমেটটি পরে নেয়, তারপর স্টার্টারে কিক দিয়ে সেটাকে চালু করা মোটর সাইকেলটিকে ঘুরিয়ে নেয়। রিয়াজের বাসা থেকে এক শ গজ দূরে গিয়ে সে মোটর সাইকেলটি আবার ঘুরিয়ে রিয়াজের বাসার। দিকে মুখ করে দাঁড়াল। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি তখনো বুঝতে পারছে না। নিশীতা কী করার পরিকল্পনা করছে।

নিশীতা ক্লাচে পা দিয়ে মোটর সাইকেলের এক্সেলেটারে চাপ দিয়ে ইঞ্জিনের গর্জনটা শুনে নিল। তার সুজুকি এক্সএল ২০০ এই এক শ গজে প্রায় আশি মাইল বেগ তুলতে

পারবে, তাকে নিয়ে মোটর সাইকেলের যে ভরবেগ হবে সেটা দিয়ে খুব সহজেই পলকা গেটটাকে কজা থেকে খুলে নিতে পারবে। রিয়াজের বাসার সামনে প্রচুর ফাঁকা জায়গা, একবার ভিতরে ঢোকার পর সে সহজেই মোটর সাইকেল থামিয়ে নিতে পারবে।

নিশীতা ক্লাচ ছেড়ে দিয়ে এক্সেলেটর ঘুরিয়ে তার সুজুকিকে গর্জন করিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে গেল। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি কল্পনাও করতে পারে নি যে একজন মানুষ এ রকম একটা কাজ করতে পারে। শেষ মুহূর্তে লাফ দিয়ে সে ছুটন্ত মোটর সাইকেল থেকে নিজেকে রক্ষা করল, নিশীতার সুজুকি এক্সএল ২০০ প্রচণ্ডবেগে গেটে আঘাত করে, হালকা ছিটকিনি ছিটকে গিয়ে গেটটি হাট হয়ে খুলে গেল। প্রচণ্ড শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে এবং এর মাঝে নিশীতা তার মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ করে একেবারে বাসার দোরগোড়ায় এসে মোটর সাইকেলটিকে থামাল।

বাইরের ঘরে আলো জ্বলছে, সেখানে বেশ কিছু মানুষ, গেট ভাঙার প্রচণ্ড শব্দ শুনে সবাই জানালা এবং দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। নিশীতা তার হেলমেট খুলে মোটর সাইকেলের ওপর রেখে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এল। তার বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ড ধকধক শব্দ করছে কিন্তু সে জোর করে মুখের ওপর কিছুই হয় নি এ রকম একটা ভাব ধরে রাখল। গেটের মানুষটা এবং আরো অনেকে তার পিছনে পিছনে ছুটে আসছে টের পেলেও সে পিছনে ফিরে তাকাল না।

বাইরের ঘরের মাঝামাঝি রিয়াজ বসে আছে, তাকে ঘিরে কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশ কিংবা মিলিটারি। কয়েকজন বিদেশী মানুষ হতচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিশীতা সবাইকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে রিয়াজ হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, ড. হাসান, আমি খুব দুঃখিত আপনার গেট ভেঙে ঢুকতে হল। গেটে একজন ব্রেন-ডেড মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, আমাকে ঢুকতে দিচ্ছিল না!

রিয়াজ হাসান খানিকক্ষণ অবাক হয়ে নিশীতার দিকে তাকিয়ে রইল, তার চেহারায় এক ধরনের বিপর্যস্ত ভাব, নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আমি–আমি–মানে ঠিক বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে।

রিয়াজ হাসানকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মাঝে একজন এবারে নিশীতার দিকে এগিয়ে আসে, দেখে মনে হয় মানুষটি ইন্টেলিজেন্সের বড় কর্মকর্তা, মানুষটির মুখ কঠিন, চোখের দৃষ্টি ক্রুদ্ধ। মানুষটি শীতল গলায় বলল, আপনি কে? এখানে কেন এসেছেন?

নিশীতা মাথা ঝাঁকিয়ে তার চুলকে পিছনে সরিয়ে বলল, আমি ডঃ রিয়াজ হাসানের বাসায় এসেছি, তিনি যদি চান তা হলে তিনি আমাকে এই প্রশ্নটি করতে পারেন–আপনি পারেন না। নিশীতা তার মুখে একটা মধুর হাসি টেনে বলল, কিন্তু আপনি যদি সত্যি জানতে চান আমি বলতে পারি। আমার নাম নিশীতা জানীন। আমি একজন সাংবাদিক।

নিশীতা তার গলায় ঝুলিয়ে রাখা কার্ডটি বের করে মানুষটিকে দেখাল এবং প্রথমবার মানুষটিকে একটু হতচকিত হতে দেখা গেল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ বলল, আপনাকে আজ বিটিভিতে দেখেছি। প্রাইম মিনিস্টারের নিউজ কনফারেন্সে আপনি ছিলেন।

তাকে টেলিভিশনে দেখিয়েছে তথ্যটি নিশীতা জানত না, আজকের পরিবেশে এই তথ্যটি খুব কাজে লাগবে ভেবে নিশীতা মনে মনে খুশি হয়ে উঠল। মুখের হাসি বিস্তৃত করে বলল, হ্যাঁ ছিলাম। প্রাইম মিনিস্টার আমাকে খুব পছন্দ করেন।

গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি এতক্ষণে ভিতরে হাজির হয়েছে, সাহস করে এবার বলার চেষ্টা করল, স্যার এই মহিলা জোর করে—

কঠিন চেহারার মানুষটি সম্পূর্ণ বিনা কারণে তাকে একটা প্রচণ্ড ধমক দিয়ে বলল, শাট আপ, ইউ স্টুপিড। যাও এখান থেকে। গেট আউট।

মানুষটি এবারে নিশীতার দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে বলল, আপনাকে আমরা এখান থেকে চলে যেতে বলছি।

এটা ড. রিয়াজ হাসানের বাসা। তিনি আমাকে চলে যেতে বললে আমি অবশ্যই চলে যাব। নিশীতা রিয়াজের দিকে তাকাতেই রিয়াজ মাথা নেড়ে বলল, না–না–আপনাকে আমি যেতে বলছি না।

চমৎকার, তা হলে আমার এই মুহূর্তে চলে যাবার কোনো প্রয়োজন নেই। নিশীতা মুখে মধুর হাসি ফুটিয়ে তার ব্যাগ থেকে ডিজিটাল ক্যামেরাটা বের করে আনে। আমি কি আপনাদের একটা ছবি তুলতে পারি?

একসাথে কয়েকজন প্রায় চিৎকার করে বলল, না। খবরদার ছবি তুলবেন না।

নিশীতা চোখে-মুখে একটা বিস্ময়ের ভঙ্গি ফুটিয়ে বলল, মনে হচ্ছে খবরের কাগজের জন্য একটা খুব ভালো স্টোরি তৈরি হচ্ছে? আপনারা এখানে কেন এসেছেন জানতে পারি?

মানুষগুলো পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। কঠিন চেহারার মানুষটি বলল, আমরা একটি ইনভেস্টিগেশনে এসেছি। ব্যাপারটি গোপন। আমরা আপনাকে চলে যেতে বলছি।

আপনারা কারা?

সেটি আপনাকে বলতে আমরা বাধ্য নই।

নিশীতা রিয়াজ হাসানের দিকে ঘুরে তাকাল, আপনি কি জানেন এরা কারা?

না–মানে ঠিক পুরোপুরি জানি না। পুলিশ কিংবা আর্মি ইনটেলিজেন্সের লোক হতে পারে।

আপনার বাসায় ঢোকার জন্য সার্চ ওয়ারেন্ট এনেছে?

জানি না। আনলেও আমাকে দেখায় নি।

এই বিদেশীগুলোও কি আমাদের পুলিশ বা আর্মি ইনটেলিজেন্সের?

না। রিয়াজ বলল, একজন আমার পুরোনো সহকর্মী, ড. ফ্রেড লিস্টার।

ড. ফ্রেড লিস্টার মানুষটি নিজের নাম উচ্চারিত হতে শুনে রিয়াজ হাসানের দিকে ঘুরে তাকাল। নিশীতা ভুরু কুঁচকে ড. ফ্রেড লিস্টারের দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, আপনাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি?

ফ্রেড লিস্টার উত্তর দেবার আগেই কঠিন চেহারার মানুষটি রুক্ষ গলায় বলল, দেখুন মিস নিশীতা, আপনাকে আমি শেষবার বলছি, এখান থেকে যান। তা না হলে আপনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

নিশীতা তার ব্যাগ খুলে সেলুলার ফোনটা বের করে দ্রুত কয়েকবার বোতাম টিপে কোথায় জানি ফোন করল! কঠিন চেহারার মানুষটি প্রায় ধমক দিয়ে বলল, আপনি কাকে ফোন করছেন?

নিশীতা তাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করল, হ্যাঁলো, শ্যামল দা, আমি নিশীতা। কালকের পত্রিকার ফাইনাল পেস্টিং কি হয়ে গেছে?

অন্যপাশের কথা শুনে নিশীতা মাথা নেড়ে বলল, আপনি আটকে রাখেন। প্রথম পৃষ্ঠায় নতুন লিড নিউজ যাবে, আপনাকে আমি ফোন করব। ভেরি ভেরি ইম্পরট্যান্ট। মোজাম্মেল ভাইকে জানিয়ে রাখেন। আর শোনেন, হোম ডিপার্টমেন্টে আপনার পরিচিত মানুষ আছে?

অন্যপাশের কথা শুনে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল, বলল চমৎকার। আমাদের সাহায্যের দরকার হতে পারে।

অন্যপাশ থেকে কিছু একটা বলল, শুনে নিশীতা শব্দ করে হেসে বলল, না–না– শ্যামল দা, আপনি ভয় পাবেন না। গতবারের মতো হবে না। আমি কোনো বিপদে পড়ব না।

টেলিফোনটা বন্ধ করে নিশীতা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে মধুরভাবে হেসে বলল, আমি আশা করছি আপনারা যেটা করছেন সেটা পুরোপুরি আইনসম্মত! না হলে অবশ্য আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো, একটা হট স্টোরি দেওয়ার ক্রেডিট পেতে পারি!

মানুষগুলো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের মাঝে কথা বলল, তারপর একজন এগিয়ে এসে রিয়াজ হাসানকে বলল, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ব্যাপারটি শুধু ন্যাশনাল নয়, ইন্টারন্যাশনালি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি সহযোগিতা না করেন সহযোগিতা আদায় কেমন করে করতে হয় আমরা জানি।

রিয়াজ হাসান কোনো কথা না বলে স্থির দৃষ্টিতে মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল। মানুষগুলো এবারে বের হয়ে যাবার জন্য দরজার দিকে হাঁটতে থাকে। ফ্রেড লিস্টার রিয়াজ হাসানের কাছে এগিয়ে এসে নিচু গলায় ইংরেজিতে বলল, রিয়াজ, আমরা যে টিম এসেছি তার সাথে স্টেট ডিপার্টমেন্টের বব ম্যাকেঞ্জি বলে একজন লোক এসেছে। বব ম্যাকেঞ্জি কে জান?

কে?

আশির দশকে পাকিস্তানে ছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ব্লককে থামানোর জন্য সে পুরো পাকিস্তানকে কিনে নিয়েছিল। বব আমাকে বলেছে মোটামুটি সস্তাতেই কিনেছিল।

রিয়াজ শীতল চোখে ফ্রেড লিস্টারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমাকে এসব কথা বলছ কেন?

কারণ বব এবারেও ডিপ্লোমেটিক ব্যাগ হিসেবে দুটি বড় বড় সূটকেস এনেছে। সুটকেস বোঝাই ডলার দিয়ে। সব নতুন এক শ ডলারের নোট। যাদের যাদের কিনতে হয় আমরা কিনে নেব। দেখতেই পাচ্ছ কিনতে শুরু করেছি!

রিয়াজ দাতে দাঁত ঘষে বলল, আমি যখন আমেরিকাতে তোমার সাথে কাজ করতাম তখনো তোমাকে ঘেন্না করতাম। এখনো ঘেন্না করি।

ফ্রেন্ড লিস্টার হা হা করে হেসে বলল, আমার বিরোধিতা করে তোমার কী অবস্থা। হয়েছে তো দেখেছ! আগের অবস্থার পুনরাবৃত্তি কোরো না রিয়াজ। বব ম্যাকেঞ্জি এর মাঝেই খুব উঁচু জায়গায় আমার জন্য খুবই ভালো ভালো বন্ধু যোগাড় করেছে।

তাই নাকি?

হ্যাঁ। ফ্রেড লিস্টার নিশীতাকে দেখিয়ে বলল, তোমার এই গার্লফ্রেন্ডকে ছারপোকার মতো পিষে মারবে। আমার একটা উপদেশ মনে রেখো–বন্ধু ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হয়। কোনো কোনো বন্ধু বিপদ থেকে রক্ষা করে আবার কোনো কোনো বন্ধু কিন্তু বিপদ ডেকে আনে।

তোমার মূল্যবান উপদেশের জন্য অনেক ধন্যবাদ ফ্রেড।

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কঠিন চেহারার মানুষটি ফ্রেন্ড লিস্টারকে ডাকল, চলে এস ফ্রেড।

ফ্রেড খানিকটা কৌতুকের ভঙ্গিতে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

সবাই বের হয়ে যাবার পর রিয়াজ হাসান নিশীতার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল, বলল, তুমি না এলে খুব বড় বিপদে পড়ে যেতাম। থ্যাংকস নিশীতা।

রিয়াজ হাসান নিশীতাকে আপনি করে বলত, ঘটনার উত্তেজনায় এখন তুমি করে বলছে! নিশীতা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না, বলল, ইউ আর ওয়েলকাম। তারপর বুক থেকে আটকে থাকা একটা নিশ্বাস বের করে দিয়ে বলল, এখানে কী হচ্ছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

আমিও বুঝতে পারছি না। তবে বোঝা যাচ্ছে মহাকাশ থেকে কিছু একটা আসা নিয়ে তুমি যে সন্দেহ করছিলে সেটা সত্যি।

নিশীতা চমকে উঠে রিয়াজের দিকে তাকাল, সত্যি?

হ্যাঁ। দেখতেই পাচ্ছ আমেরিকা থেকে পুরো দল চলে এসেছে। পালের গোদা হচ্ছে ফ্রেড লিস্টার। আমরা ওকে ডাকতাম ফ্রেড ব্লিস্টার। ব্লিস্টার মানে ফোঁসকা। বিষফোড়া ভয়ানক বদমাইশ।

কেন? কী হয়েছে?

মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করার সময় কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়। পৃথিবীর নিরাপত্তার ব্যাপারটি দেখতে হয়। কিন্তু ফ্রেড লিস্টার এই বিষফোড়া সেসব করত না। একবার করেছে কী–

রিয়াজ হঠাৎ কথা থামিয়ে বলল, ওসব ছেড়ে দাও। নতুন যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচি না, পুরোনো যন্ত্রণার কথা বলতে ভালো লাগে না।

নিশীতা জিজ্ঞেস করল, নতুন যন্ত্রণাটি কী?

মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমি যে এলগরিদম তৈরি করেছিলাম এই ব্যাটা সেটা চায়।

কিন্তু আমি তো দেখেছি আপনি সেটি পাবলিশ করেছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জার্নালে সেটা প্রকাশ হয়েছে।

সেটা ছিল প্রাথমিক ভার্সান। পুরো কাজটুকু শেষ করার পর সেটা কোথাও প্রকাশ হয় নি।

সেটা কী ধরনের কাজ?

রিয়াজ হাসান জিনিসটা কীভাবে বোঝাবে সেটা নিয়ে দুই এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, আমরা যেহেতু মানুষ তাই যখন যোগাযোগের কথা বলি সবসময় একজন মানুষ অন্য মানুষের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করবে সেইভাবে চিন্তা করি। কিন্তু যদি একটা মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করতে হয় তা হলে মানুষের মতো চিন্তা করলে হবে না। যে কোনো বুদ্ধিমত্তার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা উপায়ে যোগাযোগ করতে হবে। আমার এলগরিদমটা তাই.–মানুষের থেকে অনেকগুণ বেশি বুদ্ধিমত্তার সাথে যোগাযোগ করার একটা উপায়।

ও! ফ্রেড লিস্টার সেটা চাইছে?

হ্যাঁ। আমি ফ্রেন্ড লিস্টারকে চিনি, তাই তাকে দিতে রাজি হই নি।

তার মানে আমার সন্দেহ সত্যি। আসলেই এখানে কোনো মহাজাগতিক প্রাণী এসে নেমেছে?

আমার তাই ধারণা।

নিশীতা তখনো পুরো ব্যাপারটি পুরোপুরি আত্মস্থ করতে পারে নি। নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল, রিয়াজ হাসান তাকে বাধা দিয়ে বলল, কী বিচিত্র ব্যাপার তুমি একেবারে

আমি একেবারে?

রিয়াজ হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে বলল, ছিঃ ছিঃ, কী লজ্জা আপনি এত বড় একজন সাংবাদিক অথচ আপনাকে এতক্ষণ থেকে তুমি করে বলছি!

নিশীতা মাথা নাড়ল, বলল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। কী বলছিলেন বলেন।

আমি বলছিলাম কী, আপনি মানে তুমি ঠিক সময়ে হাজির হয়েছ, তুমি যদি ঠিক এই সময়ে না আসতে–

আসব না কেন, খবর পাওয়ার পর আমি দেরি করি নি।

খবর? রিয়াজ অবাক হয়ে বলল, কিসের খবর?

ঐ যে টেলিফোনে খবর পাঠালেন।

খবর পাঠিয়েছি? আমি?

তা হলে কে? আমাকে টেলিফোনে আসতে বলল—

কে বলেছে?

নিশীতা ভুরু কুঁচকে রিয়াজের দিকে তাকাল, আপনি কাউকে দিয়ে খবর পাঠান নি?

না।

আশ্চর্য! আমার মনে হল মানুষটাকে আমি চিনি, গলার স্বর আগে কোথাও শুনেছি। নিশীতা হঠাৎ চমকে উঠে বলল, এপসিলন!

কী হয়েছে এপসিলনের? 

এপসিলন আমাকে ফোন করেছিল! এখন মনে পড়েছে–সেটা ছিল এপসিলনের গলার স্বর। প্রশ্ন করে কথা বলছিল।

রিয়াজ খানিকক্ষণ অবাক হয়ে নিশীতার দিকে তাকিয়ে রইল–তার দৃষ্টি দেখে মনে হল নিশীতার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নিশীতা একটু অপ্রস্তুত হয়ে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, কী হল? আপনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?

রিয়াজ হাসি গোপন করার চেষ্টা করতে করতে বলল, তোমার কল্পনাশক্তি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না? এপসিলনকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।

দেখ নিশীতা, তার কোনো প্রয়োজন নেই। এপসিলনের পুরো কোডটা আমি লিখেছি। এটা একটা ছেলেমানুষি প্রোগ্রাম। তোমাকে টেলিফোন করার ক্ষমতা এর নেই।

কিন্তু এপসিলন আমার টেলিফোন নম্বরটি জানত কি না?

রিয়াজ মাথা নেড়ে বলল, তুমি এমনভাবে কথা বলছ যেন এপসিলন একটি সত্যিকার মানুষ, তার বুদ্ধিমত্তা আছে।

নিশীতা অধৈর্য হয়ে বলল, আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি–এপসিলন কি আমার টেলিফোন নম্বর জানে?

আমি তোমার টেলিফোন নম্বরটি ওর ডাটাবেসে রেখেছিলাম– প্রয়োজনীয় নাম ঠিকানা রেখে দিই। তার অর্থ এই নয় যে, সে সেটি জানে।

নিশীতা চোখ বড় বড় করে বলল, আমার সেলফোনে টেলিফোন করার মতো হার্ডওয়্যারের সাথে এপসিলনকে লাগিয়ে রেখেছেন কি না?

রিয়াজকে হঠাৎ কেমন যেন হতচকিত দেখাল, খানিকক্ষণ অবাক হয়ে নিশীতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, মজার ব্যাপার জান–সেদিন তুমি চলে যাবার পর আমি সত্যি সত্যি একটা এ্যান্টেনার সাথে ট্রান্সমিটারটা জুড়ে দিয়েছিলাম। মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমার এলগরিদম ব্যবহার করে একটা সিগনাল পাঠাচ্ছিল–খুব দুর্বল সিগনাল, ঢাকা শহরের ভিতরে যেতে পারে। সেই সিগনালটি ব্যবহার করে তোমার সেলফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব।

নিশীতা উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, দেখেছেন?

রিয়াজ হাত নেড়ে বলল, দেখেছি, কিন্তু আগেই এত উত্তেজিত হয়ো না। আমি যেটা বলছি সেটা হচ্ছে হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে কিছু একটা করার সম্ভব-অসম্ভবের কথা। সত্যি সত্যি সেটা করার মতো বুদ্ধিমত্তা এপসিলনের নেই, আমার কোনো কম্পিউটারেরও নেই।

কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছেন সেটা ঘটেছে।

সেটা ঘটে নি। রিয়াজ একটু অধৈর্য হয়ে বলল, তুমি যেটা বলছ সেটা অসম্ভব। অনেকটা যেন আমি একটা কাগজের প্লেন ছুঁড়েছি–সেটা তিন শ প্যাসেঞ্জার নিয়ে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে ল্যান্ড করে গেছে।

নিশীতা হাত দিয়ে তার চুলকে পিছনে সরিয়ে বলল, আপনি এপসিলনকে জিজ্ঞেস করে দেখেন।

রিয়াজ হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গি করে বলল, তোমার যদি জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে করে তুমি করে দেখো–আমি করছি না। এপসিলনকে প্রশ্ন করা আর আমার মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে জিজ্ঞেস করা একই কথা!

নিশীতা মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে একবার তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কোথায়? এপসিলন কোথায়?

রিয়াজ হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল, ঐ যে ওদিকে।

নিশীতা এগিয়ে যেতে শুরু করতেই রিয়াজ বলল, নিশীতা তুমি ছেলেমানুষি কাজটা শুরু করার আগে তোমার পত্রিকা অফিসে ফোন করে বল। তারা তোমার লিড নিউজের জন্য বসে আছে।

নিশীতা হেসে বলল, না, বসে নেই।

কেন বসে নেই? তুমি যে ফাইনাল পেস্টিং বন্ধ করে রাখতে বললে?

নিশীতা খিলখিল করে হেসে বলল, কেমন করে বলব, আমার টেলিফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে গেছে। আমি ওদের সাথে কথা বলি নি, কথা বলার ভান করছিলাম।

রিয়াজ হাসান চোখ কপালে তুলে বলল, কী বললে? ভান করছিলে? আসলে কারো সাথে কথা বল নি?

না। আমাদের সাংবাদিকদের এ রকম আরো অনেক ট্রিকস্ আছে, সময় হলেই দেখবেন!

রিয়াজ হাসান খানিকক্ষণ নিশীতার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসতে শুরু করল নিশীতা ততক্ষণে মনিটরটির সামনে পৌঁছে গেছে, এপসিলনের চেহারা ফুটে উঠেছে, সেটি ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, কে, কে হাসে?

তুমি জান না কে হাসছে?

এপসিলন খানিকক্ষণ নিশীতার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, জানি।

রিয়াজ হাসান হঠাৎ হাসি থামিয়ে অবাক হয়ে নিশীতার দিকে তাকাল। নিশীতা বলল, কী হয়েছে?

রিয়াজ নিশীতার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রায় ছুটে এসে মনিটরটির সামনে দাঁড়াল, বিস্ফারিত চোখে এপসিলনের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কী বললে এপসিলন?

এপসিলন কোনো কথা না বলে চোখ ঘুরিয়ে রিয়াজের দিকে তাকাল। নিশীতা একটু অবাক হয়ে বলল, কী হয়েছে ড. হাসান?

রিয়াজ হতচকিতের মতো নিশীতার দিকে তাকিয়ে বলল, এটি এপসিলন নয়।

কেন?

কারণ এপসিলন সব সময় প্রশ্নের উত্তর দেয় প্রশ্ন দিয়ে। এটি দেয় নি।

তা হলে এটি কে? রিয়াজ ঘুরে এপসিলনের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি জানি না।