আসিয়া প্রভাস তীরে যাদব-মণ্ডলী।
জলে নামি স্নান দান করে কুতূহলী।।
পরম আনন্দে জলে করেন বিহার।
সলিলেতে কেলি করে সকল কুমার।।
কূল হৈতে ঝাঁপ দিয়া কেহ পড়ে জলে।
অন্য অন্য কেহ জল সিঞ্চে কুতূহলে।।
জলেতে সাঁতারি কেহ যায় বহুদুর।
বহুক্ষণ জলে ডুবি রহে কোন শূর।।
নানামতে ক্রীড়া করে যাদব সকল।
হিল্লোলে কল্লোল তুলে প্রভাসের জল।।
স্বর্গে থাকি কৌতুক দেখেন দেবগণ।
বিধি শিব ইন্দ্র যম সূর্য্য হুতাশন।।
অষ্টবসু নবগ্রহ অশ্বিনী-কুমার।
কুবের বরুণ যম যত দেব আর।।
জয় জয় শব্দেতে অমরঘণ ডাকে।
সকল যাদব মিলি খেলায় কৌতুকে।।
টান মারি গেঁড় কেহ ফেলে বহু দূরে।
সাঁতারিয়া গিয়া কেহ আনয়ে সত্বরে।।
পুনঃ সেই গেঁড়ু লয়ে খেলে শিশু সব।
পরস্পর হাতাহাতি সকল যাদব।।
দেখিয়া সকল ক্রীড়া সবে পায় প্রীতি।
রামকৃষ্ণ সাত্যকি দেখিয়া হৃষ্টমতি।।
হেনমতে বহুক্ষণ বিহরিয়া জলে।
স্নানকর্ম্ম সমাপিয়া যাদব সকলে।।
হরষেতে কূলে উঠি পরিল বসন।
চিনিয়া পরিল নিজ বস্ত্র আভরণ।।
একত্র বসিল সব যাদব-মণ্ডলী।
নানা উপহার দ্রব্য ভুঞ্জে কুতূহলী।।
একে অপরের মুখে দেয় জনে জন।
পরম হরিষে সবে করেন ভোজন।।
ষড়রস ভুঞ্জিয়া মনের পরিতোষে।
যার যাহা অভিলাষ ভুঞ্জিলেক শেষে।।
বারুণী মদিরাভাণ্ড লয়ে হলধর।
হরষেতে তুলে ধরে তুণ্ডের উপর।।
পরম সানন্দ সবে বারুণীর পানে।
শত শত কলসী ভুঞ্জয়ে হৃষ্টমনে।।
কৃতবর্ম্মা সাত্যকি প্রভৃতি যদুবীর।
আনন্দে বসিয়া সবে প্রভাসের তীর।।
কৃষ্ণে বেড়ি বসিলেন যাদব সকল।
ইন্দ্রেরে বেষ্টিল যেন অমর মণ্ডল।।
আসন করিয়া সেই প্রভাসের তীরে।
সেই ঠাঁই বসিলেন যত যদুবীরে।।
হরিষে বসিয়া সবে কথোপকথনে।
নানা কথা বিচার করয়ে সর্ব্বজনে।।
দেখিয়া অপূর্ব্ব সভা ধরণী-মণ্ডলে।
বিস্ময় মানিয়া চাহে অমর-সকলে।।
বসিয়া যাদবগণ নিজ মনোরথে।
যাহার যেমন বীর্য্য, কহে সেইমতে।।
পরস্পর সমর হইল যথা তথা।
কুরুক্ষেত্র আদি যত সমরের কথা।।
এই সব আলাপনে আছে সর্ব্বজন।
হেনকালে তথা হৈল দৈবের ঘটন।।
অপূর্ব্ব প্রভুর মায়া বুঝিতে না পারি।
সাত্যকি সম্বোধি কিছু কহেন শ্রীহরি।।
কহ কহ সাত্যকি সবার বরাবর।
কোনমতে কুরুক্ষেত্র করিলে সমর।।
বহু বিদ্যা জান তুমি বলে মহাবল।
তোমার প্রশংসা করে যাদব সকল।।
তোমার বীরত্ব গুণ জানিয়া বিশেষে।
পাণ্ডব বরিল তোমা যুদ্ধ-অভিলাষে।।
ভীষ্ম দ্রোণ অশ্বত্থামা কর্ণ দুর্য্যোধন।
কৌরবের দলে যত মহারথিগণ।।
ইতিমধ্যে কার সনে করিলে বিরোধ।
রণ করি কার সনে করিলে প্রবোধ।।
পঞ্চ ভাই পাণ্ডব অতুল পরাক্রম।
এ তিন ভুবন জিনিবারে হয় ক্ষম।।
তাহার সহায় তুমি পাঞ্চাল-ঈশ্বর।
ধৃষ্টদ্যুম্ন শিখণ্ডী বিরাট নৃপবর।।
অপর যতেক রাজা সসৈন্য সহিত।
পাণ্ডবের পক্ষে রণ কৈল অপ্রমিত।।
যুদ্ধ করি প্রাণ দিল পাণ্ডব কারণে।
কহ তুমি কবে যুদ্ধ কৈলে কার সনে।।
কৃষ্ণের বচনে বলে সত্যক-নন্দন।
আমার যুদ্ধের কথা শুন নারায়ণ।।
পাণ্ডবের কার্য্য আমি কৈনু প্রাণপণে।
শক্তিমত করিলাম সমর যতনে।।
ভীষ্ম দ্রোণ আদি সবে প্রহারিল মোরে।
যথাশক্তি প্রাণপণে নিবারি সবারে।।
বহু সৈন্য ক্ষয় হৈল কৌরবের দলে।
ভূরিশ্রবা নৃপতিরে হানিলাম বলে।।
প্রাণপণে যুঝিলামম নাহি নিবারণ।
আপনা জানিতে কার্য্য না করি হেলন।।
আর আর কত বীরে করিনু সংহার।
যা পারিনু করিনু পাণ্ডব উপকার।।
আপনিহ তখন সে স্থানেতে আছিলা।
মম যত পরাক্রম সাক্ষাতে দেখিলা।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।