৪র্থ অধ্যায়
ভীমের দুঃশাসনসংহার-রক্তপান
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ! অম্বিকানন্দন ধৃতরাষ্ট্র কর্ণের নিধনবাৰ্তা শ্রবণ করিবামাত্র অপার শোকসাগরে অবগাহনপূর্ব্বক দুৰ্য্যোধনকে নিহত বোধ করিয়া বিহুল ও বিচেতন হইয়া বিসংজ্ঞ মাতঙ্গের ন্যায় ধরাতলে নিপতিত হইলেন। রাজা ভূতলে পতিত হইলে অন্তঃপুরচারিণী মহিলাগণের আর্ত্তনাদে পৃথিবী পরিপূর্ণ হইল। ভরতকুলকামিনীগণ ঘোরতর শোকার্ণবে নিমগ্ন ও নিতান্ত ব্যাকুলিত হইয়া রোদন করিতে লাগিল। তখন গান্ধারী ও অন্যান্য মহিলাগণ রাজার নিকট আগমনপূর্ব্বক সংজ্ঞাশূন্য হইয়া ভূতলে নিপতিত হইলেন। মহামতি সঞ্জয় সেই শোকমূর্চ্ছিত বাষ্পপরিপূর্ণ কামিনীগণকে আশ্বাস প্রদান করিতে লাগিলেন।
মহিলাগণ সঞ্জয়ের বাক্যে সমাশ্বস্ত হইয়া বায়ুচালিত কদলীর ন্যায় বারংবার কম্পিত হইতে লাগিল। মহাত্মা বিদুর প্রজ্ঞাচক্ষু মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের শরীরে জলসেচনপূর্ব্বক তাঁহাকে আশ্বাস প্রদান করিতে আরম্ভ করিলেন। রাজা ক্রমে ক্রমে সংজ্ঞালাভপূর্ব্বক রমণীগণকে সমাগত জানিয়া নিতান্ত উন্মত্তের ন্যায় তূষ্ণীম্ভূত [অতিশয়] হইয়া রহিলেন। তৎপরে তিনি বহুক্ষণ চিন্তা করিয়া বারংবার দীর্ঘনিশ্বাসপরিত্যাগপূর্ব্বক স্বীয় পুত্রগণের নিন্দা ও পাণ্ডবগণের ভূয়সী প্রশংসা করিলেন এবং শকুনির ও আপনার বুদ্ধির নিন্দা করিয়া অনেকক্ষণ চিন্তাপূর্ব্বক মুহুর্ম্মুহুঃ কম্পিত হইতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে তিনি ধৈৰ্য্যাবলম্বনপূর্ব্বক স্থিরচিত্তে পুনরায় সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে গবল্গণনন্দন! তুমি যাহা কহিলে, সমুদয় শ্রবণ করিলাম। আমার পুত্র রাজ্যকামুক দুর্য্যোধন ত’ জয়লাভে নিরাশ হইয়া প্রাণত্যাগ করে নাই? তুমি পুনরায় আমার নিকট উহা যথার্থস্বরূপ কীৰ্ত্তন কর।”
মহামতি সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া কহিলেন, “মহারাজ! মহারথ কর্ণ স্বীয় পুত্র ও ভ্রাতৃগণ সমভিব্যাহারে কালকবলে নিপতিত হইয়াছেন। যশস্বী ভীমসেন সমরে দুঃশাসনকে নিপাতিত করিয়া ক্রোধভরে তাঁহার শোণিত পান করিয়াছেন।”