০৪.
বেলা পড়ে এলে অ্যানসন গাড়ি চালিয়ে সোজা এলো ব্রেন্ট হাইওয়ের ক্যালটেক্স সার্ভিস স্টেশনে। বেয়ারাকে ট্যাঙ্ক ভর্তি করে তেল দিতে বলে অফিস ঘর পেরিয়ে সে ঢুকলো গিয়ে বাথরুমে। ইচ্ছে করেই দরজা বন্ধ করলো না। দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অফিস ঘরটা দেখতে লাগল।
ঢোকার দরজার সোজাসুজি দেয়াল ঘেঁসে ডেক্সের পাশে ফাইলপত্র রাখার ক্যাবিনেট, তার পাশেই পুরোনো ধাচের এক বিরাট লোহার সিন্দুক। রাস্তার দিকের দেয়াল জোড়া দুটো জানলা।
সে বাথরুম থেকে বেরিয়ে সোজা এগোলো গাড়ির দিকে। তেল ভরা শেষ হয়েছে। ব্যাগ খুলে টাকা মিটিয়ে দিতে দিতে অ্যানসন বললো, তোমাদের পেট্রল পাম্প তো সারাদিন খোলা থাকে তাই না?
হ্যাঁ থাকে। রাতে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য আমি বাড়ী যাই। আমার সাকরেদ হ্যারি তখন এ দিকটা সামলে নেয়।
অ্যানসন কয়েক মাস আগে ম্যানেজারকে ভজিয়ে-ভাজিয়ে পাম্পের নামে একটা অগ্নিবীমা করাতে এখানে এসেছিল। ম্যানেজার কথায় কথায় সেদিন তাকে জানিয়েছিল সে সিন্দুকে সব সময় নগদ তিন থেকে চার হাজার ডলার মজুত রাখে। বারলোর বাড়িতে রিভলবারটা হাতে নিয়েই তার মনে পড়েছিল, এই পাম্পের কথা, তিন হাজার ডলারের ঘাটতি পূরণের জন্য এরকম আদর্শ স্থান আর দুটো নেই।
অ্যানসন ভাবল আশ্চর্য, চুরির কথা ভাবছি। মন আমার এতটুকু বিচলিত হচ্ছে না। ভয় হচ্ছে না একবারও। অবশ্য হবেই বা কেন পকেটে রিভলবার থাকলে আর ভাবনা কি?
ভোর চারটে নাগাদ আসাই ঠিক হবে। ওর সেই সাকরেদ ছোকরা কি যেন নাম হাঁ হ্যারি সে তখন একলাই থাকবে। তাকে রিভলবার দিয়ে ভয় দেখিয়ে সিন্দুক খুলতে বাধ্য করা হবে। ব্যস্ তারপর আর কে দেখে। জো ডানকান-এর মুখ বন্ধ করা যাবে, ফিল বারলোর প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের টাকারও একটা সুরাহা হবে। সব দিক থেকে নিশ্চিন্ত, ঝামেলার আর কোন কারণই থাকবে না।
মার্লবোরো হোটলে ফিরে নিজের কামরায় ঢুকলো অ্যানসন। দরজা বন্ধ করে বিছানার ওপর বসে রিভলবারটা পকেট থেকে বের করলো। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখলো। ছটা কার্তুজ চেম্বারে ভরলো, তারপর রিভলবারটা সুটকেসে রেখে সে উঠলো।
ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা গেল হোটেলের পানশালায়। পরপর দুগ্লাস হুইস্কি টেনে শরীরটা বেশ চাঙ্গা হল। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে সে গেল রেস্তোরাঁয়। অ্যানসন ডিনার টেবিলে বসে খাবারের অর্ডার দিল। খাবার এলে সামান্য কিছু খেয়ে প্লেট সরিয়ে সে এক বোতল ফ্লারেট আনতে বললো। টকটকে লাল রঙের পানীয়ের দাম নিতান্ত কম না। তবু সে অর্ডার দেবার সময় দামের কথা বিবেচনা করেনি কারণ পানীয়টার প্রতি তার কোন আগ্রহ না থাকলেও আসল আগ্রহ বোতলের ছিপিটার ওপর। বোতলের শোলার ছিপিটা কাজে আসবে।
অ্যানসন বিল মিটিয়ে নটা নাগাদ উঠে পড়লো। ছিপিটা পকেটে পুরলো। বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুতে ধুতে নজর পড়লো আয়নায়। পেছন দিকে দূরে দেওয়ালের লাগোয়া আলনায় ঝোলানো সারিবাহী রঙবেরঙের কোট আর টুপি। হোটেলে ঢোকার আগে সবাই এখানে কোট, টুপি ছাতা রেখে যায়।
এক নিগ্রো পাহারাদার আলনার কাছে একটা টুলে বসে ঝিমোচ্ছ। অ্যানসন মন্থর পায়ে সেদিকে এগোল। ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে তার দিকে চেয়ে আবার চোখ বুজল নিগ্রোটা।
বাদামী রংয়ের ওপর সবুজ ভোরাকাটা ওভারকোট আর একটা পালকের টুপি তুলে নিল অ্যানসন। তারপর দ্রুত হোটেলের খিড়কি পথ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
কয়েক পা এগিয়েই রাস্তা। গাড়ির পেছনের বনেটে কোট আর টুপিটা রেখে সে বনেট বন্ধ করলো। তারপর আবার হোটেলে ফিরে এলো।
নির্দিষ্ট ঘরে এসে অ্যানসন বিছানায় শুয়ে পড়লো। হাত পা ছড়িয়ে আগাগোড়া ঘটনাটা মনে মনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভাবতে লাগলো।
কাজটা মনে হয় সহজই হবে। শেষ অবধি মাথা ঠিক রেখে কাজটা করতে পারলে হয়। হোটেলের খিড়কি পথ দিয়ে ভোর তিনটে নাগাদ বেরোতে হবে। তখন কেউ জেগে বসে থাকবে না। পেট্রলপাম্পের পাশের এক কানাগলিতে গাড়িটা রেখে সে পাম্পের অফিস ঘরে ঢুকবে।
তবে হ্যাঁ ঢোকার আগে কায়দা করে চেহারাটা একটু পাল্টে নিতে হবে। ওভারকোট গায়ে চাপিয়ে টুপিটা কাত করে মুখ ঢাকতে হবে। মুখের বাকী অংশ রুমালে ঢাকতে হবে। ছিপিটা পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই মেখে আর জুলফির রং পাল্টাতে হবে। ব্যাস তারপর হাতে রিভলবারটা বাগিয়ে গুটি গুটি অফিস ঘরে ঢুকেই হ্যান্ডস্ আপ!
কেউ বাধা দিতে এলো তো বুম বুম ধোঁয়া।
নাঃ মনটা বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছে। দশটা বাজে সবে, আচ্ছা মেগ এখন কি করছে। ঘুমোচ্ছে, যাক, একটু বাইরের হাওয়ায় ঘুরে আসা যাক।
বাইরে যাওয়া আর হলো না। পানশালায় দুজন পরিচিত সেলসম্যানের সঙ্গে দেখা হলো। অ্যানসন তাদের সঙ্গেই জমে গেল।
সোডা এলো, বরফ এলো, হুইস্কি এলো, কয়েক প্লেট খাবারও এল। খুব একচোট হৈ-চৈ হল। অ্যানসন রাত আটটা নাগাদ আচ্ছা শেষ হতে ফিরে এল। সে বিছানায় শুয়ে হাত পা ছড়িয়ে দিলো।
একটু বিশ্রাম করে মাথাটা ঠাণ্ডা হল, নেশার ঘোরও কাটল। উঠে সে চোখে-মুখে জল দিয়ে সুটকেস খুলে রিভলবার বের করলো। তার মুখে এক বিচিত্র হাসি ফুটে উঠলো।
সে ভাবলো এরকমই হয়। টাকা রোজগারের শেষ রাস্তাটাও যখন অন্ধকার কানা গলিতে হারিয়ে যায়, পকেট ঝাড়লেও যখন আর একটা আধলাও বেরোয় না তখন মানুষ মাত্রেই ভয়ঙ্কর হয়। খুনের নেশায় মেতে উঠে। আমিও তো চেয়েছিলাম এমনই একটা নেশায় মাততে। আঃ, কতদিনের ইচ্ছে, কত বছরের স্বপ্ন, টাকা টাকা টাকা আরো আরো টাকা। এখন আর চিন্তার কারণ নেই। মেগ তার পাশে রয়েছে, কদিন পরেই আসবে পঞ্চাশ হাজার ডলার। ব্যস আমায় আর কে পায়। এই বিশাল পৃথিবী, এই বিশ্ব চরাচর, আকাশ বাতাস, সমুদ্র সব আমাদের।
কিন্তু টাকা হাতে রাখতে পারবো তো, না, স্বভাবটা একটু পাল্টাতে হবে। আর নাই বা পাল্টালাম, সব শেষ হতে ছমাস একবছর তো লাগবে। তারপর আছে মেগ। ওঃ চাবুক।
.
হ্যারি ওয়েবার মাত্র দুবছর হলো কাজ করছে ক্যালটেক্স সার্ভিস স্টেশনে। নাইট ডিউটি। ঝুট ঝামেলা তেমন নেই। ছিমছাম কাজ।
রাত একটা থেকে সকাল সাতটা অবধি তার কাজ। এই ছ-ঘন্টায় সব মিলিয়ে বেশী হলে দু-তিনখানা গাড়ি আসে। বদিন তাও আসে না। কোনো কোনো দিন একখানা।
তা গাড়ি আসুক না আসুক, হ্যারির কোনো মাথাব্যথা নেই। মাস গেলে মাইনের টাকা হাতে পেয়ে সে কয়েকখানা রহস্য গল্পের বই কিনে নেয়। তার রাতের খোরাক হিসাবে এক একখানা গল্পের বই যাকে বলে দারুণ, দুর্দান্ত।
যথারীতি সে রাতেও সে খুলে বসেছে একখানা জমজমাট রহস্য-উপন্যাস। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এগিয়ে যাচ্ছে। গল্পটা জমেছে বেশ। আঃ এ সময় এক কাপ কফি পেলে খুব ভাল হত।
সরঞ্জাম সব হাতের কাছেই। বই মুড়ে রেখে কফি তৈরী করলো সে। ঘড়ি দেখলো, চারটে বাজতে এখনও কয়েক মিনিট বাকি। চেয়ারে বসে কফি খেতে খেতে সে আবার বই-এর পাতায় মনোনিবেশ করলো।
হঠাৎ কে এলো রে বাবা! কাঁচের দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে। একখানা পা, আরেকখানা পা, ওরে বাবা হাত থেকে বইখানা পড়ে গেল। কাপটা আগেই টেবিলে নামিয়ে রেখেছিলো। নয়তো ওটাও হয়তো হাত ফসূকে পড়ে যেতো।
যে লোকটি দরজা ঠেলে ঢুকলো তার গায়ে একটা বিরাট ওভারকোট, মাথায় কাত করে পালকের টুপিবসনো। একদিকে চোখটা টুপিতে পুরো ঢাকা পড়েছে। মুখেরনীচটা লাল একখানা রুমালে আড়াল করা। ডানহাতে তার একটা ছোট রিভলভার তার নলটা হ্যারির দিকে তাক করা।
এক মুহূর্ত নীরবে কাটলো। লোকটি হঠাৎ হিসহিস করে উঠলো, চালাকির চেষ্টা করো না। চালাকি করেছে কি মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো। যাও তাড়াতাড়ি গিয়ে সিন্দুকটা খোল।
হ্যারি কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়াল বলল যাচ্ছি।
লোকটা তিন লাফে বাথরুমের সামনে গেল। লাথি মেরে দরজা খুললো। তারপর হ্যারির দিকে ফিরে রিভলভারের লক্ষ্য স্থির করলো। দাঁড়িয়ে রইলে কেন? যাও সিন্দুক খোল।
হ্যারি এক টানে টেবিলের ড্রয়ার খুলে রাখল। ড্রয়ারে ৪৫ বোরের ছোট্ট একটা অটোমেটিক। পাম্প কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এটা অফিসে রেখেছেন। হ্যারি ভাবলো যে রিভলভারটা তুলে নেবো নাকি।
অ্যানসন রিভলভার তুলে গর্জন করে উঠলো খবরদার হাত উপর করো নয়তো গুলি করে দেবো
হ্যারি কাঁপতে কাঁপতে মাথার উপর হাত তুললল। এক-পা এক-পা করে পেছোতে পেছোতে দেয়ালে পিঠ রেখে দাঁড়ালো।
এগিয়ে এসে অ্যানসন ড্রয়ার থেকে অস্ত্রটা তুলে নিল। নিজের জায়গায় ফিরে গেল। যাও এবার গিয়ে সিন্দুক খোল। চালাকির চেষ্টা করেছে কি মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো, যাও।
প্রতিবাদ করা নিরর্থক। সুবোধ বালকের মতো পকেট থেকে চাবি বের করলো হ্যারি। এগিয়ে গিয়ে সিন্দুক খুললো।
অ্যানসন খোলা জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল। তারপর চাপা গর্জন করলো, যাও দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াও গিয়ে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো, নড়াচড়ার চেষ্টা কোরো না।
হ্যারি আপত্তি করলো না, এগিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ালো।
অ্যানসন সিন্দুকের সামনে হাঁটু মুড়ে বসলো। একটা ছোট্ট স্টিলের বাক্সের ডালা খুলল। বাক্স বোঝাই নোটের কাড়ি-পাঁচ, দশ, একশো তাড়াতাড়ি মুঠো মুঠো নোট তুলে পকেটে পুরতে শুরু করলো সে। এমন সময়…
কাছাকাছি কোথাও যেন একটা মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের শব্দ শোনা গেল।
অ্যানসনের বুকটা ধক করে উঠলো। খেয়েছে, ট্রাফিক পুলিস টহল দিতে বেরিয়েছে, এ দিকেই হয়তো আসছে।
অ্যানসন তাড়াতাড়ি হাত চালালো। বাকী নোটগুলো পকেটে পুরলো। স্টীলের বাক্সটা ভেতরে ঢুকিয়ে সিন্দুকের দরজা বন্ধ করলো। তারপর এক লাফে গিয়ে সে বাথরুমে ঢুকলো, হ্যারির দিকে রিভলভার তুলে চাপা গর্জন করে উঠলো, যাও চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ো। সাবধান আমাকে ফাঁসিয়েছো কি গেছে। তোমাকে আর আস্ত রাখবো না। যাও চুপচাপ গিয়ে বসো। হ্যারি ডেস্কের দিকে গুটিগুটি এগোলো, এক ঝলক আলো এসে পড়লো দরজার কাঁচ ভেদ করে। মোটর সাইকেলটা থামলো এসে অফিস ঘরের সামনে, চাপা-গর্জনে ইঞ্জিন গজরাতে লাগলো।
অ্যানসন ঘেমে উঠলো। বাথরুমের আধখোলা দরজার পাশ থেকে হিসহিস করে উঠলো, গোলমাল কিছু হলে আগে কিন্তু তোমাকেই খতম করবো ছোকরা, মনে রেখো। দরজাটা আর একটু ঠেলে দিলো সে। হ্যারিকে আর দেখা গেল না। শুধু ঘরের আলোকিত অংশে সীমাবদ্ধ থাকলো।
আনসন দরজার আড়ালে অদৃশ্য হতেই হ্যারি একটা পেনসিল তুলে নিয়ে ডেস্কের ওপরে একখণ্ড কাগজে লিখলো, সাবধান, বাথরুমে রিভলভার হাতে ডাকাত।
এক লালমুখো পুলিস দরজা ঠেলে ঢুকলো। ভোরের এই সময়টায় এ অঞ্চলে সে নিয়মিত টহল দিয়ে বেড়ায়। চারটে নাগাদ পাম্পে এসে এক কাপ কফি খেতে খেতে হ্যারির সঙ্গে বসে বসে জমিয়ে খোশগল্প করে।
ঘরে ঢুকে সে রোজকার মতো হাঁক পাড়লল, এই যে হ্যারি, কফি তৈরী তো?
অন্ধকার বাথরুমের চারপাশে তাকালো অ্যানসন। নাঃ এখান থেকে সটকে পড়ার কোনো উপায় নেই। বেরোবার ঐ একটি মাত্র পথ, অফিস ঘরের ভেতর দিয়ে। দেখা যাক কি হয়।
হ্যারির গলা শোনা গেল, দিচ্ছি, এখুনি তৈরী করে দিচ্ছি।
হ্যারি চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালো, টম সেই পুলিসটা হাতের দস্তানা খুলে ডেস্কের ওপর। রাখলো। হ্যারি আঙুল দিয়ে ডেস্কের কাগজটা তাকে দেখালো।
টম স্যাঙ্কুয়িস্ট চেহারায় যেমন মোটাসোটা বুদ্ধিতেও তাই। হ্যারির আঙ্গুলের ইশারা দেখেও তার মগজে কিছু ঢুকলো না। সে হেড়ে গলায় বললো–এটা আবার কি? কাগজে কি লিখে রেখেছে, আমাকে পড়তে বলছে।
অ্যানসন প্রমাদ গুনলো,হম, ছেলেটা তাহলে বেইমানিকরেছে।না আর লুকিয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। বেইমানির শাস্তি দিতে হবে।
দরজা খুলে সে বেরিয়ে এলো। হ্যারির চোখ কপালে উঠে গেল। টম তখনও ঝুঁকে পড়ে কাগজের লেখাটা দেখছে। দেখা শেষ করে সে ঘুরে দাঁড়াল।
অ্যানসন গর্জন করে উঠলো-খবরদার। সে রিভলবার তুলে তাক করলো টম-এর দিকে।
টম ঘোট ঘোট চোখে তাকাল। ভ্রূ কুঁচকে অ্যানসনকে দেখলো। তার লাল মুখটা রাগে লাল হয়ে উঠল।
অ্যানসন আবার হুঙ্কার দিলো সাবধান আর এক পা এগোলেই গুলি করবো। যাও দুজনে দেয়ালে গিয়ে দাঁড়াও।
হ্যারি পায়ে পায়ে পেছোলো। দেয়ালে পিঠ রেখে সে স্থির হলো।টমনড়লোনা। একই ভাবে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সে কোঁচকাল, অতো সহজে নিস্তার পাবিনা উসুক। ভোলোয় ভালোয় আমাকে রিভলবারটা দিয়ে দে।
সে হাত বাড়ালো, ডাকাতি করতে এসেছে ডাকাতি করার আর জায়গা পাসনি। বদমাস কোথাকার।
সাহস দেখো। অ্যানসন দপকরে জ্বলে উঠলো। তার দৃষ্টিতে আগুন ঝরে পড়লো। মোটা। থলথলে মাংসের তাল। সে তাকে যা খুশি বলছে হাত বাড়িয়ে এমনভাবে ডাকছে যেন সে একটা পোষা কুকুর।
ট্রিগারে শক্ত হয়ে অ্যানসনের আঙুল চেপ্টে বসল। বোকা গাধাটা এক পা এগোলো, অ্যানসন ট্রিগারে চাপ দিলো-বুম, এক ঝলক আগুন, অতবড় চেহারার লোকটা নিমেষে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
অ্যানসন স্থির নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। না এখানে আর এক মুহূর্ত নয়।
যেন কিছুই হয়নি এমন ধীর মন্থর পায়ে সে দরজার দিকে এগোল। কি মনে হতে থমকে দাঁড়াল। টেবিলের ওপরে টেলিফোনের তারটা হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে ফেললো। রিসিভারটা দেয়াল লক্ষ করে ছুঁড়ে মারলো। হ্যারি ভয়ে দু-হাত দিয়ে মাথা ঢাকলো।
অ্যানসন নিঃশব্দে বেরিয়ে এলো। পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে তার গাড়িতে উঠলো। তারপর মৃদু হেসে সেলফে চাপ দিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করলো।
পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে অ্যানসন এর প্রথম কাজটা হল জো ডানকান-এর নামে এক হাজার পয়তালিস ডলারের একখানা চেক লেখা। এক হাজার ডলার আসল এবং বাকীটা সুদ। চেকখানি খামে পুরে সে মুখ বন্ধ করলো। তারপর এগিয়ে গিয়ে রিসিভার তুলে মেগ-এর নম্বর ডায়াল করলো।
নটা বাজতে কুড়ি, মেগ কি ঘুম থেকে উঠেছে। ফোন বেজেই যাচ্ছে। না ঐ তো মেগ ফোন ধরেছে।
মেগ বলল, হ্যালো কে বলছেন?
শোন আমি আজ বিকেলে যাচ্ছি। ধার করা জিনিসটা ফেরৎ দিতে যাবো, আজ বিকেলে তুমি থাকবে তো?
ও জন তুমি, আমি ভাবলাম কে না কে কাঁচা ঘুমটা ভাঙ্গালে তো?
বেশ করেছি। আগে আমার কথার জবাব দাও, বিকেলে থাকছ তো?
হা নিশ্চয়ই থাকবো, কেন থাকবো না।
ঠিক আছে। তিনটে নাগাদ আমি যাবো। ছাড়ছি। ফোন রেখে দিলো অ্যানসন।
হোটেল থেকে বেরিয়ে সে গেলো টাউনে। সেখানকারন্যাশানাল ব্যাঙ্কে নিজের অ্যাকাউন্টে নগদ এক হাজার ডলার জমা দিয়ে বললো, টাকাটা যেন দুপুরের মধ্যেই ব্যাঙ্কে ব্রেন্ট শাখায় তার অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়।
ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে এসে ডানকানকে লেখা খামটা সে ডাকবাক্সে ফেললো।
গোটা পাঁচেক ফোন করার দরকার ছিল। একটা টেলিফোন বুথে গিয়ে কাজটা সারলো। কাজ মোটামুটি এগোলো। এক সম্পন্ন জোতদার দশ হাজার ডলারের একটা বিমা করতে রাজী হলো। দীর্ঘ কথা কাটাকাটির পর আরো দুজন নিমরাজী হল। বেলা বাড়তে একটা হোটেলে ঢুকে খাবারের অর্ডার দিলো।
খেতে খেতে সদ্য কেনা টাউন গেজেটের দুপুরের সংস্করণে চোখ বোলাতে লাগল অ্যানসন হু এইতো, পেট্রোল পাম্পের ডাকাতির কাহিনীটি বেশ ফলাও করে প্রথম পৃষ্ঠাতেই ছাপা হয়েছে। টম স্যাঙ্কুয়িস্টকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তার বাঁচার আশা নেই বললেই চলে।
খবরের সঙ্গে একটা ছবিও ছাপা হয়েছে হ্যারি ওয়েবার আঙুল দিয়ে একজন পুলিসকে বাথরুমটা দেখিয়ে দিচ্ছে। ব্রেন্ট-এর হোমিসাইড বিভাগের কর্তা জেনসনও পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
অ্যানসন খবরের কাগজ মুড়ে এক পাশে সরিয়ে রাখলো। খাবারে মন দিলো। তার মুখেরুচিটা আবার ফিরে এসেছে, তাই আরও কিছু খাবারের অর্ডার দিল অ্যানসন।
পরিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে রেস্তোরাঁর ওয়েটার সবিস্তারে রঙ বুলিয়ে পেট্রোল পাম্প ডাকাতির-লোমহর্ষক বিবরণ বিবৃত করল। আশেপাশের টেবিলেও চাপা-গুঞ্জন। সবাইকেই এই ডাকাতির ঘটনাটা ভাবিয়ে তুলেছে।
অ্যানসন খাবার শেষ করে বিল চুকিয়ে উঠল।
তার ভাবভঙ্গিতে এতটুকু অস্বাভাবিকতার চিহ্ন নেই। অন্যান্য দিনের মতোই স্বচ্ছন্দ স্বাভাবিক তার আচরণ।
অ্যানসন গাড়িতে গিয়ে বসল। ইঞ্জিন চালু করে এক সেকেন্ড ভাবলো যে এক মক্কেলের সঙ্গে গাড়ি-ইনসিওরের ব্যাপারে দেখা করার দরকার ছিলো, না থাক। আজ আর নয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। না আজকে না, প্রায় তিনটে বাজে মেগ তার অপেক্ষায় বসে থাকবে সুতরাং অ্যানসন গাড়ি ছাড়ল।
কাল রাতের ঘটনাগুলো পরপর ছবির মতো মনের পর্দায় উঁকি মারছে। পুলিস কি আমাকে ধরতে পারবে। পারবে না বলেই তো মনে হয়।কারণ হ্যারি ডাকাতের চেহারার যে বর্ণনা দিয়েছে অ্যানসনের ধারে কাছ দিয়েও তা যায় না। হ্যারি বলেছে যে ডাকাতটা গাট্টাগোট্টা চেহারার, বেশ লম্বা কিন্তু অ্যানসন দুটোর কোনোটাই নয়। এদিকে সেই পুলিসটাও মর মর, ওর পক্ষেও কিছু বলা সম্ভব নয়।
টাকা পয়সা নিয়ে ফেরার পথে একজঙ্গলে গাড়ি থামিয়ে সে কোট আর টুপিটা ফেলে দিয়েছে। নোটগুলো গুনে দেখেছে। সব মিলিয়ে আয় হয়েছে নগদ তিন হাজার ছশো সত্তর ডলার, তার প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশী।
অথচ কি আশ্চর্য! অ্যানসন একটুও চঞ্চল হয়নি। মুহূর্তের উত্তেজনায় এতটুকু বিচলিত হয়নি। ঠাণ্ডা মাথায় ধাপে-ধাপে সে এগোচ্ছে–এগোচ্ছে, এগিয়ে চলেছে।
নুড়ি-বিছানো পথ পার হয়ে অ্যানসন গাড়ি থামালো দরজার গোড়ায়। দরজা খুলে নামলো মেগ যেন তার অপেক্ষাতেই বসে ছিল। দরজা খুলে দিয়ে মৃদু হাসল সে।
মেগ বলল, এসো। ভেতরে এসো। অ্যানসন ঢুকে মেগ-এর চোখে চোখ রাখলো, কেমন যেন বিবর্ণ, গম্ভীর তার চোখের দৃষ্টি।
মেগ দরজা বন্ধ করে তার দিকে ফিরে তাকাল। রেডিওতে একটু আগে বললো সেই পুলিসটা নাকি মারা গেছে।
অ্যানসন শোবার ঘরে ঢুকে সোফায় বসে হাই তুলতে লাগল।
মেগ বলল তুমি শুনছে, আমি কি বললাম, সেই পুলিসটা মারা গেছে।
অ্যানসন স্থির চোখে মেগ-এর দিকে তাকাল। মেগ-জানালার কাছে দাঁড়িয়েছে তার চোখের তারায় ভয়। এই তো সবে শুরু। একজন গেছে, আর একজন যাবে, এর পর যাবে বারলো।
সে হাসলো, কি হলো কি? একটা পুলিস মরেছে তাতে তোমার কি?
আমার কি? মেগ ফিস ফিস করে বলল, তুমি তুমিই তাকে খুন করেছ।
বেশ করেছি। এই বলে অ্যানসন ঘরের চারদিকে চোখ যোরাতে লাগল। ইস মেয়েটা যাচ্ছেতাই নোংরার একশেষ। সে মনে মনে ভাবলো। সে দেখলোসকালবেলা ব্রেকফাস্ট খেয়েছে সেই প্লেটগুলো এখনও সরানো হয়নি, ডিমের খোসাগুলো মেঝেয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। খানিকটা জেলি টেবিলে পড়ে আছে। মাছি উড়ছে ভনভন করে।কফির কাপের তলানিটুকু ঘন কালো দাগ ধরিয়ে রেখেছে কাপের চারপাশে।
অ্যানসন ব্যাগ খুলেরিভলবারটা বেরকরলো, তারপর সেটাকে রুমাল দিয়ে ভাল করে মুছলো। তারপর রুমাল দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে রাখলো ড্রয়ারের সেই কাঠের বাক্সটায়। পাঁচটা কার্তুজও একই রকম ভাবে মুছে রুমালে ধরে বাক্সে রাখলো। তারপর ড্রয়ার বন্ধ করে সোফায় এসে বসে একটা সিগারেট ধরালো।
এতোক্ষণ মেগ একটাও কথা বলেনি। এবার মুখ খুলল, রিভালবার পরিষ্কার করেছে?
করেছি। তোমার স্বামী বুঝতেও পারবে না।
কিন্তু কার্তুজ যে ছয়ের জায়গায় পাঁচটা হয়ে গেল।
সে কে আর দেখছে।
তাহলে সত্যি সত্যিই তুমি পুলিসটাকে…
হা হা হা, মেরেছি বেশ করেছি। এই শুরু এখনো অকোকী, অ্যানসন বললল। তারপর উঠে মেগকে ধরে তার বুকের কাছে টেনে নিল। তার মুখে ক্রুর-হাসি ফুটে উঠলো, আমি আর একা নই মেগ, যা কিছু করেছি দুজনের জন্য, তোমার আর আমার জন্য। তুমিও আছে আমার সঙ্গে…পাপের ভাগ তুমিও পাবে। নাও মুখ ভোলো একটা চুমু খাই।
মেগ একটু ইতস্ততঃ করলো–চোখ বুঝলো। আবেগে শরীর এলিয়ে দিলো অ্যানসনের বুকে। অ্যানসন মেগকে দুহাতে পাঁজাকোলা করে তুলে মেঝেয় শুইয়ে দিলো। তার চোখের দৃষ্টিতে বন্যতা ফুটে উঠলো।
মেগ মেঝেতে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। মেগ এবার তোমার নিজের সম্বন্ধে কিছু বল দেখো যে কাজে আমরা নেমেছি, কাজটা মোটেই সোজা নয়। তাই তুমি যাতে ধরা-ছোঁয়ার মধ্যে না পড়, সেইজন্যই সবকিছু জানতে হবে।বলে আমার কাছেকিছু লুকিয়োনা।ম্যাডস-এরআগে আমাকেই সবকিছু জানতে হবে।
বাঃ লুকোবো কেন। মেগ বলল, এছাড়া ম্যাডক্স জানলেই বা কি?
তোমার ভূত-ভবিষ্যৎ বর্তমান। সবই সে জানতে পারবে। ম্যাডক্সকে তো তুমি জান না। টাকা দাবী করে দরখাস্ত করার সঙ্গে তুমি পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসবে। তোমার যত জবরদস্ত আলিবাইগাকুক না কেন ম্যাডক্স তোমাকে ছাড়বেনা। তোমার উপর তার সন্দেহ এতটুকু কমবে না। তাই বলছি অতীত সম্বন্ধে যদি তোমার কোন গোপন কথা থাকে তাহলে আমাকে সব খুলে বলো।
বলার মত আমার কিছু নেই। কি বলব?
কোনোদিন তোমার নাম পুলিসের খাতায় ওঠেনি তো?
মেগ প্রচণ্ড রেগে বলল, না ওঠেনি।
কোনো অপরাধ?
অপরাধ আবার কি? একবার জোরে গাড়ি চালিয়েছিলাম।
বিয়ের আগে তুমি কি করতে?
একটা হোটেলের রিসেপশনিস্ট ছিলাম।
কোন হোটেলে?
লসএঞ্জেলস্-এর কনাট আর্মস্ হোটেল।
হোটেলটা ভাল তো। মানে এক-দু ঘণ্টার জন্য ভাড়া দিয়ে মোটা রোজগারের হোটেল নয় তো।
না না তা হবে কেন?
বেশ, তার আগে কি করতে?
একটা নাইট ক্লাবে কাজ করতাম।
কি কাজ?
ওই সবাই যা করে লোজনদের সঙ্গে নাচা, খাবার টেবিলে সঙ্গ দেওয়া।
দেখো মেগ, একটা বিষয়ে কিন্তু আগে থেকেই সাবধান করে দি, আমাকে যা যা বললে এর বাইরে চোখে পড়ার মতো কোনো অন্যায় তুমি কোনোদিন করনি তো?
কি বিপদ বলছি তো কিছু করিনি।
না করলেই ভালো, আমার আর কি, তোমার বিপদ তুমিই বুঝবে।
হ্যাঁ আমিই বুঝবো। তোমার ম্যাডক্স এসব প্রশ্ন করতে এলে মজা দেখিয়ে দেব।
জিজ্ঞেস যেকরবেই, এমন কোন কথা নেই।তবে ঐ যে বললাম, একবার তার মাথায় সন্দেহের ভুত চাপলে এসব না জেনে সে ছাড়বে না। একেবারে অন্দিসন্দি সব ওলট-পালট করে দেখবে। তারপর সে সিদ্ধান্ত নেবে। ঠিক করবে তোমার দাবী মেটানো উচিত কিনা। যদি না হয় তার টাকা তার কাছেই রইল, তোমার হাতে আর এল না। আমাদের সব পরিশ্রম জলে গেলো।
মেগ জানলা দিয়ে আকাশ দেখলল। তারপর চিত হয়ে শুলো। এতো গণ্ডগোল আছে জানলে এসব ঝামেলায় যেতে রাজী হতাম না জন।
এখনও সময় আছে। অ্যানসন উঠে বসলো। ইচ্ছে হলে এখনও তুমি ফিরে যেতে পারো। কিছু দরকার নেই এসব করার। জলে জল থাক। মাছে মাছ। আর যদি এগোতেই চাও, তাহলে আমাকে আগে ভাগে সব খুলে বলল। নাইট ক্লাবে কাজ করার আগে তুমি কি করতে।
কিছু না, মায়ের সঙ্গে থাকতাম।
বারলোর সঙ্গে বিয়ের পর এই এক বছরের মধ্যে কোনো ভালবাসার লোকজন জুটিয়ে বসোনি তো?
মেগ হেসে বলল, হ্যাঁ জুটিয়েছি, তোমাকে মিঃ জন অ্যানসনকে।
আমার কথা বলছি না। আমরা দুজনেই কম-বেশী বুদ্ধিমান। চোখকান সজাগ রেখে আমরা দুজনেই চলতে পারবো। কিন্তু আমি ছাড়া তোমার আর কোন পুরুষ বন্ধু নেই তো?
না–কেউ নেই।
দেখো ভেবেচিন্তে বলো ম্যাডক্স যদি টের পায় তাহলে কিন্তু সে তাকেও ছেড়ে কথা বলবে না। যে স্বামী মোটা টাকার জীবনবীমা করার পর মরে, ম্যাডক্স ধরেই নেয় সেই স্ত্রীটির একটা প্রেমিক আছে এবং সে প্রেমিকই হল এই হঠাৎ মৃত্যুর কারণ।
তার যা ইচ্ছে সে ভাবুক আমার কোন প্রেমিক নেই।
বেশ! এবার তুমি বলো, তোমার স্বামীর প্রতি তোমার এই যে বিদ্বেষ, এই ঘৃণা, এ সম্বন্ধে আমি ছাড়া আর কে কে ওয়াকিবহাল। ধরো কোনদিন তোমাদের দুজনের হয়তো কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। কেউ হয়তো সেকথা আড়ি পেতে শুনে ফেলেছে।
না না তা কিভাবে শুনবে, এদিকে কেউ আসেই না।
তোমার স্বামী এ সম্বন্ধে কাউকে বলেছে?
না? ঘরের কথা বাইরের লোককে বলার লোক সে নয়।
বেশ, শুনে তো মনে হচ্ছে অসুবিধের কিছু নেই। অবশ্য সবটুকু নির্ভর করছে, তুমি আমাকে কতখানি সত্যি কথা বলেছ, তার ওপর। এখন নয়। পরে বুঝবে, এসব প্রশ্ন কত দরকারী, ম্যাডক্স একবার পেছনে লাগলে প্রশ্নে প্রশ্নে তোমাকে একেবারে অতিষ্ঠ করে তুলবে। যা যা বললে সব সত্যি তো?
উঃ কি যন্ত্রণা, কতবার বলবো সত্যি সত্যি সত্যি। তুমি আর আমাকে জ্বালিও না দয়া করে আমাকে এবার ক্ষমা দাও।
বেশ! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে একটি সিগারেট ধরালো অ্যানসন। গলগল করে ধোয়া ছেড়ে অ্যানসন বলল, আগামীকাল রাতে তোমার স্বামী বাড়ী থাকবে তো।
সোম আর বৃহস্পতি ছাড়া সব রাতেই ও বাড়িতে থাকে।
আমি তাহলে কাল রাত সাড়ে আটটায় এখানে আসবো। ঠিক সাড়ে আটটায়, কড়া নাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তুমি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেবে। তোমার স্বামী খুললেই বিপদ। আমাকে হয়তো দোরগোড়া থেকেই ভাগিয়ে দেবে। ইনসিওর করার কথা বলতে হলে আমাকে অন্ততঃ ভেতরে তো ঢুকতে হবে। বাইরে দাঁড়িয়ে কাহাতক আর বকবক করা যায়।
সে তুমি ভেতরেই ঢোকো আর যাই করো, ফিলকে দিয়ে ইনসিওর করানো অতো সোজা নয়। সে তোমাকে পাত্তাই দেবে না।
অ্যানসন উঠে দাঁড়ালো বলল, সে সব পরের কথা। তুমি ঠিক সাড়ে আটটায় আমাকে দরজা খুলে ভেতরে ঢোকাবে। তারপর দেখা যাবে, কিভাবে কি করা যায়।
মেগ উঠে দাঁড়ালো, জন, সত্যিই তুমি সেই পুলিসটাকে গুলি করেছে?
অ্যানসন নীচু হয়ে অ্যাটাচি তুলে নিল, বলল আমি তো তোমাকে বলেছি মেগ যা যা হচ্ছে শুধু দেখে যাবেপ্রশ্ন করবেনা। টাকার দরকার ছিল প্রিমিয়াম দিতে হবে। তাই টাকা সংগ্রহ করেছি। যেভাবেই করে থাকি তোমার তা জানার দরকার নেই। খুচিয়ে অনর্থক ঘা বাড়াতে এসো না।
অ্যানসন আর দাঁড়ালোনা।বড় বড় পা ফেলে ঘর পেরিয়ে বাইরে এলো। গাড়িতে উঠে গাড়ি ছাড়ল। ইঞ্জিনের শব্দ মিলিয়ে যেতেই মেগ ফোনের রিসিভার তুলে ডায়াল করল। ও পাশে কেউ ফোন ধরল না। আজ মঙ্গলবার। সকাল থেকেই আবহাওয়াটা ভালো। অনেকক্ষণ আগে সন্ধ্যে উতরে গেছে। পুব আকাশে থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ।
.
অ্যানসনের মেজাজটা বেশ শরীফ। শুভ কাজে বেরিয়েছে। রাত আটটা বেজে কুড়ি। আর দশ মিনিট পরেই তার সঙ্গে বারলোর দেখা হবে। মেগ বলেছে বারলো তাকে পাত্তা দেবে না। দেখা যাক। কদুর কি হয়। অমন ঢের ঢের লোক দেখেছে অ্যানসন, জেদী, গোঁয়ার বদরাগী সব। তার কথার তোড়ে সবাই কশ মেনেছে, আপত্তি করতে পারেনি। অবশ্য প্রথম প্রথম লেজে খেলিয়েছে অনেকক্ষণ। তা এমন হয় প্রথম প্রথম সকলেই একটু লেজে খেলায়, কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারে না। ঠিক কাটায় কাটায় সাড়ে আটটায় বারলোর বাড়ীর দরজায় কড়া নাড়লো অ্যানসন। যথারীতি মেগই দরজা খুলে দিল। ভেতরে ঢুকলো,অ্যানসনবসবার ঘরে এলো। বারলো সোফার এক কোণে বসে কাগজ পড়ছিল। অ্যানসনকে দেখেই কাগজ মুড়ে উঠে দাঁড়ালেন। একরাশ বিরক্তি নিয়ে সে প্রশ্ন করল, কে? কি চাই?
আনসন তার স্বভাবসিদ্ধ কায়দায় নিজের পরিচয় দিয়ে দেখা করতে আসার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলো।
শুনে হাতের কাগজখানা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন বারলো। বিকৃত স্বরে বললেন, ওসব বীমা টিম করাতে আমার ভালো লাগে না মশাই, কোনোদিন করাইনি, করাবো না। আপনি শুধু শুধু বাজে সময় নষ্ট করছেন। পথ দেখুন।
মিঃ বারলো, পথ তো দেখবোই। হেসে অ্যানসন বলল, এলাম সেই সুদূর ব্রেন্ট থেকে মনে কত আশা নিয়ে, কেন আপনার বীমা করতে হবে তা নিয়ে আমি আপনাকে কয়েকটা কথা বলি।
না মশাই। লাভহীন বাণিজ্যের কথা শুনতে আমার ভাল লাগে না। আর মেগ তোমাকেও বলিহারি এদের ঢুকতে দাও কেন? কতদিন না বলেছি যে সেলসম্যানদের আমি দুচক্ষে দেখতে পারি না। ধপ্ করে সোফায় বসে আবার কাগজখানা চোখের সামনে মেলে ধরলেন বারলো।
মেগ এবং অ্যানসন পরস্পরের দৃষ্টি বিনিময় করল, মেগের চোখে কৌতুক। কি বলিনি তখন?
কিন্তু অ্যানসন এত সহজে হার মানবার পাত্র নয়, তার কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ। ন্যাশানাল ফাইডেলিটি ইনসুরেন্স করপোরেশনের সে একজন প্রখ্যাত সেলসম্যান। তার তো হতাশ হলে চলবে না।
খবরের কাগজে মুখ ঢাকা বারলোর উদ্দেশ্যে সে বলল। ঠিক আছে আপনি যখন এত বিরক্ত বোধ করছেন তখন এখানে আমার থাকা আর শোভা পায় না। এখানে আসতামও না কোনো দিন, নেহাত উনি বললেন।
বারলো কাগজ নামিয়ে মুখ কুচকে বলল, কে? কে বললো?
আপনাদের মিঃ হ্যামারস্টেন। ওর কাছে গিয়েছিলাম।
কোম্পানির কাজে তা কথায় কথায় উনি আপনার আর কয়েকজনের নাম বললো। অ্যানসন মনে মনে নিজের বুদ্ধির তারিফ করলো। সৌভাগ্যক্রমে হ্যামারস্টেন-এর নামটা তার জানা, ফ্রামলের দোকানের ম্যানেজার মিঃ হ্যামারস্টেন। দোকানের একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারীর কাছে দোকানের ম্যানেজারের নামের ইঙ্গিত দেওয়াকম অর্থবহ নয়। কে আর যাচ্ছে সত্যি-মিথ্যে যাচাই করে দেখতে।
কাজ হলো, বারলো কাগজ সরিয়ে রেখে টোক গিলে বলল, মিঃ হ্যামারস্টেন বলেছেন আমার নাম?
হ্যাঁ বলেছেনই তো। আপনার সম্বন্ধে ওর ভাবনাচিন্তা কিছু মাত্র কম না।
বারলো এক মিনিট মাথা নীচু করে কি ভাবলো। তারপর মুখ তুলে মৃদু স্বরে বলল, মাফ করবেন বীমা করা আমার সাধ্যের বা ইচ্ছার বাইরে। কিছু মনে করবেন না। ধন্যবাদ।
অ্যানসন উঠে দাঁড়াল, বলল না না মনে করবার কি আছে। সব আশা কি আর পূর্ণ হয়। ঠিক আছে চলি। শুধু শুধু আপনার খানিকটা সময় নষ্ট করলাম।
বারলো উঠে দাঁড়ালো। সে বলল মানে দেখুন আপনাকে কি বলতে কি বলে ফেলেছি আসলে সারাদিন খেটেখুটে আর মেজাজ বলে কিছু থাকে না।
অ্যানসন হো হো করে হেসে উঠল। বলল জানি জানি কাজকর্ম তো আমারও সারাদিন করতে হয়। আমাদের পক্ষেই সব সময় মেজাজ ঠিক রাখা দায় হয়ে উঠে, এই সেদিনের কথাই ধরুন না কেন, রাস্তায় এক হোকরা খুব চেপে ধরলো, কি না একটা ইনসুরেন্স করাতে হবে। কাণ্ড ভেবে দেখুন, দুকথা শুনিয়ে দিলাম।
অ্যানসনের বলার ধরণেই হোক বা যে কোনও কারণে বারলো হো হো করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে তিনি দরজার দিকে এগোলেন। অ্যানসনও তার পিছনে এগোল। তারপর দরজার সামনে থমকে বলল আপনার বাগানটা কিন্তু দারুণ দিনের আলোয় একবার বাগানটা দেখতে পেলে বর্তে যেতাম।
বারলো থমকে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। বলল, আপনার বাগানের শখ আছে নাকি?
আছে মানে ছিল এক সময় সবই ছিল। আমিবলতাম শখ মা বলতেন নেশা।কার্সেলে আমাদের বাগানে এই অ্যাতো বড় বড় একেকটা গোলাপ ফুটতো। তবে হ্যাঁ আপনার গোলাপের মত অত বড় নয়। এখন শখ থাকলেও উপায় নেই। ভাড়াবাড়িতে শখের গোলাপ চাষ করার মেজাজই পাই না।
না, না, টবে আবার গোলাপ চাষ হয় নাকি? তবে চলুন না, আপনাকে বাগানটা একবার দেখিয়ে দি। দাঁড়ান এক মিনিট। এই বলে বারলো দেয়ালের একটা কাঠের বাক্সের ডালা খুলে একসারি সুইচ টিপলেন। বাগান আলোয় ঝলমল করে উঠল। দরজা খুলে দু-জনে বাইরে এল।
বাঃ অপূর্ব, চমৎকার। অ্যানসন অবাক-বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো বাগানখানির দিকে। এ যেন এক স্বপ্নের রাজ্য। ছেলেবেলার গল্পে পড়া পরীর দেশ। এখানে-সেখানে ঝোপেঝাড়ের আড়ালে লুকোনো জায়গা থেকে বাগানের প্রতিটা অংশে আলো পড়েছে। প্রতিটা ফুল যেন আলো ছড়াচ্ছে। একপাশে মাঝারি আকৃতির একটা পুকুরে নীল স্বচ্ছ জলে খেলা করে বেড়াচ্ছে রঙ-বেরঙের কয়েকটা মাছ।
বাগান সম্পর্কে অ্যানসনের কোনদিনই কোন আগ্রহ নেই। নেহাত বলতে হয় তাই বানিয়ে বানিয়ে গোলাপ ফুল সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছে। কিন্তু এই বাগানের আশ্চর্য সুষমা দেখে সে সত্যি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলো না। সে মুগ্ধ হয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে রইল।
অনেকক্ষণ কেউ কোনো কথা বলল না। একসময় বারলোই নীরবতা ভাঙ্গল, এসব আমার নিজের হাতে করা, এই আলো, ফোয়ারা, ফুল, কাঁটা-ঝোঁপ সব আমার বহুদিনের সাধনার ফল।
অ্যানসন বিড়বিড় করে বলে উঠল; আপনার এই কায়দাটা রপ্ত করতেই তো আমার পাঁচ পাঁচটা বছর কেটে যাবে।
আমারও কম দিন লাগেনি মিঃ অ্যানসন। বারলো বলল, অনেক দিন লেগেছে আমার এসব শিখতে, কিন্তু আপনি বলুন কি এমন লাভ হল এসব শিখে। ফ্রামলের দোকানের একটা সাধারণ মাস মাইনের চাকরী ব্যস্। প্রয়োজন আমার কোনোদিন মিটলো না।
এইতো, এইতো উপযুক্ত সময়। এসময়ই সুতো গোটাতে হবে।
অ্যানসন অবাক চোখ করে বারলোর দিকে তাকাল–কেন সামান্য চাকরী আপনি করতে গেলেন মিঃ বারলো? আপনার এত ক্ষমতা স্রেফ বাগান করে আপনি দুহাতে পয়সা রোজগার করতে পারতেন।
বারলো দু-হাত নেড়ে একটা রাগতঃ ভঙ্গি করলে, বলল, আমি বুঝি ভাবিনি সেসব। কিন্তু ভাবনাই সার। মূলধন কোথায় যে ব্যবসা করবো। তাছাড়া বিয়ে-থা করেছি। দুমদাম করে কিছু একটা করলে যদি শেষমেস ঝামেলায় পড়ে যাই তখন ঠেলা সামলাবে কে মশাই। একটা পয়সা খরচ করার আগে এখন আমাকে তিনবার ভাবতে হয়। তাছাড়া আমার আছেই বা কি?
কেন আপনার এই বাগান আছে। এই বাগান দেখে যে কোনও ব্যাঙ্ক আপনাকে যেচে এসে টাকা দিয়ে যাবে। ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন?
বলিনি আবার, বলা কওয়া সব আগেই শেষ। বারলোর চোখে হতাশার ছায়া পড়লো।
ব্যাঙ্ক আমাকে একটা আধলাও দেবে না। টাকা ধার দিতে গেলে তারা জামিন চায়। আমার হয়ে কেই বা জামিনে দাঁড়াবে। তাছাড়া এই বাড়ীর দলিল জমা রেখে টাকা নেবো সেরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। বাড়ীটা আমার মায়ের আমল থেকেই বন্ধক আছে।
অ্যানসন পুকুরের কাছে এগিয়ে গেলো। গুটিশুটি বারলোও এলেন, লাল নীল মাছের দিকে তাকিয়ে রইল অ্যানসন কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎ মুখ তুলে বলল, এমন সুন্দর আপনার হাতের কাজ, এত নিপুণ কারিগর আপনি, আচ্ছা মিঃ বারলো, ব্যবসা শুরু করতে আপনার ঠিক কত টাকার প্রয়োজন? টাউনের নামকরা টাকা পয়সাওয়ালা অনেক লোকজনের সঙ্গে আমার খাতির আছে। আর কিছুনা পারি কয়েকটা মোটামুটি ভালো যোগাযোগ অন্ততঃ আপনাকে করিয়ে দিতে পারবো। এখন বলুন তো ঠিক কত হলে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন?
বারলোর মুখের রঙ মুহূর্তে বদলালো। চোখে ফুটল সলজ্জ বিনয়ী ভাব, ছি ছি, আপনাকে সেই থেকে ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখেছি; চলুন ভেতরে গিয়ে বসা যাক। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি কিছু আলোচনা হয়। একটু কফি খেতে নিশ্চয়ই আপনার কোনো আপত্তি হবে না।
বারলো তাকে হাত ধরে একরকম টানতে টানতেই সোফায় এনে বসালো। সোফায় বসতে গিয়ে আড় চোখে মেগের দিকে তাকিয়ে অ্যানসন বিজয়ীর হাসি হাসল।
.
মঙ্গলবার বারলোকে পাঁচ হাজার ডলারের বীমা করতে রাজীকরার পর সাত দিন কেটে গেছে। এরমধ্যে একদিন বীমা কোম্পানির ডাক্তার স্টিভেন্স-এর কাছে বারলোর ডাক্তারী পরীক্ষাটাও হয়ে গেছে। সৌভাগ্যক্রমে স্টিভেন্স কোন ত্রুটি ধরেননি। তিনি লিখে দিয়েছেন বীমাকারী ফিলিপ বারলো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
বারলোকে রাজী করাতে অ্যানসনের মঙ্গলবার আরো একঘণ্টা লেগেছে। অ্যানসন ধীরে-সুস্থে যুক্তি দিয়ে তাকে বুঝিয়েছে কিভাবে ব্যাঙ্কের কাছে বীমার পলিসিখানা জমা দিয়ে ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন কত সহজে সংগ্রহ করা সম্ভব। আর বিশেষ করে, বারলো যখন এক নিপুণ উদ্যান-শিল্পী। কথাটায় বারলো খুবই সন্তুষ্ট, এমন অদ্ভুত বিশেষণ তিনি এর আগে কখনও শোনেননি।
তখন ব্যাঙ্কে একবার খবর দিলেই হলো বাকী যা যা করার তারাই করবে। সব শুনে-টুনেবারলো যাকে বলে একেবারে হতবিহ্বল। হাতের কাছে সব ঠিকঠাক থাকলে তিনি তক্ষুনিই সইসাবুদ যা করার করে দিতেন। ডাক্তারী পরীক্ষার কথাটা বলে কোনোক্রমে তাকে সে যাত্রা ঠেকিয়ে দেওয়া গেল।
তবে হ্যাঁ গণ্ডোগোল বেঁধেছিল অন্য জায়গায়। ধার পেতে গেলে দুবছরের প্রিমিয়াম বাবদ প্রথম চোটেই মোট একশো পঞ্চাশ ডলার দিতেও বারলো নিমরাজী হয়েছিলেন। কিন্তু ধার পেতে একবছর অপেক্ষা করতে হবে শুনে তিনি যারপরনাই অবাক হয়েছিলেন। মিঃ অ্যানসন, সে কি, ধার পেতে গেলে আমাকে একবছর অপেক্ষা করতে হবে বলেন কি?
অ্যানসন বলেছিল পুরো একবছর হয়তোনাও লাগতে পারে হয়তোকিছু আগেই আপনি পেতে পারেন তিন হাজার ডলার। কিন্তু তাতে কি এসে যায়। এইতো একটু আগেও আপনি বলছিলেন যে টাকা টাকা করে এতদিন কম চেষ্টা করেন নি। এতো দিন যখন কেটেই গেল তখন আর একটা বছর কাটতে অসুবিধে কি? না হয় আর এক বছর পরেই আপনার স্বপ্ন সার্থক হবে।
একটু ইতস্ততঃ করে অবশেষে বারলো রাজী হলেন সত্যিই তো, একটা বছর আর কটা দিনই বা। দেখতে দেখতে বারোটা মাস চোখের সামনে কেটে যাবে।
হাআর একটা কথা,অ্যানসন বলছিলো, আপনিযদি আপনার প্রথম প্রিমিয়ামের টাকাটা নগদে দেন, তাহলে শতকরা পাঁচ টাকা হারে আপনি ছাড় পাবেন। আপনারও দুপয়সা সাশ্রয় হবে, আমারও কাগজপত্রের ব্যাপার অনেকখানি কমবে।
এ যুক্তিটাও বারলোর বেশ মনঃপুত হল। তিনি আপত্তি করলেন না।
এই সাক্ষাৎকারের পর সাত দিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ বুধবার। অ্যানাকে অ্যানসন একটু আগে ভাগেই ছুটি দিয়ে দিয়েছে। একাকী সে অফিস ঘরে বসে পরবর্তী কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে চিন্তা করছে।
অনেকক্ষণ ভেবে-চিন্তে সে একটা সিগারেট ধরালো। আলমারী খুলে পলিসির কাগজ বের করে বসলো টাইপ টেবিলে।
একখানা পলিসিতে টাকার অঙ্কের ঘরে সে টাইপ করলে পাঁচ হাজার ডলার। তার অবর্তমানে টাকার দাবীদার তার স্ত্রী মিসেস ফিলিপ বারলো। দ্বিতীয়টাতেও একই কথা টাইপকরলো অ্যানসন। শুধু তৃতীয় এবং চতুর্থ পলিসি দুটোতে টাকার অঙ্কের ঘরে একটা শূন্য বাড়িয়ে পঞ্চাশ হাজার ডলার করলো। আনুপাতিক হারে প্রিমিয়ামের হারও বদলালো। অন্যান্য সবকিছু একই রকম থাকলো।
চালাকিটা বারলো ধরতে পারনে বলে মনে হয় না। যদি ধরেও ফেলেন, বলতে হবে যে টাইপের ভুলের জন্যই এ কাণ্ড হয়েছে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার। মেগ-এর একলা থাকার রাত। একবার যাবো কি? অ্যানসন ভাবলো, নাঃ থাক। এখন দেখা সাক্ষাতের বহরটা একটু কমাতে হবে। কাজ শুরু হয়ে গেছে। রয়ে-সয়ে বিচার বিবেচনা করে এখন পা ফেলতে হবে। কটা দিনই বা আর, ছ-মাস মানে মোট একশো আশি দিন। হোক, এ কটা দিন দাঁতে দাঁত চেপে কাটিয়ে দিতেই হবে। ই-মাস পর আর কে পায় আমাকে। একেবারে যাকে বলে অর্ধেক রাজত্ব সমেত রাজকন্যা, পঞ্চাশ হাজারের অর্ধেক পঁচিশ হাজার ডলার এবং মেগ, ওঃ যেন চাবুক।
.
অ্যানসন ফোন তুলে ডায়াল করলো। মেগ ফোন ধরল, অ্যানসন বলল এদিকের কাজ আমার শেষ। কাল বাদে পরশু তোমাদের বাড়ী যাবো, সই-সাবুদ করিয়ে আনতে। দেখলে তো সেদিন বলেছিলাম পারবো, ঠিক পারলাম। জন অ্যানসন নিজের ওজন না বুঝে কাউকে কিছু বলে না।
মেগ-এর কণ্ঠস্বরে উদ্বেগের ছোঁয়া লাগল, সে বলল তুমি বলছ যে সব ঠিক ঠিক হবে।
অসুবিধে আর কিসের?
তবু
ওসব তবু-ফবু বাদ দাও। বাজে চিন্তায় সময় নষ্ট কোরো না।
আচ্ছা, ফিল সই করার পর তুমি কি করবে, দাঁড়াও বাপু আগে সইটা করাই। কি করবো সেটা না হয় পরেই ভাবা যাবে। ছাড়ছি কেমন, ছেড়ে দিল অ্যানসন।
আচমকা বারলোর ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। সবে ছটা বেজেছে। ভোরের রোদ এখনও তেমন কাটেনি। আকাশ মেঘলা। বালিশটা ঘামে ভিজে চপচপ করছে।
বারলো চারিদিক সতর্ক সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। হিংস্র পশুর মতো ক্রুর ভয়াল তার দৃষ্টি।
অবশেষে তিনি নিশ্চিত হলেন নাঃ সন্দেহের বা ভয়ের কিছু নেই। তার একক বিছানাটাতে তিনি আবার নড়ে-চড়ে শুলেন।
আজ বৃহস্পতিবার।
সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে সোম আর বৃহস্পতি এই দুটো দিনই তার খুব প্রিয়। এই দুদিন বাড়ির বাইরে রাত কাটাতে হয় তাকে। নৈশ-বিদ্যালয়ের ঝামেলাটুকু মিটে গেলেই তিনি নিশ্চিন্ত। বাকী রাতটুকু বারলোর হাতের মুঠোয়।
আজ স্কুলের ঝামেলা মিটলে তিনি জেসনস্ প্লেনে যাবেন। এখানে-সেখানে বড় বড় ঝোপে ঝড়ে ঢাকা নদী তীরের এই উপত্যকাটি তরুণ-তরুণীদের নিভৃতে প্রমোদ-বিহারের আদর্শ। পীঠস্থান। গাড়ীতে বসেই ছোঁড়াছুঁড়িগুলোর একেবারে বেলেল্লাপনার চরমে ওঠে। এ-অবধি আড়ি পেতে এরকম একাধিক একান্ত-গোপন দৃশ্য তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। ব্যর্থকাম এই পুরুষটির এসব কিছু দেখেই আনন্দে ক্রোধে, রোমাঞ্চে মুহুর্মুহু তার শরীর শিহরিত হয়, মনে পুলক জাগে।
সে সব দৃশ্য তার কল্পনায় একের পর এক ভেসে উঠল।তার মুঠো শক্ত হলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠলো। এদের শাস্তি দিতে হবে, চরম শাস্তি। ভীরু কাপুরুষ সব। সাহস নেই, ক্ষমতা নেই, সাধ্য নেই, লুকিয়ে-চুরিয়ে ঝোপেঝাড়ে বন বাদাড় খুঁজে বেড়ায় প্রেম করতে। সব ইতরের বাচ্চা, আধো আধো কথা বলে শুয়ে গড়াগড়ি খেয়ে ক্রোধে উত্তেজনায় তিনি থর থর করে কাঁপতে লাগলেন। গায়ের চাদর টান মেরে খুলে ফেলে দিলেন।বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। একমাথা কালো চুলে ছাওয়া কুটি কুটিল প্রতিবিধটি যেন তাকে বিদ্রূপ করতে লাগল।তিনি আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন। পকেট থেকে চাবিবার করে ডালা খুললেন।তৃতীয় তাকে রাখা ৩৮ বোরের ছোট রিভলবারটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। রিভলবারের পাশে একটা সাদা স্নানের টুপি। টুপিটা তুলে মাথায় পরলেন বারলো। দুটো রবারের পিণ্ড মুখে চালান করে জিভ দিয়ে ঠেলে মুখের দুপাশে চালান করে দিলেন। তারপর রিভলবারটি তুলে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে আবার দাঁড়ালেন।
এবার আর ভ্রূকুটি কুটিল নয়, চেহারা একেবারে পুরো পরিবর্তিত। সেই বদ-মেজাজী, রুক্ষ স্বভাবের পরিচিত বারলোর বদলে এসে দাঁড়িয়েছেন এক নতুন বারলো। তার মাথা জোড়া বিরাট টাক, গাল দুটো ভরাট। রহস্য মাখা দুটো চোখ, হাতে রিভলভার। অদ্ভুত এক চিলতে হাসি খেলে গেল তার ঠোঁট ছুঁয়ে। নিরেট ইস্পাতেরকালোনলটাকে মুখের কাছে তুলে তিনি একটা চুমু খেলেন।
আর বেশিদিন নয়, অদূর ভবিষ্যতে কোনো একদিন এই নল থেকে বেরিয়ে আসবে ঝলকে ঝলকে আগুন, কেউ না কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।
পরিতৃপ্তির আনন্দে বারলোর মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। রিভলবারটিকে পরম স্নেহেরকে চেপে ধরলেন তিনি।
আলমারির কাছে ফিরে গিয়ে একে একে সবকিছু তিনি যথাস্থানে রেখে দিলেন। রিভলবার, মাথার টুপি,রবারের পিণ্ড-সব। দরজায় চাবি বন্ধ করে সতর্ক দৃষ্টিতে একবার চারপাশে তাকালেন। তারপর শিস্ দিতে দিতে গিয়ে ঢুকলেন বাথরুমে।
কুড়ি মিনিট পর স্নান এবং ক্ষৌরকর্ম সেরে পোষাক পরে তিনি বেরিয়ে এলেন। আলমারিটি আবার খুলে স্নানের টুপি এবং রবারের পিণ্ড দুটোকে পকেটে চালান করলেন। রিভলবারটা হাতে নিয়ে ঘুরেফিরে দেখে যথাস্থানে রেখে দিলেন।
ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দরজা ভেজিয়ে দিলেন তিনি, পাশে মেগ-এর ঘরের দরজায় অনেকক্ষণ কান পেতে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিন্তু মে-এর মৃদু শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না। নিশ্চিন্ত হয়ে সিঁড়ি বেয়ে তিনি একতলায় নামলেন। ব্রেকফাস্টের ডিমটা সেদ্ধ করতে হবে, রুটি সেঁকে কফির জল চাপিয়ে দিতে হবে।
মেগ এসবের কিছুই জানলো না। সে তখন ভোরের হালকা বাতাসে ভেসে কোথায় কত দূরের এক নাম না-জানা স্বপ্নের রাজ্যে পৌঁছে গেছে।
আজ জেসনস্ প্লেনে তেমন ভিড় নেই। সন্ধ্যে থেকে অঝোর-ঝরা বৃষ্টি। মাত্র দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছেদূরে গাছের নীচে। একটা ক্যাডিলাক, অপরখানি বহুকালের পুরোনো রঙ-চটা বুইক।
দুটো গাড়ির মধ্যে দূরত্ব মাত্র পঞ্চাশ গজ। মাঝামাঝি জায়গায় এক ঝোঁপের নিরাপদ-আশ্রয় নিলো বারলো। বৃষ্টিটা একটু কমেছে। দুটো গাড়ির আরোহীদের অস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে এখান থেকে।
হঠাৎ মহিলা কণ্ঠের মৃদু প্রতিবাদ ভেসে এলো। না, না, ডেক না, ছিঃ ছিঃ কি করছো তুমি
চকিতে কান খাড়া করলেন বারলো। চোখের দৃষ্টি প্রথমে ক্যাডিলাক, তারপর বুইকের ওপর স্থির করলেন, বুইকের কাঁচের আড়ালে দুটো ছায়া যেন নড়ে উঠলো। নিঃশব্দে চার হাত পায়ে ভর করে বারলো কালো কাঁকড়ার মতো এগিয়ে গেলেন। বুইকের পিছনে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসলেন।
ওপাশের ক্যাডিলাক থেকে মুখ বাড়িয়ে একটি তরুণ বুইকের আরোহীটিকে বললো, ওসব রাগ ফাগ নয় দোস্ত। মেয়েরা প্রথম প্রথম ওরকম বলেই থাকে। তার সঙ্গের মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠল।
ক্রোধে উত্তেজনায় বারলো থরথর করে কাঁপতে লাগল। তার মুখের চেহারা ঘৃণায় কুটিল হয়ে উঠল। ইস্.. বড় আফসোস। রিভলবারটা এখন সঙ্গে নেই, থাকলে এখনই এই ইতরগুলোর ছোলিপনার যোগ্য শাস্তি দেওয়া যেতো।
বৃষ্টিটা আবার বাড়লো। জলের বড় বড় ফোঁটায় সারা শরীর তার ভিজে গেলো। সেদিকে ভূক্ষেপ মাত্র করলেন না তিনি। একইভাবে উবু হয়ে বসে রইলেন। রক্তলোপ হিংস্র জন্তুর মতো তার মুখের চেহারা বীভৎস হয়ে উঠলো।
গাড়ির মেয়েটার অস্ফুট গোঙানি শোনা গেল। গাড়িটা ভয়ঙ্কর ভাবে দুলতে লাগল। বারলো অদম্য আক্রোশে ঘামছে, দুমুঠো মাটি তুলে নিলেন।
.
টেবিলে একগাদা কাগজপত্র ছড়ানো। প্রিমিয়াম নোটিশ পাঠাতে হবে অনেকগুলো। সিগারেট জ্বলছে দুআঙুলের ফাঁকে। অ্যানসন তার নৈমিত্তিক কাজে ডুবে আছে।
ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল।
অ্যানা ফোন তুলল, অ্যানসন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। এসময় ফোন। মেগ নয়তো।
না মেগ নয়। রিসিভারে হাত চেপে অ্যানা প্রায় ফিসফিস করে বললো, মিঃ ম্যাডক্স আপনাকে ডাকছেন।
বুকে যেন হাতুড়ি পিটতে শুরু হল। মুহূর্তে রক্তশূন্য হলো অ্যানসন-এর মুখ। সিগারেটে দীর্ঘ টান দিয়ে সে একবার মুখের স্বাভাবিক ভাব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলো। তারপর উঠে এসে ফোন ধরল–অ্যানসন বলছি।
ও প্রান্ত থেকে ভারী নিখাজ গলার স্বর ভেসে এল। এখানে আপনাকে একবার আসতে হবে মিঃ অ্যানসন, কাল হাতে কাজ কর্ম কেমন?
তেমন কিছু নয়, যাবোখন। বিশেষ কিছু…
বিশেষ কিছু না হলে আপনাকে কি এখানে মুখ দেখাতে আসতে বলছি? ঠিক দশটায় চলে আসুন। ছাড়লাম। তিনি ফোন ছেড়ে দিলেন।
ফোন রেখে অ্যানসন ফিরে গেলে নিজের ডেস্কে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে শেষ হয়ে আসা সিগারেটটা থেকে আর একটা নতুন সিগারেট ধরালো।
তিন দিন আগে বারলোর পঞ্চাশ হাজার ডলারের পলিসিটা হেড অফিসে পৌঁছে গেছে। যতদুর মনে পড়ছে সই সাবুদ বা অন্যান্য লেখাজোকার কাজে কোন ত্রুটি নেই। তাহলে ম্যাডক্স আবার তলব পাঠালো কেন? কিছু চালাকী কী ধরা পড়েছে?
অ্যানসনের হাতের তালু ঘেমে উঠলো, সে পকেট থেকে রুমাল বার করে হাত মুছলো। মিঃ ম্যাডক্স-এর জরুরী তলক কেন?
অ্যানার প্রশ্নে তার চিন্তায় ছেদ পড়লো। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে সে ঘাড় নাড়লো, কি জানি কিছু তো বুঝতে পারছি না। সাত-পাঁচ নানারকম চিন্তা মনে আসছে। অবশ্য চিন্তার কিছু নেই।
অ্যানা মৃদু হেসে বলল, চিন্তার কিছু না থাকলেই হলো।
অ্যানসন নীচু হয়ে একটা প্রিমিয়াম নোটিস তুলে নিল। তার মন চঞ্চল। একের পর এক চিন্তা মাথায় আসছে। ব্যাপারটা কি? বারলো এখনও মরলো না অথচ ম্যাডক্স আগে থেকেই সাত-পাঁচ ভাবতে শুরু করে দিল। নাঃ এই লোকটার সব ব্যাপারেই তড়িঘড়ি।
হাতের সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে চেপে নিভিয়ে দিল অ্যানসন। ভাবলো বরং এই ভালো যা ওর জানার এখনই জেনে নিক। বারলো মরলে জলযোলা বেশী হবে। তার চেয়ে আগেভাগেই সব চুকে যাক। তেমন তেমন বুঝলে, এ ব্যাপারে এখানেই ইতি। দরকার নেই বাবা, সুখের চেয়ে সোয়াস্তি ভাল। আগে থেকেই যা হবার হয়ে যাক। পরে আর ফেরার পথ থাকবে না।
উঃ লোকটা যেন একটা আপদ, একটা জ্যান্ত রায় সাক্ষাৎ শনি। এত বয়েস হলো, তবু হতভাগাটা মরে না। ওর ওপর যমেরও বোধহয় অরুচি ধরে গেছে।