০৪. বিকেলের আলো মরে এলে

বিকেলের আলো মরে এলে আমবাগানের ঈশেন কোণে গুটিগুটি ষষ্ঠী এসে দাঁড়িয়ে চোরা চোখে ইতিউতি চাইতে লাগল। বুকটা একটু ঢিবঢ়িব করছে। আংটির পাথরটা যদি হিরেই হয়, তা হলে যষ্ঠীকে আর ইহজন্মে ছ্যাঁচড়ামি করে বেঁচে থাকতে হবে না। হিরে হলে কালী স্যাকরার কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করে সে একটা বন্দুক কিনে ফেলবে, তারপর স্যাঙাত জুটিয়ে তৈরি করবে একটা ডাকাতের দল। ছোটখাটো কাজ আর নয়।

একটা গাছের গুঁড়ির আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে ষষ্ঠী মশা তাড়াতে তাড়াতে ডাকাত হওয়ার কথা ভাবছিল, ভাবতেই কেমন যেন একটা শিহরণ জাগে শরীরে। এই অঞ্চলেই এক সময় বুক ফুলিয়ে ডাকাতি করে বেড়াত পানু মণ্ডল। যেমন বিশাল চেহারা, তেমনি তার দাপট। এখন বুড়ো বয়সে আর নিজে কিছু করে না, কিন্তু হাঁকডাকে এখনও বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খায়। তারই শিষ্য চিতে দাস হচ্ছে এখন সর্দার। তার দাপটও কিছু কম নয়, তবে লোকটা মিটমিটে ডান, হাঁকডাক। করে না, কিন্তু দারুণ বুদ্ধি রাখে। বুদ্ধি ষষ্ঠীরও কিছু কম নেই, তবে কিনা হাভাতেকে আর কে পোঁছে? একবার চিতে দাসের দলে ঢুকতে গিয়েছিল, ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বারদুয়ার থেকেই বিদেয় করে দিয়েছে।

হিরেটা যদি খাঁটি হয়, তাহলে ষষ্ঠী বন্দুক কিনে ফেলছেই। তারপর দুমদাম দু’দশটা করে লাশ পড়তে থাকবে তার হাতে। হাজার-হাজার লাখ-লাখ টাকা লুটেপুটে নিয়ে আসবে চারদিক থেকে। গণেশ কাংকারিয়ার গদি সাফ করবে, বৈজু লালোয়ানির বাড়ির ঠাকুরঘর থেকে লুকোনো সোনা বের করবে, যতীন সামন্তর বন্ধকি কারবারে জমা হওয়া জিনিসপত্র সোনারুপো গোরুর গাড়িতে চাপিয়ে তুলে নিয়ে আসবে। শহরের দুটো ব্যাংকে ডাকাতি করলে মোটা টাকাই এসে যাবে হাতে। কয়েক লাখ টাকা হলে ষষ্ঠী তখন জুতো মসমঁসিয়ে নতুন লুঙ্গি পরে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে বাজার থেকে রোজ ইলিশ মাছ আর কাটোয়ার ডাঁটা কিনে আনবে। ও দুটো খেতে সে খুব ভালবাসে। আর তেলেভাজা দিয়ে মুড়ি, রোজ খাবে। ভাবতে ভাবতে জিবে জল এসে গেল তার। উত্তেজনায় গাছের গুঁড়িতে একটা কিলও দিয়ে বসল।

কিন্তু ছেলেটা যে আসছে না। আসবে তো?

রতন বাঁড়ুজ্যে তোক বড় সুবিধের নয়। ছেলেটা যদি তার কাছে ষষ্ঠীর কথা সাতকাহন করে বলে থাকে, তবে তাকে চিনতে বুড়োর একলহমাও লাগবে না। তখন হয়তো ছেলেটাকে আসতে না দিয়ে নিজেই লাঠি বাগিয়ে এসে হাজির হবে।

ষষ্ঠী ভয়ে-ভয়ে চারদিকটা দেখে নিয়ে একটা ঝোঁপের আড়ালে আরও সরে দাঁড়াল।

অন্ধকারটা ক্রমে ক্রমে বেশ জমাট বেঁধে এল। মিটিমিটি জোনাকি জ্বলতে লেগেছে। আকাশে তারার পিদিম ফুটছে একটি-দুটি করে। ঘরে শাঁখ বাজতে লেগেছে।

ঠিক এরকম সময়টায় হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে ষষ্ঠীর কাঁধে হাত রাখল।

ষষ্ঠী হঠাৎ চমকে উঠেই অভ্যাসবশে বলে ফেলল, “আমি না। সত্যি বলছি, আমি কিছু করিনি।”

কেউ ষষ্ঠীকে ধরলেই এই কথা বলা ষষ্ঠীর স্বভাব। ছেলেটা মৃদু একটু হাসির শব্দ করে বলল, “কী করেননি কানাইবাবু?”

ষষ্ঠী লজ্জা পেয়ে জিব কেটে বলে, “কত পাজি লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে চারদিকে। চোর গুণ্ডা পকেটমারের অভাব নেই। আমি কারও সাতে-পাঁচে থাকি না তো, তাই কেউ ধরলেই আগে সাফাইটা গেয়ে রাখি। এই তো সেদিন ভুনো-চোর পণ্ডিতবাড়ির খুকিটার নাকের নথ চুরি করল, আর মেধো পণ্ডিতের ছেলে রেমো এসে আমার ওপর কী চোটপাট! কলিকালটা খুব জেঁকে পড়েছে মশাই।”

“তা বটে। এবার তা হলে চলুন, আংটিটার একটা ব্যবস্থা করা যাক্।”

ষষ্ঠীর বুকটা খুব ঢিবঢিব করতে লেগেছে। যদি হিরে হয়? ওঃ, যদি হিরেই হয়? তা হলে আর তাকে পায় কে!

কালী স্যাকরার দোকান বাজারের মধ্যিখানে হলেও বেশ নিরিবিলি। খদ্দের বিশেষ আসে না। কালী স্যাকরার খদ্দেররা আসে নিশুত রাতে। চোরাই সোনা কেনাবেচা করে বলে তার দুনাম আছে। সুতরাং ভ ভদ্রলোক খদ্দের তার নেই। তার চেহারাটা বেশ গোলগাল, ব্যবহার ভারী অমায়িক।

আংটি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অনেকক্ষণ দেখল কালী। কষ্টিপাথরে ঘষল। এক চোখে একটা ঠুলি পরে নিয়ে পাথরটা পরখ করল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “পাথরটা আজ্ঞে পোখরাজই বটে। শ’ দুই টাকা দাম হবে এই বাজারে। আর সোনায় বলতে নেই মেলা পান। বাদসাদ দিলে সব মিলিয়ে মেরেকেটে শ’ চারেক টাকা দাম হয়। তা আপনি বিপদে পড়ে এসেছেন বলে ষষ্ঠী বলছিল, আমি নাহয় থোক সাড়ে চারশোই দিচ্ছি। আমার পঞ্চাশ টাকাও লাভ থাকবে কি না সন্দেহ।”

ছেলেটা আংটিটা কিছুক্ষণ মুঠোয় চেপে চোখ বুজে বসে রইল। বংশগত জিনিস হাতছাড়া করতে মনে কষ্ট হচ্ছে বলে ভাবল ষষ্ঠী। মুখে কিছু বলল না।

খানিকক্ষণ পর চোখ খুলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেটা আংটি কালী স্যাকরার হাতে দিয়ে বলল, “তাই দিন তা হলে। আমার বড় বিপদ।”

কালী স্যাকরা খুব সহানুভূতির সঙ্গে বলল, “তা আর বলতে। দাম যাই হোক, পুরনো জিনিসের মায়াই কি কম? বিপদে না পড়লে কেউ কি হাতছাড়া করে?”

কালী আংটিটা লোহার সিন্দুকে রেখে সাড়ে চারশো টাকা গুনে গুনে ছেলেটার হাতে তুলে দিল।

জুলজুলে চোখে ষষ্ঠী পুরো ব্যাপারটা দেখল। বুকটা খুব ঢিবঢিব করছে। কালী স্যাকরার চোখে আলোর ঝলকানি দেখেই সে বুঝে নিয়েছে, আংটিটা ফঙ্গবেনে জিনিস নয়।

ছেলেটা টাকা নিয়ে গায়েব হয়ে যাওয়ার পর ষষ্ঠী একটা বিড়ি ধরিয়ে কালী স্যাকরার দিকে চেয়ে চোখ একটু মটকে বলল, “কী? বলেছিলুম না খুব দাঁও পেয়েছি একটা?”

কালী মুখটা গম্ভীর করে বলল, “দ্যাখ ষষ্ঠী, পাঁচকান করলে কিন্তু বিপদ ঘটবে। তোর তো আবার পেটে কথা থাকে না।”

ষষ্ঠী খুব গিলগিল করে হাসল। তারপর চাপা গলায় বলল, “দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে আংটিটা আর-একবার বের করো তো, একটু দেখি।”

কালী স্যাকরা উঠে দোকানের দরজাটা সাবধানে বন্ধ করে খিল এঁটে দিল। তারপর লণ্ঠনের সলতেটা তেজালোলা করে সিন্দুক খুলে আংটিটা বের করে আনল।

“হা সর্বনাশ!”

ষষ্ঠী চমকে উঠে বলল, “হল কী?”

কালী স্যাকরা হাতের তেলোয় আংটিটার দিকে অবিশ্বাসের চোখে চেয়ে আছে, খাস প্রায় বন্ধ, চোখ কপালে।

ষষ্ঠী ব্যস্ত হয়ে বলল, “বলি ও কালী, অমন পাথর হয়ে গেলে কেন?”

কালী বিবর্ণ মুখে ষষ্ঠীর দিকে চেয়ে বলল, “এ যে নিজের চোখকে বিশ্বেস হচ্ছে না রে। ওইটুকু ছেলের এমন হাতসাফাই?”

“করেছেটা কী?”

কালী নিস্তেজ গলায় বলল, “এ আংটি সে আংটি নয়।”

“তার মানে?”

“যেটা দেখিয়েছিল সেটায় ভরিটাক সোনা, আসল হিরে। আর এটা স্রেফ পেতল আর কাঁচ। তিন পয়সা দাম।”

“বলো কী?” দুজনেই আহাম্মকের মতো হাঁ করে দুজনের দিকে চেয়ে রইল।

কিছুক্ষণ পরে সম্বিত ফিরে পেয়ে দাঁত কড়মড় করে ষষ্ঠী বলল, “আসল হিরেটার দাম কত বলো তো?”

কালী মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “কম করে ধরলেও লাখ টাকার কাছাকাছি। অত বড় হিরে আমি জন্মেও দেখিনি। আর জেল্লা কী।”

ষষ্ঠী নিজের ঊরুতে একটা চাপড় মেরে বলল, “বোকা বানিয়েছে! ঠিক আছে, আমিও দেখে নেব। ওই হিরে যদি বাগাতে না পারি তো আমার নাম ষষ্ঠী নয়।”

কালী স্যাকরা করুণ চোখে ষষ্ঠীর দিকে চেয়ে বলল, “তোর মনে শেষে এই ছিল রে? নিজের ভাইয়ের মতো তোকে ভালবাসতাম। শেষে কিনা একটা জোচ্চোরকে জুটিয়ে এনে আমার সর্বনাশ করলি?”

ষষ্ঠী দাঁত কড়মড় করে বলল, “তোমার সঙ্গে বেইমানি করলে আমার ধর্মে সইবে কালীদা? কোন্ দেবতার নামে দিব্যি করতে হবে বলো, করছি। ছোঁড়াটার সঙ্গে আজই চেনা হল। কিন্তু ও যে এত বড় ধুরন্ধর, তা মুখ দেখে বুঝতে পারিনি। তবে এই বলে রাখলাম, যেমন করেই হোক ও আংটি আমি উদ্ধার করে আনবই।”

কালী স্যাকরা মাথায় হাত দিয়ে বসে বলল, “পারবি? ছোঁড়া যে এলেম দেখিয়ে গেল, তাতে কাজটা সহজ হবে বলে মনে হয় না। খুব সাবধান।”

কথাটা ষষ্ঠীও হাড়ে-হাড়ে জানে যে, ছোঁকরার কাছ থেকে আসল আংটি বের করে আনা যার-তার কর্ম নয়। কিন্তু রাগের মাথায় মানুষের কত কী মনে হয়, হেন করেঙ্গা, তেন করেঙ্গা।

কালী স্যাকরার দোকান থেকে বেরিয়ে এসে ষষ্ঠী গনগন করতে করতে খানিক দূর হটল। এসপার-ওসপার একটা কিছু করতেই হবে আজ। কী করবে তাও সে খানিকটা আঁচ করে নিল। আজ রাতে সে রতন বাড়ুজ্যের বাড়ি হানা দেবে। একটা খুনে কুকুর আছে ওবাড়িতে। তা থাক। ষষ্ঠী বিষ মাখানো মাংসের টুকরো নিয়ে যাবে। কুকুরকে নিকেশ করে ছোঁকরাটাকে ঘুমের ওষুধ স্প্রে করে ঘুম পাড়াবে। এই দুই কর্ম জানালার বাইরে থেকেই করে নেওয়া যাবে। কাজগুলো হয়ে গেলে ঘরে ঢোকা জলবৎ তরলং। তারপরেও যদি কেউ বাধা দেয় তো ষষ্ঠীর ছোরা আছে, বাঘনখ আছে, ব্লেড আছে। অবশ্য আজ অবধি খুন দূরে থাক, ষষ্ঠী কাউকে তেমন জখমও করেনি। কিন্তু আজ করেই ফেলবে একটা এসপার-ওসপার।

মেছোবাজারের কাছে কে যেন পিছন থেকে ডাকল, “ওরে ষষ্ঠী! কোথায় চললি অমন মেট্রেনের মতো?”

ষষ্ঠী ফিরে দেখল, টিকে গুণ্ডা। দশাসই চেহারা। পরনে লুঙ্গি, গায়ে ফিনফিনে স্যাণ্ডো গেঞ্জি, ইয়া গোফ, বাবরি চুল, গলায় সোনার চেন-ও একখানা ধুকধুকি ঝুলছে। টিকে গুণ্ডা খুবই তালেবর লোক ছিল একসময়ে। বাজারে তার মাংসের দোকান। তবে এখন আর তো দাপট নেই। শোনা যায় যে, টিকে গুণ্ডা টাকা নিয়ে খুন-টুন করে।

তাকে দেখে ষষ্ঠীর মাথায় চড়াক করে বুদ্ধি খেলে গেল। ছোরাটাকে জব্দ করতে হলে টিকে গুণ্ডার চেয়ে উপযুক্ত লোক আর কে আছে?

ষষ্ঠী খুব কাঁচুমাচু মুখ করে বলল, “টিকো, খুব ঠেকায় পড়ে গেছি। একটু উদ্ধার করে দিতে পারবে?”

টিকে সন্দিহান চোখে চেয়ে বলল, “টাকা ধার চাইবি নাকি? ওসব হবে না।”

ষষ্ঠী বুক ফুলিয়ে বলল, “আরে না না। ধার চাইব কেন, বরং তোমাকে কিছু পাইয়ে দেবখন। তবে কাজের পর।”

টিকে চোখ দুটো ছোট করে বলল, “তুই কাজ করিয়ে আমাকে টাকা দিবি? বলিস কী রে? লটারি পেয়েছিস নাকি? না মাথাটা বিগড়েছে?”

ষষ্ঠী গম্ভীর হয়ে বলল, “মাথাও বিগড়োয়নি, লটারিও পাইনি। তবে একটা ব্যাপার ঘটেছে। একটা তে-এটে ছোঁকরাকে সাফ করে দিতে হবে।”

টিকে চোখ আরও ছোট করে বলল, “বটে! তুই আমাকে টাকা খাইয়ে খুন করাতে চাস? বাঃ, তোর এলেম তো দিব্যি বেড়েছে রে ষষ্ঠী! তা ছেলেটা কে?”

“যদি রাজি থাকো তো বলো। বেশি বকবক কোরো না।”

টিকে অনেকক্ষণ ঠাণ্ডা চোখে ষষ্ঠীকে দেখে নিয়ে বলল, “কত টাকা দিবি শুনি!”

“দু’পাঁচশো যা হোক দেব। তুমি ঠকবে না।”

টিকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “ঠিক আছে, না হয় রাজিই হলুম, এবার বল তো ছোঁকরাটা কে আর তাকে খুনই বা করতে চাইছিস কেন?”

ষষ্ঠী একটু সাবধান হল। আসল বৃত্তান্ত জানতে পারলে টিকে নিজেই লাখ টাকার আংটিটা গাপ করবে। তাই সে গলা-খাকারি দিয়ে বলল, “দ্যাখো বাপু, অত খতেন নিলে কাজ তোমাকে করতে হবে না। যদি রাজি থাকো তো রাত বারোটার পর আমবাগানের ঈশেন কোণে হাজির থেকো। আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাব।”

“কোথায় নিয়ে যাবি?”

“একটা বাড়িতে। তবে কার বাড়ি তা এখন বলব না।”

“তারপর কী হবে?”

ষষ্ঠী মাথা চুলকে বলল, “তারপর কাজ খুব কঠিন নয়। বাইরে থেকে দরজা খুলে দুজনে ভিতরে ঢুকব। যাকে খুন করতে হবে, তাকেও আগে থেকে ঘুম পাড়িয়ে দেব। তোমাকে তেমন মেহনত করতে হবে না।”

টিকে মাথা নেড়ে বলল, “আমি তেমন কাপুরুষ খুনিয়া নই রে যে, ঘুমন্ত মানুষকে খুন করব। খুন করতে হয় তো বাপের ব্যাটার মতো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জলজ্যান্ত মানুষকেই করব।”

ষষ্ঠী তাড়াতাড়ি টিকের পথ আটকে পঁড়িয়ে বলে, “সে তো ভাল কথা, কিন্তু তোমারও বলতে নেই বয়স কম হল না। গায়ে তোমার সঁড়ের মতো জোর আছে তাও সত্যি, কিন্তু এ-ছোঁকরার বয়সও কম, তেজও আছে।”

টিকে গুম মেরে থেকে বলল, “খুনের পর কী হবে?”

ষষ্ঠী বলল, “ব্যস, তারপর তুমিও কেটে পড়বে, আমিও কেটে পড়ব।”

“তোর আর কোনও মতলব নেই?”

“না। সত্যি বলছি, মা কালীর দিব্যি।”

টিকে হঠাৎ তার বিশাল থাবায় কাক করে ষষ্ঠীর ঘাড় চেপে ধরে প্রায় শূন্যে তুলে ফেলে বলল, “পেট থেকে সত্যি কথাটা এইবেলা বের না করলে দুই ঝাঁকুনিতে তোর মগজের ঘিলু নাড়িয়ে দেব।”

ষষ্ঠী চিচি করে বলল, “বলছি বলছি। ছাড়ো…আঃ, দম আটকে যাবে যে!”

টিকে তাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, “এবার বল।”

ষষ্ঠী হাফাতে-হাফাতে বলল, “তার কাছে আমার একটা আংটি আছে। সেটা শুধু খুলে নেব আঙুল থেকে।”

টিকে খুব হাসল। তারপর ষষ্ঠীর পিঠে একটা বিরাশি সিক্কার চাপড় বসিয়ে বলল, “তোর মাথা আছে বটে। ঠিক আছে, থাকব আমবাগানের ঈশেন কোণে রাত বারোটায়। দেখা যাক তোর কেরামতি।”