বারাসত হাসপাতালের আশপাশে ওষুধের দোকানই বেশি। ভাতের হোটেল একটি মাত্র। খুঁজে বার করতে অসুবিধে হল না।
রফিকুলের গাড়িটা পুলিশের জিপ নয়, এমনিই সাধারণ অ্যাম্বাসাডর, দেখলে চেনা যাবে না। তবু গাড়িটা রাখা হল খানিকটা দূরে। সন্তু, রফিকুল আর কাকাবাবু হেঁটে এসে ঢুকলেন সেই হোটেলে।
রাত সাড়ে নটা বাজে। ভেতরে বেশি ভিড় নেই। একটাই লম্বামতন ঘর, দরজার সামনেই কাউন্টার। সেই কাউন্টারে বসে আছে একজন মহিলা, বয়েস হবে চৌত্রিশ-পঁয়ত্রিশ, বেশ সপ্রতিভ ভাবভঙ্গি, খদ্দেরদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা সে-ই বুঝে নিচ্ছে।
একটা খালি টেবিল বেছে নিয়ে ওঁরা বসে পড়লেন।
কাকাবাবু বললেন, সন্তু, কী খাবি বল? মফস্সলের এইসব ছোটখাটো হোটেলের রান্না অনেক সময় বেশ ভাল হয়। বাড়ির থেকে অন্যরকম। রফিকুল, এখানেই আমরা ডিনার সেরে নিই, কি বলো?
রফিকুল বললেন, কাকাবাবু, আমার দোকানের খাবার ঠিক সহ্য হয় না। আমি বরং না খেলাম।
কাকাবাবু বললেন, খাও, খাও, একদিন খেলে কিছু হবে না। পাশের টেবিলে দ্যাখো, বাঁধাকপির তরকারি আর কতবড় পাবদা মাছ খাচ্ছে। আমিও ওই দুটো খাব।
সন্তু বলল, আমি খাব মাটন কারি। আর বেগুনভাজা।
রফিকুল খুব অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুরগির ঝোল খেতে রাজি হলেন।
একজন লোক এসে অর্ডার নিয়ে গেল।
কাকাবাবু আড়চোখে কাউন্টারের দিকে তাকিয়ে বললেন, বিমল, এই মহিলাটির কথাই বলেছে মনে হচ্ছে।
রফিকুল বললেন, আর ভাতের হোটেল নেই। এখানকার ম্যানেজারও মহিলা, দুটোই মিলে যাচ্ছে।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা কাকাবাবু, এই যে মহিলা হোটেল চালাচ্ছেন, নিশ্চয়ই লাভ-টাভ হয়। তবু বাচ্চা ছেলে চুরি করার মতন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েন কেন? মানুষের কি লোভের শেষ নেই?
কাকাবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, সত্যিই কিন্তু মানুষের লোভের শেষ নেই! টাকার লোভে তারা কত অন্যায়, নিষ্ঠুর কাজ করে, শেষ পর্যন্ত শাস্তিও পায়!
রফিকুল বললেন, এ মেয়েটি খুব সম্ভবত এই হোটেলের মালিক নয়, কর্মচারী। বড় বড় অপরাধচক্রের লোকেরা এইরকম কোনও হোটেল বা দোকান বা অন্য কোনও ব্যবসা খুলে রাখে। কর্মচারীদের দিয়ে কাজ চালায়, নিজেরা থাকে আড়ালে। হোটেলে সবসময় অনেকরকম মানুষজন আসে, এখানে বেআইনি জিনিসপত্র কিংবা টাকাপয়সার লেনদেন করলে কেউ সন্দেহ করবে না। কনস্টেবল বিমলকে তাই এখানে আসতে বলা হয়েছে।
সন্তু বলল, মহিলাকে দেখলে বোঝাই যায় না যে ইনি কয়েকটা বাচ্চা ছেলেকে মেরে ফেলার মতন নিষ্ঠুর কাজে রাজি হতে পারেন!
কাকাবাবু আপন মনে বললেন, হু, দেখে বোঝা যায় না! আমি একটা অন্য কথা ভাবছি। এই মেয়েটিকে আমরা এখন গ্রেফতার করতে পারব না। কারণ, বিমলের মুখের কথা ছাড়া কোনও প্রমাণ নেই! ওকে জেরা করতে গেলে সব
অস্বীকার করতে পারে। তাতে ওর দলবল সাবধান হয়ে যাবে।
রফিকুল বললেন, ওকে এখন ধরা যাবে না। ধরে নিয়ে গেলেও কোনও লাভ হবে না। বাকিরা সবাই গা-ঢাকা দেবে।
এর মধ্যে বেয়ারা এসে খাবার দিয়ে গেল।
কাকাবাবু বললেন, আমরা জায়গাটা দেখে গেলাম, আজ এই পর্যন্তই থাক। এবারে খাওয়ায় মন দাও!
একটুখানি বাঁধাকপির তরকারি মুখে দিয়ে বললেন, বেশ বেঁধেছে! সবটা খেয়ে নাও, নইলে আমাদেরই ওরা সন্দেহ করবে।
এর মধ্যে একটা গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেল।
তিনটি ছেলে খেয়েদেয়ে দাম না দিয়ে চলে যাচ্ছিল, একজন বেয়ারা চেঁচিয়ে উঠল, ও দাদা, একাশি টাকা বিল হয়েছে, কাউন্টারে দিয়ে যান?
ওদের মধ্যে একজন বেয়ারাটিকে এক ধাক্কা মেরে বলল, ভাগ, বিল কীসের রে! আমরা পাড়ার ছেলে!
আর একজন ফস করে একটা ছোরা বার করে বলল, খবরদার, আমাদের কাছে কখনও পয়সা-ফয়সা চাইবে না, তা হলে হোটেল তুলে দেব!
কাউন্টারের মহিলা ম্যানেজারটি ছোরা দেখে একটুও ভয় পায়নি। কড়া গলায় বলে উঠল, এই, এখানে মাস্তানি কোরো না। ভাল চাও তো পয়সা দিয়ে দাও!
ছোরা-হাতে ছেলেটি কাউন্টারের কাছে এসে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, অমন ধমকে কথা বোলো না! অমন ধমকে কথা বলতে নেই! তুমিই বরং একশোটা টাকা ছাড়ো তো! আমাদের সিগ্রেট-ফিগ্রেট কিনতে হবে। দাও, দাও, দেরি কোরো না!
অন্য একটি ছেলে বলল, দিয়ে দাও গো ময়নাদিদি, এই হেবোটার খুব মাথা গরম, ঝট করে ছুরি চালিয়ে দেয়।
হেবো নামে সেই ছোরা-হাতে ছেলেটি অন্য খদ্দেরদের দিকে ফিরে বলল, অ্যাই, যে-যার জায়গায় বসে থাকো, কেউ টু শব্দটি করবে না। কেউ খামোকা মাথা গলাতে এলেই পেট ফাঁসিয়ে দেব।
কাউন্টারের মেয়েটি এর মধ্যে একটা বেল টিপে দিয়েছে, তাতে ঝনঝন ঝনঝন শব্দ হতে লাগল।
প্রায় সঙ্গেই-সঙ্গেই রান্নাঘরের দিক থেকে দুজন লম্বা-চওড়া লোক ছুটে এল, তাদের হাতে লোহার ডাণ্ডা।
তারপর শুরু হয়ে গেল মারামারি। একটা ব্যাপারে বেশ মজা লাগল সন্তুর।
সে জানে, কাকাবাবু আর রফিকুল আলম, এই দুজনের কাছেই রিভলভার আছে, শূন্যে একবার গুলি চালালেই সবাই ভয় পেয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যেত।
কিন্তু ওঁরা দুজন সেরকম কিছুই করলেন না, খাওয়াও বন্ধ না করে মজা দেখতে লাগলেন।
শেষ পর্যন্ত সেই ছেলে তিনটিই হার স্বীকার করল, খোঁড়াতে খোঁড়াতে পালাল দুজন, আর একজন মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। এদিককার একজন তার জামার কলার ধরে টানতে টানতে কাউন্টারের কাছে এনে বলল, দে, পয়সা দে!
সে ছেলেটি বলল, পঞ্চাশ টাকা দিচ্ছি। আমার কাছে আর নেই। দিব্যি করে বলছি, বাকিটা কাল এসে শোধ করে দিয়ে যাব।
কাউন্টারের মেয়েটি বলল, কম টাকা আছে তো হিসেব করে কম খাননি কেন? আবার যদি কোনওদিন দেখি…
কাকাবাবু মাথা নিচু করে ফিসফিস করে বললেন, হোটেল চালানো সোজা নয় দেখছি। ষণ্ডা চেহারার লোক রাখতে হয়। এ মেয়েটিও কম তেজি নয়। চলো, এবার আমরা উঠে পড়ি।
কাকাবাবুই দাম দেওয়ার জন্য গেলেন কাউন্টারের কাছে। একটু আগে যেন কিছুই হয়নি, এইভাবে বললেন, আপনাদের হোটেলের রান্না খুব ভাল। খেয়ে বেশ তৃপ্তি পেলাম।
মেয়েটি বলল, আবার আসবেন!
পরদিন সকালে চা খেতে খেতে কাকাবাবু সন্তুকে ডেকে বললেন, কাল সারারাত ভাল করে ঘুমোতে পারিনি। যখনই ভাবছি, কতগুলো সরল, নিস্পাপ শিশুঁকে চালান দেবে আরব দেশে, সেখানে বাচ্চাগুলো বেঘোরে মারা যাবে, তখনই আমার গা জ্বলে উঠছে। বাচ্চাগুলোকে পাচার করার আগে যে-কোনও উপায়ে আটকাতে হবে!
সন্তু বলল, এর মধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছে কি না, কী করে বোঝা যাবে?
কাকাবাবু বললেন, পুলিশকে বলা হয়েছে, এয়ারপোর্টে আর শিয়ালদা-হাওড়ার রেলস্টেশনে কড়া নজর রাখতে। তবু আরও অনেক উপায়ে মুম্বই নিয়ে যেতে পারে। পুলিশের ওপর পুরোপুরি ভরসা করা যায় না। আটকাবার একটা উপায় আমার মাথায় এসেছে। সেজন্য তোকে খানিকটা গোয়েন্দাগিরি করতে হবে, পারবি?
সন্তু বলল, কেন পারব না?
কাকাবাবু বললেন, কালকের হোটেলের ওই মেয়েটি, ওর সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নেওয়া দরকার। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনই ওকে দিয়ে পেছনের অপরাধচক্রের হদিস পাওয়া দরকার। পুলিশ দিয়ে খোঁজখবর নেওয়াতে গেলেই ওরা সাবধান হয়ে যাবে। পুলিশের ভেতর থেকেই আগে খবর চলে যায়। ওই মেয়েটার নাম বোধ হয় ময়না, তাই না?
সন্তু বলল, পাড়ার গুণ্ডারা ময়নাদিদি বলে ডেকেছিল একবার।
কাকাবাবু বললেন, ওর কাছে এক্ষুনি আমার যাওয়া ঠিক হবে না। আমি খোঁড়া মানুষ, ক্রাচ নিয়ে হাঁটি, আমাকে চিনে রাখা সহজ। তুই কাল প্যান্ট-শার্ট পরে গিয়েছিলি, আজ একটা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে যা, দিনের বেলা একটা সানগ্লাসও চোখে দিতে পারিস।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, কী কী খোঁজ নিতে হবে?
কাকাবাবু বললেন, যদি সম্ভব হয়, দেখে আসবি, ওই ময়না কোথায় থাকে। বিয়ে হয়েছে কি না, ছেলেমেয়ে আছে কি না, সে বাড়িতে আর কে কে থাকে। এইগুলো জানাই বেশি দরকার। বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, দুপুরের মধ্যে ফিরে আসবি। ইচ্ছে করলে জোজোকেও সঙ্গে নিতে পারিস।
জোজোকে টেলিফোন করতেই সে সঙ্গে সঙ্গে রাজি।
সন্তুর সঙ্গে সে দেখা করল হাজরা মোড়ের বাস স্টপে। সেখান থেকে দুজনে বাসে চেপে এল এসপ্লানেড, তারপর অন্য বাসে বারাসত।
সকালবেলা সেই হোটেলটায় শিঙাড়া-কচুরি-জিলিপি পাওয়া যায়। সন্তু জোজোকে নিয়ে বসল অন্য একটা টেবিলে।
প্রথমেই সে হতাশ হল, কাউন্টারে এখন সেই মহিলাটি নেই, তার বদলে অন্য একজন দাড়িওয়ালা লোক।
জোজো এর মধ্যে সব ব্যাপারটা শুনে নিয়েছে।
প্রথমেই দুটো করে কচুরি আর জিলিপির অর্ডার দিয়ে সে সন্তুকে বলল, ওয়েট করতে হবে। ওই ময়না নিশ্চয়ই আর একটু পরে আসবে।
কচুরি-জিলিপি শেষ হয়ে গেল, ময়নার দেখা নেই।
জোজো বলল, এবারে তা হলে শিঙাড়া টেস্ট করা যাক। শিঙাড়া শেষ হতেই বা কতক্ষণ লাগে!
সন্তু বলল, খাওয়া শেষ হলে কি বেশিক্ষণ বসে থাকা যায়? সেটা খারাপ দেখাবে না?
জোজো বলল, খুবই খারাপ দেখাবে। সন্দেহ করতে পারে। পাশের টেবিলে দ্যাখ সন্তু, একজন লোক ওমলেট আর টোস্ট খাচ্ছে। কাকাবাবু বেশি করে টাকা দিয়েছেন তো? আমরাও টোস্ট-ওমলেটের অর্ডার দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসতে পারি।
সন্তু বলল, কিন্তু এত খাব কী করে?
জোজো বলল, খেতে হবে না। সামনে নিয়ে নাড়াচাড়া করব। টোস্ট আর ওমলেট নাড়াচাড়া করতে করতেই চলে গেল পেটের মধ্যে। কাউন্টারে এখনও সেই দাড়িওয়ালা পুরুষটি। এর মধ্যে সবকটা টেবিল ভরে গেছে। ওদের আর বসে থাকার উপায় নেই।
সন্তু বলল, মহিলাটির সকালবেলা ডিউটি নেই বোঝা যাচ্ছে। কাউকে জিজ্ঞেস করাও যায় না।
জোজো বলল, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। তুই এখানে বসে থাক।
জোজো উঠে গেল কাউন্টারের কাছে।
দাড়িওয়ালা লোকটিকে বলল, দাদা, কাল রাত্তিরে আমরা এখানে খেতে এসেছিলাম, ভুল করে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ ফেলে গেছি। তার মধ্যে দামি কিছু নেই, শুধু জরুরি কিছু কাগজপত্র আছে। সেই ব্যাগটা কি আপনারা পেয়েছেন?
লোকটি জোজোর দিকে না তাকিয়েই বলল, না, কিছু পাওয়া যায়নি।
জোজো গলার আওয়াজ খুব করুণ করে বলল, দাদা, ওর মধ্যে আমার সার্টিফিকেট আছে, না পেলে খুব বিপদে পড়ে যাব। একটু দেখুন না!
লোকটি এবার বেল বাজিয়ে একজন বেয়ারাকে ডেকে বলল, এই ছেলেটি কাল একটা ব্যাগ ফেলে গেছে বলছে, কাল রাত্তিরে, তোরা পেয়েছিস?
বেয়ারাটি বলল, আমি তো কিছু পাইনি। কাল রাত্তিরে গোপাল ছিল। কিছু পেলে আমরা তো কাউন্টারে জমা দিই।
লোকটি জিজ্ঞেস করল, গোপাল কোথায়?
বেয়ারাটি বলল, গোপাল কলকাতায় গেছে।
জোজো আরও কাঁচুমাচু মুখ করে বলল, একটু খুঁজে দেখুন না! দামি কোনও জিনিস নেই, অন্য কেউ নেবে না, কিন্তু খুব দরকারি কাগজপত্র, আমার পরীক্ষার সার্টিফিকেট..
বেয়ারাটি বলল, ময়নাবউদি জানতে পারেন।
দাড়িওয়ালা লোকটি বলল, ময়নাকে জিজ্ঞেস করে আয় তো!
বেয়ারাটি বাইরের দিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল রাস্তায়। দু মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে বলল, না, ময়না বউদি ব্যাগ ট্যাগ কিছু পাননি!
জোজো এমনভাবে কপালে চাপড় মারল, যেন তার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
সন্তু উঠে এসে দাম মিটিয়ে দিল, তারপর দুজনে বেরিয়ে এল বাইরে।
জোজো বলল, দুটো জিনিস জানা গেল। ময়না থাকে খুব কাছেই কোথাও। আর তার বিয়ে হয়ে গেছে, সে ময়নাবউদি!
সন্তু বলল, চল, এবার তার বাড়িটা খুঁজে দেখা যাক।
বড় রাস্তার ওপর সবই পর পর দোকানঘর। পেছনদিকে কয়েকটা টালির চাল দেওয়া বাড়ি। ওরা দুজনে অলস ভঙ্গিতে সেই বাড়িগুলোর পাশ দিয়ে ঘুরতে লাগল। এর মধ্যে ঠিক কোন বাড়িতে ময়না থাকে, তা বোঝা যাবে কী করে?
এখন অনেক মানুষজন হাঁটছে, ওদের কেউ লক্ষ করছে না।
কয়েকবার চক্কর দিয়েও কিছু বোঝা গেল না।
একটা বাড়ির পেছনদিকে খানিকটা উঠোন মতন ফাঁকা জায়গায় তারের ওপর ভিজে শাড়ি মেলে দিচ্ছে কেউ, একবার একটু ফাঁক দিয়ে দেখা গেল একজন মহিলার মুখ।
সন্তু কনুই দিয়ে জোজোকে খোঁচা মারল।
জোজো এক পলক দেখে নিয়ে ভুরু কাঁপিয়ে জিজ্ঞেস করল, এই? অর্থাৎ এই মহিলাই ময়না?
পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে সন্তু আস্তে-আস্তে বলল, কাকাবাবু যা জানতে চেয়েছিলেন তার অনেকগুলোই জানা হয়ে গেছে। ওর নাম ময়না, থাকে এই বাড়িতে, বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি রইল, বাড়িতে আর কে কে থাকে, ওর ছেলেমেয়ে আছে কি না।
জোজো জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু ওর সম্পর্কে এত কিছু জানতে চাইছেন কেন রে?
সন্তু বলল, কাকাবাবুর নিজস্ব কিছু সিস্টেম আছে। আগে থেকে বোঝা যায়। জোজো, তুই এই মহিলার সঙ্গে কথা বলতে পারবি?
জোজো বলল, ইজিলি! কারও সঙ্গে ভাব জমাতে আমার এক মিনিটও লাগে।
সন্তু বলল, আমাকে কাল রাত্তিরে দেখেছে, চিনেও ফেলতে পারে। তোকে তো দেখেনি।
জোজো ফিরে এল মিনিট দশেক পরে।
গর্বের হাসি হেসে বলল, সব জানা হয়ে গেছে। ময়নার একটা ছেলে, তার নাম কার্তিক, ডাকনাম কাতু, সাত বছর বয়েস, ক্লাস ওয়ানে পড়ে। ওই উঠোনেই সে খেলছে। বাড়িতে এক বুড়ি পিসিমা ছাড়া আর কেউ নেই। হোটেলের কাউন্টারের দাড়িওয়ালা লোকটিই ময়নার স্বামী। তবে, ওরা হোটেলটার মালিক নয়। দুজনেই চাকরি করে।
সন্তু রীতিমতন অবাক হয়ে বলল, তুই এতসব কথা জিজ্ঞেস করলি?
জোজো বলল, আমারও নিজস্ব সিস্টেম আছে। তোকে বলব কেন? এবার আর কী করতে হবে বল?
সন্তু বলল, কাকাবাবু তো শুধু এগুলোই জানবার জন্য পাঠিয়েছেন। আর কিছু দরকার নেই।
জোজো বলল, এবার আমরা হোটেলের মালিকেরও খোঁজ করতে পারি।
সন্তু বলল, তার দরকার নেই!
জোজো বলল, ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে, খুঁজে বার করব?
সন্তু বলল, আমাদের যেটুকু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা সেরে ফেলেছি। বেশি বাড়াবাড়ি করার তো দরকার নেই। ওরা টের পেয়ে গেলে বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেলতে পারে।
জোজো বলল, জানিস সন্তু, আমার বাবার কাছে এমন একটা ওষুধ আছে, যেটা খাইয়ে দিলে যে-কোনও মানুষ গড়গড় করে তার সব পাপের কথা স্বীকার করে ফেলে। এই ময়নাকে যদি সেই ওষুধটা খাওয়ানো যায়, ও দলের সব্বার কথা বলে দেবে।
সন্তু বলল, আমার ধারণা, এই ময়না বিশেষ কিছু জানে না। ওর হাত দিয়ে শুধু ঘুষের টাকাটা দেওয়াচ্ছিল। শুধু পুঁচকেদুটো কয়েদিকে ছাড়াবার জন্য বিমল দুবেকে অত টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিল কেন, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।
জোজো বলল, বিমল দুবে নিশ্চয়ই আরও অনেক খবরটবর ওদের দিত। ও অনেক কিছু জানে।
সন্তু বলল, তা হলে বিমল দুবেকেই তোর বাবার ওষুধটা খাওয়ালে হয়।
জোজো বলল, ঠিক বলেছিস। ও তো হাতের কাছেই আছে। দেখিস, এবার আর কাকাবাবুকে বিশেষ কিছু করতে হবে না। আমিই এই ক্রিমিনাল গ্যাঙটার সবকটাকে ধরার ব্যবস্থা করে ফেলব!