৪র্থ অধ্যায়
পাণ্ডবগণের সভাপ্রবেশ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ঘৃতমধুমিশ্রিত পায়স, ফল, মূল, হরিণাদি মৃগমাংস, বিবিধ চোষ্য, নানাবিধ পেয় ও মিষ্টান্ন দ্বারা নানাদিগদেশাগত অযুতসংখ্যক ব্ৰাহ্মণগণকে ভোজন করাইলেন। পরে অখণ্ড বস্ত্ৰ ও মাল্য দ্বারা তাহাদিগের তৃপ্তিসাধন ও একৈক ব্যক্তিকে সহস্ৰ সহস্ৰ গোদানপূর্ব্বক সভাপ্রবেশ করিলেন। সভামধ্যে গগনস্পর্শী পুণ্যাহধ্বনি হইতে লাগিল। তৎপরে মহারাজ যুধিষ্ঠির বিবিধ বাদ্যবাদন ও গন্ধপুষ্পাদি দ্বারা দেবতাদিগের অর্চনা ও স্থাপনা করিলেন। সভাস্থলে মল্ল, ঝল্ল, নট, বৈতালিক ও সূতসকল উপস্থিত হইয়া মহারাজ যুধিষ্ঠিরের উপাসনা করিতে লাগিল। যুধিষ্ঠির দেবপূজাসম্পাদনপূর্ব্বক ভ্রাতৃগণসমভিব্যাহারে সেই রমণীয় সভায় ত্ৰিদশাধিপতি ইন্দ্রের ন্যায় বিরাজ করিতে করিলেন। মহর্ষিগণ পাণ্ডবদিগের সহিত সভামণ্ডপে উপবেশন কিরলেন। ভূপালগণ নানাদেশ হইতে আগমনপূর্ব্বক তথায় উপবিষ্ট হইলেন; আর অসিত, দেবল, সত্য, সর্পমালী, মহাশিরাঃ, অর্ব্বাবসু, সুমিত্র, মৈত্ৰেয়, শুনক, বলি, বক, দণ্ড, স্থূলশিরাঃ, কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন, শুক, সুমন্তু, জৈমিনি, পৈল, তৈক্তিরি, যাজ্ঞবল্ক্য, সপুত্র লোমহর্ষণ, অঙ্গসুহোম্য, ধৌম্য, অণীমাণ্ডব্য, কৌশিক, দামোষ্ণীষ, ত্ৰৈবলি, পর্ণাদ, বরজানুক, মৌঞ্জায়ন, বায়ুভক্ষ, পারাশর্য্য, সারিক, বলীবাক, সিলীবাক, সত্যপাল, কৃতশ্রম, জতুকৰ্ণ, শিখাবান, আলম্ব, পারিজাতক, মহাভাগ পর্ব্বত, মহামুনি মার্কণ্ডেয়, পবিত্ৰপাণি সাবর্ণ, ভালুকি, গালব, জঙ্ঘাবন্ধু, রৈভ্য, কোপবেগ, ভৃগু, হরিব্রভ্রু, কৌণ্ডিল্য, বন্দুমালী, সনাতন, কক্ষীবান, ঔষিজ, নচিকেতা, গৌতম, পৈঙ্গ, বরাহ, শুনক, মহাতপাঃ শাণ্ডিল্য, কুকুর, বেণুজঙ্ঘ, কালাপ, কঠ ও অন্যান্য বেদবেদাঙ্গপারগ ধর্ম্মজ্ঞ জিতেন্দ্ৰিয় বিশুদ্ধস্বভাব মহর্ষিগণ এবং ব্যাসশিষ্য আমরা তথায় অতিপবিত্ৰ কথা কীর্তন করিয়া মহাত্মা যুধিষ্ঠিরকে উপাসনা করিতে লাগিলাম। শ্ৰীমান মহাত্মা ধর্ম্মশীল মঞ্জকেতু, বিবৰ্দ্ধন, সংগ্রামজিৎ দুৰ্ম্মুখ, বীৰ্য্যবান উগ্ৰসেন, ক্ষিতিপতি কক্ষসেন, অপরাজিত ক্ষেমক, কাম্বোজরাজ। কমঠ, বজধার-সদৃশ প্রভাবশালী যবনজিৎ মহাবল কম্পন, জটাসুর, মদ্রকরাজ, কুস্তি, কিরাতরাজ পুলিন্দ, পুণ্ডক, অঙ্গ, বঙ্গ, অন্ধক, পাণ্ড্য, ওড্ররাজ, সুমিত্ৰ, শত্ৰুঘাতী শৈব্য, কিরাতরাজ সুমনাঃ, যবনাধিপতি চাণুর, দেবরাত, ভীমরথ, ভোজ, শ্রুতায়ুধ, কালিঙ্গ, জয়সেন, মাগধ, সুকর্ম্ম চেকিতান, শক্রমর্দন পুরু, কেতুমান, বসুদান, বৈদেহ, কৃতক্ষণ, সুধৰ্মা, অনিরুদ্ধ, মহাবল শ্রুতায়ু, দুৰ্দ্ধৰ্ষ অনুপরাজ, সুদৰ্শন ক্রমজিৎ শিশুপাল, সপুত্ৰ করুষাধিপতি, বৃষ্ণিবংশীয় দেবরূপী কুমারগণ, আহুক, বিপৃথু, গদ, সারণ, অক্রূর, কৃতবৰ্মা, শিনীপুত্র সত্যক, ভীষ্মক, অঙ্কৃতি, বীৰ্য্যবান দুমৎসেন, ধনুৰ্দ্ধর কৈকেয়বর্গ যজ্ঞসেন, সৌমকি, কেতুমান, বসুমান ও অন্যান্য প্রধান প্রধান ক্ষত্ৰিয়গণ সভায় উপস্থিত হইয়া মহারাজ যুধিষ্ঠিরের উপাসনা করিতে লাগিলেন। যে সমস্ত রাজকুমার মৃগচর্ম্ম পরিধানপূর্ব্বক অর্জ্জুনের নিকট অস্ত্র শিক্ষা করিয়াছিলেন, তাহারা ও তাহাদিগের সতীর্থ রৌক্সিণেয়, শাল্ব, যুযুধান, সাত্যকি, সুধর্ম্ম, অনিরুদ্ধ, শৈব্য প্রভৃতি বৃষ্ণিবংশীয় কুমারগণ এবং ধনঞ্জয়ের সখা তুম্বুরু তথায় উপস্থিত হইলেন। গীতবাদ্যবিশারদ তানলয়কুশল, অমাত্য-সমবেত চিত্ৰসেন এবং গন্ধর্ব্ব, অন্সরা ও কিন্নরগণ তুম্বুরু কর্তৃক আদিষ্ট হইয়া তানলয়বিশুদ্ধ স্বর-সংযোগে সঙ্গীত করিয়া পাণ্ডুনন্দন ও মহর্ষিগণের প্রীতিসম্পাদনাপূর্ব্বক তাহাদিগের উপাসনা করিতে লাগিলেন। যাদৃশ স্বর্গে দেবতারা ব্ৰহ্মাকে আরাধনা করেন, সেইরূপ সেই মহতী সভায় সকলে সমাসীন হইয়া মহারাজ যুধিষ্ঠিরের উপাসনা আরম্ভ করিলেন।