সঞ্জয় বলেন, শুন অম্বিকা নন্দন।
অর্জ্জুনের এত বাক্য শুনিয়া তখন।।
চিত্তেতে প্রবোধ পেয়ে বসিলা রাজন।
যুদ্ধ হেতু আজ্ঞা দিল করিতে সাজন।।
রাজার আদেশ পেয়ে ইন্দ্রের কুমার।
অনুচরে ডাকি আজ্ঞা দিলেন সত্বর।।
বাদ্য বাজাইয়া সব সাজিতে সেনারে।
যুদ্ধহেতু সাজন করিতে সবাকারে।।
আজ্ঞামাত্র অনুচর সৈন্য সাজাইল।
রথী মহারথীগণ সাজিতে লাগিল।।
বিবিধ বাজনা বাজে নাচে বীরগণ।
বাদ্যের শবদে কম্প হৈল ত্রিভুবন।।
কৃষ্ণেরে করিয়া স্তুতি ইন্দ্রের নন্দন।
শুভক্ষণে রথোপরে কৈল আরোহণ।।
সারথি হইয়া কৃষ্ণ বসিলা রথেতে।
একে একে বীরগণ লাগিলা সাজিতে।।
বিবিধ প্রকারে সব করিল সাজন।
নানাবিধ অলঙ্কার অঙ্গেতে ভূষণ।।
শঙ্খ ভেরী মৃদঙ্গাদি নানা বাদ্য বাজে।
বাদ্যের শবদে কম্প হৈল সর্ব্বরাজে।।
নানাবিধ অস্ত্র সব করিয়া সাজন।
নানাবিধ অরঙ্কার অঙ্গেতে ভূষণ।।
শঙ্খ ভেরী মৃদঙ্গাদি নানা বাদ্য বাজে।
বাদ্যের শবদে কম্প হৈল সর্ব্বরাজে।।
নানাবিধ অস্ত্র সব করিয়া সাজন।
যুদ্ধস্থান উপনীত পাণ্ডবের গণ।।
মহাবিচক্ষণ পার্থ ইন্দ্রের নন্দন।
সূচীমুখ দিব্য ব্যূহ করিল রচন।।
ব্যূহমুখে নিয়োজিল মহারথিগণ।
সহদেব ভীম আদি শিনির নন্দন।।
বামশৃঙ্গে রাখিল সাত্যকি মহাবীরে।
দক্ষিণ শৃঙ্গেতে নিয়োজিলে নুকলেরে।।
মধ্যেতে রাখিল যুধিষ্ঠির নরপতি।
ধৃষ্টদ্যুন্ন আদি বীর তাহার সংহতি।।
বিবিধ বাজনা বাজে শব্দ জয় জয়।
ব্যূহের অগ্রেতে হৈল পার্থ মহাশয়।।
তবে ভীষ্ম মহাবীর গঙ্গার নন্দন।
সিংহনাদ করি শঙ্খ করিলা নিঃস্বন।।
শঙ্খের নিঃস্বনে পূর্ণ হইল গয়ন।
বিপুল শব্দেতে ভীত হৈল পাণ্ডুগণ।।
দ্রোণ কৃপ অশ্বত্থামা আদি বীরগণ।
এককালে সবে শঙ্খ করিল নিঃস্বন।।
কোটি কোটি শঙ্খনাদ হৈল এককালে।
প্রলয়কালেতে যেন সমুদ্র উথলে।।
ডগর ডিণ্ডিম ভেরী কাংস্য করতাল।
সহস্র সহস্র কোটি বাজয়ে বিশাল।।
তবে পার্থ মহাবীর সংগ্রামে দুর্জ্জয়।
দেবদত্ত শঙ্খ বীর সত্বরে বাজায়।।
পাঞ্চজন্য বাজান সে নিজে নারায়ণ।
বাজান সুধীর শঙ্খ মাদ্রীর নন্দন।।
পুণ্ডরীক শঙ্খ শব্দে বৃকোদর বীর।
অনন্তবিজয় শঙ্খে পূরে যুধিষ্ঠির।।
মণিপুষ্প শঙ্খ তবে সহদেব বীর।
বাজায় সুনাদ শঙ্খ সাত্যকি সুধীর।।
যার সেই শঙ্খনাদ করে বীরগণ।
সহস্র সহস্র হয় শঙ্খের নিঃস্বন।।
এককালে সবাকার হয় শঙ্খবর।
শঙ্খের শবদে ভয় পাইল কৌরব।।
এককালে হৈল যেন শত বজ্রাঘাত।
মহাশব্দে ভয়াকুল হৈল কুরুনাথ।।
দুইদলে বাদ্য বাজে গণনা না হয়।
মহাভয়ঙ্কর শব্দে হইল প্রলয়।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে হেলে তব তরি।।
মস্তকে বন্দিয়া ব্রাহ্মণের পদদ্বন্দ্ব।
কাশীরাম দাস কহে পয়ার প্রবন্ধ।।