।।৪।।
নাদিয়ার অ্যাপার্টমেন্টে আমরা পৌঁছলাম ছ’টা নাগাদ। একেনবাবুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। একেনবাবুর কথা নাদিয়া ডেভের কাছে শুনেছে। মনে হল ওঁকে দেখে ভরসা পেল।
আমি বললাম, “একেনবাবুকে আমি ব্যাপারটা মোটামুটি বলেছি। কিন্তু তারপর মনে হচ্ছে আরও কিছু একটা ঘটেছে?”
“ইয়েস। আসলে সকালে আপনাকে আগের ফোনের কথাটা বলা হয়নি। একটা ফোন পেয়েছিলাম দু’দিন আগে। কেউ এজেকে খুঁজছিল। দ্যাট সারপ্রাইজড মি।”
“সারপ্রাইজড ইউ?” আমি একটু বিস্মিত মুখে তাকালাম।
“কারণ এই নম্বরটা আমি কাউকে দিইনি। পরিচিত দু-একজন ছাড়া কেউই এ নম্বরটা জানে না।”
“ডেভ আপনার নম্বর জানে?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“হ্যাঁ, ডেভকে আমি দিয়েছি। দোকানে ফ্রেশ ব্রেড এলে আমাকে জানাবার জন্যে।”
“তাহলে ধরে নিতে পারেন, নিউ ইয়র্কের অর্ধেক লোকই আপনার নম্বর জেনে গেছে।”
“ইয়েস, হি ইজ এ ভেরি ফ্রেন্ডলি পার্সন। কিন্তু ফোন যে করেছিল, সে আমার বাড়ির ঠিকানা চাইছিল, কী একটা জানি ডেলিভারি করবে। আমি যখন বললাম আমি কিছু অর্ডার করিনি। বলল এজে করেছে। জানি কথাটা সত্যি নয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘আপনি কে?’ ফোনটা কেটে দিল। আজকে যে লোকটা ফোন করেছিল এজে দেরি করে আসবে বলে –সেও মনে হল ওই একই লোক! আপনার কি মনে হয় এজে ইজ ইন সাম কাইন্ড অফ ট্রাবল?”
“দ্যাটস স্ট্রেঞ্জ!” আমি বললাম! “তবে সত্যিই কোনো ক্ষতি করতে চাইলে, এভাবে অ্যানাউন্স করে করবে না। মনে হচ্ছে কেউ ভয় দেখিয়ে মজা পাবার চেষ্টা করছে। আপনার কী মনে হয় একেনবাবু?”
একেনবাবু ঘরের চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছিলেন।
আমার কথায় সায় দিয়ে বললেন, “আমারও তাই মনে হয় স্যার।”
“আপনারও তাই মনে হয়?” একেনবাবুর দিকে তাকিয়ে নাদিয়া প্রশ্নটা করল।
“হ্যাঁ, ম্যাডাম।”
“আসলে আমাকে না জানিয়ে এজের প্ল্যান চেঞ্জ করাটা আমাকে অবাক করেছে!”
“প্ল্যান চেঞ্জ করেছেন কি না, সেটা তো আপনি জানেন না ম্যাডাম। খবরটা তো ফক্স হতে পারে।”
“ইউ থিঙ্ক সো?” বলে একটু চুপ করে থেকে বলল, “আই মিস হিম, প্রায় এক মাস হতে চলল….বিয়ের পর পরই ওকে দেশে চলে যেতে হয়েছে মা ভীষণ অসুস্থ বলে। এনি ওয়ে হি উইল বি হিয়ার ভেরি সুন। তাই না?”
“এগজ্যাক্টলি, “আমি বললাম।
একেনবাবুর মনে হল ঘরের ইন্সপেকশন শেষ হয়েছে। এন্টারটেইনমেন্ট সেন্টারের ওপর ছবিটাকে দেখিয়ে একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার স্বামী ম্যাডাম?”
“হ্যাঁ।”
“হি ইজ ভেরি হ্যান্ডসাম।”
“ইয়েস হি ইজ,” স্বামীর প্রশংসায় নাদিয়া মনে হল খুশি হয়েছে। “কী দেব আপনাদের? আমার কাছে রাশিয়ান চা আছে।”
“নো থ্যাঙ্কস।” আমি বললাম।
“আপনিও কিছু খাবেন না?” একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করল নাদিয়া।
“না ম্যাডাম, আজ না।”
“চিঠিটার অর্থ উদ্ধার করতে পারলেন?” প্রশ্নটা এবার আমাকে।
“মনে হয় ওটা একটা জোক। তবে যে পাঠিয়েছে সে বাঙালি।”
“আমি চিঠির একটা কপি করে রেখেছি। আপনি যদি দেখেন, “ বলে একটা কাগজ একেনবাবুকে দিল।
“ভেরি ইন্টারেস্টিং বাংলা স্যার,“ আমার দিকে তাকিয়ে একেনবাবু বললেন।
“ইন্টারেস্টিং!” নাদিয়া বিস্মিত হয়ে তাকাল।
“মানে ম্যাডাম, আন- ইউয়াল। আপনি কোনো বাঙালিকে চেনেন?”
“দ্যা ওনলি বেঙ্গলি পার্সন যাকে আমি চিনি সে হল এজের বন্ধু সুব্রত। আমায় খুব সাহায্য করে। এ বাড়িটা ওই দেখে দিয়েছিল। মাঝে মাঝেই আমার কাছে আসে।”
“হয়তো উনিই মজা করে এটা পাঠিয়েছেন ম্যাডাম।” ই-মেলের কপিটা ফেরত দিয়ে একেনবাবু বললেন।
“আপনার কি তাই মনে হচ্ছে?” আমাকে জিজ্ঞেস করল নাদিয়া।
“অসম্ভব নয়। আপনার স্বামীর বন্ধুকে একবার ফোন করে দেখুন না?”
“ই-মেল পেয়েই আমি ওকে ধরার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ওর ফোন সুইচড অফ। একটা মেসেজ রেখেছি। ই-মেলটাও ফরওয়ার্ড করে দিয়েছি। যদি ও মানেটা বুঝতে পারে!”
এবার মনে হল ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছি। বললাম, “হয়তো উনিই ই-মেলটা করেছিলেন, সেই জন্যেই উত্তর পাননি।”
আমার এই কথায় নাদিয়া মোটেই স্বস্তি পেল না। আবার জিজ্ঞেস করল,”কিন্তু কী রয়েছে ই-মেলটাতে?”
“অ্যাবসোলুট ননসেন্স। না বোঝার চেষ্টা করাই ভাল।”
“আপনারা আগে থাকতেন কোথায় ম্যাডাম?” একেনবাবুর প্রশ্নগুলো সব সময়েই একটু র্যান্ডম –অনেক সময়ই পারস্পর্য থাকে না।
“আপস্টেট নিউ ইয়র্কে, উডস্টকের কাছে।” প্রশ্ন শুনে নাদিয়া একটু বিস্মিত হলেও উত্তর দিল। সেই সঙ্গে প্রশ্নও করল,” আপনি ওদিকে কখনও গেছেন?”
“না ম্যাডাম।”
“আমি গেছি,” আমি বললাম। ভারি সুন্দর জায়গা। সেই ফাঁকা জায়গা থেকে একেবারে এখানে?”
“এজের ইচ্ছায়। ও ম্যানহাটান ভালোবাসে। দেশে যাবার পর থেকে তাগাদা দিচ্ছে। ম্যানহাটানে একটা বাড়ি নিতে। বাড়িটা পাবার খবর পেয়ে হি ওয়াজ সো থ্রিলড।”
“ইট ইজ এ নাইস নেইবারহুড। এখানে আর কারও সঙ্গে পরিচয় হয়েছে?”
“তেমন করে না।”
এর পর দু’-একটা মামুলি কথার পর আমরা বিদায় নিলাম। আমাদের বাড়ির ফোন নম্বরটা নাদিয়া চাইল। যদি দরকার হয়ে ফোন করবে। দিলাম। একেনবাবু আসায় রাশিয়ান ব্রাইডের ভয়টা আমার গেছে।