রজনী প্রভাত, উঠি নরনাথ,
বিদুরে ডাকিয়া আনি।
গদ গদ স্বরে, কহেন বিদুরে,
ধৃতরাষ্ট্র নৃপমণি।।
এস ভাই মোর, প্রাণের দোসর,
সাধু সর্ব্ব গুণাশ্রয়।
দেবগুরু জিনি, বুদ্ধিমত্ত গণি,
ক্ষিতি সম ক্ষমাময়।।
তুমি মোর মন, আত্মা প্রাণ ধন,
হিত উপদেশ কহ।
অতঃপর আমি, হব বনগামী,
এই যুক্তি ভাই দেহ।।
তোমার কল্যাণে, পশিব কাননে,
সাধিব আপন কাজ।
সাধি যোগ ভক্তি, পাব অব্যাহতি,
এ ভব-সংসার মাঝ।।
ধর্ম্মের নন্দন, শুনিলে এমন,
যাইতে না দিবে মোরে।
আপন ইচ্ছায়, যাব সর্ব্বদায়,
উপরোধে কিবা করে।।
ঘোর তপোবনে, পশিব কেমনে,
যুক্তি দেহ তুমি মোরে।
এত শুনি কথা, নোয়াইয়া মাথা,
ক্ষত্তা কহে যোড় করে।।
আমি তব ভৃত্য, আজন্ম পালিত,
আমার ঈশ্বর তুমি।
তুমি যদি বন, করিবে গমন,
কি আর করিব আমি।।
সংহতি যাইব, বনে প্রবেশিব,
তথায় করিব সেবা।
যে গতি তোমার, সে গতি আমার,
প্রভু পরিহারে কেবা।।
বিদুর বচন, শুনিয়া রাজন,
প্রশংসিল বহুতর।
ত্যজিয়া বসন, বাকল পিন্ধন,
করিলে নৃপবর।।
গান্ধারী সুন্দরী, পতি অনুসারি,
বাকল কৈল পিন্ধন।
জটা করি কেশ, তপস্বীর বেশ,
ধরিলেন তিন জন।।
হেনই সময়ষ আইল সঞ্জয়,
ধৃতরাষ্ট্র সম্ভাষণে।
করি প্রণিপাত, যুড়ি দুই হাত,
নিবেদয়ে সকরুণে।।
হের নরপতি, কর অবগতি,
তোমার কিঙ্কর আমি।
তোমার বিহনে, কি কাজ জীবনে,
সঙ্গে লহ মোরে তুমি।।
বিদুর সঞ্জয়, অন্বিকা-তনয়,
সুবল নন্দিনী আর।
শুভক্ষণ করি , গৃহ পরিহরি,
বলে কৈল আগুসার।।
হেনকালে তথা, ভোজের দুহিতা,
পাইয়া সে সমাচার।
ত্যজিয়া মন্দির, হইল বাহির,
ত্যজি পুত্র পরিবার।।
তপস্বিণী-বেশে, আসি অন্ধপাশে,
প্রণমিয়া কহে বাণী।।
ওহে কুরুপতি, তোমার সংহতি,
কাননে যাইব আমি।।
সঙ্গে লহ মোরে, যাহ যথাকারে,
আমি অনুগত জনা।
তোমার প্রসাদে, তরিব আপদে,
করিব কৃষ্ণ-ভজন।।
শুনিয়া রাজন, আশ্বাস বচন,
দিলেন কুন্তীর তরে।
শুনি ভোজসুতা, হৈল হরষিতা,
গান্ধারী হৃষ্ট অন্তরে।।
ভারত শ্রবণ, কারণ তারণ,
এই মনে মোর আশ।
কৃষ্ণদাসাগ্রজ, কৃষ্ণ পদাম্মুজ,
বন্দি কহে কাশীদাস।।