কিবা লক্ষ্মী সরস্বতী, হরপ্রিয়া হৈমবতী,
সাবিত্রী কি ব্রহ্মার গৃহিণী।
রোহিণী চন্দ্রের রামা, রতি সতী তিলোত্তমা,
কিবা হবে ইন্দ্রের ইন্দ্রাণী।।
তোমার অঙ্গের আভা, ম্লান করিলেক সভা,
তারা যেন চন্দ্রের উদয়ে।
তোমার শরীর দেখি, নিমেষ না করে আঁখি,
ঘন ঘন কম্পিত হৃদয়ে।।
শশী নিন্দি মুখপদ্ম, কেন করিয়াছ ছদ্ম,
এ বেশ তোমার নাহি শোভে।
পেয়ে তব অঙ্গঘ্র্রাণ, ত্যজিয়া কুসুমোদ্যান,
অলিবৃন্দ ধায় মধুলোভে।।
মৃগনেত্র জিনি আঁখি, কামশর তুল্য দেখি,
বাজিলে মরিবে কামরিপু।
কণ্ঠ তব কম্বু জিনি, ওষ্ঠ পক্ক-বিম্ব গণি,
পঞ্চশর লিপ্ত তব বপুল।।
রক্ত কর কোকনদ, কক্ত কোকনদ-পদ,
রক্তযুক্ত অরুণ অধর।
শুকচঞ্চু জিনি নাসা, সুধার সদৃশ ভাষা,
ভুজযুগ জিনি বিষধর।।
তোমার নিতম্ব কুচে, গগন নিবাসী ইচ্ছে,
মৃগপতি জিনি মধ্যদেশ।
কিবা পুঞ্জ কাদম্বিনী, জিত চারু চামরিণী,
মুক্ত দেখি কেন হেন কেশ।।
হের দেখ বরাননে, তোমা দেখি তরুগণে,
লম্বিত হইল শাখা সহ।
কি দেবী নাগিণী তুমি, কি হেতু ভ্রমহ ভূমি,
না ভাণ্ডিহ সত্য মোরে কহ।।
তব অঙ্গযোগ্য পতি, মানুষে না দেখি সতি,
বিনা দেব দিকপালগণ।
তব অঙ্গ-দরশনে, মোহ গেল নারীগণে,
পুরুষ না জীয়ে কদাচন।।
সুদেষ্ণার বাক্য শুনি, মধুর কোমল বাণী,
সবিনয়ে বলেন পার্ষতী।
না দেবী গন্ধর্ব্বী আমি, মানুষী নিবসি ভূমি,
ফলাহারী সৈরন্ধ্রীর জাতি।।
দয়া করি রাণী মোরে, রাখহ আপন ঘরে,
সেবা করি রহিব তোমার।
না ছোঁব উচ্ছিষ্ট জাত, চরণে না দিব হাত,
এইমাত্র নিয়ম আমার।।
প্রবালকুমুতা পাঁতি, ভাল জানি নিত্য গাঁথি,
পুষ্পমালা জানি যে বিশেষ।।
সিন্দূর কঙ্গল আদি, রত্ন-আভরণ নিধি,
বিচিত্র জানি যে কেশ-বেশ।।
গোবিন্দের প্রিয়তমা, মহাদেবী সত্যভামা,
বহুকাল সেবিলাম তাঁকে।
আমার নৈপুণ্য দেখি, পাণ্ডবের প্রিয়সখী,
কৃষ্ণা মাগি নিলেন আমাকে।।
কৃষ্ণা আমি এক প্রাণ, ইথে না জাহি আন,
বহুকাল বঞ্ছিলাম তথা।
রাজ্য নিল শত্রুগণ, পাণ্ডবেরা গেল বন,
তেঁই আমি আসিলাম হেথা।।
বিরাটপর্ব্বের কথা, বিচিত্র ভারত গাথা,
সর্ব্বদুঃখ শ্রবণে বিনাশ।
কমলাকান্তের সুত, সুজনের মনঃপূত,
বিরচিল কাশীরাম দাস।।