দুপুরে আবার দারুণ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। কাল রাতে মটন বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ ছিল, আজ পাঁচ রকম মাছ। আর তিন রকম মিষ্টি।
কাকাবাবু বললেন, এতরকম পদ থাকলে কি ভাল করে খাওয়া যায়? শেষের দিকে কোনওটারই স্বাদ পাওয়া যায় না। বাঙালি রান্নায় শুধু একটা ডাল, একটা তরকারি আর একটা মাছ বা মাংসই তো ভাল।
বাদশা বলল, এ আর কী দেখছেন? আমার শ্বশুরবাড়িতে খাবার টেবিলে মিনিমাম চোদ্দো-পনেরো রকম আইটেম থাকে। মাংসই চার রকম!
বাদশার স্ত্রী নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করছে। কাকাবাবু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ফিরোজা, তোমার বাবা রোজ চোদ্দো রকম পদ খান?
ফিরোজা হেসে বলল, না, কাকাবাবু, আমার বাবা মাছ-মাংসই খান। শুধু নিরামিষ। তবে লোককে নেমন্তন্ন করে অনেক কিছু খাওয়াতে ভালবাসেন!
কাকাবাবু বললেন, আমাকে যদি কোনওদিন চোদ্দো-পনেরোটা আইটেম খেতে হয়, তা হলে আমি মরেই যাব।
সন্তু দুরকম মাছ খাওয়ার পর আর কিছু নিতে চায়নি। জোজো একটার পর-একটা খেয়ে যাচ্ছে।
কাকাবাবু বললেন, জোজো, খুব বেশি খেলে কিন্তু কবিতা লেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ সেই জন্য খুব কম খেতেন।
জোজো বলল, এসব তো আমি নিজে খাচ্ছি না।
সন্তু মুখ তুলে অবাক হয়ে বলল, নিজে খাচ্ছিস না মানে?
জোজো বলল, আমার এক মামা আছেন, তিনি মাছ খেতে খুব ভালবাসেন। একবার কুড়ি পিস রুই মাছ খেয়ে ফেলেছিলেন। তার পরেই সাতখানা কই মাছ। সেই মামার কথা ভাবছি, আর মাছগুলো আমার পেটে চলে যাচ্ছে।
কাকাবাবু বললেন, একেই বলে নরাণাং মাতুল ক্রমঃ। মানে, ভাগনেরা সব মামার মতো হয়।
জোজো বলল, আমার সেই মামাকে নিয়ে তো কবিতা লিখেছি। শুনবেন?
কাকাবাবু বললেন, এখন নয়, এখন নয়। খেতে বসে কবিতা শুনতে নেই। আর খেতে বসে যদি কেউ গান গায়, তা হলে তার বউ পাগল হয়ে যায়!
খাওয়ার পর খানিক বাদে দেখা হল সিনেমা। হেলেন অফ ট্রয়। গরম এতই বেড়েছে যে, পাখা চললেও সকলে দরদর করে ঘামছে।
ঠিক সন্ধের সময় গরগর করে মেঘ ডেকে উঠল। তারপরই শোঁ শো হাওয়া। এখনই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হবে। এই সময় ওদের সেই অন্য বাড়িটায় যাওয়ার কথা।
জোজো বারান্দায় এসে ঝড় দেখতে দেখতে বলল, আকাশ একেবারে কালো। মনে হয়, জোর বৃষ্টি হবে। তাতে ঠান্ডা হয়ে যাবে, আজ রাতে ঘুমোব ভাল করে।
সন্তু বলল, সে কী রে, ঘুমোবি কী? আজ তো সারারাত জেগে থাকার কথা। ভূত দেখতে হবে না?