দরজা বন্ধ হয়ে যাবার পর কাকাবাবু বললেন, কী রে, সন্তু, কেমন বুঝছিস?
ঠিক ভয়ে নয়, দুশ্চিন্তায় সন্তুর মুখটা শুকিয়ে গেছে। জোর করে মুখে একটা ফ্যাকাসে হাসি ফুটিয়ে বলল, লোকটা খুব সাংঘাতিক। কী রকম সাপের মতন তাকায়?
কাকাবাবু বললেন, আমার ওপর ওর খুব রাগ আছে। তোর ওপরেও আছে। আমাদের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়নি, অনেক প্ল্যান করে ধরে এনেছে। তার মানে, শুধু আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতেই চায় না, ওর অন্য কিছু প্ল্যান আছে। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস, ও আমাদের গায়ে হাত তোলেনি একবারও। মারধোর করেনি।
সন্তু বলল, আমাদের বন্দী করে রেখে ওর কী লাভ? তাও এই কলকাতা শহরে?
কাকাবাবু বললেন, সেইটাই তো জানতে হবে। এই জায়গাটা কোথায় বুঝতে পারছিস? গড়িয়া ছাড়িয়ে এসে ডান দিকে বেঁকল। খুব সম্ভবত এটা বোড়ালের কাছাকাছি। বোড়ালের নাম শুনেছিস তো? আগে এটা একটা গ্রাম ছিল। মনীষী রাজনারায়ণ বসু এখানে জন্মেছিলেন। এই বোড়াল গ্রামে সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালি ফিলামের শুটিং করেছিলেন। আমি সেই শুটিং দেখতে এসেছিলুম। সুতরাং এখান থেকে বেরুলে আমাদের রাস্তা খুঁজে পেতে কোনও অসুবিধে হবে না, কী বল?
সন্তু অবাক হয়ে কাকাবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কাকাবাবু এখান থেকে বেরুবার কথা ভাবছেন কী করে? নীচের বাগানে একটা নেকড়ে বাঘের মতন কুকুর ঘুরছে। তিনতলায় গেরিলার মতন চেহারার একটা লোক পাহারা দিচ্ছে, তার নাম টাইগার। তার ওপর রয়েছে রাজকুমার। ঘরে একটাও জানলা নেই, এই রকম জায়গা থেকে বেরুবার কোনও উপায়ই তো সন্তু দেখতে পাচ্ছে না।
কাকাবাবু সন্তুর মুখের অবস্থা দেখে তার কাঁধ চাপড়ে বললেন, কী রে, ঘাবড়ে গেলি নাকি? হবে, হবে, একটা ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়ে যায়।
সন্তু পাশের বাথরুমটার দরজা ঠেলে উঁকি মেরে দেখল। এমনিতে বেশ পরিষ্কার মনে হল, কিন্তু বাথরুমের জানলা নেই। জানলা একটা ছিল, সিন্টলের পাত দিয়ে সেটা পাকাপাকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সন্তু বলল, বাথরুমের জানলাও বন্ধ!
কাকাবাবু বললেন, তাতে কী হয়েছে? ওপরের দিকে চেয়ে দ্যাখ, ছোট একটা ঘুলঘুলি আছে, সাফোকেশন হবে না। জানলা থাকলেই বা কী হত, আমি খোঁড়া মানুষ, আমি কি আর জানলা ভেঙে, পাইপ বেয়ে পালাতে পারতুম!
আলোটা তুলে নিয়ে সারা ঘর ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে দেখে কাকাবাবু আবার বললেন, এই ঘরেও আগে তিনটে জানলা ছিল, সেখানে দেয়াল গেথে দিয়েছে। দ্যাখ, দেয়ালের রঙের একটু তফাত আছে। তার মানে এই বন্দিীশালার ব্যাপারটা নতুন। আমি একটা কথা ভাবছি, এ বাড়িতে কি আরও অনেক বন্দী আছে? লোকটার কথাবার্তা শুনে যেন সেই রকমই মনে হল।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, রাজকুমার যে বলল, আপনার জন্য টোপ ফেলেছে, তার মানে কী?
কাকাবাবু ভুরু কুঁচকে বললেন, সেটাও তো বুঝলাম না রে! আমি কি মাছ যে টোপ দেখলেই গিলে খাব? লোকটা বড় চালাক-চালাক কথা বলতে শিখেছে।
বাইরে খুব জোরে-জোরে কুকুরের ডাক আর একটা কোনও গাড়ির শব্দ শোনা গেল। খুব সম্ভবত মোটরবাইক।
কাকাবাবু দেয়ালের গায়ে হাত দিয়ে বললেন, দেয়ালগুলো সাউন্ডপুফ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু খুব একটা সুবিধের হয়নি। এই তো বেশ শব্দ শোনা যাচ্ছে!
সন্তু বলল, দরজার গায়েও একটা গোল গর্ত রয়েছে।
কাকাবাবু বললেন, ওটা বাইরে থেকে কথা বলবার জন্য।
সন্তু কাছে গিয়ে গর্তটার গায়ে চোখ লাগিয়ে দেখল। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ গর্তের ওপাশটা কিছুদিয়ে ঢাকা আছে এখন।
সন্তু সেই গর্তে মুখ লাগিয়ে চেঁচিয়ে বলল, একটু জল চাই! খাবার জল?
কেউ কোনও উত্তর দিল না। জলও এল না।
কাকাবাবু খাটের ওপর এলিয়ে বসে বললেন, যখন খাবার দেবে, তখন নিশ্চয়ই জল দেবে। কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরে থাক।
খাটের ওপর শুধু একটা তোশক আর বালিশ পাতা। চাদর বা সুজনি টুজনি কিছু নেই। সন্তু খাটের ওপর চুপ করে বসে রইল। একটা ব্যাপারে তার অদ্ভুত লাগছে। বাইরে নানান জায়গায় গিয়ে সে আর কাকাবাবু অনেকবার ভয়ংকর-ভয়ংকর বিপদে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু কলকাতার মধ্যে কেউ তাদের এরকমভাবে বন্দী করে রাখবে, সেটা যেন এখনও বিশ্বাসই করা যাচ্ছে না। কলকাতায় তাদের কত চেনা শুনো, পুলিশের বড়কর্তারা কাকাবাবুকে কত খাতির করে, অথচ কিছুই করা যাচ্ছে না। একটা লোক তাদের গাড়িতে তুলে রিভলভার দেখিয়ে ধরে আনল, ব্যাস! এখন লোকটা ইচ্ছে করলেই তাদের মেরে ফেলতে পারে।
কাকাবাবু এখান থেকে উদ্ধার পাবার কী প্ল্যান করেছেন কে জানে। কিছুই তো বলছেন না!
খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকবার পর হঠাৎ দরজার গায়ে গর্তটার ওপাশের ঢাকনা সরাবার শব্দ পাওয়া গেল। তারপর একজন বলল, খানা আ গিয়া। তুম লোগ সামনের দেওয়াল সাঁটকে খাড়া হয়ে যাও। মাথার ওপর হাঁথ তুলো।
কাকাবাবু বললেন, যা বলছে সেটা শোনাই ভাল। নইলে খাবার দিতে দেরি করবে।
তুললেন। সন্তুকেও দেখাদেখি তা-ই করতে হল। এই অবস্থাতেও সন্তুর মনে হল, তারা দুজন যেন গৌর-নিতাই।
দরজাটা খুলে গেল আস্তে-আস্তে। প্রথমে ঢুকল একজন বেঁটেমতন লোক, তার হাতে খাবারের পাত্র। তার পেছনে দাঁড়িয়ে রইল টাইগার। বেঁটে লোকটির পেছনে রয়েছে বলেই তাকে অনেক বেশি লম্বা-চওড়া দেখাচ্ছে। তার মুখখানা তামাটে রঙের। ভারতবর্ষের ঠিক কোন অঞ্চলের লোক সে, তা বোঝা যাচ্ছে না!
খাবার-টাবারগুলো সাজিয়ে দেওয়া হলে পর কাকাবাবু বললেন, জল কোথায়? আমাদের জল লাগবে!
বেঁটে লোকটি ভাড়ভেড়ে গলায় বলল, পাবে, পাবে সব পাবে, ব্যস্ত হচ্ছে কেন?
ওইটুকু চেহারার একটা লোক কাকাবাবুর মতন মানুষকে তুমি, তুমি বলে ধমকে কথা বলছে শুনে রাগে গা জ্বলে গেল সন্তুর। তার ইচ্ছে হল তক্ষুনি লোকটাকে একটা রুদা মারতে। কোনওক্রমে সে ইচ্ছেটা চেপে রাখল।
বেঁটে লোকটি আর একবার গিয়ে জল নিয়ে এল দুগেলাস।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, রাত্তিরে যদি আমাদের আরও জল লাগে?
বেঁটে লোকটি বলল, তখন বাথরুমের কলের জল খাবে! এটা কি বাপের হোটেল পেয়েছ নাকি..? আবদার!
সন্তু কাকাবাবুর দিকে তাকাল। কাকাবাবু মুচকি-মুচকি হাসছেন।
টাইগার বলল, আরো এ শম্ভো, এত বাত কিসের। আব তুই যা।
তারপর সে কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, খেয়ে লিন, তারপর মজেসে ঘুম মারুন। দেখবেন এক ঘুমে রাত কাবার হয়ে যাবে। ই সব বাসনপত্র সব কাল সোকালে নিয়ে যাবে।
সে আস্তে-আস্তে পিছিয়ে বাইরে বেরিয়ে বন্ধ করে দিল দরজা।
রাজকুমার যা বলেছিল, খাবারটা মোটেই সে-রকম ভাল কিছু নয়। দুটো স্টিলের থালায় খানিকটা করে ভাত আর রুটি। দুটো ছোট্ট ছোট্ট টিনের বাটি, পাড়ার নাপিতেরা যে-রকম বাটিতে দাড়ি কামাবার জল নেয়, সেই রকম বাটিতে দুএক টুকরো মাংস আর ঝোল, একটুখানি করে পেঁয়াজ আর গাজর মেশানো স্যালাড। আর একটা বাটিতে সাদা থকথকে মতন একটা জিনিস, সেটা বোধহয় পুডিং, সেটা একেবারে অখাদ্য।
কাকাবাবু সেই খাবারই বেশ মন দিয়ে খেলেন। তারপর বাথরুমে হাত-মুখ ধুয়ে এসে বললেন, এবারে শুয়ে পড় সন্তু! আর তো কিছু করবার নেই। কাল সকালে যা-হয় দেখা যাবে।
সন্তু বলল, রাজকুমার যে বলেছিল আলোটা নিয়ে যাবে?
কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ, তাই বলেছিল বটে। এখন যদি না নিতে চায় তা হলে থাক।
কাকাবাবু একটা হাই তুললেন।
দরজাটা খুলে গেল আবার। ক্লিপিং সুট পরে ঘরে ঢুকল রাজকুমার। তার এক হাতে রিভলভার, অন্য হাতে টর্চ।
সে বলল, ভাল করে খেয়েছেন তো। রান্না কেমন হয়েছে?
কাকাবাবু বললেন, তুমি আলোটা নিয়ে যাও, আমার ঘুম পেয়ে গেছে। রাজকুমার বলল, হ্যাঁ, ভাল করে খাবেন আর ঘুমোবেন। শরীরটা ঠিক রাখবেন। আপনার শরীর যদি খারাপ হয়, তা হলে খদের চটে যাবে।
খদের শব্দটা শুনে সন্তু আর কাকাবাবু দুজনেই অবাক হয়ে একসঙ্গে মুখ তুলে তাকাল।
রাজকুমার বলল, বুঝতে পারলেন না তো! আপনাকে এত মেহনত করে ধরে আনলুম কেন? আমার একটা স্বাৰ্থ আছে বুঝতেই পারছেন? আপনাকে আমি বিক্রি করে দেব।
কাকাবাবু কৌতুকের সুরে বললেন, বিক্রি? আমাকে? সাতচল্লিশ বছর বয়েস হয়ে গেছে, একটা পা খোঁড়া, আমার মতন একজন অপদার্থ মানুষকে কে কিনবে?
রাজকুমার, বলল, সে আপনাকে ভাবতে হবে না। খদ্দের তৈরি আছে। ভাল দাম দেবে। সেইজন্যই তো আপনার যাতে অসুখ-বিসুখ না হয় সেটা দেখা দরকার।
তারপর সন্তুর দিকে ফিরে বলল, এ-ছেলেটার জন্যও খদ্দের পাওয়া যাবে। আরব দেশে পাঠিয়ে দেব!
কাকাবাবু বললেন, এটাই তোমার ব্যবসা? অর্ডার সাপ্লাই?
রাজকুমার ঠোঁট ফাঁক করে নিঃশব্দে হেসে বলল, দেখলেন তো, বলে ফেললুম? কোনও কথা পেটে চেপে রাখতে পারি না। হ্যাঁ, আজকাল এই ব্যবসাই করছি।
কাকাবাবু বললেন, একজন রাজার ছেলের পক্ষে চমৎকার ব্যবসা!
রাজকুমার বলল, তা যা দিনকাল পড়েছে, এখন বাঘে ঘাস খায় আর ব্ৰাহ্মণরাও জুতোর ব্যবসা করে। তবে কী জানেন, গরু ছাগল বিক্রির চেয়ে মানুষ বিক্রির কাজটা অনেক সহজ। লাভও বেশি।
টাৰ্চটা পকেটে ভরে সে এক হাতে লণ্ঠনটা তুলে নিল। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, যাঃ, আসল কথাটাই বলা হয়নি, যে-জন্য এলুম! হঠাৎ মনে পড়ল কথাটা। আপনাকে তো এখন বাইরে বেরুতে হচ্ছে না, সুতরাং ক্রাচ দুটো এ-ঘরে রাখার দরকার নেই। ও দুটো আমি নিয়ে যাচ্ছি। ঘরের মধ্যে আপনি এমনিই চলাফেরা করতে পারবেন।
কাকাবাবু বললেন, ইচ্ছে হলে নিয়ে যেতে পারে। যথাসময়ে আবার আমাকে ফেরত দিও!
রাজকুমার বলল, হ্যাঁ, যথাসময়ে!
রাজকুমার ক্রাচ দুটো নিজের বগলে চেপে পেছন ফেরা মাত্র সন্তু এক দুঃসাহসিক কাণ্ড করল। সে বিদ্যুদ্বেগে মাটিতে শুয়ে পড়ে নিজের পা দুটো রাজকুমারের পায়ের মধ্যে ঢুকিয়ে কাঁচির মতন ফাঁক করে দিল। রাজকুমার দাঁড়াম করে আছড়ে খেয়ে পড়ল সামনে।
ব্যাপারটা দেখে কাকাবাবুও চমকে উঠলেন। রাজকুমারের হাত থেকে টিউব বাতিটা ছিটকে গেছে, ক্রাচ দুটোও পড়ে গেছে, কিন্তু রিভলভারটা সে ছাড়েনি।
কয়েক মুহূর্ত মাত্র, সে হাতটা একবার তুলতে পারলে আর নিষ্কৃতি নেই।
কাকাবাবু এঁটো স্টিলের থালা একটা তুলে নিয়ে সেই হাতটার ওপর মারলেন সজোরে। রিভলভারটা গড়িয়ে চলে গেল খাটের তলায়।
রাজকুমার রিভলভারটা উদ্ধার করার চেষ্টা করল না, মুখে আর হাতে চোট লাগা সত্ত্বেও সে মাথা ঠিক রেখেছে। সে গড়িয়ে চলে গেল দরজার দিকে। সন্তু সঙ্গে সঙ্গে হামাগুড়ি দিয়ে খাটের তলায় ঢুকে পড়ে রিভলভারটা চেপে ধরে বলল, পেয়েছি।
ততক্ষণে রাজকুমার বেরিয়ে গেছে বাইরে। দাড়াম করে শব্দ হল দরজাটা বন্ধ করার।
গোল গর্তটা দিয়ে রাজকুমার দাঁতে দাঁত চেপে বলল, শয়তানের বাচ্চা, আমার সঙ্গে চালাকি? থাক আজ রাত্তিরটা, তারপর কাল সকালে দেখাব মজা তোদের। রবারের ডাণ্ডার মোর খেতে কেমন লাগে বুঝবি?
কাকাবাবু স্থির হয়ে বসে আছেন। রাজকুমার থেমে যাওয়ার পর তিনি বললেন, এ কী করলি, সন্তু? ইশ! এতে কী লাভ হল?
খাটের তলা থেকে রিভলভারটা নিয়ে বেরিয়ে আসার পর সন্তু ভেবেছিল, কাকাবাবু তার বুদ্ধি আর সাহসের প্রশংসা করবেন। কিন্তু কাকাবাবুর কথার মধ্যে মৃদু ভৎসনা শুনে সে ঘাবড়ে গেল।
সে কাচুমাচুভাবে বলল, ওই লোকটা তোমার সঙ্গে খারাপভাবে কথা বলছিল, তাতেই আমার রাগ হয়ে গেল। আমি আর মেজাজটা ঠিক রাখতে পারলুম না!
ওটা কিসের প্যাঁচ? কুংফু না ক্যারাটে? প্যাঁচ শিখেছিস বলেই কি যখন-তখন সেটা দেখাতে হবে?
ও তোমার নাকের সামনে সব সময় রিভলভারটা তুলে রেখেছিল কেন?
এখন কী করবি? এর পর তো ও রাইফেল-টাইফেল নিয়ে আসবে।
ওকে আমি এ-ঘরে আর ঢুকতেই দেব না!
এ-ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা যায় না। ওরা সব ব্যবস্থা করে রেখেছে, ওরা যখন-তখন ঢুকে পড়তে পারে। শোন, চোর-ডাকাতদের সামনে এসে কক্ষনো মাথা-গরম করতে নেই। ওদের সঙ্গে কি আমরা বন্দুক-পিস্তল নিয়ে লড়াই করতে পারব? তা পারব না। সব সময়েই ওদের শক্তি বেশি হয়। ওদের সঙ্গে লড়াই করতে হয় এই জায়গাটা দিয়ে।
কাকাবাবু নিজের মাথায় দুবার টোকা দিলেন।
সন্তু বলল, আমি সারা রাত জেগে থাকব।
কাকাবাবু একটা হাই তুলে বললেন, দ্যাখা পারিস কি না!
একজন কেউ হাই তুললেই কাছাকাছি অন্যজন হাই তোলে। সন্তু শুধু হাই তুলল না, সেই সঙ্গে তার চোখ বুজে এল।
তুই-তো এরই মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ছিস দেখছি!
সন্তু আচ্ছন্ন গলায় বলল, না, আমি জেগে থাকব।
তবু একটু পরেই আবার চোখ বুজে ফেলল সন্তু। মাথাটা বুকে এল। কাকাবাবু ভুরু কুঁচকে তাকালেন। তাঁর নিজেরও চোখ টেনে আসছে। সন্তু এমনভাবে ঘুমিয়ে পড়ছে কেন, এটা অস্বাভাবিক।
সন্তু অতি কষ্টে চোখ খুলে বলল, আমার এ কী হচ্ছে? আমি কিছুতেই চোখ চাইতে পারছি না। আমায় বিষ খাইয়েছে?
কাকাবাবু বললেন, আমারও তো একই অবস্থা দেখছি। খাবারের সঙ্গে নিশ্চয়ই ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। মানুষ বিক্রি করা যার ব্যবসা সে শুধু শুধু বিষ খাইয়ে আমাদের মারবে কেন?
এর পর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ওরা দুজন ঘুমে ঢলে পড়ল। সন্তু মেঝেতে বসে ছিল, সে আর খাটেও উঠতে পারল না, শুয়ে পড়ল সেখানেই।